হরিয়ানার মুসলিম অধ্যুষিত নূহ জেলায় সহিংসতা

৩১ জুলাই ঠিক দুপুর বেলা, শত শত ভক্তরা হরিয়ানার মুসলিম অধ্যুষিত জেলা নূহ জেলার নলহার গ্রামের পুরনো শিব মন্দির হতে প্রভাবিত হচ্ছিলেন। কিছিক্ষন পূর্বেই আরাবল্লী পর্বতের মধ্যে যে মন্দির রয়েছে সেই মন্দিরের শিবলিঙ্গের উপর পবিত্র গঙ্গার জল বহান করে, সিঙ্গর গ্রামের রাধা কৃষ্ণ মন্দিরের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন মোটামোটি ৫০ কিলোমিটারের রাস্তা।  ভক্তরা ছিল ব্রিজমন্ডল জালাভিষেক যাত্রার অংশ, একটি ধার্মিক মিছিল যা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দ্বারা আয়োজন করা হয়েছিল।  

তারা দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করার পরবর্তীতে, অন্য এক দল এসে ভক্তদের উপর আকস্মিকভাবে আক্রমন করেন।  তাদের প্রতি পাথর ছুড়তে আরম্ভ করে এবং যানবহন, দোকান ইত্যাদি গুলিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।  ভক্তরা আতঙ্কে পুনরায় মন্দিরের দিকে ফিরে যায়।  মোটামোটি পাঁচ ঘন্টা ধরে আসে পাশে ও মন্দিরে আবদ্ধ হয়ে আশ্রয় নেন এবং যেই দলটি আক্রমণ করেছিল তারা মন্দির কে ঘেরাও করে নেই। ভক্তদের মধ্যে অনেকেই এই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে পুনরায় পঞ্চ পাণ্ডবের সময় ফিরে এসে গেছে। 

সম্পদায়িক সংঘর্ষ আসে পাশের জেলা গুলিতেও প্রভাব ছড়িয়ে পরে, সেই জেলাগুলি হচ্ছে গুরুগ্রাম,পলওয়েল,ফরিদাবাদ এবং রেওয়ারি।  এই ঘটনাটি এক সাংঘাতিক ভাবে মাজার মন্দির গুলিতেও ভাঙচুর করে এবং ব্যাবসায়ীদের উপরেও আক্রমণ করেন ও দোকান গুলিতে আগুন জ্বালিয়ে ঝাড়খার করে দেয় তাতে গরিব দরিদ্র মানুষদের প্রকান্ড ক্ষতি হয় এছাড়া ছোট ছোট কুড়ি ঘর যা গরিব দরিদ্র মানুষরা বাস করতেন সেই ঘর গুলিতেও আগুন জ্বালিয়ে দেন । মোট ছয় জন ব্যাক্তির মৃত্যু বরণ করেন তার মধ্যে দুজন হোম গার্ড ছিল। ৮৮ জন বিভিন্ন জাগায় আঘাত পেয়েছেন। এই আক্রমণে যে জেলায় প্রভাব পড়েছে যেমন গুরুগ্রাম,পলওয়েল,ফরিদাবাদ এবং রেওয়ারি এই জেলা গুলিতে ইন্ডিয়ান প্যানেল কোড  দ্বারা ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৫টি FIR  নথিভুক্ত হয়েছে ও সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিও বন্ধ করা হয়েছে। 

নুহ জেলায় সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় হরিয়ানা পুলিশ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে। নরেন্দ্র বিজার্নিয়া, নুহ পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট বলেছেন, ৩১শে জুলাই সহিংসতার জন্য কিছু শরণার্থীকে পাথর নিক্ষেপ করা এবং জনতার অংশ হওয়ার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুগ্রাম এবং নুহ-তে সহিংসতা-প্রবণ এলাকা পরিদর্শন করবে সিপিআই প্রতিনিধি দল কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) এর চার সদস্যের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল হরিয়ানার গুরুগ্রাম এবং নুহ সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন। সিপিআই রাজ্যসভার সাংসদ বিনয় বিশ্বম, সিপিআই সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কৌর, পার্টির সাংসদ সন্দোষ কুমার পি, পার্টি নেতা দারিয়াব সিং কাশ্যপ সহ চার সদস্যের প্রতিনিধি দল গুরুগ্রাম এবং নুহ জেলার সহিংসতা প্রভাবিত এলাকা পরিদর্শন করবেন।

হরিয়ানা পুলিশ নালহার মন্দিরে মহিলাদের সাথে যৌন হয়রানির দাবি অস্বীকার করেছে

হরিয়ানা পুলিশ সাম্প্রতিক সহিংসতার সময় নুহের নালহার মন্দিরে আটকে থাকা মহিলাদের যৌন হয়রানির দাবি অস্বীকার করেছে। পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ADGP) এর মতে, হরিয়ানা মমতা সিং সংঘর্ষের সময় এমন কোন ঘটনা ঘটেনি কারণ তিনি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। "গতকাল থেকে একটি আখ্যান সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে যেদিন নলহার মন্দিরে ভক্তরা আটকেছিল, এই সময় সেখানে কয়েকজন মহিলা ভক্তের সাথে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ ঘটেছিল। আমি আপনাকে বলতে চাই যে এটি মিথ্যা, সম্পূর্ণ গুজব, ’ বললেন মমতা সিং। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “পুরো ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম বলে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে এটা বলছি। কোনো নারীর সঙ্গে এমন কিছু ঘটেনি। আমরা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার করেছি যে সেখানে আসলে কী ঘটেছে এই ধরনের গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, "এডিজিপি বলেছেন।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter