কুরআন পড়ো জীবণ গড়ো

জীবণ ধারনের জন্য প্রয়োজন আলো, বাতাস, জল ও খাদ্য। মানুষের স্রষ্টা মহান আল্লাহ জীবণ ধারনের এসব উপকরণ প্রাকৃতিক ভাবেই মানুষের জন্যে ব্যবস্থা করে রেখেছেন। কিন্তু মানুষ নিজের অজ্ঞতার কারণে যখন জীবণ ধারণের এসব উপকরণকে দূষিত, কলুষিত ও অপরিচ্ছন্ন করে ফেলে, তখন মানব সমাজে নেমে আসে রোগ, ব্যাধি ও অশান্তি। তাই সুস্থ জীবণের জন্যে প্রয়োজন বিশুদ্ধ অনাবিল আলো, বাতাস, জল ও খাদ্য।

এতো গেল সুস্থ জীবণের কথা। কিন্তু সুন্দর ও সফল জীবণ গড়ার উপায় কি ? আর কি উপায় সুখ ও শান্তির সমাজ গড়ার ? নিশ্চয় সবাই বলবেঃ জ্ঞান, জ্ঞান, জ্ঞান! হ্যাঁ, অবশ্যই কেবল জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই তুমি গড়তে পারো সুন্দর জীবণ আর শান্তির সমাজ।

মানুষের জ্ঞান সীমিত। মানুষ তার সীমিত ও অপূর্ণ জ্ঞান দিয়ে জ্ঞান রাজ্যকে দূষিত ও অপরিচ্ছন্ন করে ফেলেছে। প্রকৃত জ্ঞানের মালিক হলেন মহান আল্লাহ। তিনিই দয়া করে সুন্দর, সফল ও শ্রেষ্ঠ জীবণ গড়ার জন্যে মানুষের কাছে সঠিক জ্ঞান পাঠিয়েছেন। সেটি  হলো “আল-কুরআন”। “আল-কুরআন” হলো আল্লাহর বাণী। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে সুন্দর, সফল ও শ্রেষ্ঠ জীবণ গড়ার গাইড বুক। শান্তি ও সমৃদ্ধির সমাজ গড়ার হাতিয়ার। অফুরন্ত জ্ঞানের উৎস।

 

মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব :-

                মানুষ পৃথিবীর একটি প্রাণী। এই পৃথিবীতে রয়েছে অসংখ্য প্রাণী, অসংখ্য জীব-জন্তু ও আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টি। মানুষ অন্যান্য প্রাণী ও জীব-জন্তুর মতো নয়। মহান সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে অন্য সকল প্রাণী ও জীব-জন্তুর চাইতে শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন। তিনি মানুষকে জ্ঞান দান করেছেন। বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন। চিন্তা শক্তি দিয়েছেন, উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়েছেন। কথা বলতে শিখিয়েছেন। সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। সত্য – মিথ্যা, ভাল – মন্দ ও ন্যায় – অন্যায়ের মধ্যে তারতম্য করার ক্ষমতা দিয়েছেন। বিবেচনা করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহন করার শক্তি দিয়েছেন। ইচ্ছা শক্তি ও ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়েছেন। দুটি প্রবৃত্তি দান করেছেন – কুপ্রবৃত্তি ও সুপ্রবৃত্তি। এভাবে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানুষকে তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বা আশরাফুল মাখলুকাত বানিয়েছেন। এবং তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্যে।

 

শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির উদ্দেশ্য:-

ইবাদত মানে কি জান? ইবাদত মানে – আনুগত্য করা, হুকুম পালন করা, নত ও বিনীত হয়ে থাকা, দাসত্ব ও গোলামী করা। অর্থাৎ তিনি মানুষকে তাঁর আনুগত্য করার জন্যে, তাঁর হুকুম পালন করার জন্যে, তাঁর কাছে নত ও বিনীত হয়ে থাকার জন্যে এবং তাঁরই দাসত্ব ও গোলামী করার জন্যে সৃষ্টি করেছেন।

আগেই বলেছি, আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছার স্বাধীনতাও দিয়েছেন, কুপ্রবণতা ও সুপ্রবণতা দিয়েছেন এবং বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত শক্তিও দিয়েছেন। ফলে, তিনি মানুষকে যা করার জন্যে সৃষ্টি করেছেন, তা করতে বাধ্য করে দেননি। অন্য সকল প্রাণী ও জীব-জন্তুকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, তা করতে বাধ্যও করে দিয়েছেন। মানুষকে তিনি বাধ্য করেননি। মানুষকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, মানুষ তা করবেন কিনা, সেটা তার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছেন।

 

সঠিক সিদ্ধান্ত:-

এখন আমি কি করবো সেটা আমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর তুমি? হ্যাঁ, তুমি কি করবে সেই সিদ্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে। যখন হজতর আলী (রাযি আল্লাহু আনহু) -এর বয়স দশ বছর। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজরত আলীকে বললেন, তোমাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর হুকুম পালন করার জন্যে। এখন তুমি কি করবে, সে সিদ্ধান্ত তুমিই নাও। হজরত আলী নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিলেন। তিনি আল্লাহর হুকুম পালন করতে শুরু করলেন। ফলে তিনি নিজেকে আল্লাহর একজন শ্রেষ্ঠ গোলাম ও দাস হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

মানুষের মর্যাদা যে অন্য সব প্রাণী ও জীব-জন্তুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ – এটাও তার একটা কারণ। অন্য সব প্রাণী ও জীব-জন্তু আল্লাহর দাসত্ব করে বাধ্য হয়ে। আর মানুষ আল্লাহর হুকুম পালন করে নিজের ইচ্ছা, নিজের বিবেক বিবেচনা ও নিজের সিদ্ধান্তে। তাই মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।

মহান আল্লাহ বলেছেন, যে মানুষ আল্লাহর দাসত্ব করে, সে সৃষ্টির সেরা জীব। আর যে মানুষ নিজের আত্মার দাসত্ব করে, সে পশুর চাইতেও অধম। এখন তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তুমি কি আল্লাহর দাস হবে, নাকি নিজের আত্মা অথবা নফসের দাস?  

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter