কর্ণাটক নির্বাচন ফলাফল মুসলিমদের জন্য খুশির সংকেত
দিন কিছুই আগে কর্ণাটক নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে আর সারা ভারতের নজর করেছ। কংগ্রেসের বিপুল ভোটে জয়লাভে বিধস্ত হয়েছে বিজেপ। কাজে আসেনি কোনোও কৌশল ও 'মোদী ম্যাজিক'। এই কংগ্রেসের জয়লাভ খুশি প্রায় সকলে শুধু কিছু সমাজের অন্ধভক্তরা আর সমাজের হিন্দুত্বপন্থী ও হিংসা প্রেমী ছাড়া সারা ভারত থেকে এলো খুশির শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। এই জয়লাভ দিলো সম্প্রীতি ও হিংসা দমনের বার্তা। যেমনটা রাহুল গান্ধী বলেন ' কর্নাটকে হিংসার বাজার বন্ধ হলো, আরম্ভ হলো ভালোবাসার সাওদা।"
যেই রাজ্যে প্রায় টিপু সুলতানকে নিয়ে বিকৃতি করা হয় সেই কন্নড় মাটি দেখিয়ে দিলো তারা হিংসা ও অশান্তিকে সাড়া বা আশ্রয় দেয়না। যেই রাজ্যেই উঠে হিজাব নিয়ে কথা ও ছড়িয়ে পরে সারা ভারতে তার প্রভাব, সেই মাটিতেই মুখ থুবড়ে পড়লো হিন্দুত্বের পতাকা। বিজেপির এই হারের টের প্রায় আগেই পেয়েছিল মহান তারকা ভোট প্রচারক নরেন্দ্র মোদি । তাই তাই চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে শেষ চেষ্টা হিসাবে প্রচারের সময় পেরিয়ে যাওয়ার একদিন পরেও ভিডিও বার্তায় কর্নাটকবাসীকে কাতর আবেদন জানিয়েছেন বিজেপিকে জেতানোর জন্য। অতীতে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে এমন মরিয়া আচরণ করতে দেখা যায়নি, যা এক কথায় অপরাধ।
কংগ্রেসের এই বিপুল ভোটে ও ব্যাপক ব্যাবধানে মোট ২২৪ আসনের মধ্যে ১৩৫ আসনই কংগ্রেসের হাতে যেখানে বিজেপি পেয়েছে মোট ৬৬টি আসন। এখন প্রশ্ন উঠছে বিজেপির এই ব্যাপক হারের দোষের বোঝা কার ঘাড়ে? শনিবার দেখা গিয়েছিলো গণনা শুরুর পরই মোদীর আশঙ্কা মিলে গিয়েছে। তাই টিভি চ্যানেলে বিজেপির মুখপাত্ররা সব ভুলে বলতে শুরু করেন, হারের দায় প্রধানমন্ত্রীর নয়।
দোষী কে?
তাহলে কি বিজেপি যথাযত চেষ্টা করেনি?কিন্তু বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন কর্ণাটক মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাই বলেন “প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির নেতা-কর্মীরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমরা দাগ কাটতে পারি নি, কংগ্রেস পেরেছে।" আর এটাই স্পষ্ট যে ভোট প্রচারে সত্যিই বিজেপি মরিয়া চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে।তা সত্ত্বেও ব্যার্থ কেন বিজেপি ?
জয়লাভের কারণ কি?
তার অন্যতম কারণ সেখানে তাঁকে শুধু রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধীদের মোকাবিলা করতে হয়নি, বরং অনেক বেশি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন রাজ্যের দুই নেতা ডিকে শিবকুমার এবং সিদ্দারামাইয়া। সঙ্গ দিয়েছেন বীরাপ্পা মৈলির মতো প্রবীণেরা। শিবকুমার-সিদ্দারামাইয়ার সম্পর্ক অনেকটাই একদা বাংলায় প্রিয়-সুব্রত জুটির সঙ্গে সোমেন মিত্র গোষ্ঠী, পরে সোমেন-মমতা বিরোধের মতো। কিন্তু গত দেড় দু’বছর তাঁরা বিরোধ ভুলে জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছেন। তাঁদের তৎপরতাতেই রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা কর্নাটকেই সবচেয়ে সাড়া ফেলেছিল। কর্নাটক কংগ্রেসকে দেখে বলাই যায়, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আজ তাঁর পুরনো দলে থাকলে বিজেপি অসমে সরকার গড়তে পারত কিনা সন্দেহ আছে।
কিছুজনের মতে, রাহুল গান্ধীর পথ যাত্রা 'ভারত জোড়ো যাত্রা' এর প্রভাবে এই জয়। আবার কেও মনে করে রাজ্যে হিংসা ও অশান্তির ঘটনা যেমন হিজাব ইস্যু,গণহত্যা ও ইতিহাস নিয়ে বিকৃতি ইত্যাদি। তাহলে এবার 'মোদী ম্যাজিক' বিধস্ত হলো 'খাড়গে ম্যাজিকের' কাছে। বর্তমান কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গের ম্যাজিকের ফলেও হতে পারে এই জয়লাভ। আসলে গান্ধী পরিবারই ছিল মোদীর জন্য সবচেয়ে পয়া। গান্ধীদের বিরুদ্ধে লোক খেপাতে তাঁর সুবিধা ছিল অনেক। দেখা যাচ্ছে, গান্ধীরা কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে হিমাচলের পর কর্নাটক, দুটি রাজ্যে মোদী হারলেন।এই জয়লাভ অবদান রয়েছে রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি শিবকুমারেরও, সেও মরিয়া চেষ্টা করেছেন এই জয়লাভ আনার জন্য যেমনটা তার কোথায় সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আর দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে আমি কথা দিয়েছিলাম যে রাজ্যটা তাদের উৎসর্গ করব। এই জয়ের জন্য কৃতিত্ব দলের কর্মী আর নেতাদেরই প্রাপ্য।“
বর্তমানে দক্ষিণ ভারত এখন বিজেপি মুক্ত রাজ্য তারা দেখালো যে দক্ষিণীরা হিংসা ও অশান্তির বিরোধী। অনুরূপ হওয়া উচিত উত্তর ও বাকি রাজ্যগুলিকে। তারাও অন্ধের বেড়াজাল থেকে একবার ভাবা উচিত যে ভোট দিবো উন্নয়ন দেখে ধর্ম দেখে না। ধর্মকে রাজনীতির আঁচ থেকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। দক্ষিণীদের কাছ হতে অনেক শেখার আছে বাকি রাজ্যগুলির।