ইবনে খালদুন এবং তাঁর মুকাদ্দিমা
ইবনে খলদুন নামে বিখ্যাত। তাঁর নাম আব্দুর রহমান আবু জাইদ অলিউদ্দিন ইবন খালদুন। সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা এবং পিতা হিসেবে বিশ্ব ইতিহাসে তিনি পরিচিত। “ইবনে খালদুন” নামকরণ অনেক বিখ্যাত হওয়ার কারণ যে তিনার দাদার নাম খালিদ বিন উসমান ছিল যিনি আন্দালিসে প্রবেশ করেন এবং তাকে অনুসরণ করে ইবনে খালদের নাম আসে। এই সময়ে এক একটি গত্রো তিনারা নিজের নামে ও (و ) আর নুন ( ن) লাগাত। এবং এই অক্ষর যুক্ত করলে তাদের নাম অনেক বিখ্যাত হয়ে পরিচলনা করা হত। তাছাড়া তিনাকে হাজরামিরও সঙ্গে যুক্ত করা হয়। আর এইটা 'ওয়ায়িল বিল হিজর" সহাবীর নামে সঙ্গে যুক্ত। তিনার জন্ম 732 হিজরীর রমজান মাসে তুনিস দেশে হয়।
শিক্ষা এবং প্রাথমিক জীবন
শৈশবে তিনি কোরআন মুখস্ত করেন। তিনার পিতা জ্ঞানী হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন পিতার কাছেই হয়। তাছাড়া সমকালীন অনেক পন্ডিতের কাছেও শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনার পড়াশোনার পরে তিনি অনেক জায়গা যাত্রা করেন। তিনার পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি অনেক বিষয়ে বিখ্যাত জ্ঞানী বাক্তি হয়ে উঠেন।
তিনি বিভিন্ন বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করেন। কুরআন, আরবি ভাষাবিদ্যা, হাদিস, শরিয়া (আইন) এবং ফিকাহ (আইনশাস্ত্র) ইত্যাদি। তিনি ঐ সকল বিষয়ের জন্য সনদ (ইজাযাহ) পেয়েছিলেন। তাছাড়া গণিতবিদ্যা দর্শন যুক্তিবিদ্যা ইত্যাদিতে বিষয়েও বড়ো পন্ডিত ছিলেন। তিনি ইবনে সিনা, রাজী এবং অন্যান্য পণ্ডিতদের কাজ অধ্যায়ন করেন।
তিনার যাত্রা
ইবনে খালদুন গ্রানাডায় যাত্রা করেন। সেখানে তিনি অনেক কয়েক দিন জীবন জাপন বা বসবাস করেন এবং তারপরে তিনি মিশর গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় আজহারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সেখানে তিনি অনেক কয়েক দিন জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি সেখানেই শিক্ষক হিসেবে থাকেন এবং তার পর তিনি হজের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ যাত্রা করেন।
তিনার গ্রন্থ
সমাজবিজ্ঞানী সব থেকে বিখ্যাত কাজ হল ইবনে খলদুনের মুকাদ্দিমা নামে পরিচিত গ্রন্থ। বইটির সম্পূর্ণ নাম “কিতাব আল-ইবার ওয়া-দিওয়ান আল-মুবতাদা ওয়াল-খবর ফি আয়্যাম আল-আরব ওয়া আল-আযম ওয়া-ল-বারবার ওয়া-মন আসারাহুম মিন যাওই আস-সুলতান আল-আকবরের"। কিন্তু মুকাদ্দামা ইবনে খালদুন নামে বইটি বেশি পরিচিত। এই কিতাব টিকে তিনি তিন ভাগ করেন। প্রথম ভাগে তিনি জনগণের ব্যাপারে, এবং দ্বিতীয় ভাগে আরব এবং আরবের নিকটে থাকা সহরসমুহের বিবরণ করেন, এবং শেষ ভাগে বারবার মানুষের বিবারন দেন। তিনার আর অন্য কর্ম রয়েছে যেমন “লুববু-ল-মুহাসাল ফি উসওলু-দি-দ্বীন”, “সিফাউস-সায়েল” এবং “আ'ল লাকাউলিস সুলতান”।
রাজনৈতিক পেশা
রাজনৈতিক হিসেবেও তিনি বেশ দক্ষ ছিলেন। তিনি পঁচিশ বছর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সর্বপ্রথম তিনি ২০ বছর বয়সে, তিনি তিউনিসিয়ার শাসক ইবনে তাফরাকিনের চ্যান্সেলারিতে কাতিব আল-আলামাহ (সীলমোহর বহনকারী) পদে তার রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করেন। কয়েক বছর পরে, আবুফারিস আব্দুলব্দু আজিজ তাকে বন্দী করে, যিনি টেমসেনের সুলতানকে পরাজিত করেছিলেন এবং সিংহাসন দখল করেছিলেন। এরপর তিনি একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেন এবং ১৩৭০ সাল পর্যন্ত শিক্ষাগত দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। সেই বছরে, নতুন সুলতান তাকে টেমসেনে পাঠিয়েছিলেন। আবদুল আজিজের মৃত্যুর পর, তিনি ফেজ-এ বসবাস করেন, শাসকের আস্থা উপভোগ করেন।
তিনার ইন্তেকাল
ইবনে খালদুন পরবর্তী পাঁচ বছর কায়রোতে তার আত্মজীবনী এবং তার বিশ্বের ইতিহাস সম্পূর্ণ করতে এবং শিক্ষক ও বিচারক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানদের বহনকারী একটি জাহাজ আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ডুবে যায় এবং এই বড়ো দূরঘটনাতে মারা যায়, যেটাতে তিনার সমস্ত পরিবার তুনিস থেকে ইসকেন্ডারিয়া যাওয়ার পথে বড়ো জল জাহাজ সেটি সম্মদ্রোর মাঝে ডুবে ১৩৮৪ সালে। তিনি ১৪০৬ সালের এই পৃথিবী ত্যাগ করেন।