পরনিন্দা ব্যাভিচারের থেকেও খারাপ

 মানবতার চরম শত্রু । পরনিন্দার মাধ্যমে নিরীহ মানুষের মানহানী করা হয় । সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় । জনগনের মধ্যে শত্রুতা তৈরি হয় । বিশেষত দুর্বল অথবা গরীব মানুষদের সম্মান সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলে সমাজের দুষ্ট বাকপটু লোকেরা । গীবাত বা পরনিন্দা এক ধরনের সামাজিক অত্যাচার । ইসলাম এরকম অমানবিক অত্যাচারকে চরমভাবে ধিক্কার জানিয়েছে । পরনিন্দা ও চোগলখোরী একটি সামাজিক অপরাধ । পরনিন্দার মাধ্যমে মানুষের মান সম্মানের ক্ষতি সাধন করা হয় । নিন্দিত ব্যাক্তির অনুপস্থিতিতে নিন্দা করা হয় বলে, সে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ পাইনা । অযথা মানুষের কাছে সন্দেহের ও ঘৃণার পাত্র হতে হয় নিন্দিত ব্যাক্তিকে । কিন্ত তার সাক্ষাতে নিন্দা করা হলে নিন্দুকের কথার উত্তর দেওয়ার সুযোগ পায় সে, এসব কারণে গীবাত বা পিছনে নিন্দা করা হারাম বা অবৈধ । এতে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয় এবং সামাজিক সম্পর্ক হয়ে ওঠে বিষাক্ত । সমাজে যাদের জনবল ও ধনবল থাকে, তারা জিতে যায় কিন্ত দুর্বল অত্যাচারের শিকার হয় । এজন্য কুরআন ও হাদীসের অনেক স্থানে গীবত ও পরশ্রী কাতরতাকে কঠোর ভাবে নিন্দা করা হয়েছে । 

عن ابي سعيد و جابر رضي الله عنهما قالا قال رسول الله ﷺ الغيبت اشد من الزنا قالوا يا رسول الله و كيف الغيبت اشد من الزنا قالﷺ ان الرجل ليزني فيتوب الله عليه و في رواية فيتوب فيغفر الله له و ان صاحب الغيبت لا يغفر له حتى يغفرها له صاحبه و في رواية انس رضي الله عنه قال صاحب الزنا يتوب و صاحب الغيبت ليس له توبة رواه البيهقي مشكوة صفحة 415 

অর্থঃ হজরত আবু সাঈদ ও জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসুল বলেছেনঃ পরনিন্দা ব্যাভিচার অপেক্ষাও জঘন্য । তারা (সহচরগণ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) পরনিন্দা কীভাবে ব্যাভিচার অপেক্ষা জঘন্য? তিনি (সঃ) বললেন কোন ব্যক্তি ব্যভিচার করে অতঃপর তৌবা করে, আল্লাহ তায়ালা তার তৌবা গ্রহন করেন । অপর এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর সে তৌবা করে, ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন । কিন্তু পরনিন্দাকারীকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না, যে পর্যন্ত না যার নিন্দা করা হয়েছে সে ক্ষমা করে দেয়। হজরত আনাস (রাঃ) এর বর্ণনায় আছে নবী (সঃ) বলেছেনঃ ব্যভিচারী তৌবা করে, কিন্ত পরনিন্দা কারীর তৌবা নেই । বায়হাকী, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪১৫ 

 

উভয়টি কাবীরা গুনাহ বটে । তবে যিনা হল আল্লাহর হকের উপর হস্তক্ষেপ । আর শরিয়তে তার সাজার বিধানও রয়েছে । কিন্ত গীবত এর সম্পর্ক সরাসরি মানুষের হকের সঙ্গে এবং দুনিয়াতে তার সাজার কোন বিধান নেই । মানুষ মাফ না করলে কখনও মাফ হবে না । তাই গীবত অর্থাৎ পরনিন্দা যিনা বা ব্যাভিচার ওপেক্ষা জঘন্য ও কঠোরতম ।  

“এবং পরনিন্দাকারীর জন্য তৌবা (অনুশোচনা) নেই” সম্ভবতঃ এই জন্য বলা হয়েছে যে, ব্যাভিচার কারীর মনের মধ্যে আল্লাহর ভয় সঞ্চারিত হয় এবং এই চিন্তায় তার মন অন্তর কাঁপতে থাকে যে, আল্লাহ যদি পাকড়াও করেন তবে মুক্তি পাওয়া যাবেনা এই জন্য সে তার এরূপ ভ্রষ্টাচারের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে । কিন্ত গীবত আল্লাহর দৃষ্টিতে মহাপাপ হলেও নিন্দুক তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে কেননা যে, যখন কোন অন্যায় কাজ জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তখন তার মন্দত্বকে কেউ মন্দ মনে করেনা বরং বৈধ মনে করে এবং অবিশ্বাসের ঘূর্ণাবর্তে জড়িয়ে পড়ে । অথবা একথার অর্থ এও হতে পারে যে নিন্দুক ব্যাক্তি তৌবা করে কিন্তু তার তৌবা ততক্ষণ পর্যন্ত গৃহীত হয়না যতক্ষন পর্যন্ত নিন্দিত ব্যাক্তি ক্ষমা না করে ।  

আশা করি এতদূর পড়ার পর পাঠকের মনে আর কোন সন্দেহ নেই যে এই প্রবন্ধ দ্বারা কি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । পাঠকেরা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন পরনিন্দা কতটা খারাপ এবং জঘন্য জিনিষ । এই জিনিষ বিষের থেকে কম নয় এর থেকে দূরে থাকেতেই নিজের এবং সমাজের সুবিধা এবং সুরক্ষা রয়েছে । আর তাছাড়া একজন নিন্দুককে সমাজের মানুষ কোনদিনও ভদ্রদের মধ্যে গণনা করে বরং তাকে অত্যান্ত নিচ এবং অভদ্রদের মধ্যে গণনা করে। আর গীবাতের মত জঘন্য স্বভাবগুলো একটি মানুষের মধ্যে তখনি দেখতে পাওয়া যায় যখন তার মধ্যে সঠিক শিক্ষা এবং দীক্ষার অভাব থাকে । আমি সকলকে অনুরোধ করবো । আপনারা শিক্ষা গুরুত্ব দিন এবং যথাযথভাবে তা অর্জন করুন ।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter