রমজানের শেষের দশ দিন: ঐশ্বরিক সান্নিধ্যের এক প্রচেষ্টা

আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি খাঁটি ঈমানের সাথে এবং আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখল, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং আশা নিয়ে কদরের রাতে নামাজের জন্য দাঁড়ালো, আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পুরস্কার হচ্ছে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে" (বুখারি 2014)

রমজানের শেষ দশ দিনগুলিতে মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত বরকতপূর্ণ মুহূর্ত লুকিয়ে আছে। এসব দিনগুলি সুনির্দিষ্ট উপকারিতা বহন করে, যার সবকটিই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে খুশি করার জন্য আমাদের যাত্রার জন্য অপরিহার্য। শেষ দশ দিনে এক বিজোড় রাত শুধুমাত যথা ভাগ্যের বা শক্তির রাত (লায়লাতুল কদর), হাজার বছরের চেয়ে উত্তম রাত। এই বিশেষ রাতে আমাদের এমন নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলা যথা বিভিন্ন ইবাদত করার মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার সুযোগ আছে। আরও ভাল, আরও দায়িত্বশীল এবং আরও সচেতন মুসলমান হওয়ার জন্য আমাদের রাত্রি জাগরণ সাধ্য অনুসারে দরকার।

শেষ মাসে ইতিকাফে বসা ছিল মহানবী (সা.)-এর অন্যতম সুন্নত। পুরুষদের জন্য, এর অর্থ হল শেষ দশ দিন একটি মসজিদে অবস্থান করা, যার একমাত্র উদ্দেশ্য হল বস্তুজগতের সীমাবদ্ধতা এবং চাহিদা থেকে মুক্ত হয়ে একাকীভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদতে নিযুক্ত হওয়া। মহিলাদের জন্য, এর অর্থ হল তাদের বাড়ির সীমানার মধ্যে একটি পূর্বনির্ধারিত জায়গায় বসবাস করা, যার উদ্দেশ্য হবে একই। এতেকাফ হল এমন একটি ইবাদত যেখানে মুসলমানদেরকে জড়জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রার্থনায় সময় কাটাতে বলা হয়। তাই মহান আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সংযোগ সংশোধন করতে ইচ্ছুক যে কারও জন্য এটি একটি উজ্জ্বল সুযোগ।

সাধারণত, শেষ দশ দিনকে এমন সময় হিসাবেও দেখা হয় যখন মুসলমানরা পার্থিব বিষয়গুলি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে এবং প্রার্থনায় বেশি সময় ব্যয় করে। জেনে রাখুন যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা-এর দরজা সবসময় খোলা থাকে। আমরা নিজের গাফিলতিতে রমজানের আগের 20 দিন আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে কাটিয়ে দিলেও, যদি আমরা শেষ সময়ে চেষ্টা করি তবে তিনি আমাদেরকে তাঁর সবচেয়ে মূল্যবান নিয়ামত দান করতে সর্বদা প্রস্তুত।

এটা বোঝা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে রমজানের এই বিশেষ বিচ্ছেদ যথা শেষের 10 দিনে মুসলমানদেরকে কদরের রাত্রি সন্ধানের জন্য বারবার উত্তেজিত করা হয়েছে। মুসলমানদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর নি'মাত সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হতে এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে বলছেন। এই রাত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়নি এখানেই রহস্য লুকিয়ে। আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ দেওয়া হয়েছে; সকলেই শুভ রাত্রি থেকে উপকৃত হওয়ার আশায়। এটি অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার একটি প্রচেষ্টা। এই রমজানে আমাদের চেষ্টা করা উচিত যে কোনো নামাজ বাদ না দেওয়া, ভালো কাজে অংশগ্রহণ করা এবং যতটা সম্ভব নফল আদায় করা উচিত।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সকলকে মঙ্গল করুন এবং আমাদের গুনাহ মাফ করুন। আমরা সবাই যেন আগের চেয়ে ভালো মানুষ হয়ে দীনের অনুশীলন করতে পারি। এই মাসে সর্বাধিক যিকির করার এবং ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি, যোগ্য ও অভাবীদের জন্য যাকাত ও সাদাকা প্রদান করা উচিত। হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল (Human Concern International) বর্তমানে এই রমজানে হাজার হাজার যোগ্য মানুষকে জাকাত ও খাবারের ঝুড়ি প্রদানের জন্য কাজ করছে। আমরা আপনাদের সকলকে আপনার পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে দরিদ্র লোকদের জন্য আপনার অংশ প্রদান করার অনুরোধ করছি।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter