বিবাহ ও জীবনসঙ্গিনীর নির্বাচন

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, বিয়ে হলো একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে শুভ বন্ধন। বিবাহ ইসলামী সভ্যতার একটি বিশেষ অংশ এ প্রথা হযরত আদম (আঃ) হতেই চলে আসছে।  ইসলামে বিয়ে হলো একটি সুন্নাত বা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আদর্শ। পাশাপাশি, ইসলামে সন্ন্যাসজীবন ও কুমারীজীবন কঠোর বিরোধিতা করা হয়েছে। বিবাহ এমন চুক্তি যার মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মধ্যে এমন সম্পর্ক গড়ে উঠে ও এমনি অনেক কাজ বৈধ হয় যা ইতিপূর্বে বৈধ ছিল না, বরং হারাম ছিল। কিন্তু এ বন্ধনের পর তাদের মধ্যে সেসব কাজ হালাল তো বটেই, বরং এতে আরো সওয়াবের কথা ঘোষিত হয়েছে।

সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক জিনিসকে জোর করে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেকটা মানুষের জন্য সঙ্গী তৈরী করে সৃষ্টি করেছেন যা দ্বারা মানুষ যেমন দুনিয়ায় শান্তি অনুভাব করতে পারে। এর জন্যেই আল্লাহ্ কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন "এবং তার নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে যে, তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতি থেকে সঙ্গীনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন। নিশ্চয় তাতে নিদর্শনসমূহ রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য।। (সূরা-রূম:২১) 

বৈবাহিক জীবন শুরু করার পূর্বে করণীয় কর্তব্য 

বিবাহ মুসলিমদের প্রতি এক শুভ অনুষ্ঠান, আবার অশুভ ও যন্ত্রণাদায়ক সময়কালও। এই শুভ নির্বাচন করায় আমাদেরও হাত রয়েছে। যেমন বিবাহ করা অর্ধ ঈমান। দাম্পত্য-জীবন তার অর্ধেক ধর্মীয় জীবন। তাছাড়া দাম্পত্যের সফরও বড় লম্বা। যার সঙ্গীও চিরসঙ্গী। তাই তো অর্ধ ঈমান যাতে ঠিক করতে এসে অবহেলায় বরবাদ না হয়ে যায় এবং এই লম্বা সফর যেন কষ্টকর তথা তার সাথী যেন কুসাথী না হয়, তার জন্য সফর শুরু করার পূর্বে, জীবন-সমুদ্রে তার দৈনন্দিন জীবনের তরণী অবতারণ করার পূর্বে তাকে একটু ভেবে নিতে হয়, কিছু জেনে ও পড়ে নিতে হয়। 

একজন স্ত্রীর মতো জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা একজন পুরুষের জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত। সে তার বন্ধু, সাহায্যকারী এবং তাদের সন্তানদের মা হবে। শুধুমাত্র প্রেম বা চেহারা সম্পর্কে নয়, তার চরিত্র এবং মূল্যবোধ সম্পর্কেও এই পছন্দ সম্পর্কে সাবধানে চিন্তা করা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি কেউ খুব সুন্দর হলেও, বিয়ের আগে তাকে ভালো করে জেনে নেওয়া ভালো। প্রেম এবং সুখ বৃদ্ধি পায় যখন আপনি একে অপরকে ভালভাবে বোঝেন এবং পরে একে অপরকে দোষারোপ করা এড়ান। পুরুষের উচিত নববধূকে সম্মানের সাথে দেখা এবং তাকে বিয়ে করার গুরুতর উদ্দেশ্য থাকা উচিত। কখনও কখনও, লোকেরা তাদের সম্পদ, জনপ্রিয়তা বা সৌন্দর্যের কারণে কারও প্রতি আকৃষ্ট হয়। যাইহোক, দয়ালু, সদালাপী এবং বিশ্বস্ত এমন কাউকে সন্ধান করা আরও গুরুত্বপূর্ণ। একটি বিজ্ঞ প্রবাদ আমাদের বলে যে একজন মহিলা অনেক কারণে প্রশংসিত হতে পারে, কিন্তু একজন প্রেমময় এবং ভাল ব্যক্তি হল সেরা পছন্দ। এই ধরনের সঙ্গী তাকে জীবনে সাহায্য করবে। একজন জীবনসঙ্গী বাছাই করা হল এমন একজনকে খুঁজে পাওয়া যে সদয়, আপনার মূল্যবোধ শেয়ার করে এবং যার সাথে আপনি একসাথে সুখী জীবন গড়ে তুলতে পারেন। একে অপরকে ভালভাবে জানার জন্য সময় নিন এবং একে অপরকে সম্মানের সাথে আচরণ করুন। 

জীবন সঙ্গিনী নির্বাচনের সময় কিছু বিষয়ের উপর উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে হচ্ছে -

১। পাত্র বা পাত্রী কোন্ স্কুলে পড়েছে জানার আগে কোন্ পরিবেশে মানুষ হয়েছে তা জানার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, অনেক সময় বংশ খারাপ হলেও পরিবেশ-গুণে মানুষ সুন্দর ও চরিত্রবান হয়ে গড়ে উঠে।

২। পাত্র বা পাত্রীর চরিত্র দেখার আগে তার বাপ-মায়ের চরিত্রও অপরিহার্য। 

৩। বিবাহ একটি সহাবস্থান কোম্পানী প্রতিষ্ঠাকরণের নাম। সুতরাং এমন সঙ্গী নির্বাচন করা উচিৎ যাতে উভয়ের পানাহার প্রকৃতি ও চরিত্রে মিল খায়। নচেৎ অচলাবস্থার আশঙ্কাই বেশী।

৪। পাত্রী সৌন্দর্যে যতই প্রসিদ্ধ হোক তবুও তাকে বিবাহের পূর্বে এক ঝলক দেখে নেওয়া উত্তম।  এতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধনে মধুরতা আসে, অধিক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। একে অপরকে দোষারোপ করা থেকে বাঁচা যায় এবং বিবাহের পর পস্তাতে হয় না।

৫। পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র যা দেখবে তা হল, পাত্রীর কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয়। অন্যান্য অঙ্গ দেখা বা দেখানো বৈধ নয়। কারণ, এমনিতে কোন গম্য নারীর প্রতি দৃক্পাত করাই অবৈধ। তাই প্রয়োজনে যা বৈধ, তা হল পাত্রীর ঐ দুই অঙ্গ।

৬। এই দর্শনের সময় পাত্রীর সাথে যেন তার বাপ বা ভাই বা কোন মাহরাম থাকে। তাকে পাত্রের সাথে একাকিনী কোন রুমে ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়। যদিও বিয়ের কথা পাক্কা হয়।

৭। পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা বৈধ। তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বহুবার অথবা অনিমেষনেত্রে দীর্ঘক্ষণ তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়।

৮। পাত্রীর সাথে মুসাফাহা করা, রসালাপ ও রহস্য করাও অবৈধ। কিছুক্ষণ তাদের মাঝে হৃদয়ের আদান-প্রদান হোক, এই বলে সুযোগ দেওয়া অভিভাবকের জন্য হারাম।

স্ত্রির সঙ্গে সদাচারণ

আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে উল্লেখ করেন وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوف এই আয়াতটির অর্থ হল "তাদের সাথে সদয় আচরণ করো।" এটি আমাদেরকে বলে যে আমাদের অন্যদের প্রতি ভাল হওয়া উচিত, ঠিক যেমন আমরা চাই যে তারা আমাদের প্রতি ভাল থাকুক। সুতরাং, এটি আমাদের চারপাশের লোকেদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং শ্রদ্ধাশীল হওয়া সম্পর্কে!

একজন স্ত্রীর কাজ হল তার স্বামীর জিনিসপত্র এবং নিজের যত্ন নেওয়া। রাসুল (সাঃ) বলেছেন একজন উত্তম স্ত্রী একজন পুরুষের সেরা জিনিসগুলোর একটি। যদি তার স্বামী দূরে থাকে, তাহলে তার উচিত বিশ্বস্ত থাকা এবং তাদের বাড়ির যত্ন নেওয়া। নারীর জন্য উত্তম চরিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি একজন মহিলা তার স্বামীর সাথে তর্ক করে বা ছোট ছোট বিষয়ে তার অবাধ্য হয় তবে সে তার পূর্ণ ক্ষমতায় পৌঁছাতে পারে না। ঈশ্বর স্বামী ও স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন প্রেম ও দয়ায় ভরা এক শান্তিপূর্ণ জীবন উপভোগ করার জন্য। যারা গভীরভাবে চিন্তা করেন তাদের জন্য এতে অনেক শিক্ষা রয়েছে। একবার, একজন মহিলা নবী মুহাম্মদকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেন শুধুমাত্র পুরুষরাই যুদ্ধে যেতে পারে এবং পুরস্কার অর্জন করতে পারে? মহিলারা একই জিনিস করতে পারে না বলে তিনি বাদ পড়েছিলেন। নবীজি উত্তর দিলেন যে একজন মহিলা যদি তার স্বামীর কথা শোনে এবং তার পরিবারের যত্ন নেয় তবে সে পুরুষদের মতো সমান সওয়াব অর্জন করতে পারে। তিনি তাকে এই বার্তাটি অন্যান্য মহিলাদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য উত্সাহিত করেছিলেন, তবে অনেক লোক সর্বদা এটি অনুসরণ করে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে রাসূল (সাঃ) কে অনুসরণ করার তৌফিক দেন করুক, আমিন। 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter