কে-পপ সংগীত এবং মুসলিম নব-সমাজ  : ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ

কিছু সংগীতের মনীষীগণ মনে করেন সঙ্গীত আত্মার ভরন পোষণ করে। দুঃখ কষ্ট, নিগ্রিহ ও নিপীড়িত হাল হয়ে অতিবাহিত হওয়া আমাদের জীবনে, উষ্ণতে ভোরা মরুভুমির পৃষ্ঠে এক ফোটা শীতল কুয়াশা যেমন শান্তি দায়ক, ঠিক তেমন মানব জীবনে সংগীত ও সূর বিনম্র আরাম দায়ক। উস্তাদ বিসমিল্লাহ খান, মহাম্মাদ রফি, লতা মঙ্গেশকার, মিকেল জ্যাক, মহাম্মাদ রাফি, কুমার শানুর মতো বিজ্ঞ সঙ্গীত শিল্পিরা এমন মন্তব্য করে গেছেন। তাদের শুভাশিত সুন্দর মলাম ধবনিতে আত্মহারা হয়েছে অগনিত মানুষজন, যুগে  যুগে হারমনিয়াম, তবলা, সানাই'র শুরে হৃদয় ভেসে গেছে নারী ও পুরুষের, শিশু থেকে বৃদ্ধদের হৃদ্গভীরে অমর এক স্থান করে নিয়েছেন এই সব সঙ্গীত শিল্পীরা, সর্বপ্রথম মাইকেল শিপারদ নামক একজন সঙ্গীত  শিল্পী ১৮০০ শতাব্দীতে পোপ সংগীত (Pop-Music) খাতা কলমে প্রকাশিত করেন, এবং ১৯০০ শতাব্দীতে নাত কিং কোল সর্ব প্রথম ইউরোপ মহাদেশে মঞ্চে উপস্থাপন করেন। এমন ভাবে ধিরে ধিরে দিকে দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক, স্বভাব সঙ্গীত ও বাজনার সূর। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকমের সঙ্গীত শোনে, কারো ধীরস্থীর সঙ্গীত পছন্দ, তো কারো আবার জোর সুর ভালো লাগে, কেউ কেউ আবার পার্টী হাঙ্গামা হুই হাল্লার পাগল, রাত দিনের মতো সময়ের গতিবিধির পরিবর্তে নানান ধরনের গান বাজনার এপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইট তৈরি হুয়েছে, দ্রুত উন্নতির যুগে ইন্টারনেট মানব জীবন তালিকায় অনেক বৃহৎ ভুমিকা পালন করছে। নতুন প্রজন্মের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীত, কোরিয়ান সঙ্গীতের -যার সংজ্ঞা হলো কে-পোপ- চাপটে গোটা বিশ্ব, মুসলিম ঘরের সন্তানরা ও রেহায় পাচ্ছে না এই কোরিয়ান শিল্পির আবিরভাব থেকে, সঙ্গীত যা আল্লাহর থেকে দূরে করে, আখেরাতের স্মরণ করা ভুলিয়ে দেয়, সম্পূর্ণ  একটি  দাজ্জালি ফিতনা তা কখনো কিভাবে মানসিক শান্তি দিতে পারে?

সংগীত মানসিক শান্তিদায়ক  কীভাবে হতে পারে ? 

উপর উল্লেখিত গায়ক, সঙ্গীত শিল্পিদের মন্তব্য অনুযায়ী সঙ্গীত মানসিক শান্তির একটি করুন মাধ্যম, কেননা গানের সূর, শব্দ মস্তিষ্কে এমন ভাবে প্রভাব সৃষ্টি করে যা দ্বারা শরীরে প্রকাশিত হয় অসংখ্য ডোপামিন নামক হরমোন, যার কারনে অনেক শান্তি, আধ্যাতিক সুখ। কিন্তু  সঙ্গীত সরল প্রকারে এত আরম দায়ক হয় তাহলে পুরান থেকে এই পর্যন্ত সঙ্গীত শিল্পিরা আত্যহাত্যর পথ কেন বেছে নিয়েছেন। কোরীয়ান পপ সংগীত বর্তমান বিশ্বের বুকে রাজ্ করে চলেছে, কে-পপ তারকারা শিশু থেকে যুবক সবার কাছে খুব জনপ্রিয়, চক্ষু শীতল বায়ু, কেননা তারা সংগীতের মাধ্যমে মানুষের শান্তি প্রদান করছেন, তাদের দাবি অনুযায়ী তারা সংগীত প্রচারক, অতএবতাদের মতো সুখী আর বিলাসিত জীবন কারো নেই। 

