সততাঃ মুমিনের পরিচয়
সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তাআলার জন্য এবং হাজার হাজার দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক হজরত মহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর। আল্লাহ তা'আলা কোরআন শরীফে এরশাদ করেছেন-
يَأَيُّهاَ الَّذِيْنَ آمَنُوا التَّقُو اللهَ وَ كُونُوا مَعَ الصَّادِقِيْنَ ( التوبة: 119)
তাৎপর্য: হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথ দাও। সত্য বলা একজন সত্যবাদী ও ভালো মুমিনের পরিচয়। সততা হল ইসলামের সম্মান। সত্যবাদীরা পৃথিবীর কোন জায়গায় অসফল হয় না। অতঃপর আল্লাহ তাআলা সততাকে সর্বদা সমস্ত জায়গায় সফলতা দান করেন। নিজের ব্যবসায়, ব্যবহার যেমন বেচা-কেনা, বাণিজ্য, ধার নেওয়া, ভাড়া দেওয়া এবং মাসের বেতন ইত্যাদিতে সত্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। আছে সেই রকমই জ্ঞান অর্জনেও শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার ঘটে থাকে, যার মূল হল সততা। সততা সর্বদা সমস্ত ব্যবহারে এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য রাখে যেমন স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-পিতামাতা এবং ভাই-বোনের একের অপরের সাথে ব্যবহারের মধ্যে সততা। তার চেয়েও নিজের আত্মীয়-স্বজনের সাথে লেনদেনের সময় সততার মূল বৈশিষ্ট্য থাকে। তা না হলে একটু ছোটো মিথ্যার জন্য সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে।
সমস্ত মুসলমানদের ওপর সর্বদা সত্যের সাথ দেওয়া অনিবার্য, কেননা পুরো পৃথিবীতে সত্যের পথে চলনকারী বেশী আমাদের দ্বীনে ইসলামে আছে। আর এ কথাটাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। একজন আরাবি বলেন- قُلِ الْحَقَّ وَ لَوْ كَانَ مُرًّا অর্থাৎ সত্যই বলো যদিও তোমাকে শুনতে সেটা খারাপ লাগে। কিন্তু কাউকে দেখাবার জন্য )রিয়ার জন্য( সত্য বল না। লোকের নিকট সম্মান পাওয়ার জন্য সত্য বলো না। লোক তোমাকে ভালো বলবে, ভালোবাসবে এবং তোমার ওপর রাজি হবে এসব দেখে সত্যের সাথ দিওনা। শুধু আল্লাহর জন্য সত্য বলবে। তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সত্য বলবে। হুজুর সাঃ এর সমস্ত সাহাবাগণ সত্যের উপরে সারাজীবন যাপন করেছেন আর সর্বদা তারা নবীজির কথা অনুসরণ ও অনুকরণ করেছেন। কখনো তিনার কথা অস্বীকার করেননি। সমস্ত তা’বি, তা’বি তা’বি, স্বালিহিন এবং মুমিনগণ সততার উপর জীবন অতিবাহিত করেছেন। আল্লাহর রাসূল এরশাদ করেছেন-
إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِى إِلَى البِرِّ وَ إِنَّ البِرَّ يَهْدِى إِلَى الْجَنَّةِ.
অর্থাৎ- নিশ্চয়ই সত্য ভালোর পথ দেখায় আর ভালো পথ জান্নাতের পথ দেখায়। অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকারী তারাই হবে যারা সত্যের পথ প্রদর্শন করবে।
عَنِ الْحَسَنِ بنُ عَلِي -رضِي اللهُ عَنْهُما- قالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلَّمْ-: (دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيْبُكَ؛ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمْأَنِيَّنَةٌ، وَاْلكِذْبَ رِيْبَةٌ
অর্থাৎঃ- হাসান রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন। আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়াসাল্লামকে ইরশাদ করেতে শুনেছি- যা আপনাকে সন্দেহ লাগে তা আপনি ছেড়ে দিন সেই দিকে লক্ষ্য রেখে যে দিক আপনাকে সন্দেহ লাগে না। নিশ্চয় সততা পূর্ণময় শান্তি এবং মিথ্যা সর্বদা সন্দেহজনক।
একদা কিছু আ’রাবী মানুষ ভারতের তীরবর্তী স্থানে পৌঁছায়। সেখানে তাদের হঠাৎ খুব পিপাসা পায়। তারা এদিক-ওদিক দেখে কিন্তু কোথাও জলের সন্ধান পেল না। তারা কিছু দূর হাঁটতেই একটা বিশাল বড় নারিকেলের বাগান দেখতে পেল। তরিঘরি তারা বাগানের দিকে এগিয়ে চলে যায় এবং মালিকের নিকট পৌঁছে মালিক কে তাদের অবস্থার ব্যাপারে সমস্ত জানায়। বাগানের মালিক তাদের খুশি হয়ে বলল আমি তোমাদের নারিকেল পেরে দিব তোমরা জল পান করে নিবে। এই বলে তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা মনে পরে যাওয়ায় সে সেখান থেকে চলে যায়।তারপর তারা সেই বাগান থেকে কোন না নারিকেল পেরেছিল, আর না নারিকেল স্পর্শ করেছিল। কিন্তু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল কেননা তারা নিশ্চিত ছিল না যে বাগানের মালিক খুশি হয়ে তাদের অনুমতি দিয়েছিল কি না। সেখানে মালিকের কথায় মিথ্যার সম্ভাবনা থাকার কারণে তারা নারিকেল স্পর্শ পর্যন্ত করেনি, অথচ তাদের কঠিন পিপাসা পেয়েছিল।
আজকাল এই সমাজে সত্যের হাত ধরতে কিছু সময় প্রয়োজন, কেননা সমাজের মানুষ সেই ব্যক্তির বিরোধিতা করে যে সত্যের হাত ধরে এবং সত্যের পথে চলে। কিন্তু এই সময় নবীজির সুন্নতকে জীবিত করার কারণে দ্বিগুণ নেকী পাওয়া যায়। আর ইনশাআল্লাহ কিয়ামতের দিন তিনার সুন্নতের অনুকরণের জন্য আমরা তিনার শাফায়াতের ভাগ্যবান লাভ করব। অতঃপর আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে আমরা যেন মিথ্যার আশ্রয় না নিই। আর আমরা আমাদের আলোচনায় মিথ্যার সাহায্য যেন না নিই। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সত্য বলার এবং কাল কেয়ামতের দিন সত্যের সাথে দাঁড়ানো তৌফিক দান করেন। আমীন।ইয়া রাব্বাল আলামিন।