ভবিষ্যতের ইতিহাসে ইসরাইল ইতিমধ্যেই পরাজিত অপরাধী
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ করে সারা বিশ্ব এর নিন্দা করেছিল। কিছু দিন পর ইসরাইলি প্রখ্যাত লেখক, হোমো স্যাপিয়েন্স এবং হোমো ডিউসের মত জনপ্রিয় বয়ের রচায়ক, ইয়ভাল নুয়াহ হেরারির একটি খুব বাস্তব এবং আকর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় দ্যা গার্ডিয়ান ওয়েবসাইটে। লেখাটির শিরোনাম ছিল কেন ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যে এই যুদ্ধ হেরে গেছে (Why Vladimir Putin has already lost this war)। বর্তমান লেখক খুব ভালো ভাবে পড়ে ওই প্রবন্ধের একটি ছোট্ট বিশ্লেষণ তুলে ধুরে ছিল তার ইউটিউব চ্যানেলে। আজ যখন ইউক্রেনের থেকেও ইসরাইল কর্তৃক চরম এবং গুরুতর পরিস্থিতি প্যালেস্টাইনে দেখা দিয়েছে অনুরূপ লেখার কেউ নেই। অবশ্যই পক্ষপাতদুষ্ট হেরারীর মত অনেক পশ্চিমা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা এই জীবন্ত গণহত্যা সচক্ষে দর্শন করছে। কেউ কেউ অবশ্যই সত্যের ডাকে সাড়া দিয়েছে, নচেৎ বেশিরভাগই নিরব দর্শক এবং যথেষ্ট সমর্থক। তাই বর্তমান লেখা ওই নিদর্শন নিয়ে গঠিত যেখানে ইসরাইলের দখলদার বাহিনী পরাজিত এবং নিরীহ প্যালেস্টাইনবাসী বিজয়ী।
ভবিষ্যতের ইতিহাসে আসলে যে ইসরাইল পরাজিত ও সব থেকে বেশি প্রতারিত এবং বিপরীতে ইসলামের জয়ী ধ্বজ যে ফিলিস্তিনে উত্তোলন হবে। এই নিয়ে দুই বছর পূর্বে 'পীড়িত ফিলিস্তিনের নামে' শিরোনামে কিছু লাইন লেখা হয়েছিল। বর্তমান লেখনী তারই এক সংযোজন।
অনুরূপ, ইসরাইলের বর্তমান নির্বিচার গণহত্যা এবং গাজা শহর ধ্বংসলীলাল ফলে যে শুধু ইসরাইল পরাজিত তা নয় বরং ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে সমগ্র পাশ্চাত্য মতাদর্শের জ্ঞানতত্ত্ব। এই নিয়ে প্রথমে 'ফিলিস্তিনের দুর্দশা সম্পূর্ণ মনুষ্যতার ব্যর্থতা' এবং পরে 'ফিলিস্তিন প্রশ্নে পাশ্চাত্যের বুদ্ধিবৃত্তিক কপটতা উন্মোচিত' শিরোনামের দুটি প্রবন্ধে অনেক কিছু আলোচনা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক একই সুরে মন্তব্য দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল, "যুদ্ধের আগে গাজা ছিল সব থেকে বড় উন্মুক্ত কারাগার। আজ এটি বৃহত্তম উন্মুক্ত কবরস্থান।"
ইসরাইল এক ঐতিহাসিক পরাজয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ইসরায়েল সহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং অন্যান্য জড়িত সমর্থক সত্ত্বাসমূহ ভবিষ্যতের ইতিহাস পাঠে পরাজিত অপরাধী হিসাবে স্থান দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনি মানুষ সংগ্রাম, প্রতিবাদ, দৃঢ়তা, ঐকতা এবং স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়ে স্বাধীনতার পরিচয় দিয়েছে। অন্যত্রে, শক্তিশালী বহু মুসলিম আরব রাষ্ট্রের কপটতা এবং পশ্চিমার মানবধিকার নিয়ে ভন্ডামি প্রকাশ পাচ্ছে।
ইসরাইল প্রকাশ্য গণহত্যা চালাচ্ছে যেখানে বিশ্বের বড় বড় শক্তি কেউ সরাসরি সমর্থন করছে তো আবার কেউ নিরবতা অবলম্বন করছে - এই দৃশ্য সারা বিশ্ববাসী দর্শন করছে। অবশ্যই যারা এই কপটতা এবং ভন্ডামীর মতবাদে আবদ্ধ হয়ে ছিল তাদের অনেকই স্বাধীনতা পেয়েছে। বেশিরভাগ রাষ্ট্র নায়কদের ব্যাতিক্রম, প্রায় সমগ্র দেশের জনসাধারণ বিভিন্ন প্রতিবাদ, প্রদর্শন, বয়কট এবং অন্যান্য উপায়ে এই সংগ্রামে অংশ নিয়েছে।
ইসরাইল অবগত যে তার প্রিয় বন্ধু শক্তি আমেরিকা হোক কিংবা রাষ্ট্র সংঘের মত যে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা কেউ তাকে কর্যতভাবে থামবেনা। তাই কোনো পদক্ষেপেই তাকে কোনো বহির শক্তির ভয় লাগে না। অন্যদিকে, মালয়েশিয়ার মত রাষ্ট্র এবং হুথী ও হিজবুল্লাহর মত স্বাধীন সংস্থার প্রতিবাদী হয়ে অগ্রসর হয়ে আন্তর্জাতিক স্থিতাবস্থা ভাঙবার চেষ্টা করছে।
আবার ইসরায়েল উপনিবেশিক বাহিনী মহিলা, বাচ্চা, বৃদ্ধ, জনসাধারণ সকলকে নির্বিচারে হত্যা করে এবং স্কুল, হসপিটাল, রাস্তা ঘাট, বাড়ি-ঘর যথা চতুর্দিক থেকে আবদ্ধ গাজা শহর ধ্বংস করে সারা পৃথিবীকে সাক্ষ্য রেখে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা খর্ব করতে চায়, বিপরীতে এর প্রতিরোধ শক্তি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবশ্যই, ধারাবাহিক অত্যাচার চিরন্তন প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এবং সবার জানা ১৯৪৮-এর থেকে তা এখনও অনবরত ও অব্যাহত।
অন্যদিকে প্যালেস্টাইনের বিজয় আরও বুদ্ধিবৃত্তিক, আদর্শিক এবং আবেগপ্রবণ যা পাল্টে দিতে পারে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে। উদাহরণস্বরূপ, সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ইসরাইলের এই নির্মমতার মধ্যে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ব্যাখ্যাতীত স্থিতিস্থাপকতা। আমেরিকা সহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সাধারণের ইন্টারনেটের এলগোরিদম ভেঙ্গে এখন ট্রেন্ডিং বিষয় হয়েছে প্যালেস্টাইন, গাজা, ইসলাম, কুরআন, মুহাম্মাদ (ﷺ) মুসলমান এবং স্থিতিস্থাপকতা। বছর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচা করে ইসলামের বিরুদ্ধে যে বিভোৎসকর চিত্র এঁকে রেখেছিল পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীরা, তা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়ছে। আসল সন্ত্রাস কে মানুষের সামনে আর অগোচার নাই। সারা বিশ্বে মুহূর্তের পর মুহূর্তে ইসলামী সারীতে যোগ দিচ্ছে অসংখ্য মানুষ। অঞ্চল ভিত্তিক ক্ষণিক স্থায়ী জয় হতে পারে ইসরাইলের, কিন্তু ফিলিস্তিনি মুসলমানদের তা বিশ্বব্যাপী দীর্ঘস্থায় এবং সর্বদা অপরাজিতা।