রমজানে গড়ে উঠুক তাহাজ্জুদের অভ্যাস
তাহাজ্জুদ নামাজ নবীদের সুন্নাত। আল্লাহ তা'আলার প্রিয় বান্দাদের আদাত (অভ্যাস)। মালিকের সাথে গোলামের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ও সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম।
তাহাজ্জুদের ফজিলত ঘোষনা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ কায়েম করুন। এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থানে’। (বানী ইসরাইল :৭৯) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তারা তাদের প্রতিপালককে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে দান করে।
(সূরা সেজদা : ১৬)
তাহাজ্জুদ রাতের শেষভাগের নামাজ। প্রভুর প্রেমে সুখশয্যা ত্যাগ করে একাকি পড়ার নামাজ। পৃথিবী যখন পিনপতন নিরবতায়, তাহজ্জুদগুজার প্রেমিক থাকে তার প্রেমাস্পদের সাথে গোপন আলাপচারিতায়। মহান আল্লাহর সাথে বলে তার সকল সুখ-দুখের কথা। করে নেয় সব সমস্যার সমাধান, মিটিয়ে নেয় তার সকল প্রয়োজন।
তাহাজ্জুদ নামাজ আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটায়। মন ও চরিত্রকে করে নির্মল ও পবিত্র। সত্য ও সততার পথে রাখে দৃঢ় অবিচল। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্যে রাতে ঘুম থেকে ওঠা আত্মার নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকর। (মুজাম্মিল : ৬) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সেজদা করে এবং দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়’। (ফুরকান: ৬৪)
রাসুলও সা. উম্মতকে তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন । কিয়ামুল লাইলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পা ফুলিয়েছেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, “আফজালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি”। অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।
ইসলামি ইতিহাসের প্রাথমিক যুগে কাফের সপ্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ী হওয়ার গোপন রহস্য ছিল মুসলমানরা রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তায়ালার দরবারে অশ্রুসিক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর দিনে তরবারী হাতে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়া। সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন রুহবান ফিল লাইল ফুরসান ফিন নাহার তথা রাতে জায়নামাজে প্রভুর দরবারে দিনে তরবারী হাতে জিহাদের ময়দানে। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
(আলে ইমরান : ১৭)
হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, ‘তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন। এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠেন এবং নামাজ পড়েন। দুই. যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে কাতারে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাড়ায়’।
অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত জাবির রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, ‘রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলমান তা লাভ করে আর আল্লাহর কাছে ইহ ও পরকালের কোনো কল্যাণ চায় আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে তা দান করবেন।
(মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে অপর হাদিসে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা প্রতি রাতে দুনিয়ার নিকটতম আসমানে আসেন। আর বান্দাকে ডেকে ডেকে বলতে থাকেন কে আছো আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছো আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।
(বুখারি ও মুসলিম)
এই ফজিলত পূর্ণ তাহাজ্জুদের ব্যপারে অধিকাংশই উদাসিন, অযুহাত অনেক রাতে ঘুমানোর ফরে শেষ রাতে ওঠা সম্ভব হয়ে উঠেনা। রামাযানুল মুবারক তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তোলার ভরা মৌসুম। সাহরীর পূর্বে অযু করে আদায় করে নেয়া যায় চার রাকাত তাহাজ্জুদ। সাথে কিছু সময় মহান মালিকের দরবারে অশ্রুসিক্ত দোয়া। এভাবে রামাযানেই গড়ে তোলা যায় তাহাজ্জুদের অভ্যাস।