মিথ্যা ও প্রতারণার নেতিবাচক দিকগুলো
মিথ্যা ও প্রতারণা উভয় এর জন্য আশ্রয় নিতে হয় মিথ্যার।আর উভয়ই হলো মুনাফেকের চিহ্নের মধ্যে এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বর্তমানে মানুষ একের পর এক হচ্ছে প্রতারক ও ধোকাবাজ। মিথ্যা ও বাকি সকল কুবিশেষণ প্রায় সকল ধর্মের ক্ষেত্রে এটাকে কঠোর ভাবে নিন্দা বা ঘৃণা করা হয়েছে। যেমন ধরুন সনাতন ধর্ম ওরফে হিন্দু আর বৌদ্ধ ধর্মে রয়েছে যে হিন্দুধর্ম মতে মানব মনের ছয়টি শত্রু। এগুলো হল - কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। শব্দটি সংস্কৃত “ষট্”-এর সাথে ‘রিপু’ যুক্ত হয়ে গঠিত। ষড়রিপুর নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য মানুষকে মোক্ষ লাভে বাধা প্রদান করে। আর এই সব বৈশিষ্টগুলিকে পরিত্যাগ করায় এক সন্ন্যাসীর পরিচয়। সেই রূপ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামে ও রয়েছে বিভিন্ন রূপের নেতিবাচক বৈশিষ্ট ত্যাগ করার আদেশ যে গুলোকে আত্ম শত্রু বা হৃদয় রোগ ভাবে জানে যায় তাসাওউফ শাস্ত্রে। যেগুলি হলো প্রতারণা ,ঈর্ষা , লোক দেখানো কাজ , অহংকার ,ক্রোধ ও ভুল ধারণা ইত্যাদি।
ইসলামে মিথ্যা বলা
ইসলামে মিথ্যা বলা মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং এটি একটি নিন্দনীয় বৈশিষ্ট্য যা একজনকে মন্দ কাজ করতে উৎসাহিত করে এবং ভালো কাজ থেকে বিরত রাখে। আল-বুখারী (6094) এবং মুসলিম (2607) বর্ণনা করেছেন যে ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন: আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “আমি তোমাকে সত্যবাদী হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। কারণ সত্যবাদিতা ধার্মিকতার দিকে নিয়ে যায় এবং ন্যায়পরায়ণতা জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ সত্য বলতে এবং সত্যবাদী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে যতক্ষণ না সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়। আর মিথ্যা থেকে সাবধান, কেননা মিথ্যা বলা পাপাচারের দিকে নিয়ে যায় এবং পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ মিথ্যা বলা চালিয়ে যেতে পারে এবং মিথ্যা বলার চেষ্টা করতে পারে, যতক্ষণ না সে আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।”
একজন মুমিন কি মিথ্যা বলতে পারে?
ইবনে আসাকির তার তারিখে (27/241) আবদুল্লাহ ইবনে জারাদ থেকে বর্ণিত প্রতিবেদনের বিষয়ে - যে অনুসারে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর নবী, একজন মুমিন কি যিনা করতে পারে? এবং তিনি বললেন: "তা হতে পারে।"
তিনি বললেনঃ মুমিন কি চুরি করতে পারে? তিনি বললেন: "তা হতে পারে।"
তিনি বললেনঃ মুমিন কি মিথ্যা বলতে পারে? তিনি বললেন, না; বরং যারা বিশ্বাস করে না তাদের দ্বারা মিথ্যা বানোয়াট”-
এটি আল-আলবানী আদ-দাইফাহ (5521) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন: এটি দাঈফ (দুর্বল)।
মিথ্যা থেকে বিরত থাকার তাগিদ কেন?
কেউ মিথ্যা না বলে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রচুর পরিমাণে জোর দেওয়া হয়েছে কারণ এর ইহকাল ও পরকাল উভয় ক্ষেত্রেই অনেক ত্রুটি রয়েছে। যেমন: মিথ্যা বলা মহাপাপের মধ্যে নিকৃষ্টতম। মিথ্যা বলা মুনাফিকির অন্যতম লক্ষণ। মিথ্যা বলা ঈমানের পরিপন্থী। যখন কোন ব্যক্তি মিথ্যা বলে, তখন তার থেকে দুর্গন্ধের কারণে ফেরেশতারা তার থেকে এক মাইল দূরে থাকে। যে মিথ্যা বলে তার সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব তাকে ছেড়ে যেতে থাকবে।
এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, যে মিথ্যা বলে সে মুখের উজ্জ্বলতা ও ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলে। মিথ্যা বলা সকল পাপের দরজা খুলে দেয়, যেমন পানি গাছের শিকড়ে সেচ দেয়। মিথ্যার কারণে মুখ কালো হয়ে যায়। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী সবচেয়ে অপছন্দের লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। মিথ্যা বলার কোন কল্যাণ নেই।
এসব বিবরণের কারণে হাদীসে গুরুত্বের পেছনের প্রজ্ঞা পাওয়া যায়; "মিথ্যা বলা থেকে নিজেকে বাঁচান", স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এখন হাদীসের দ্বিতীয় অংশ, “মিথ্যা বলা গুনাহের দিকে নিয়ে যায়” ব্যাখ্যা করা হবে।
প্রতারণা :
আজকের যুগে বন্ধু, গৃহস্থ, ব্যবসায়ী প্রভৃতি যাদের বিশ্বাসের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে তারা স্বাচ্ছন্দ্যময় বলে মনে হয়, যেখানে অন্যকে প্রতারিত করে তারা অসুবিধায় পড়ে। বিশেষ করে বর্তমানে ছেলে মেয়ের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে এক অপরকে বিশ্বাস রাখার আশা দেয় আর কোনো সময় কথায় কথায় কথা দেওয়াবা প্রমিস করা ট্রেন্ডিং হয়েগেছে। কিন্তু আল্লাহর প্রিয়বন্ধু প্রতারণাকারীদের প্রতি তার অপছন্দের কথা প্রকাশ করেছেন, তাই তিনি সা: বলেছেন:
مَنْ غَشَّنَا فَلَیْسَ مِنَّا
অর্থাৎ যে আমাদের ধোকা দিল সে আমাদের মধ্য অন্তর্ভুক্ত নয়।'( মুসলিম, পৃ. ৯৫, হাদিস ১০১) আল্লামা আবদ আল-রউফ মানাবী রা: লিখেছেন: "প্রতারণা হচ্ছে কোনো জিনিসের (বাস্তব) অবস্থা গোপন করা।" (ফয়েজ আল-কাদীর, খন্ড ৬, পৃ. ২৪০, হাদিস ৮৮৭৯) যেমন, ত্রুটিপূর্ণ জিনিস বিক্রি করা এবং তার ত্রুটি গোপন করা, একটি নকল বা ভেজাল জিনিস বিক্রি করা যখন এটিকে আসল এবং খাঁটি হিসাবে উপস্থাপন করা হয়, ইত্যাদি।
বিশ্বাসঘাতকতা
যে কোনোও ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হোক না কেন কিন্তু ইসলামে সামগ্রিক বিশ্বাসঘাতকতা অনেক বড় ব্যাপার! এটা পাপ! সে ব্যক্তি মুসলিম বা অমুসলিম যাই হোক না কেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ যখন কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রজন্মকে একত্র করবেন, তখন তিনি প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তির জন্য একটি পতাকা তুলে দেবেন। ঘোষণা করা হবে যে এটি এই ব্যক্তির বিশ্বাসঘাতকতা,তবে মনে রাখবেন আমি যতই খারাপ পাপ করি না কেন, যদি সত্যিকারের আন্তরিক হয় তবে আল্লাহ আপনাকে সর্বদা ক্ষমা করবেন।
'আস্তাগফিরুল্লাহ' শব্দের মাধ্যমে আন্তরিকভাবে তওবা করুন, যার অর্থ, "আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।" আর কখনো পাপ না করার সংকল্প করুন। মেরামত: যদি পাপ কারো সাথে অন্যায় করে তবে তাদের ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ করুন এবং সম্ভব হলে তাদের প্রতিদান দিন।