ছাত্র হিসেবে নিয়ম অনুসরণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা

নিয়ম কানুন ও নিয়মাবলী ছাড়া বিশ্বজগৎ ছন্নছাড়া। সূর্য, চন্দ্র, তারকা মন্ডলীর সৌর সংসার সহ সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আবর্তিত হচ্ছে নিয়মাবলীর উপর ভিত্তি করে যার ফলে দিনের পর রাত্রি , গ্রীষ্মের পর বর্ষা, জোয়ার-ভাটা ইত্যাদি ঘটে থাকে। এই নিয়ম বা শৃঙ্খলা যদি বিপর্যস্ত বা তছনছ  হয় তাহলে মহাপ্রলয় অবশ্যম্ভাবী । তাই শৃঙ্খলা ও নিয়ম কানুন অবশ্যপালনীয় এবং অতি গুরুপ্ত পূর্ণ বিষয়। এই নিয়ম কানুন ও শৃঙ্খলা বিশ্বপ্রকৃতির ক্ষেত্রে , মানুষের ক্ষেত্রে, ছাত্রজীবনে– এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। শৃঙ্খলা ছাড়া সমস্ত কিছু বিফল। 

বর্তমান পরিবেশে ছাত্র জীবনে নিয়ম কানুন ও শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা

ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক, জাতির ভবিষ্যৎ তাদের উপর নির্ভরশীল। দেশের প্রত্যেকটা বস্তু ও নাগরিক এই সমস্ত ছাত্রদের ওপর নির্ভর করে কারণ ছাত্র হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ ও একটি  উজ্জ্বল আলো  যেটি মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে যাবার চেষ্টা ও প্রচেষ্টা করে এবং দেশের নাগরিকদেরকে শিক্ষিত করে তোলে।  সেই জন্য ছাত্র জীবনে শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এটাই ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি নির্মাণের সময়। ছাত্রজীবনে গুরুতর ত্রুটি-বিচ্যুতি শৈথিল্য ঘটলে এবং শৃঙ্খলা থেকে দূর হয়ে গেলে আমাদেরকে এই সমাজে নিমজ্জিত হয়ে পদে পদে লজ্জিত হতে হবে আজীবন। যোগ্যতা না থাকলে, সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি সুস্থভাবে করা, দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিততা, দৈনন্দিন কর্মসূচী ঠিক করে তা অনুসরণ করা, কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠা, এক কথায় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা না থাকলে সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। অলসতা, বিলম্ব এবং শিথিলতা আমাদের রক্তে রয়েছে, এই সমস্ত শক্তি এবং শক্তি ক্রমাগত নিষ্কাশন করে, আমরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ি। অলসতার কারণে আমাদের লক্ষ্যকে ভুলে গিয়ে অন্য এক নিকৃষ্ট পথের দিকে চলতে থাকি। তারপর নিজেদের অক্ষমতার নানা অজুহাত, কৈফিয়ৎ ও কারণ তৈরি করি, অপরকে এবং নিজেদের পরিবেশকে দায়ী করি এবং শরীর-মনের জড়তার আচ্ছন্ন হয়ে নিজেদের দোষ ত্রুটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অচেতন থাকি। তখন সর্বনাশ যা হবার হয়ে যায়। সুতরাং ছাত্রদের সমস্তই হৃদয়-মন দিয়ে শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা যে কতখানি তা উপলব্ধি করতে হবে। নিয়ম কানুন কত খানিক গুরুপ্ত ও প্ৰয়োজন সেটা সমস্ত ছাত্র ও ছাত্রীদেরকে বুঝিয়া দিতে হবে এবং আমাদের দেশ ও সমাজকে সঠিক পথের দিকে অগ্রসর করতে হবে।  তারা ভবিষ্যতে যে কোন বৃত্তি গ্রহণ করুক, তার জন্য উপযুক্ত হয়ে নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশকে কিছু দিয়ে, তাদের সেবা করে মনুষ্য জন্মকে সার্থক করতে হবে, শৃঙ্খলা পরায়ন হতে হবে। নিয়ম কানুন ও শৃংখলার মধ্যে দিয়েই মানুষের ব্যক্তিত্ব বা চরিত্র গঠিত হয়। ছাত্রজীবনে কঠিন শৃঙ্খলা মেনে চলার শক্তি ভবিষ্যৎ জীবনে দুঃখ জয়ের প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি স্থাপনের দীক্ষা ও প্রেরণা এবং মানব কল্যাণের একটি উজ্জ্বলতার পথ।

