জাকাত সমন্ধে কিছু জানার বিষয় সমূহ
জাকাত অর্থ পবিত্র হওয়া যাকে আরবিতে (تزكية) বলে ও বৃদ্ধি পাওয়া যাকে আরবিতে (نما) বলে। আল্লাহ
প্রদত্ত নিয়মে ধনীর সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট প্রদান করাকে জাকাত বলে। পবিত্র
কোরআনের ৮২ স্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের কথা বলা হয়েছে। জাকাত তাদের উপর ফরজ যারা প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের জীবনযাপন ব্যয় বাদ দেয়ার পর সম্পূর্ণ এক বছর পর্যন্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ নির্দিষ্ট খাতে প্রদান করতে হবে।
নিশ্চয়ই যাকাত বছরে একবার প্রদান করা অপরিহার্য যদি নিসাব পরিমাণ রূপে পাওয়া যায়। সুন্নি হানাফী
মাযহাবের ফিকহী কিতাবে উল্লেখ আছে যে যাকাত গ্রহণকারির মালিক হওয়া দরকার, কিন্তু অনেক মানুষ
যাকাত মাদ্রাসায় দিয়ে দেন যেখানে নির্দিষ্ট মালিক পাওয়া অসম্ভব, এই ক্ষেত্রে সুন্নী হানাফী ওলামারা
ফতোয়া দেন যে হিলা করা উচিত।
হিলা কি? এবং যাকাতের টাকা অন্য কোন জায়গায় প্রদান করতে পারবে এ বিষয়ে নিচে বর্ণনা করা হবে।
জাকাতের ব্যায় মাদ্রাসা বা কবরস্থানে
জাকাতের নিয়ম হিসাবে, জাকাত দিলে কাউকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে কিন্তু মাদ্রাসায় বা কবরস্থানে
মালিকের জন্য কেউ নাই যেগুলো في سبيل الله তাই ফাতওয়া দেওয়া হয়েছে যে:
وكذلك من عليه الزكاة لو أراد صرفها الى بناء المسجد أو القنطرة لا يجوز والحيلة أن يتصدق على الفقراء ثم الفقراء يدفعونه إلى المتولي ثم المتولي يصرف ذلك إلى الرباط (فتاوى عالمگيري)
অর্থাৎ: অনুরূপভাবে, যাকাতের পাওনা কারো জন্য মসজিদ বা সেতু নির্মাণে ব্যয় করা জায়েয নয়। কিন্তু
সেটি সম্ভব সুধু মাত্র হিলার মাধ্যমে আর এই কৌশলটি হল গরীবকে দান করা, তারপর গরীবরা অভিভাবককে দেয়, তারপর অভিভাবক ব্যায় করে। জাকাত যদি কোনো মসজিদ বা মাদ্রাসা বানানোর জন্য ব্যাবহার করা হয় তবে সেটি জায়েজ না কিন্তু সেটি
শুধু মাত্র হিলা (حيلة) দ্বারা সম্ভব। হিলা হলো জাকাতের মাল কোনো ফকিরকে দিয়ে দিতে হবে
তারপর ফকির সেই মাদ্রাসা চালককে দেবে এবং মাদ্রাসা চালক সেটা সঠিক জায়গায় ব্যায় করবে।
.
ব্যবহৃত সোনা এবং যা রাখা আছে তার উপর যাকাত দেওয়া
যাকাতের হিসাবে ব্যবহৃত সোনা এবং যা রাখা আছে দুটোতেই যাকাত দিতে হবে কারণ এটি একটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিস দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে:
إن امرأتين أتتا رسول الله وفي أيديهما سواران من ذهب فقال لهما أتؤديان زكاته، قالت: لا, فقال رسول الله: وسلم أتحبان أن يسور كما الله بسوارين من نار، فقالت: لا ، قال فأديا زكاتكما. (سنن الترميذي: كتاب الزكاة ٢٩/٣)
অর্থাৎ: দুজন মহিলা তাদের হাতে স্বর্ণের কঙ্কন নিয়ে আল্লাহর রাসূলের কাছে এলেন এবং তিনি তাদের
বললেন: তোমরা কি তার জাকাত দিয়েছো? তারা বলল: না। তখন আল্লাহর রসূল বললেন: তোমরা কি পরিধান করতে চাও সেই দুটি অলঙ্কার যেটা আগুনের দ্বারা উবলে পড়ছে? তারা বলল: না। তখন নবীজী বললেন: তবে তোমার তোমাদের জাকাত আদা করা।
(সুনান আত-তিরমিযী: কিতাব জাকাত ২৯/৩)
এই হাদীস দ্বারা সমপূর্ণভাবে বোঝা যায় যে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তাদের
ব্যবহৃত সোনার জাকাত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
জাকাতের একটি বিশেষ দিক
মূল বিষয় হলো, যাকাতের অর্থ শুধুমাত্র যাকাতের ব্যয়ে ব্যয় করা উচিত, অর্থাত্ আল্লাহ যা নির্ধারণ
করেছেন, আর অন্যত্র ব্যয় করা জায়েয না যদি সেটা জায়েজ জায়গা হয় তবেও জায়েজ নয়। যেমনটি হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে:
ان الله لم يرض في الصدقات بتقسيم ملك مقرب ولا نبي مرسل حتى يتولى بتقسيمها بنفسه. (در منشور ٨٣/٥)
অর্থাৎ: ঈশ্বর কোনো ঘনিষ্ঠ রাজা বা প্রেরিত কোনো নবীর দ্বারা দাতব্য বণ্টনে রাজি হয়নি যতক্ষণ
না তিনি নিজে তা ভাগ করার দায়িত্ব নেন। তাই জাকাত করতে হবে তাদের প্রতি যাদেরকে আল্লাহ তাআলা
নির্ধারণ করেছে।
জাকাতের ব্যায় একটি গরিব মানুষের হজের প্রতি
যদি কোন গরিব মানুষ নিজে থেকে বলে যে আমি হজের সমস্ত প্রতিটি কাজ আদায় করব, তবে কি জাকাতের অর্থ এই হজের জন্য ব্যায় করা হবে না হবে না?
উত্তর: এ ধরনের ব্যক্তির হজের ব্যায় নির্বাহ করা শরয়ী জায়েজ, কারণ কুরআন শরীফে বর্ণনা আছে:
وتعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان
অর্থাৎ: ধার্মিকতা ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা করো, কিন্তু পাপ ও আগ্রাসনে সহযোগিতা করো না।
তবে হজের থেকে বড় নেকি আর কি আছে। একটি হাদীসে বর্ণনা আছে: ঈশ্বরের জন্য, তিনি আক্রমণকারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হন এবং বলা হয় যে তিনি একজন তীর্থযাত্রী। (দুরু আল-মুখতার: কিতাব জাকাত ২৬১/১)
এই হাদীসে যারা আল্লাহর পথে আছে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে এবং মুজাহিদ যাদের কাছে টাকা, এবং কেউ কেউ বলেছেন হাজীদেরকে বোঝানো হয়েছে, তবে তাদের যাকাতের টাকা দেওয়া যেতে পারে।
ব্যাংক থেকে জাকাত আদায় করা
মূলনীতি হল ব্যাংক থেকে নেওয়া টাকার উপর যাকাত আবশ্যক যদি তার শর্ত পূরণ হয়। আর যদি সেই
অর্থ নষ্ট হয়ে যায় তবে এতে কোন যাকাত নেই এবং যদি এর কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যায় তবে বাকিদের উপর
যাকাত ফরয হবে যতক্ষণ না যাকাতের শর্ত পূরণ হয়। (ফাতওয়া দারুল ইফতা)
উপসংহার, আজ বর্তমান যুগে যদি সমস্ত মানবের প্রতি লক্ষ্য করা যায়, অধিকাংশ ধনী ব্যক্তি ধনী হয়েও আল্লাহ পথে গরিবের ভান করে। সম্মানিত পাঠক, সবাইকে এটা জানা উচিত যে এই দুনিয়া শুধু খেলা ছাড়া কিছুই নয়, একদিন সবকিছু তাচনাচ হয়ে যাবে।
সুতরাং সবার উপর অপরিহার্য যে তারা তাদের জাকাত সঠিক সময়ে আদায় করে।