ইসলামে রোজগারের উত্তম পদ্ধতি
রুজি রোজগার জীবনের একটি অত্যন্ত জরুরী বিষয়, পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্বকে বজায় রাখার উদ্দ্যেশ্যে সমস্ত জাতিই নিজের সাধ্যমত রোজগার উপার্জন করার প্রচেষ্টায় থাকে। এই ক্ষেত্রে মহিলারাও আজকাল স্বনির্ভর হতে চায়। কিন্তু আধুনিক যুগে অধিকাংশ মানুষ বৈধ-অবৈধ না মেনেই রোজগারের পথে নেমে পড়ে, যেমন বেশ্যাবৃত্তি, চুরি, ডাকাতি, ইত্যাদি। যদিও সমাজের কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে যেগুলি বলে দেয় কোন জীবিকা বৈধ ও সম্মানজনক এবং কোনগুলি অবৈধ ও অসম্মানজনক। ইসলামের বিধানে আরও ভালো এবং উত্তম পদ্ধতিতে বলে দেওয়া হয়েছে যে, আমাদের কোনগুলি বেছে নেওয়া উচিত এবং কোনগুলি ছেড়ে দেওয়া উচিত। আর মুসলিম হওয়াতে আমাদের কোন সন্দেহ নেই যে কিয়ামত একদিন আসবেই; তাতে হবে আমাদের ও সকল বিশ্ববাসীর কাজকর্মের হিসেব নিকেষ। তথা আমাদেরকে অবৈধ কাজকর্ম থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য।
يا أيها الذين آمنوا كلوا من طيبات ما رزقناكم
অর্থঃ “হে ইমানদারেরা তোমরা শোন! তোমরা উত্তম জিনিসগুলো থেকে ভক্ষণ করো যা আমি তোমাদেরকে প্রদান করেছি।“
আল্লাহ তা'আলা উক্ত আয়াতটিতে উত্তম জিনিস ভক্ষন করার আদেশ দিয়েছেন। তবে উত্তম জিনিসগুলি কি? আল্লাহ তাআলা কি আমাদের দামী জিনিস কিনে খাওয়ার আদেশ দিচ্ছেন? না। তবে কি পরিষ্কার জিনিস খাওয়ার আদেশ দিচ্ছেন? না। তাহলে কোনগুলিকে আল্লাহ তাআলা উত্তম জিনিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন?
এই আয়াতটির ব্যাখাতে মুফাসসিরদের মতামত হচ্ছে এইরুপঃ আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াত দ্বারা ইমানদার ব্যাক্তিদের হালাল খাদ্য খাওয়ার ও গ্রহন করার হুকুম দিয়েছেন এবং হারাম জিনিস বর্জন করার আদেশ দিয়েছেন। তথা এই আয়াতটি দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যায় যে ইসলামে হালাল গ্রহন ও হারাম বর্জনের গুরুত্ব কত বেশি কারণ কুরআনে আল্লাহ তা'আলা যা কিছু উল্লেখ করেছেন তা সমস্তই সম্পূর্ণরূপে গুরুত্বপূর্ণ এবং তাকে অনুসরণ করা ও অনুকরণ করা মুসলিম সমাজের প্রতি অপরিহার্য।
আর হালাল রুজির মধ্যে সবথেকে উত্তম হচ্ছে শারীরিক কার্যকলাপ দ্বারা অর্জন করা। যেহেতু নবীর (সঃ) পবিত্র বাণীতে আছেঃ
عن المقدام بن معدي كرب قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم ما اكل احد طعاما قط خيرا من ان ياكل من عمل يديه و ان نبي الله داؤد عليه السلام كان يأكل من عمل يديه – (رواه البخاري)
অর্থঃ মিক্বদাম বিন মা’দি কারিব থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন “নিশ্চয় কোন ব্যাক্তি তার থেকে ভালো খাবার খায়নি যা সে নিজের হাত দ্বারা পরিশ্রম করে অর্জন করে খায়। নিশ্চয় আল্লাহর নবি হজরত দাউদ (আঃ) নিজ হস্তে পরিশ্রম করে অর্জন করে খেতেন।“
এবার অনেকে প্রশ্ন করতে পারে যে যদি সে এমন এক কার্যালয়ে কর্মে লিপ্ত রয়েছে যে তাকে হাতের পরিশ্রমই করতে হয়না। যেমন কেউ কেউ আছেন যারা কল সেন্টারে কাজ করেন তাদের তো হাতের কাজ নয় তাদের কে তো মানুষের সাথে ফোনে কথা তাদের সাহায্য করতে হয় এবং তা থেকেই তাদের উপার্জন তাহলে তাদের তো হাতের পরিশ্রম নেই বললেই চলে কিন্ত হাদিসে তো বলা আছে যে হাতের পরিশ্রমই উত্তম উপার্জনের পদ্ধতি তাহলে উপায় কি! তো প্রিয় পাঠকেরা এই হাদিসটির ব্যাখা মুহাদ্দিসেরা ঠিক এরূপ দিয়ে থাকেন যে নিজ হাতের পরিশ্রম অর্থাৎ যে উপার্জনই হোক সেটা হালাল এবং তাতে যেন আপনার নিজের পরিশ্রম থাকে তাহলেই তা উত্তম পদ্ধতি যেমন ভিক্ষাবৃত্তি এটিতে হারামের কিছুই নেই তবুও এটা উত্তমের পর্যায়ে আসে না কারণ আপনার পরিশ্রম নেই আর তাছাড়া এতে নিজের সম্মানহানী হয়। আবার ধরুন বেশ্যাবৃত্তি এতে আপনার শরীর তো খাটে কিন্তু উপার্জন তো এর দ্বারা হালাল নয় তথা এই উপার্জনও ভালো নয়। অতএব এই হাদিসটি দ্বারা যেটা বলা হয়েছে তা হল নিজ পরিশ্রমে হালাল উপার্জন করাই হচ্ছে সবথেকে উত্তম পদ্ধতি যাতে আপনার রুজিরোজগারে বরকতও আসে আবার অভাবও দূর হয়।