বর্তমানে ভারতবর্ষের সমাজ জীবনের নানা ক্ষেত্রে ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধির মতো ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। তাদের নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্যকে অবহেলা করে সমাজের নিয়ম কানুন, সমাজের বিধি লঙ্ঘন করে জাতীয় স্বার্থকে আঘাত করে সামান্য কিছু তুচ্ছ জিনিস পাওয়ার লোভে তারা নিজেরদের মধ্যে হাঙ্গামা, দাঙ্গা প্রতিশোধের আগুন এই সমাজে জ্বালাতে থাকে যার ফলে সমাজ ও দেশের গুরুতর ক্ষতিসাধন ইত্যাদি প্রায় প্রতিদিনি ঘটে থাকে।  এই দায়িত্ব বোধ হীনতা ও নিয়ম কানুন না মেনে চলা ছাত্রদের মধ্যেও সংক্রামিত। আজ কাল ছাত্ররা নিয়ম কানুন কে অবিলম্বন করা তাদের জন্মগত অধিকার মনে করে, যেমন পরীক্ষার শেষে চেয়ার, টেবিল ভাঙা, শ্রদ্ধেয়দের অপমানিত ও লাঞ্ছিত করা, শিক্ষকদেরকে মারধর, গালিগজ করা ইত্যাদ।   এইভাবে প্রবঞ্চনার আশ্রয় নিয়ে জীবনে কোনদিনই প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায় না ও সাফল্যতার পথ পাওয়া যায়না। বিদ্যালয়ের পরীক্ষার থেকেও জীবনে আরও বড় ও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। কঠিন পরিশ্রমে, ধৈর্যে ও নিষ্ঠায়, শৃংখলার মধ্যে দিয়েই জীবনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। নিজেকে প্রতিষ্টা করার জন্য নিয়ম কানুন কে আগলে রেখে চলতে হবে।  সমাজের কানুন কে উপলব্ধি করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।  সমস্ত খারাপ ও আপদ বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে একই সাফল্যের রাস্তায় পা  রেখে চলার লক্ষ্য তৈরী করতে হবে।  

ছাত্রজীবনের মূল্য 

ছাত্রজীবন  মানুষের ভবিষ্যৎ উন্নতি ও উজ্জ্বল করার  জন্য একটি সুন্দর পথ পদর্শক ।  সেই জন্য ছাত্রজীবন মানুষের সমগ্র জীবন পরিবর্তন এর জন্য তার মূল্য অত্যধিক। আমরা যদি মানুষের জীবনটাকে  একটি বৃক্ষের সাথে তুলনা করি, তাহলে ছাত্রজীবন হলো সেই বৃক্ষের মূল । কারণ একটি গাছের মূল যত শক্ত হবে বৃক্ষও তত মজবুত হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ঝড়ে সেই গাছ উপড়ে পড়বে না। মূল সেই গাছটিকে আঁকড়ে ধরে রাখবে, ততরূপ মানুষের জীবনও সেই রকম। ছাত্রজীবনে যে যত পরিশ্রম করবে ভবিষ্যৎ জীবনের তার ভীত ও তত মজবুত হবে এবং সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে। জীবনের এ মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট করলে ভবিষ্যৎ-এ  জীবনে দুঃখ, দুর্দশা ও হতাশা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবেনা।  ছাত্রজীবনে অতি প্রয়জন যে তারা নিজের লক্ষ্যর দিকে এগিয়ে যায়।  

ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য 

 ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলাে জ্ঞানার্জন করে একজন আদর্শ মানুষ হওয়া এবং অপরদেরকেও আদর্শ করে গড়ে তোলা। বর্তমান সমাজে কিছু ছাত্র যুবক ভেবে নিয়েছে যে, শুধু পরীক্ষায় পাশ করে কয়েকটি সার্টিফিকেট বা সনদ অর্জন করলেই ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য সফল হওয়া যায় কিন্তু সার্টিফিকেট বা সনদ অর্জন করলেই ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য সফল হয় না। একজন ছাত্রকে চরিত্রবান, আত্মবিশ্বাসী, নম্র-ভদ্র, বিনয়ী, সমাজসেবী, প্রভৃতি গুণ অর্জন করতে হব।  নিজেকে  সুযােগ্য ও মহৎপ্রাণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।  আর এই সমস্ত অর্জন করা হয় শুধু মাত্র কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে।    

উপসংহার

ছাত্রদের অভাব-অভিযোগের যে কোনো কারণ নেই তা নয়। তাদের মধ্যে ও অনেক রকমের সমস্যা দেখা দেই কিন্তু ছাত্রজীবনে সাফল্যতা পেতে হলে তাদের আন্দোলন সুশৃংখল হওয়া দরকার ও নিজেকে নিয়ম কানুনের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা অতি প্ৰয়োজন । সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সঠিক সংগ্রামের ভিত্তি ও শৃঙ্খলা হচ্ছে কর্তব্য, নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধ।

 উচ্ছৃংখল মানুষেরা কখনো কোন জাতীয় সংগ্রামের সৈনিক হতে পারে না ও মানব কল্যাণের জন্য কোনো রকমের পথপদর্শক হতে পারেনা । বিভিন্ন দেশের বৈপ্লবিক বা স্বাধীনতা ও যুদ্ধের  সংগ্রামের ইতিহাস তারই সাক্ষ্য দেয়। যে উচ্ছৃংখল, সে সমাজের নৈতিক দুর্গতি কে আরও বাড়িয়ে দেয় এবং সমাজ কে খারাপ এর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং তাদের সমস্ত শক্তির অপচয় ঘটে। নিয়ম কানুন ও শৃঙ্খলা স্থায়ীত্ব সকল রকমের জীবন-সংগ্রামের উৎস এবং সাফল্যের একটি গুরুপ্ত পর্ণ পন্থা যা  ছাত্র সমাজকে সব সময়েই এ কথা মনে রাখতে হবে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter