ইসরা ও মি‘রাজ: বিশ্বনবী ﷺ এর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা

ইসরা শব্দটির অর্থ হচ্ছে রাতের সফর, মহানবী ﷺ কে রাতের একাংশে মক্কার হারাম থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস এর এলাকায় যে সফর করানো হয়েছে সেটাকে ইসরা বলা হয়। মি’রাজ শব্দটির শাব্দিক অর্থ সিঁড়ি, ঊর্ধ্বারোহণ, উর্ধ্বগমন, মর্যাদার চরম শিখরে উত্তরন, উন্নতি, অগ্রগতি, বা উর্ধ্ব গমনের বড় মাধ্যম। মেরাজ মহানবী ﷺ এর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজিজা বা অলৌকিক কীর্তি। ইসলামি পরিভাষায় রাসূল ﷺ যে রাতে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় তার ডাকে সাড়া দিয়ে উর্ধ্ব আকাশে গমন করেছিলেন সেই রাত ও সেই পবিত্র অভিযাত্রাকে শবে মেরাজ বা লাইলাতুল মেরাজ বলা হয়। ইসরা ও মেরাজ মহানবী হজরত মুহাম্মদ ﷺ এর একটি শ্রেষ্ঠ মুজেযা। আল্লাহর ইচ্ছায় যে সবই সম্ভব তারই মূর্তমান প্রকাশ হলো ওই রাতে রসুল ﷺ এর ইসরা অর্থাৎ কাবা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাতের সফর ও মেরাজ অর্থাৎ সপ্তম আসমান পর্যন্ত ঘুরে আসার ঘটনা।

ইসরা মিরাজ পরিচিতি:

ইতিহাস অনুযায়ী নবী (সা:) এর নবুওয়াতের দশম বৎসরে (৬২০ খ্রিষ্টাব্দ) হিজরি ২৬ রজব দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৭ রজব প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবিদের জামায়াতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি বোরাক নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। নবি মুহাম্মদ (সা:)-এর আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করার আগ পর্যন্ত এই সফরে ফেরেশতা জিবরাইল তার সফরসঙ্গী ছিলেন।  পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মেরাজ। হযরত মুহাম্মদ ﷺ ছাড়া অন্য কোনো নবী বা রাসূল এই পরম সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবকে কাছে ডেকে নিয়ে মুসলমানদের ওপর ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ সালাত (নামাজ) ফরজ করে দেন।

ইসরা মিরাজের দলীল:

মেরাজের ঘটনাকে অনেকে অবিশ্বাস করেন। যে আল্লাহ পাক মুসা (আ.)-কে সাগরের বুক চিড়ে রাস্তা করে দিতে পারেন, হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে রক্ষা করতে পারেন, হযরত ইসা (আ.)-কে পিতা ছাড়া হযরত মরিয়মের গর্ভে জন্ম দিতে পারেন সেই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার কাছে মেরাজ ঘটনা তো অতি সাধারণ ব্যাপার। প্রিয়নবী মেরাজ থেকে ফিরে মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করলে মক্কার অবিশ্বাসী কাফেররা মেরাজের ঘটনাকে অবিশ্বাস ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। কিন্তু বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস স্থাপন করেন হযরত আবু বকর (রা.)। যার ফলে তিনি হলেন সিদ্দিকে আকবর।

ইসরা ও মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা সুরা বনি ইসরায়েলের ১ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন:

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ المَسْجِدِ الحَرَامِ إِلَى المَسْجِدِ الأَقْصَى اَلَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْم"

 

অর্থাৎ, “পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন। যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল”। [আল-ইসরা:১]

 

হাদিস সূত্রে বলা হয়েছে, ২৬ রজব রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এশার নামাজ শেষে হজরত উম্মে হানি (رضي الله عنه)-এর ঘরে নিদ্রায় ছিলেন। এ সময় হজরত জিবরাইল (عليه السلام) আল্লাহর হুকুমে জান্নাত থেকে বোরাক নামের একটি সাওয়ারি আর অসংখ্য ফেরেশতার দল নিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাজির হয়ে সালাম দিয়ে বললেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে স্মরণ করেছেন, এই মুহূর্তেই আপনাকে তথায় গমন করতে হবে।’ বোরাকে করে আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার সময় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার খেজুর বাগান এলাকায় ও হজরত ঈসা (عليه السلام)-এর জন্মস্থান মাদায়েনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।

আর মি‘রাজের দলীল হচ্ছে, অন্য আয়াত যেখানে বলা হয়েছে: “নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল, সিদরাতুলমুন্তাহার নিকটে, যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত, যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল, তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি, নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।” [সূরা নাজম ১৩-১৮]।

তাছাড়া হাদীসে এসেছে, বুখারীতে সাতটি বর্ণনা এবং মুসলিমে ছয়টি বর্ণনা ছাড়াও বহু হাদীসগ্রন্থে এটি এসেছে। বুখারি শরীফের আর একটি হাদিসে রয়েছে

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্নিত। তিনি নবী কে বলতে শুনেছেন, মিরাজের ব্যাপারে কুরাইশরা যখন আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চেষ্টা করল তখন আমি কাবার হিজর অংশে দাড়ালাম। আর আল্লাহ তাআলা বাইতুল মুকাদ্দাসকে আমার সামনে উদ্ভাসেত করল। ফলে আমি তার দিকে তাকিয়ে তার চিহ্ন ও নিদর্শনগুলো তাদেরকে বলে দিতে থাকলাম। (বুখারী, হাদিস নং ৩৮৮৬)

 

ইসরা মিরাজের পটভূমি কারন:

আল্লাহর মনোনিত দ্বীন ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে প্রিয়নবী ﷺ মক্কার কাফের কতৃক বিভিন্ন বাধার সম্মুখিন হন। নবুওয়তের দশম বৎসরে একের পর এক বিপদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘিরে ধরে। রাসূলের চাচা আবু তালেব মারা যান; যিনি কাফের হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সার্বক্ষনিক নিজের তত্ত্বাবধানে রাখতেন। তার জীবদ্দশায় কেউ তার কোন ক্ষতি করতে চাইলেও সক্ষম হত না। কিন্তু তার মৃত্যুর পর কাফেররা অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠে।এর কিছুদিন পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী উম্মুল মুমিনীন খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহাও মারা যান। যিনি শুধু রাসূলের স্ত্রীই ছিলেন না; বরং তার দাওয়াতের প্রধান সহযোগীও ছিলেন। তার সমস্ত সম্পত্তি রাসূলের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তার উপর প্রথম ঈমান এনেছিলেন। এ পথে যত কষ্ট হয়েছে সবই সহ্য করেছেন।

তাদের মৃত্যুর পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসহায় বোধ করলেন। তিনি বিভিন্ন গোত্রপতিদের কাছে নিজেকে পেশ করে বললেন, “কে আমাকে আশ্রয় দিবে যাতে আমি আমার রবের কথা প্রচার করতে পারি?” কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দিল না। মক্কার লোকেদের নিষ্ঠুর অত্যাচারে এবং দুর্ব্যাবহারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি তায়েফ গেলেন। সেখানে তায়েফের সর্দারদের কাছে তিনি একই কথা ব্যক্ত করলেন। তাদের কেউ তার কথায় কর্ণপাতই করল না। উপরন্তু তারা দুষ্ট শিশুদের তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিল। এমতাবস্থায় যা ঘটার তা-ই ঘটল। তারা তাকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করে দিল। তিনি মক্কায় ফিরে আসলেন।

এমতাবস্থাই আল্লাহ জাল্লাহ শানুহ তিনাকে সুসংবাদ জানিয়ে দিলেন যে, হে নবী! দুনিয়ার মানুষ যদি আপনার সম্মান না করে, মর্যাদা না দেয়, তাতে কিছু আসেনা। আপনি আমার প্রিয় হাবিব, ধুলির ধরায় আপনার মর্যাদাহানি হলে আমি আপনাকে আমার আরশে আযিমে নিয়ে আসব। তাই আল্লাহ পাক, তার প্রিয় হাবিবকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তাকে আরশে মুআল্লায় নিজের কাছে ডাকলেন। মহান আল্লাহ্ তাকে সম্মানিত করতে চাইলেন। তিনি তাকে ইসরা ও মি‘রাজের মত বিরল সম্মানে সম্মানিত করলেন।

কিন্তু শুধু এতটুকুই মিরাজের উদ্দেশ্য ছিলনা, মিরাজের উদ্দেশ্য ছিল আরোও ব্যাপক। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন “অর্থাৎ এটা এইহেতু যাতে আমি তাকে আমার কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেয়।” [সূরা বনী ইসরাইল: ১]

ইসরা মিরাজের সংক্ষিপ্ত কাহিনী

হিজরতের পূর্বের কথা। এক রাতে আল্লাহর রাসুল ﷺ শুয়েছিলেন। তন্দ্রাচ্ছন্ন, চোখদুটো মুদে এসেছে। তবে হৃদয়-মানস ছিল জাগ্রত। এরই মাঝে আগমন করলেন হযরত জিবরাঈল (আ.)। তিনি নবীজিকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন জমজমের নিকট। একটি স্বর্ণের পেয়ালা আনা হলো। তা ছিল ঈমান ও হিকমতে পূর্ণ; তাতে জমজমের পানি। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ﷺ কে যমযমের কাছে নিয়ে গেলেন। তারপর তার “شق الصدر” বা বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। তারপর তিনাকে যমযমের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে লাগিয়ে দিয়ে বক্ষ মিলিয়ে দিলেন।

এরপর আনা হলো নবীজিকে বহন করার জন্য সওয়ারী। প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়, ঘোড়া থেকে ছোট। নাম বুরাক। রং সাদা। এটা এতটাই ক্ষিপ্রগতির যার একেকটি কদম পড়ে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে।

এভাবে নবীজি ﷺ মুহূর্তেই পৌঁছে গেলেন বাইতুল মুকাদ্দাসে। বুরাক বেঁধে রাখা হলো পাথর ছিদ্র করে। যে পাথরে অপরাপর নবীগণ নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। নবীজি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় জিবরাঈল (আ.) নবীজির সামনে দুটি পেয়ালা পেশ করলেন। একটি দুধের অপরটি শরাবের। নবীজি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলেন। জিবরাঈল (আ.) বললেন, আপনি (দ্বীনের) স্বভাবসিদ্ধ বিষয়টি নির্বাচন করেছেন।

নবীজি মদের পেয়ালা নেওয়ার পরিবর্তে দুধের পেয়ালা গ্রহণ করায় জিবরীল (আ.) বলেন, আপনি যদি মদের পেয়ালা নিতেন তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৪)

এরপর বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ কে নিয়ে আকাশের দিকে যাত্রা করা হয়। সেখানে প্রথম আকাশে আদম, দ্বিতীয় আকাশে ঈসা ও ইয়াহইয়া, তৃতীয় আকাশে ইউসুফ, চতুর্থ আকাশে ইদরীস, পঞ্চম আকাশে হারূন, ষষ্ট আকাশে মূসা এবং সপ্তম আকাশে ইবরাহীম আলাইহিমুস সালাম এর সাথে সাক্ষাত করেন। সেখানে তিনি বাইতুল মা‘মুর দেখতে পেলেন। সেখানে তাকে দুধ, মধু ও মদ এ তিনপ্রকার পানীয় দেয়া হয়। তিনি দুধ পছন্দ করে নেন। তখন জিবরীল বললেন যে, আপনি স্বাভাবিক বিষয় গ্রহণ করতে সমর্থ হলেন। তারপর তিনি সিদরাতুল মুন্তাহায় নীত হলেন। তারপর এত উচুতে গেলেন যে, কলমের লিখার খসখস আওয়াজ শুনতে পেলেন। এরপর আল্লাহ্ তার ও তার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিলেন। এরপর মুসা আলাইহিস সালাম এর কাছে আসার পর তিনি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ কে সালাতের ব্যাপারে আল্লাহ্‌র কাছে কমানোর আবেদন করার পরামর্শ দিলেন। প্রথমে অর্ধেক, তারপর পাঁচ ওয়াক্ত পর্যন্ত কমানো হয়। অপর বর্ণনায়, প্রতিবারে পাঁচ, বর্ণনান্তরে দশ করে কমানোর পর সবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে এসে তা শেষ হয়। এরপর তিনি দুনিয়াতে ফেরত আসেন।

অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, সফরের শুরুতে বোরাক নিয়ে আসা হয়। ‘বোরাক’ বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে সফর করে। সেখানে তিনি নবীদের ইমামতি করেন। তারপর তাকে সেখানে তাকে দুধ মধু ও মদ এ তিনপ্রকার পানীয় দেয়া হয়। তিনি দুধ পছন্দ করে নেন। তখন জিবরীল বললেন যে, আপনি স্বাভাবিক বিষয় গ্রহণ করতে সমর্থ হলেন। তারপর তার জন্য মি‘রাজ বা সিড়ি নামিয়ে দেয়া হলে তিনি তাতে করে আকাশে গমন করলেন।

ইসরা মিরাজের ফলাফল:

ইসরা ও মি‘রাজের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, নবীগণ সবাই বৈমাত্রেয় ভাই। তাদের মিশন একটিই সেটি হলো, একমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদত প্রতিষ্ঠা করা। ইসরা ও মি‘রাজে নবীদের ইমামতির মাধ্যমে এ বিষয় প্রমাণিত হলো যে, সমস্ত নবীর নবুওয়তের মাধ্যমে প্রাপ্ত শরী‘আত শেষ হয়েছে। এখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়ত ও তারই শরীয়ত চলবে। আর তার শরীয়তই সর্বশেষ শরী‘আত। তিনিই শেষ নবী ও রাসুল। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, দুনিয়ার মানুষ আপনাকে সম্মান করতে কমতি করলেও আকাশে যারা আছে তারা আপনাকে সবচেয়ে বেশী সম্মানিত করে গ্রহণ করে নিচ্ছে। দুনিয়াতে মানুষের কর্মকাণ্ডে আপনি দুঃখিত হলেও আকাশে আপনাকে সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্য অনেকেই রয়েছেন। সর্বোপরি মহান আল্লাহ্ আপনাকে ছেড়ে যাবেন না। এর ফলে হিজরতের পথ প্রসারিত হলো, এর মাধ্যমে জানানো হলো যে, মূসা আলাইহিস সালামের উম্মতের চেয়েও তার উম্মত বেশী হবে। ফলে এর মাধ্যমে দাওয়াতের নতুন ক্ষেত্র আবিস্কৃত হবে এটাই বোঝা গেল।

এ সফরে নবীজিকে তিনটি উপহার দেওয়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং এই উম্মতের যারা শিরক থেকে বেঁচে থেকে মৃত্যুবরণ করবে— তাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৩)। এ সফরে নবীজির সাথে পূর্ববর্তী নবীগণের সাক্ষাৎ হয়। তখন তিনি নামাযে সকলের ইমামতি করেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৭২)। এ সফরে নবীজি দেখলেন, একদল লোকের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? জিবরাঈল বললেন, এরা বক্তৃতা করত  বটে, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২২১১, ১২৮৫৬)

উপসংহার

মাসজিদুল আকসা সমস্ত মুসলিমের সম্পদ। যেখানে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ সালাত আদায় করেছেন। ইমামতি করেছেন। আকাশে আরোহন করেছেন। সেখানে গেলে সওয়াব হওয়া কথা ঘোষণা করেছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, বাইতুল মুকাদ্দাসের মুক্তির সাথেই মুসলিম উম্মাহর সম্মান ও প্রতিপত্তি নিহিত।

আমাদের করনীয় হচ্ছে যে আবু বকরের মত ঈমানদার হওয়া। ইসরা ও মি‘রাজের প্রমাণিত কোন কিছুকে অস্বীকার না করা। করলে কুফরী হবে। সালাতের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া। কারণ, এ সালাত আকাশে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ কে ডেকে সম্মানের সাথে প্রদান করা হয়েছে। দুনিয়ার কোন স্থানে বা অন্য কোন মাধ্যমে সেটা ফরয করা হয়নি। মি‘রাজের রাত্রিতে পবিত্র কুরআনের সূরা আল-বাকারার শেষ দু’টি আয়াতও রাসূলুল্লাহ্ ﷺ কে প্রদান করা হয়েছে। সে দু’টি আয়াত পাঠ করা এবং বাস্তব জীবনে সেগুলোর প্রচার ও প্রসার করা প্রয়োজন।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter