ঈদ মোবারক: সর্বজনীন বার্তার এক সমহার
এক মাস এক টানা রোযা পালনের পর উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর যথা উপবাস ভঙ্গের উৎসব। রমজানের শেষ মাগরিব অর্থাৎ সন্ধ্যা-পূর্বের নামাজ শেষ হতেই আরম্ভ হয়ে যায় ঈদী শুভেচ্ছা। অনেক প্রায় ভুলেই যায় যে বর্তমান মাস পেরিয়ে উপস্থিত হয়েছে নতুন শাওয়াল।
উৎসবের সর্বজনীনতা
কোন কিছু সর্বজনীন হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে উক্ত বিষয়ের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এবং প্রাধান্য থাকা। ঈদ উপলক্ষে এই ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে উপলব্ধ। বিশ্বের আর কোন উৎসব নেয় সম্ভবত যার আগমনের নিশ্চয়তা করতে স্বইচ্ছায় অংশগ্রহণ করে সম্প্রদায়ের সকল শ্রেণীর মানুষ - বাচ্চা-বৃদ্ধ, মহিলা-পুরুষ অত্যাধুনিক টেকনোলজি, পাম্পরিক দিন তালিকা এবং নিয়োজিত পণ্ডিত গোষ্ঠী সত্বেও সবাই ঈদ মার্কা চাঁদের অন্বেষণ করার চেষ্টা করে।
সমাজ আচরণ
ঈদের সামাজিক সরঞ্জাম তুলে ধরার সময় একটা প্রকাশ্য আনন্দ কখনও আলোকপাত পায়না সেটি হল মেহেন্দি প্রথা। যদিও এটা ধর্মীয় প্রথা নয়, তবুও যেন উৎসবের প্রাথমিক সাজ বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। তাছাড়া এসব কিছুই তো আনন্দ উদযানের অংশ।
ঘুমিয়ে জেগে রাত অতিবাহিত হয়ে যায়। ফজরের নামাজে সবার যাওয়ার তাগিদ থাকে। ভোর প্রভাতেই সকলে উঠে পড়ে যেহুতু গত রাতেই ঘোষণা হয়ে গেছে যে ঈদের নামাজ সকাল সাড়ে সাতটায় ঈদগাহ ময়দানে সংঘটিত হবে।
তারপর এবার আরম্ভ হয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান। নারকেল কাটার দ্বায়িত্ব নেয় বাড়ির এক দাবিদার সাহসী। পাড়ার চাপাকল থেকে তাড়াতাড়ি জল নিয়ে এসে সব পাত্র ভর্তি, যেহুতু আজ ভিড় হবে। গোসল করা মনে সব থেকে ভারী, আবার আনন্দের কাজ। গতকাল রান্নাঘরের সমগ্র সামগ্রী ঝোলা ভোরে নিয়ে আসে পরিবারের অধিপতি। আরও আগে হয়ে গেছে নতুন পোশাক, আতর এবং কখনও মাথার টুপি।
ঈদগাহে রওনা
রোযা ভঙ্গের উৎসব তো তাই মুখ মিষ্টি করে ঈদগাহ উদ্দেশ্যে বের হওয়া পরম্পরা। কচিকাঁচা বাচ্চারা বিভেদ রঙের পরিধানে দলে দলে চলে, আবার কেউ কেউ বড়োর আঙ্গুল ধরে রেখে। ধর্মীয় শিক্ষার প্রভারিরা প্রায় আপাদমস্তক অলংকৃত সাজে এবং মাথায় সাদা তাজে জপ জপ করতে করতে আগায়। সাধারণ মানুষ নিচে নতুন চিটচিটে লুঙ্গি এবং চোখে নালাপরা কালো সুরমা লাগিয়ে দেরি করে বের হয়ে দ্রুত হাঁটতে শুরু করে।
এই উৎসবে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চয়তা করতে ঐশ্বরিক ব্যাবস্থা অন্ন দানের পরম্পরা (স্বাদকাতুল ফিতর) খুব সুন্দর এবং কার্যকর। শর্তসম্পন্ন প্রত্যেক সদস্যের পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিশেষ খাদ্য কিংবা তার সমতুল্য মূল্য প্রত্যেক প্রাপ্য ব্যাক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয় যাতে রোযার ধুলিকরণ ও বিহীনদের আনন্দ বিতরণ হয়ে যায়।
ঐক্যের সম্মেলন
এই অবসরে সমবেত হয় এলাকার সম্পূর্ণ মুসলিম সম্প্রদায়। বলা হয় পল্লীর বিশ্বাসীদের একত্রিত করে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ, যেখানে জুম্মার নামজ পুরো গ্রামকে এবং ঈদের আসর এলাকাবাসীদের এক সারিতে দাড়িয়ে দেয়। জাতি, বর্ণ, ভাষা প্রভৃতির চৌহাদ্য পেরিয়ে এই ভাতৃত্ব বিশ্বস্তরে একজোট হয় হজের আসরে।
ঈদ নামাজের সারিতে একসঙ্গে দাঁড়ায় সকল শ্রেণীর মানুষ। আসলে সামাজিক শ্রেণী বিলুপ্ত করে এক মানবতার সারণি হয়ে এক ঈশ্বরের সামনে এই সমর্পণ। এখন পরিচয় পরিচয় পায় সর্বজনীনতার আসল প্রকৃতি।
শান্তির সালাম
বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং সবার সঙ্গে এই প্রেম, প্রীতি ও ভালোসবা সহার্দ বিনোদন করা হয়। একত্বের পরিচয়ের পর ঈদ মোবারক সহ শান্তির সালামে পরিবেশে মুখরিত হয়ে উঠে।
ফিরার পথে কবরস্থানে দাঁড়িয়ে হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীদেরও এই ক্ষমা ও শান্তির দোয়া পৌঁছে দেওয়া হয়।
আর একটা জিনিস থেকে গেল খাবার দাবার ব্যাপারটা। রকমারি স্বাদুতায় সব ডিশ। লাচ্ছা, সামাই, খীর ও পাঁপড় হল সব থেকে স্পেশাল। সকলে খায় এবং খাওয়ায় - আর বিলিয়ে দেয় এই সালাম বিশ্ব পরিবারকে।