তাইই যদি হয়ে থাকে তাহলে সেপ্টেম্বর ২০২২ কে-পপ তারকা মুনবীন আধ্যাতিক ও মানসিক সুখ শান্তির অস্থিরতার নিরপেক্ষে নিজের বাসস্থানে আত্মহত্যা কেন করেন? , তার বোন মনসুয়া ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত এক দৈনিক সমাজ মাধমের সাক্ষাতে মুনবীনের সম্পর্কে আরো বলেন যে; “আমার ভাই মুনবীন শৈশব কাল থেকে পপ তারকা হবার স্বপ্ন ছিল আমি তখন অনেক ছোট, ৪ বছর বয়েস হবে আমার, তখন আমার বাবা মারা যান, সবরকমের পরিস্থিতির সঙ্গে লড়ে করে অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করে মাত্র ২০ বছর বয়সে আমার ভাই কোরিয়া ছাড়া অন্য অন্য দেশের মানুষের হৃদয়ে বিশাল আকাশ জুড়ে জায়গা করে ফেলে, আর্থিক, বিলাস বহাল জীবনে খুব সুখী ছিল আমার ভাই , হটাৎ করে কোনো কারণ ছাড়া আত্মহত্যা করে"।

পপ সংগীত কারখানা ও শিল্পীদের ঘোষণা অনুযায়ী তারা সব থেকে সুখে আর শান্তিতে বসবাস করে, কিন্তু অন্য দিকে একের পর এক পপ তারকা দুশ্চিন্তা, উগ্র মানসিক চাপ ও দুঃখের কারণে আত্মহত্যা করে চলেছে, সুললী নামক এক মহিলা পপ সংগীতকারিনী শুধু মাত্র ১৯ বছর বয়েসে আত্মহত্যা করে, তার বন্ধুব্বি গোও হারা দ্বারা এই খবর প্রাপ্তি হয় যে সুললী আমাদের পপ ফিক্স ব্যান্ডে আসার চার বছর পরে খুব টেনশানে পরে যায়, বিলাস জীবন হওয়া সত্ত্বেও কোথাও সে সুখ খুঁজে পায়নি। 

কিম জং ইহুম , গোও হারা ,বড় হয় মি, ওই সমস্ত সংগীত শিল্পীরা শান্তির জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে, পৃথিবীতে সব থেকে বেশি কোরিয়ান সংগীত শিল্পীরা করে থাকে, তা ছাড়া গায়ক, ও ছবি শিল্পীরা আত্মহত্যা করে থাকে। একের পর এক আত্মহত্যায়  রূপান্তর হচ্ছে, আর অন্য দিকে সংগীত আধ্যাতিক সুখ ও শান্তির প্রতীক বলে দাবি করা হচ্ছে, পাঠক মশাই! আপনার কি মতামত? আপনি কি মনে করছেন ?

সংগীত- ইসলামের দৃষ্টান্ত 

সুখী জীবনের জন্য প্রয়োজন আনন্দ আর বিনোদন, বিনোদন হীনতার কারণে মানুষ ভোগে হতাশায়, এবং তার কারণে জীবনে তৈরী হয় ব্যর্থতা, বলা হয় ইসলাম জীবনের পরিপূর্ণ বিধান, সুতরাং ইসলামে গান বাজনা এবং বিনোদন সম্পর্কে কী বোঝায়? ইসলাম জীবনের এমন এক বিধান যেখানে জীবনের সমস্ত প্রকারের চাওয়া পাওয়া গুলোকে পূরণ করা হয়েছে, শুধু মাত্র কিছু বিধি বিধান মানার নাম ইসলাম নয়, গদ্য, পদ্দ প্রনয়ণ, হাস্যরস, কৌতুক, নাটক, গল্প, খেলা ধুলা, ইত্যাদি সব বিষেয়ে ইসলামে সঠিক পথ আছে। আলাদা আলাদা ইসলামী  পন্ডিত দের মধ্যে বিনোদন ও সংগীত নিয়ে দ্বন্ধ আছে, তবুও অনেক  বিশেষজ্ঞ দের মত অনুযায়ী-কিছু কিছু সংগীত হালাল অর্থাৎ যা শুনলে বা পড়লে কোনো পাপ হতে হবে না, তবে সেই সব সংগীতে যেন কোনো প্রকারের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার না করা হয়, যেমন তবলা, হারমোনি, সানাই, বাঁশুরি, ইত্যাদি। 

পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ সুবহান তালা সূরা লোকমান সংগীত বিনোদন সম্পর্কে উল্লেখ করছেন :- ومن الناس من يشتري لهو الحديث ليضل عن سبيل الله بغير علم ويتخذها هزوا أولئك لهم عذاب مهين

তাফসীরে আল-বয়ান অনুযায়ি যার অর্থ হলো: আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব। 

তাফসীরুল মুবতাদির ব্যাখ্যা অনুযায়ী:কতক মানুষ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশতঃ অবান্তর কথাবার্তা (গান-বাজনা) ক্রয় করে আর আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি। 

তাফসীরে জাকারিয়া : আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য আসার বাক্য কিনে নেয়,জ্ঞান ছাড়াই,এবং আল্লাহর দেখানো পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।

তাফসীর তাবরীর (২১/৪০): ব্যাখ্যা অনুযায়ী উল্লেখিত আয়াত গান বাজনা, ঢোল, এবং অন্য অন্য যাবতীয় জিনিস যা দ্বার গান বাজনা এবং সঙ্গীত সুর তৈরি হয়, সেই সমস্ত বস্তুর দিকে ঈশারা করা হয়েছে।

তাফসীর ইবনে কাসীর (৩/৪৫১): আল-হাসান আল-বাসরী বলেছেন: এই আয়াতটি গান ও সঙ্গীত যন্ত্র (অর্থাৎ কাঠের বাঁশি) সম্পর্কিত হিসেবে নাযিল হয়েছে। 

তাফসির আল-সাদি (৬/১৫০):আল-সাদী বলেছেন: এতে সব ধরনের হারাম কথা বার্তা, সব অবসর সময়ের আলোচনা এবং মিথ্যা, এবং সব ধরনের নাপাক কথা অন্তর্ভুক্ত হয় যা কুফর এবং অসন্তুষ্টি উত্সাহিত করে; যারা সত্যকে খণ্ডিত করার জন্য এবং মিথ্যার পক্ষে তর্ক করার জন্য কথা বলে; এবং পরচর্চা, অপবাদ, মিথ্যা, গালিগালাজ এবং অভিশাপ; শয়তানের গান ও সঙ্গীত যন্ত্র; এবং এমন সঙ্গীত যন্ত্র যা আধ্যাত্মিক বা পার্থিব কোনো উপকারে আসে না। 

তাফসীর কুরতুবী অনুযায়ী উল্লেখিত আয়াতে“লাহওয়াল হাদিস” এই  শব্দদুটির অর্থ গাফেল হওয়া বা যেসব বিষয় মানুষকে প্রয়োজনীয় কাজ থেকে গাফেল করে দেয় সেগুলোকে বলা হয়। ইবনে মাসউদ্দ, ইবনে আব্বাস ও জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর মতে এর অর্থ, গান-বাদ্য করা। অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও তফসীরবিদগণের মতে এর অর্থ গান, বাদ্যযন্ত্র ও অনর্থক কিসসা-কাহিনীসহ যেসব বস্তু মানুষকে আল্লাহর ইবাদত ও স্মরণ থেকে গাফেল করে, সেগুলো সব কিছু -লাহওয়াল হাদিস- এর মধ্যে শামিল হবে। ইবনে আব্বাস রদীয়াল্লাহ আণহূ ঐ আয়েত সম্পর্কে বোলেছেন যে গান ও অনুরূপ অন্যান্য বিষয় বোঝানো হয়েছে যা আল্লাহর ইবাদত থেকে গাফেল করে দেয়। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, অধিকাংশ সাহাবী উল্লেখিত আয়াতে -লাহওয়াল হাদিস-এর তাফসীর করেছেন গান-বাজনা করা। 

ইমাম হাসান বসরী বলেন যে ঐ আয়েত টি গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সংক্রান্তে নাজিল হয়েছে, তা ছাড়া তাফসীর ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে যে-

وَٱسْتَفْزِزْ مَنِ ٱسْتَطَعْتَ مِنْهُم بِصَوْتِكَ وَأَجْلِبْ عَلَيْهِم بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِى ٱلْأَمْوَٰلِ وَٱلْأَوْلَـٰدِ وَعِدْهُمْ ۚ وَمَا يَعِدُهُمُ ٱلشَّيْطَـٰنُ إِلَّا غُرُورً

আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে সম্বোধন করে বলেন: “তোমার কন্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত কর।” উপরে নিম্নলিখিত আয়ত থেকে এটি প্রকাশ্য যে সংগীত ও গাণ বাজনার মধ্যে যদি আল্লাহর সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয়, আল্লাহর  স্মরণ থেকে গাফীল করে দেয়, এবং দুনিয়ার রং তামাশায় লিপ্ত করে তোলে তাহলে সেইসব কিছুই হারাম ও  নিষেধ। আল্লামা ইবন আল-কায়্যিম বলেন: যারা আল্লাহর আনুগত্যে নয়, যারা বাঁশি বা অন্যান্য কাঠের সঙ্গীতযন্ত্র বাজায়, অথবা যারা  ড্রাম বা ঢোল বাজায়, তারা হলো শয়তানের কণ্ঠস্বর, এবং যারা আল্লাহর অবাধ্যতা করার জন্য শয়তানের পথে চলে তারা সব শয়তানের অনুসরণ কারী এবং পথভ্রষ্ট।  

সঙ্গীত এবং মুসলিম উলামাদের দৃষ্টিকোণ

সঙ্গীত  ইসলামী মতানুযায়ী নিষেধ কিনা তা নিয়ে মুসলিম উলামাদের মধ্যে অনেক মতবিরোধ রয়েছে,  কিছু ওলামা সম্পূর্ণ সঙ্গীত, গান বাজনা, বাদ্যজনন্ত্র ব্যাবহর করার বিপক্ষে, তো সেখানে অনেক বিজ্ঞ ওলামা সঙ্গীত উপস্থাপন, এবং শ্রবণ করা ইসলামী দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী কিছু সর্তর সাথে জায়েয বলে জানিয়েছেন। বাদ্যযন্ত্র, গায়ক, গায়িকা বিপরীত লিঙ্গের দর্শকদের মাঝে সঙ্গীত পরিবেশন করা, ড্রাম, তবলা, বাঁশি, হারমোনিয়াম, অথবা এমন কন যন্ত্র যা দিয়ে যৌন চাহিদা উত্তেজিত হয়, এই ধরনের সব কিছু ইসলামে হারাম। আল্লামা আবু বাকর ইবনে আল-আরাবি সংগীত প্রবেশন করা এবং শ্রবণের বিষয়ে বলেন "সংগীত ও গীত পরিবেশন ও শ্রবণর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কোন সঠিক হাদিস পাওয়া যায় না, তবে সংগীতের বাক্য, শুর তাল যদি কুফরি শির্কের হয় তাহলে তা সম্পূর্ণরূপে হারাম"এবং  ঐ প্রসঙ্গে ইবনে হাজরাম বলেন "এই বিষয়ে যা কিছু বলা হয়েছে তা মিথ্যা এবং কপট, অর্থ সংগীত সম্পূর্ণ রূপে হালাল যদি তাহা আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুসরণ করতে প্রেরণা জাগায়। আন্তর্জাতিক  ইসলামিক বক্তা ডাক্তার জাকির নায়েকের মত অনুযায়ী বাদ্যযন্ত্র সাধারণত হারাম, তবে দুটি বাদ্যযন্ত্র দাফ এবং তাম্বুরিন যা হাদিসেও উল্লেখ আছে বৈধ। তথ্যসত্রে তিনি জানান ইবনে আরাবি এর মন্তব্য অনুযায়ী নবী মুহাম্মদ (সা.) দাফ বাজানোর অনুমতি দিয়েছেন, একটি হাদিসে এসেছে যে নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সময়ে ঈদের দিন দাফ বাজানোর অনুমতি দিয়েছেন। আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ রহিমাহুমুল্লাহর বর্ণনা অনুযায়ী নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন দাফ বাজানো নারীদের জন্য ঈদের দিন এবং বিশেষ অনুষ্ঠানে জায়েয। তাম্বুরিন সম্পর্কে হাদিসে  নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সময়ে এবং তাঁর নির্দেশে তাম্বুরিন বাজানোর উদাহরণ পাওয়া যায়, ইবনে মাজাহর বর্ণনা অনুযায়ী নবী মুহাম্মদ (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন: ঈদের দিনে মুসলিম মহিলারা দাফ ও তাম্বুর বাজাতে পারেন। এই হাদিসগুলো ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিশেষ দিন এবং উৎসবের সময়ে সীমিত সংখ্যক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়, এবং তা মূলত নারীদের জন্য বিশেষ করে ঈদের সময় তবে ঐতিহাসিক এবং ভিন্ন মতের জন্য বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে বিভিন্ন মতামত বর্তমানে পাওয়া যায়।

