ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বড়দিন উদযাপন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা-মাসায়েল

ভূমিকা

বড়দিন (Christmas) খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যা তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন হিসেবে উদযাপন করে থাকে। আধুনিক যুগে বড়দিন একটি বৈশ্বিক সামাজিক উপলক্ষে পরিণত হয়েছে; ২৫ ডিসেম্বর অনেক দেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা আয়োজন দেখা যায়। এই বাস্তবতায় অনেক মুসলমানও সামাজিকভাবে এই দিনে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তবে বড়দিন সম্পর্কিত শরঈ হুকুম ইসলামী ফিকহ ও আকীদার আলোকে কী—তা সম্পর্কে সবার পরিষ্কার ধারণা থাকে না।

ইসলামে আকীদা, ইবাদত ও ধর্মীয় উৎসব অত্যন্ত সংবেদনশীল ও সুনির্দিষ্ট বিষয়। তাই বড়দিন পালন, এতে অংশগ্রহণ, শুভেচ্ছা বিনিময় কিংবা এ দিনকে কেন্দ্র করে সামাজিক আচরণ—এসবের শরঈ অবস্থান আবেগ বা সামাজিক চাপে নয়; বরং কুরআন, সহিহ সুন্নাহ এবং নির্ভরযোগ্য ফিকহি গ্রন্থের আলোকে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এই প্রবন্ধে বড়দিন উপলক্ষে উদ্ভূত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা-মাসায়েল ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে, যাতে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকের কাছে স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়।

প্রথম মাসআলা: ইসলামে ধর্মীয় উৎসব (ঈদ)-এর ধারণা

ইসলামে ধর্মীয় উৎসব (ঈদ) কেবল আনন্দ ও সামাজিক উৎসবের দিন নয়; বরং তা একটি উম্মতের আকীদা, ইবাদত ও ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যের প্রকাশ। ইসলামী শরীয়তে ধর্মীয় উৎসব নির্ধারণের অধিকার একমাত্র আল্লাহ তাআলার। এই নীতির স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ –এর সুন্নাহ থেকে। মদিনায় আগমনের পর তিনি দেখতে পেলেন, সেখানকার লোকদের দুটি উৎসবের দিন রয়েছে। তখন তিনি বলেন—

إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَىٰ وَيَوْمَ الْفِطْرِ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দুটি দিন নির্ধারণ করেছেন—ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।”
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১১৩৪ (সহিহ)

এই হাদিস প্রমাণ করে যে মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় উৎসব সংখ্যা ও প্রকৃতি শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন:

لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا هُمْ نَاسِكُوهُ
“প্রত্যেক জাতির জন্য আমি একটি নির্দিষ্ট ইবাদত-পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি।”
(সূরা হাজ্জ, ২২:৬৭)

ইমাম ইবন কাসির (রহ.) বলেন—এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হলো ধর্মীয় উৎসব ও আনুষ্ঠানিকতা (তাফসির ইবন কাসির)। 

হানাফি ফিকহের গ্রন্থ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-তেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত নয়। সুতরাং ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব সীমাবদ্ধ ও নির্দিষ্ট; অন্য ধর্মীয় উৎসব গ্রহণ বা উদযাপন করার কোনো সুযোগ নেই।

দ্বিতীয় মাসআলা: ইসলামে হযরত ঈসা (আ.)-এর আকীদা

কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা

ইসলাম হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর একজন সম্মানিত নবী ও রাসূল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে তাঁর পরিচয় ও মর্যাদা সম্পর্কে ইসলামী আকীদা অত্যন্ত সুস্পষ্ট এবং সন্দেহাতীত। কুরআন মাজিদে একাধিক স্থানে হযরত ঈসা (আ.)-এর নবুয়ত ও মানবীয় সত্তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে কোনো প্রকার অতিরঞ্জন বা বিভ্রান্তির অবকাশ না থাকে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

مَا الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ إِلَّا رَسُولٌ
“মরিয়মের পুত্র মসীহ তো কেবল একজন রাসূল।”
(সূরা মায়িদা, ৫:৭৫)

ইমাম ইবন কাসির (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেন—এখানে স্পষ্টভাবে খ্রিস্টানদের সেই বিশ্বাস খণ্ডন করা হয়েছে, যেখানে ঈসা (আ.)-কে ইলাহ বা আল্লাহর পুত্র হিসেবে গণ্য করা হয় (তাফসির ইবন কাসির)।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

مَا كَانَ لِلَّهِ أَنْ يَتَّخِذَ مِنْ وَلَدٍ ۚ سُبْحَانَهُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
“আল্লাহর জন্য কখনোই শোভন নয় যে তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করবেন। তিনি পবিত্র। তিনি যখন কোনো বিষয়ের ফয়সালা করেন, তখন শুধু বলেন—‘হও’, আর তা হয়ে যায়।”
(সূরা মারইয়াম, ১৯:৩৫)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন—এই আয়াত আল্লাহর তাওহিদকে সুস্পষ্ট করে এবং সন্তান গ্রহণের ধারণাকে মূল থেকেই বাতিল করে দেয় (তাফসির আল-কুরতুবি)। অতএব, ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র হিসেবে বিশ্বাস করা কিংবা তাঁর জন্ম উপলক্ষে ধর্মীয় উৎসব পালন করা ইসলামী আকীদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

তৃতীয় মাসআলা: অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ

অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইসলামী শরীয়তে সুস্পষ্ট ও কঠোর দিকনির্দেশনা রয়েছে। যেহেতু ধর্মীয় উৎসব একটি জাতির আকীদা ও বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ, তাই এতে অংশগ্রহণ করা মূলত সেই বিশ্বাসের প্রতি সমর্থন বা সম্মতির শামিল হয়ে যায়। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ –এর একটি মৌলিক হাদিস ফিকহি সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।

রাসূলুল্লাহ বলেন:

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১

ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন—ধর্মীয় উৎসব ও আনুষ্ঠানিকতা প্রতিটি জাতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সুতরাং অমুসলিমদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা তাদের ধর্মীয় পরিচয় গ্রহণের শামিল, যা শরীয়তসম্মত নয়।
ইকতিদা আস-সিরাতিল মুস্তাকিম

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) অমুসলিমদের উৎসবের দিনগুলোতে তাদের সঙ্গে মিলিত হওয়া বা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতেন। একই বক্তব্য পাওয়া যায় ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহ.)–এর মতামতেও, যা আল-মুগনি (ইবন কুদামা) গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে।

অতএব, ফিকহি ও হাদিসি দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ মুসলমানদের জন্য অনুমোদিত নয়; বরং নিজস্ব ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা ইসলামের মৌলিক নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত।

চতুর্থ মাসআলা: বড়দিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো

বড়দিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিষয়টি সমসাময়িক মুসলিম সমাজে বহুল আলোচিত একটি মাসআলা। বাহ্যত এটি সামাজিক সৌজন্য মনে হলেও ইসলামী ফিকহ ও আকীদার দৃষ্টিতে বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। কারণ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো কেবল সামাজিক আচরণ নয়; বরং তা সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি মৌখিক সমর্থন প্রকাশের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেন:

“কুফরি উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।”
আহকাম আহলিয-যিম্মা

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন—যেমন কারও কাছে “তোমার উৎসব বরকতময় হোক” বা “তোমার ধর্ম বিজয়ী হোক” বলা সরাসরি কুফরির সমর্থন না হলেও তা কুফরি কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশের শামিল। আর কুরআনের ভাষায়, কুফরির প্রতি সন্তুষ্টি নিজেই একটি গুরুতর অপরাধ।

ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ.)-ও একই বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো এমন এক কাজ, যা একজন মুসলমানের আকীদাগত স্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী।
মাজমূ‘ আল-ফাতাওয়া

তবে আলেমগণ এটিও স্পষ্ট করেছেন যে, সাধারণ সামাজিক সৌজন্য, যেমন—রোগীকে দেখতে যাওয়া, দুনিয়াবি কল্যাণ কামনা করা বা মানবিক আচরণ করা—এগুলো ভিন্ন বিষয় এবং তা ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হলে শরীয়তসম্মত।

অতএব, বড়দিন উপলক্ষে বিশেষভাবে শুভেচ্ছা জানানো ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী বৈধ নয়; বরং মুসলমানদের উচিত নিজেদের আকীদা ও ধর্মীয় পরিচয় স্পষ্টভাবে সংরক্ষণ করা।

পঞ্চম মাসআলা: বড়দিন উপলক্ষে উপহার দেওয়া ও গ্রহণ

বড়দিন উপলক্ষে উপহার দেওয়া বা গ্রহণ করার বিষয়টি ইসলামী ফিকহে উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিচার্য। অর্থাৎ, যদি উপহারটি বিশেষভাবে বড়দিনের ধর্মীয় আনন্দ বা উৎসব পালন করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়, তবে তা শরীয়তসম্মত নয়। কারণ এতে মুসলমান ব্যক্তি অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ বা সেই ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মতি প্রকাশ করতে পারে।

হানাফি ফিকহে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছেফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া গ্রন্থে বলা হয়েছে—যদি উপহার দেওয়া হয় কোনো কুফরি উৎসবের সম্মানার্থে বা আনন্দের কারণে, তবে তা জায়েয নয়। একইভাবে আল-ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ তেও উল্লেখ আছে, ধর্মীয় উৎসবের উদ্দেশ্যে উপহার বিনিময় হারাম হিসেবে গণ্য।

তবে ইসলামী ফিকহে সামাজিক লেনদেন আলাদা বিষয়। যেমন—ব্যক্তিগত জন্মদিন, দাফন, রোগীকে সুস্থতা কামনা, বা সাধারণ দুনিয়াবি উপহার—যদি এগুলো কোনো ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত না হয়, তবে তা জায়েয।

ফলে, মুসলমানদের জন্য বড়দিনের প্রেক্ষাপটে উপহার দেওয়া বা গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত নয়, যদি তা উৎসব উদযাপন বা ধর্মীয় আনন্দের উদ্দেশ্যে করা হয়। মুসলমানদের উচিত নিজেদের আকীদা ও ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা এবং সামাজিক আচরণে সতর্ক থাকা।

ষষ্ঠ মাসআলা: সামাজিক সৌজন্য ও সহাবস্থান

ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে ন্যায়, সৌজন্য ও মানবিক আচরণ করার নির্দেশ দেয়। ইসলামী শরীয়তে সামাজিক সম্পর্ক ও পারস্পরিক আচরণের সীমা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত, বিশেষ করে সেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা ধর্মীয় উৎসব বা আকীদার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
““যারা দ্বীনের কারণে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায্যতাপ্রিয়দের ভালোবাসেন।”
(সূরা মুমতাহিনা, ৬০:৮)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন—এটি মুসলিমদের সামাজিক সৌজন্য, ন্যায়পরায়ণতা এবং মানবিক আচরণের অনুমতি দেয়, তবে এর অর্থ এই নয় যে তারা অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নিতে পারে।
তাফসির আল-কুরতুবি

ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে, মুসলিমরা অমুসলিমদের সঙ্গে বান্ধবী সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিবেশী এবং মানবিক সহায়তা বজায় রাখতে পারে। কিন্তু ধর্মীয় উৎসবের অংশগ্রহণ বা উৎসব উদযাপনের উদ্দেশ্যে কোনও আচরণে জড়ানো ইসলামের দৃষ্টিতে অনুমোদিত নয়।

ফলে, বড়দিনের সময় অমুসলিমদের সঙ্গে সামাজিক সংলাপ, সৌজন্য এবং সহযোগিতা ইসলামের আলোকে সম্পূর্ণ বৈধ, কিন্তু ধর্মীয় অংশগ্রহণ বা উৎসবে মিলে যাওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম।

উপসংহার

বড়দিন (Christmas) হলো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যা তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম উপলক্ষে উদযাপন করে। আধুনিক যুগে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবে মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই এ দিনে শুভেচ্ছা বিনিময় বা অংশগ্রহণের সঙ্গে যুক্ত হয়। তবে ইসলামী শরীয়ত ও আকীদার দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

কুরআন মাজিদে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ঈসা (আ.) একজন রাসূল; তিনি আল্লাহর পুত্র নন (সূরা মায়িদা, ৫:৭৫; সূরা মারইয়াম, ১৯:৩৫)। সহিহ হাদিসে নির্দেশ আছে যে, অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ মুসলমানদের জন্য অনুমোদিত নয় (সুনানে আবু দাউদ, ৪০৩১)। ফিকহি গ্রন্থ ও আলেমগণের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বড়দিনে শুভেচ্ছা বিনিময় বা উৎসবে অংশগ্রহণ শরীয়তসম্মত নয়।

একই সাথে ইসলাম ন্যায্যতা ও সামাজিক সৌজন্য মানতে নির্দেশ দেয় (সূরা মুমতাহিনা, ৬০:৮)। অর্থাৎ, অমুসলিমদের সঙ্গে মানবিক আচরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিবেশী বা সাধারণ সামাজিক সংযোগ জায়েয; তবে ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা হারাম।

বড়দিনকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের কর্তব্য হলো নিজেদের আকীদা রক্ষা করা, ধর্মীয় পরিচয় সুস্পষ্ট রাখা এবং মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যায্য ও সদাচারী হওয়া। ইসলামী ফিকহ ও আকীদার আলোকে এটি স্পষ্ট যে বড়দিন উদযাপন বা এতে অংশগ্রহণ করা সর্বদা হারাম এবং ইসলামের আকীদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।




Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter