একক মায়েদের সংগ্রাম: সন্তান প্রতিপালন এবং আর্থিক দায়িত্ব
প্যারেন্টিং এবং তারবিয়াহ
পিতা-মাতা শিশুদের ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন আমরা "পিতা-মাতা" শব্দটি বলি, তখন এতে উভয় পক্ষই অন্তর্ভুক্ত হয়, মা ও বাবা—তারা তালাকপ্রাপ্ত হোক বা না হোক। একজন পুরুষের দায়িত্ব তার পরিবারকে শিক্ষা দেওয়া। এই দায়িত্ব তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে সংযুক্তির অনুপাতে। একজন পুরুষের দায়িত্ব হলো তার সময় ও প্রচেষ্টা ব্যয় করে তার পরিবারকে ধর্ম অনুযায়ী কী করা দরকার তা জানানো। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো’ (সূরা আত-তাহরীম, আয়াত ৬)। অতএব, ইসলাম আমাদের শেখায় নিজেদের রক্ষা করতে এবং শৃঙ্খলার চেতনা জাগ্রত করতে, কারণ একটি ভালো আচরণ থেকেই একজন মুসলমানের ভালো কাজ বেরিয়ে আসে। মা এবং বাবা উভয়েরই উচিত পালাক্রমে তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করা এবং তাদের সমস্যাগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া। এবং মায়ের উচিত নয় সন্তানদের পিতার মৌলিক ইসলামী শিক্ষা প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবহেলা করা।
যখন এমন পিতা-মাতার কথা আসে যারা তাদের জীবনসঙ্গীকে হারিয়েছেন, তখন পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। এটাই সেই জায়গা যেখানে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ভূমিকা রয়েছে। এনজিওগুলো সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এমন নীতিমালা বাস্তবায়নে যা একক মায়েদের সাহায্য করতে পারে এবং সরকারকে তা বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে। সরকারের উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি হলো সরকারি ও বেসরকারি ভবনে নার্সারি বাড়ানো, যাতে কর্মজীবী মায়েদের বোঝা হ্রাস পায়। এই নার্সারিগুলো একক অভিভাবকদের সন্তানদের মৌলিক শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে সহায়তা করতে পারে। এটি একক অভিভাবকদের তাদের কর্মজীবনে মনোযোগ দিতে সাহায্য করতে পারে, কারণ তারাই একমাত্র যারা তাদের পরিবারের জন্য রোজগার করেন।
এই আলোচনায় যে মূল বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বলা দরকার তা হলো সন্তানদের তারবিয়াহ বা শিক্ষা-দীক্ষায় মা ও বাবার উভয়ের ভূমিকা। ইবন উমর বলেন, "আল্লাহ তাদের 'সজ্জন' (আল-আবরার) বলেছেন, কারণ তারা তাদের পিতা-মাতা এবং সন্তানদের প্রতি সদয়। যেমন তোমার উপর তোমার পিতা-মাতার হক আছে, তেমনি তোমার সন্তানের প্রতিও একটি হক আছে।" (আল-আদাব আল-মুফরাদ ৯৪)। এই কথার মধ্যে ইঙ্গিত আছে যে একজন শিশুর অধিকার আছে তার পিতা-মাতার যত্ন পাওয়া এবং ভালো তারবিয়াহ বা শিক্ষালাভ। সন্তানের তারবিয়াহ মা ও বাবার যৌথ দায়িত্ব, তাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে যা সন্তানদের জন্য উপকারী। তালাক কোনোভাবেই এই দায়িত্ব কেবলমাত্র মায়ের উপর ফেলে দেওয়ার কারণ হতে পারে না। বাবারও উচিত তার ভূমিকা পালন করা, কারণ ইসলামে সন্তানদের প্রতি কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে যা পূরণ করা আবশ্যক।
শিশুদের মধ্যে শৃঙ্খলা তৈরি করার ক্ষেত্রে একক মায়েদের সন্তানের তারবিয়াহ কেমন হচ্ছে, তা দেখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাস্তব চিত্র দেখতে একটি জরিপের প্রয়োজন। যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে তারা কি তাদের সন্তানদের তারবিয়াহ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেন, বেশিরভাগ উত্তরদাতা বলেন যে তারা সময় দেন। একক মা হওয়ার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো কিভাবে সন্তানকে বাইরের চাপের মোকাবেলা শেখানো যায়, বিশেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে থাকার সময়। জরিপ থেকে দেখা গেছে, একজন উত্তরদাতা বলেছেন তার সন্তান বন্ধুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে মানসিক চাপ বা হতাশার মুখে পড়ে। এখানে দেখা যায় যে, যখন একটি শিশু একক মায়ের সন্তান হয়, তখন সে অনুভব করে সে অন্য বন্ধুদের তুলনায় আলাদা। একক মা হলেও, মায়েদের উচিত তাদের সন্তানের সমস্যায় মনোযোগ দেওয়া। একক মায়েদের বোঝা উচিত যে, তাদের সন্তানের পিতারও ভূমিকা আছে এসব সমস্যায় মনোযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে, এমনকি যদি তারা তালাকপ্রাপ্তও হন। কারণ, শিশুদের অন্যদের তুলনায় আলাদা হওয়া উচিত নয়, এমনকি তাদের মা একক মা হলেও।
আর্থিক দায়
আমরা জানি, আর্থিক বিষয় জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তুমি বিবাহিত হও বা না হও, তোমার সন্তান থাক বা না থাক। এখনকার সময়ে যদি দৃঢ় আর্থিক অবস্থা না থাকে, তাহলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। অবশ্যই, টাকা সব কিছু নয়, কিন্তু সব কিছুর জন্য টাকা লাগে। আর্থিক বোঝা একজন মানুষের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং একজন একক মায়ের জন্য তা আরও কঠিন। ভালোভাবে সন্তান প্রতিপালনের জন্য, বাবা ও মায়ের উভয়েরই তাদের ভূমিকা ভালোভাবে পালন করা দরকার। তাই, যদি বাবা না থাকে, তাহলে একজন একক মায়েকে অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়। তাকে তার সন্তানদের খাবার দিতে হয়, কাপড় দিতে হয়, বাসস্থান দিতে হয়, শিক্ষা দিতে হয় এবং আরও অনেক কিছু করতে হয়। এটাকেই আমরা বলি আর্থিক বোঝা। এই সমস্যা খুবই বিপজ্জনক, কারণ এটি আরও অনেক সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
তাই ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে একক মায়েদের এই সমস্যার কিছু সমাধান আছে। প্রথমত, সরকারের উচিত একক মায়েদের জন্য একটি শক্তিশালী আর্থিক সহায়তা পরিকল্পনা শুরু করা। নবী (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকে একজন অভিভাবক এবং তোমাদের অধীনস্থদের জন্য দায়ী। শাসক তার প্রজাদের অভিভাবক।” তাই সরকারের উচিত প্রথমেই তাদের ভূমিকা পালন করা। দ্বিতীয়ত, সমাজের উচিত একক মায়েদের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়া, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে সাহায্য করা। আল্লাহ সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত ২-এ বলেন:
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ﴾ [المائدة: 2]
“তোমরা একে অপরকে ভালো ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা করো”
তৃতীয়ত, একক মায়েদের নিজেই জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করা উচিত, কারণ কেবল অন্যদের উপর নির্ভর করাই যথেষ্ট নয়। সর্বশেষে, তাদের আবার বিয়ে করা উচিত। এটা তাদের ও তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য। একজন স্বামী থাকা আগের সমাধানগুলোর চেয়ে ভালো, কারণ সে কেবল আর্থিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও সহায়তা করবে। আল্লাহ সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৭-এ বলেন:
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ﴾ [البقرة: 187]
“তোমাদের স্ত্রী তোমাদের পোশাক, আর তোমরাও তাদের পোশাক”
অতএব, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রস্তাবিত সব সমাধান মূলত ‘মাকাসিদে শরিয়াহ’র দিকে নির্দেশ করে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম রক্ষার জন্য, কারণ স্থিতিশীল আর্থিক অবস্থা একজন একক মায়ের পক্ষে তার সন্তানদের ভালো ইসলামি শিক্ষা দিতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া, একক মা ও তার সন্তানদের জীবন রক্ষা করতেও এটি জরুরি। আর্থিক সমস্যা খুব বিপজ্জনক, কারণ এটি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা মানুষকে নিজের ক্ষতি করার মতো কাজ করতে প্ররোচিত করতে পারে।
যে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে, তা থেকে দেখা যায় যে অধিকাংশ উত্তরদাতা কাজ করছেন, কেউ স্বনিয়োজিত, কেউ বেতনভুক্ত। এই পরিস্থিতি দেখায় যে, একজন একক মায়ের পক্ষে আর্থিকভাবে একটি পরিবার লালন করা কতটা কঠিন। উদাহরণস্বরূপ, একজন উত্তরদাতা আছেন যিনি ১৪টি সন্তান বড় করছেন, এবং তিনি বর্তমানে একজন স্বনিয়োজিত দর্জি হিসেবে কাজ করছেন, যার মাসিক আয় RM1000 থেকে RM3000 এর মধ্যে। এই অঙ্কটি বড় মনে হতে পারে, কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে তাকে ১৪টি সন্তান প্রতিপালন করতে হয়। সৌভাগ্যবশত, তার কিছু সন্তান ইতিমধ্যেই বড় হয়েছে এবং বর্তমানে কাজ করছে। তাই তার পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত নফকা দেওয়ার দায়িত্ব এখন তার সন্তানরাও ভাগ করে নিচ্ছে।