আইরিশ টাইমস অনুযায়ী একাধিক   মোসলমান আজ কাল  আধুনিক আলেমদের মতামত অনুসরণ করেন যেমন ইউসুফ আল-কারাদাওয়ি, তারিক রমযান, ইয়াসির কাজী, হামযা ইউসুফ, ইত্যাদি যারা বলেন যে সঙ্গীত হারাম শুধুমাত্র সেই প্রকারের গাণ বাজনা, গীত যেগুলি স্পষ্টভাবে একজন মুসলিম কে সমপূর্ণ নিষিদ্ধ কার্যকলাপে লিপ্ত করে দেয়, যেমন মদ্যপান এবং অবৈধ যৌন সম্পর্ক ইত্যাদি। ইমাম গাজালি সঙ্গীতের সম্পর্কে একাধিক হাদিস উল্লেখ করেন  এবং গান  ও সংগীত বৈধতা সম্পর্কে বলেন সংগীত জায়েজ  হতে পারে যদি তা পাপাচারমূলক না হয়, শ্রোতার উপর ভালো, নম্র, শৃঙ্খলই প্রভাব সৃষ্টি করে। তা ছাড়া সঙ্গীতের মধ্যে রয়েছে আধ্যাত্মিক উপকারিতা যেমন আত্মার প্রশান্তী এবং সংগীতের মধ্যে আল্লাহর স্মরণ সহায়্ক বাক্য থাকে, তেমন গাণ বাজনা ও ইসলামে অনুমতি দেয়া হয়েছে,সঙ্গীত হালাল বলার সাথে সাথে ঈমাম গাজ্জালি জানিয়েছেন যে সঙ্গীত যদি অনৈতিক হয়, ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা থেকে বিভ্রান্ত করে বা অতিরিক্ত উত্তেজিত করে তলে তা পরিত্যাগ করা উচিত। আয়েশা (রা.) দ্বারা বর্ণিত যে নবী মুহাম্মদ (সা.) ঈদ উদযাপন এবং বিবাহ অনুষ্ঠানের সময় ঢোল বাজানো এবং গান গাওয়াকে শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি 949) অন্য হাদিসে নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন "আমার অনুসারীদের মধ্যে এমন লোক থাকবে যারা অবৈধ যৌন সম্পর্ক, রেশম পরিধান, মদ্যপান এবং বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারকে বৈধ বলে মনে করবে।" (বুখারী 5590)। উল্লেখিত হাদিস ও ঈমাম গজালির সঙ্গীত বিষয়ী চিন্তা চেতনা অনুযায়ী সংগীত উপযুক্ত প্রয়োজন, ইসলামী রীতি বিধি মেনে শ্রবণ করা, উপস্থাপন ও প্রবেশন করা জায়েজ।

আমীর খসরু সুফি সঙ্গীতের একজন বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। শামা; সুফি সঙ্গীতের তার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর প্রতি প্রেম ও ভক্তির প্রকাশ করতেন, তিনি  বিশ্বাস করতেন যে সঙ্গীত মানুষের আত্মাকে প্রশান্তি ও আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। কাওয়ালী, শামার মতো এক প্রকার সুফি সঙ্গীত,যার বাণী আমীর খসরু, তিনি কাওয়ালীর মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষার প্রচার করতেন। আমীর খুসরুর মতামত অনুযায়ী সঙ্গীত আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক দিককে গভীরভাবে প্রভাবিত করে তাই  তিনি সঙ্গীতকে আল্লাহর স্মরণ এবং মানুষের আত্মার প্রশান্তির মাধ্যম হিসেবে দেখতেন।

কে-পোপ সংগীত এবং মুসলিম নব সমাজ 

২০০০ সালের পরে যারা জন্মেছে চলতি কথায় যাদের বলা হয় জেন জ়ি প্রজন্ম, খুব নিখুত ভাবে এক দল গোলাপি-সাদা-সবুজ চুল, হালকা মেক-আপ, গলায় হার, কানে দুল, হাই-ফ্যাশনড জুতো পরা এক দল মিষ্টি ছেলে ঘরের দেওয়াল থেকে, ফোনের স্ক্রিন থেকে মন জুড়ে জায়গা করে নিচ্ছে এই প্রজন্মের। সাম্প্রতিক যে কোনও বলিউড, হলিউড বা সঙ্গীত ভাণ্ডারের গানের চাইতে ‘আই নো হোয়াট আই অ্যাম/ আই নো হোয়াট আই ওয়ান্ট/...ইউ কান্ট স্টপ মি লাভিং মাইসেল্ফ’ অনেক বেশি পছন্দ জেন জি নামক এই প্রজন্মের। কারা এই চোখ  ধাঁধানো পুরুষ, তাদের সঙ্গীত কণ্ঠ এমন ও কি আছে যার স্রতে ভেসে চলেছে আমাদের নতুন  প্রজন্ম, অগনিত টিন বয়েসের মেয়ে দের স্বপনের পুরুষ এই বিটিএস নামক ব্যান্ড। কে ও কারা এই ব্যান্ড? তাদের চমকিত নখত্রের পিছনে আছে অগনিত কাল দিক, যা আমাদের আজানা। 

বিটিএস হল দক্ষিণ কোরিয়ার একটি জনপ্রিয় কেপপ (K-Pop) ব্যান্ড, যা বিশ্বব্যাপী তরুণ প্রজন্মের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। ২০১৩ সালে ডেবিউ করা এই ব্যান্ড সাত জন সদস্য নিয়ে গঠিত: আরএম (RM), জিন (Jin), সুগা (Suga), জে-হোপ (J-Hope), জিমিন (Jimin), ভি (V), এবং জাংকুক (Jungkook), বিটিএস-এর সঙ্গীত ও নৃত্যের সমন্বয়, তাদের গভীর ও মানবিক গানগুলির লিরিক্স, এবং ফ্যানদের সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্ক তাদের বিশ্বব্যাপী সাফল্য এনে দিয়েছে। "আর্মি" নামে পরিচিত বিটিএস-এর ফ্যানবেস বিশ্বের সবখানে ছড়িয়ে রয়েছে এবং তাদের অনুরাগীরা বিটিএস-এর প্রতিটি নতুন রিলিজকে ধুমধামের সাথে গ্রহণ করে, বিটিএস-এর গানগুলি কেবলমাত্র প্রেম বা রোমান্স নিয়ে নয়, বরং তারা মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক অবিচার, এবং আত্মপরিচয়ের মতো গভীর বিষয়গুলো তুলে ধরে। এটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাদের প্রভাবশালী করে তুলেছে এবং তারা অনেকের কাছে প্রেরণা হয়ে উঠেছে।

নব্বইয়ের দশকে চিনে যখন কোরিয়ার পপ সংস্কৃতির জোয়ার আসে, তখন এক চিনা সাংবাদিক ‘হালয়ু’ নামটি দেন, টিভি সিরিজ় (কে-ড্রামা), ব্যান্ডের গান (কে-ব্যান্ড) প্রথমে চিন, পরে জাপানে উঠতি প্রজন্মকে মাতিয়ে তোলে,বছর দশেক আগে ইউটিউবে ভাইরাল হয়ে যায় কোরিয়ার পপ স্টার সাই-এর গাংনাম স্টাইল। ইউরোপ-আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়ে হালয়ু তবে মণিপুর ও ভারতের অন্য উত্তর-পূর্ব রাজ্যে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে ঢুকতে শুরু করে কোরিয়ার পপ গান, সিরিয়াল, সিনেমার সিডি ডিভিডি পোস্টার, টি-শার্ট অবশ্যই পাইরেটেড এবং ‘কপি’ সামগ্রী হিসেবে,মণিপুরে হিন্দি সিনেমা-সিরিয়াল নিষিদ্ধ হয়ে গেলে হুহু করে আসে ‘হালয়ু’ তরঙ্গ। হালয়ুর দ্বিতীয় পর্যায়ে সংস্কৃতির মূলস্রোতে ঢুকতে শুরু করল কে-পপ কে-ড্রামা কে-ফ্যাশন কে-বিউটি,‘আমেরিকান ড্রিম’-এর জায়গায় ঢুকে পড়ল কোরিয়ান ড্রিম।

বিগ হিট মিউজিক নামক কোরিয়ান এক সঙ্গীত ইন্ডাস্ট্রি যারা কোরিয়ার অলিতে গলিতে গিয়ে ছোট বয়েস থেকে শিশুদের তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে আসে এবং তাদের খুব ভিন্ন আর নিখুত ভাবে ট্রেনিং দিয়ে পোপ সংগীতের জন্য তৈরি করে, তাদের মধ্যে থেকে খুব অল্পজন কেই যোগ্য বলে গ্রহন করা হয়। এমন করে তারা এখন ওয়ার্ল্ড কে পোপ অডিশন কাজ শুরু করেছে যা দ্বার  বিশ্বে থেকে নব প্রজন্মকে খুব অল্প বয়েস  থেকেই তাদের আয়েত্তে আনতে পারে, এবং তাদের ব্যবসা বানিজ্য, কোরিয়ান সংষ্কৃতি, সভ্যতা আন্ত্রজাতিক ভাবে গড়ে তুলতে পারে। আজ কাল তাদের সঙ্গীতের সঙ্গে জুক্ত বিটিএস বিশ্বের নারীদের তাদের প্রতি আসক্ত ও স্পনের রাজ কুমার করে তুলেছে, তাদের জন্ম দিনে তাদের ভক্ত “আর্মি” বিদ্যালয়, বাড়ি, গাড়ি, গলি, দোকানপাট সব জাইগায় ঝকঝকে করে সাজিয়ে তলে, এমন করে করিয়াতে বসে থাকে যে কে-পপ ব্যান্ড পৃথিবীজুড়ে নরম শক্তির প্রদর্শন করে চলেছে।

আমাদের নব প্রজন্ম পোপ সংগীতের স্রতে ভেসে যাছে, তারা নিজেরাও জানে না কোন দিশায়  তারা চলছে, তাদের বিষয়ে সত্য বাস্তবতা তুলে ধরলে তার একদম সহ্য করতে পারে না, খুব রাগান্বিত হয়ে যায়, গালি গালাজ, কুতশিত ভাষা, নোংরা পোষ্ট আর ট্রেন্ড ছরিয়ে পড়ে। ভারতে কোরিয়ান ভাষার জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মূল কারণ কে-পপ, কোরিয়ান ড্রামা, এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাংস্কৃতিক প্রভাব,  কোরিয়ান কালচারাল সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২২ সময়কালে ভাষা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০% বৃদ্ধি পেয়েছে, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কোরিয়ান ভাষায় কোর্স অফার করছে, ডুওলিঙ্গো-এর ২০২২ সালের রিপোর্টে ভারতে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫৬% বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০২৩ সালে কোরিয়া ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ৩০,০০০ শিক্ষার্থী কোরিয়ান ভাষা শিখছেন, যা পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। একটি  শিক্ষা প্রাপ্তি ওয়েবসাইট র ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী গত তিন বছর নবপড়ুয়ারা ৯০% থেকে ও বেশী কোরিয়ান ভাষা শিখেছে শুধু মাত্র কোরিয়ান পোপ গানের প্রতী আসক্ত হয়ে, আন্ত্রজাতীক গন মাধ্যম অনুযায়ী কোরিয়ান নুডুলস “রামায়ুম” ১৭৮% পরিমানে বেড়েছে, এছাড়া কোরিয়ান হটেল, রেস্টুরেন্ট, কেফে, বার ভারত ছাড়া সপ্ত মাহাদেশে তড়িৎগতিতে বেড়ে চলেছে, জেন-জি জেনেরেশন তাদের নিজেদের সভ্যতা, খাদ্য, পরিধান ছেড়ে দিয়ে ঐ সংগীতের মাধ্যমে কোরিয়ার আসবাবপত্রের দিকে ধাবিয়ে পড়ছে। তা ছাড়া ও টি টি টেলিভিশনের মাধ্যমে গভীরভাবে ছেয়ে আছে কে-ড্রামা অর্থাৎ কোরিয়ান সিনেমা, ও বিনোদন জগতের পরিমান ও টি টি প্লাটফর্মে  ৩০০% বেড়েছে, ভারতবর্ষে তথাকালিন অনুমান অনুযায়ী ৩৭০% বেশী। কোরিয়ান সরকার তাদের সভ্যতা, ও সংস্কৃতি দ্বার তাদের দেশের অর্থ নীতির ঢাঁচা শক্ত করছে, যেমন প্রতি টি দেশের নিজস্ব আলাদা আলাদা থিওরি থাকে, কোন কোন দেশ পরিকাঠামো ,আবার কোনো দেশ পর্যটনকেন্দ্র করে, তেমন করিয়া বি টি এস ও কে-ড্রামা দ্বার সেই কাজ করছে যাকে THE HALLYU STRATEGY বলা হয়। Changwon K-pop World Festival প্রতি বছরের গ্রীষ্মের আর শরতের সময় দুনিয়া ভরে শুধু একটি নাম বিটিএস আর ব্লাকপিঙ্ক, নব প্রজন্ম এদের পিছনে দিন রাত ভুলে, নিদ্রা, আন্নদন, আশ্রয়ী ত্যগ দিয়া তাদের প্রডক্ত অ্যান্ড কনসার্ট গুলাতে অংশগ্রহ্ন করা নিজের দায়িত্ব মনে করে। 

 لَيَكونَنَّ مِن أُمَّتي أقْوامٌ يَسْتَحِلُّونَ الحِرَ والحَرِيرَ، والخَمْرَ والمَعازِفَ، ولَيَنْزِلَنَّ أقْوامٌ إلى جَنْبِ عَلَمٍ، يَرُوحُ عليهم بسارِحَةٍ لهمْ، يَأْتِيهِمْ -يَعْنِي الفقِيرَ- لِحاجَةٍ، فيَقولونَ: ارْجِعْ إلَيْنا غَدًا، فيُبَيِّتُهُمُ اللَّهُ، ويَضَعُ العَلَمَ، ويَمْسَخُ آخَرِينَ قِرَدَةً وخَنازِيرَ إلى يَومِ القِيامَةِ 

রসুল সাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে শেষযুগে এমন এক দল বিদ্যমান হবে যারা  হারাম জিনিসকে হালাল মনে করবে, যিনা ও বেভিচারকে গনাহ মনে করবেনা, মাদক দ্রব্য তাদের উঠতে বসতে পান করবে, এবং শেষের দিকে তিনি “আল-মাযিফ” বলে উল্লেখ করেন, যার মূল অর্থ হলো এমন গান জাতীয় বেন্ড, সঙ্গীত জাতীয় বস্তু, বাঁশুরি ও জাবতীও সঙ্গীত যন্ত্র, সেই সব মানুষদের সত্য ও ইসলামের সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য আহব্বান করা হবে কিন্তু তারা আজ না কাল এমন ভাবে অলসতা দেখাবে, দায়ীদের তুচ্ছ করবে। সঙ্গীত শয়তানের প্রতারনা শুনতে শুনতে মানুষের মনের মধ্যে মুনাফিকতা ও ইমান হারিয়ে যায়। বিটিএস এর নয়তীক্তা দেখে মানুষ তার ভক্ত হছে, এরা এক প্রকারের দজ্জালের অনুসারনকারী।

আজ আমরা ও আমাদের নব সমাজ এই কমল দজ্জালের অনুসরন করছি, আমাদের এইসব ত্যাগ করে আল্লাহর রসুল এবং ইসলামের রাস্তায় যারা সংগ্রাম করেছেন তাদের অনুসরণ করা এবং ভক্ত হবা অতান্ত জরুরী, এই পোপ ব্যান্ড সমকামিতা, নোংরামি, এবং খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসরণ করে থাকে তাই তাদের ভক্ত হওয়া আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ আমাদের এই অবৈধ সমাজ থেক হিফাজত করুন- আমিন।  




Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter