আরব সাহিত্যর আকাশে অনন্ত প্রদীপ: নাজীব মাহফুজের সাহিত্যে প্রতিবাদের সুর

“সাহিত্য যদি সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়, তবে নাজীব মাহফুজ সেই আয়না যা আরব বিশ্বের সত্যিকে নিঃসংকোচে দেখিয়েছে।”

প্রারম্ভ

নির্মোহ কলমে সমাজের বিবস্ত্র সত্যকে যিনি ভয় করেন না, তিনিই প্রকৃত সাহিত্যিক। নাজীব মাহফুজ ছিলেন তদ্রূপ এক মহামানব, যিনি কাগজ-কলমের আশ্রয়ে গড়িয়া তুলিয়াছিলেন এক জাতির অন্তর্লীন সংগ্রামের ইতিহাস। তিনি কেবল কাহিনি পরিবেশন করেন নাই, বরং উন্মোচিত করিয়াছেন সমাজের প্রকৃত মুখচ্ছবি। ন্যায়-অন্যায়, ধর্ম-রাজনীতি, দরিদ্র ও মহাজনের অন্তঃসংঘাত—সমস্তই তিনি সুদক্ষভাবে অঙ্কিত করিয়াছেন স্বীয় লেখনীর আঁচরে।

নোবেল-বিজয়ী এই আরব সাহিত্যিকের রচনায় এক দীপ্তিময় শিখা দ্যোতিত, যাহা প্রমাণ করে—কলমও হইতে পারে তলোয়ার। সেই তলোয়ার দ্বারা তিনি ছিন্ন করিয়াছেন ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্যায় শাসন ও সমাজের কুসংস্কার। সাহিত্যের মাধ্যমেই তিনি চালাইয়াছেন একাকী বিদ্রোহ। নাজীব মাহফুজের বিশ্বাস ছিল—সাহিত্য কেবল গ্রন্থপৃষ্ঠে গল্প নহে, সাহিত্য এক আয়না, যাহাতে জাতি নিজ মুখমণ্ডল দর্শন করিতে সক্ষম হয়।

যে কালে সত্য উচ্চারণ মানেই বিপদ আহ্বান, সে কালে মাহফুজ প্রমাণ করিয়াছেন—সত্য বলা আত্মরক্ষার অপেক্ষা অধিকতর মহৎ। তাঁহার কলম স্তব্ধ করিবার জন্য বহুজন উদ্যোগী হইয়াছিল—ফতোয়া জারি হইল, আক্রমণ সংঘটিত হইল, তথাপি তিনি থামেন নাই। কারণ, তিনি অবগত ছিলেন—স্বীয় লেখনীর অন্তরেই নিহিত রহিয়াছে জাতির মুক্তির পথরেখা।

আজ, যখন লেখালিখি বহুলাংশে কেবল বিনোদনের উপকরণে পরিণত, তখনও মাহফুজ শিক্ষা দিয়া গিয়াছেন—লেখাও এক প্রকার সংগ্রাম। তাঁহার সাহিত্যে বিদ্যমান বিদ্রোহের দীপ্তি, মুক্তির আভা এবং দরিদ্র-দুঃখীর করুণ রোদনধ্বনি। নাজীব মাহফুজের রচনা আজও সাক্ষ্য দেয়—সত্য উচ্চারণ সাহসের কাজ, আর সেই সাহসই সাহিত্যিককে অমরত্ব প্রদান করে।

শৈশব ও বেড়ে ওঠা: একজন বিপ্লবীর বীজ রোপণ

১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর, কায়রোর গামালিয়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করিলেন নাজীব মাহফুজ, যাহা ছিল মধ্যবিত্ত, ধর্মনিষ্ঠ ও কঠোর রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের আবাস। শৈশব কাটিয়াছিল পিতার কঠোর শাসনের অন্তরালে, যদিও পাঠাভ্যাসের জন্য ছিল একান্ত স্বাধীনতা। পিতার মুখ গম্ভীর থাকিলেও গ্রন্থপৃষ্ঠের অন্তঃস্থলে বিস্তৃত ছিল কল্পনার এক অপরিসীম রাজ্য। অন্যান্য শিশুরা যখন প্রাঙ্গণে খেলায় মত্ত, তখন তিনি বইয়ের পাতা উল্টাইতে উল্টাইতে কখনো মিশরের ফারাওদের রাজসভায়, কখনো ইসলামি বীরদের যুদ্ধক্ষেত্রে, আবার কখনো পাশ্চাত্যের কল্পলোকে বিচরণ করিতেন।

তাঁহার শৈশবকালই ছিল চিন্তার বীজ বপনের সময়। ধর্ম, ইতিহাস, রাজনীতি—সমস্ত বিষয় নিয়াই তিনি ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন অতি অল্প বয়স হতেই। ধর্মের ছায়াতলে লালিত হলেও তিনি কখনো অন্ধ বিশ্বাসে নিমগ্ন হন নাই; বরং পাঠপ্রীতির মাধ্যমে শিখিয়াছেন কীভাবে প্রশ্ন করিতে হয় এবং স্বীয় মতবাদ গড়িয়া তুলিতে হয়।

এই শৈশবই তাঁহাকে গড়িয়া তুলিয়াছিলেন এক সাহিত্যিক রূপে—এমন এক সাহিত্যিক, যিনি কেবল গল্প বলেন না, বরং জাতির অন্তঃস্থিত ক্ষত ও দুঃখ-দুর্দশা অনুসন্ধান করিয়া উদ্ঘাটন করিতে সচেষ্ট থাকেন। গ্রন্থপৃষ্ঠের মধ্যে হারাইয়া যাওয়া সেই নীরব কিশোর, প্রাপ্তবয়সে আরব বিশ্বের সম্মুখে এক নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করিলেন। নাজীব মাহফুজের শৈশব ছিল যেন এক নীরব বিদ্রোহের সূচনা, যাহা কলম হাতে চলিয়াছিল আমৃত্যু।

শিক্ষাজীবন ও দার্শনিক চেতনার প্রভাব

নাজীব মাহফুজ ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় হইতে দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। সেই সময়ে দর্শন অধ্যয়ন অর্থাৎ ছিল—জীবন, মৃত্যু, ঈমান, নৈতিকতা ও মানুষে-মানুষে সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তাশীল হওয়া। মাহফুজও তদ্রূপ গভীর মনোনিবেশে চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন। কিন্তু তিনি কেবল সনদ প্রাপ্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন নাই; দর্শনের সূক্ষ্ম চিন্তাধারা বহন করিয়া নিয়েছেন স্বীয় কাহিনিতে—চরিত্রের চাহনিতে, মুখভঙ্গিতে ও সংলাপে।

জঁ-পল সার্ত্র, আলবেয়ার কামু, প্লেটো ও এরিস্টটলের মতো দার্শনিকদের চিন্তাপ্রবাহ তাঁহার মনে প্রভাব বিস্তার করিলেও, তাঁহার কলম হইতে উৎসারিত বাণী বহন করিত আরবীয় সুরভি ও ইসলামী ভাবধারার আলোকরশ্মি। পাশ্চাত্য দর্শনের গ্রন্থপাঠ করিলেও তিনি কখনো নিজ ভূমি, নিজ ধর্ম ও নিজ সমাজ বিস্মৃত হন নাই; বরং এই দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানে এক সেতুবন্ধ নির্মাণ করিয়াছেন—যে সেতু বেয়ে পাঠকগণ যাত্রা করিতে পারে চিন্তার সুদূর ও গভীরতম প্রান্তে।

তাঁহার রচনায় স্পষ্ট প্রতিভাত হয়—কেমন করিয়া মানুষ আপন অন্তরে দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ হইয়া, একদিকে বিশ্বাসে ও অন্যদিকে সংশয়ে বিচলিত হয়। এই দার্শনিকতা তাঁহার গল্পসমূহকে কেবল আবেগমণ্ডিতই করে নাই, বরং বুদ্ধির দৃঢ় ভিত্তিতেও প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। পাঠক যখন তাঁহার রচনা পাঠ করেন, তখন অনুভব করেন—তাঁরা কেবল গল্পই পড়িতেছেন না, বরং একটি ভাবনার দ্বারও উন্মোচিত করিতেছেন।

এইভাবে মাহফুজ স্বীয় সাহিত্যকে রূপদান করিয়াছেন এক তীক্ষ্ণ তলোয়ারের, যাহা একদিকে ছেদন করে অজ্ঞতার অন্ধকার, অন্যদিকে জাগ্রত করে বিবেকের দীপ্তি। শিক্ষা ছিল তাঁহার ভিত্তি, আর দর্শন সেই ভিত্তির সুদৃঢ়তম প্রস্তরখণ্ড।

সাহিত্যজগতে প্রবেশ: ইতিহাস থেকে বাস্তবতায়

মাহফুজের সাহিত্যজীবনের সূচনা ঘটিয়াছিল ইতিহাসকে অবলম্বন করিয়া। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রচনা করেন Khufu’s Wisdom—যাহাতে ফুটিয়া উঠিয়াছিল প্রাচীন মিশরের রাজা-বাদশা, কূটনীতি ও দরবারি আয়োজনে ভরপুর এক জগৎ। প্রারম্ভে তিনি ভাবিয়াছিলেন, অতীতের গল্পই হইবে তাঁহার চিরস্থায়ী ঠিকানা। কিন্তু কয়েকখানি গ্রন্থ রচনার পরই উপলব্ধি করিলেন—মানুষের প্রকৃত বেদনা তো বর্তমানেই! ক্ষুধার কষ্ট আজই, চোখের জল আজই, ধর্মের নামে প্রহসন আজই! তখনই তিনি অতীতের জানালা বন্ধ করিয়া বর্তমানের দ্বার উন্মুক্ত করিলেন।

এ সময় হইতে মাহফুজের সাহিত্যধারা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হইল। শহরের আঁকাবাঁকা গলি, দরিদ্রের আর্তনাদ, নারীর চোখের অশ্রু, মসজিদের অন্তর্গত ভণ্ডামি—সমস্তই তিনি টেনে আনিলেন কলমের ডগায়। সাহসের সঙ্গে লিখিলেন সেইসব কথা, যাহা উচ্চারণ করিতে অনেকে ভয় পায়। সমাজের অসঙ্গতি, রাজনীতির বিষ, শাসকের অত্যাচার—সবই স্থান পাইলো তাঁহার লেখনীতে, যেন সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি চালাইতেছেন এক নীরব প্রতিবাদ।

এই পরিবর্তনের পর আর তিনি পশ্চাদপদ হন নাই। ইতিহাস হইতে শিক্ষা গ্রহণ করিয়া তিনি কলম চালাইলেন বর্তমানের রক্তাক্ত বাস্তবতার উপর। সত্য উচ্চারণের সাহস, মানুষের দুঃখ উপলব্ধির হৃদয়, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব না থাকার দৃঢ়তা—এইসব মিলিয়াই গড়িয়া তুলিল তাঁহার সাহিত্যপথ।

কায়রো ট্রিলজি: একটি জাতির অন্তর্দ্বন্দ্বের মহাকাব্য

যত রচনাই তিনি করিয়া থাকুন না কেন, নাজীব মাহফুজের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির আসনে অধিষ্ঠিত Cairo Trilogy—Palace Walk, Palace of Desire, ও Sugar Street এই ত্রয়ী শুধু একটি পরিবারের কাহিনি নয়; ইহা যেন সমগ্র মিশরের বুকফাটা ইতিহাস।

Palace Walk-এ তিনি অঙ্কিত করিয়াছেন—কেমন করিয়া ধর্মের কঠোরতা অবলম্বন করিয়া এক পিতা সংসার পরিচালনা করেন, অথচ নিজস্ব গোপন জীবনে চলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে। বাহ্যিক ধার্মিকতা ও অন্তরের ভণ্ডামি—এই দ্বন্দ্বে মাহফুজ যেন মাটির তলে লুকানো আগুন প্রকাশ করিয়াছেন।

Palace of Desire-এ প্রবেশ করে পরবর্তী প্রজন্ম। তারা আর মানে না পিতার কঠোর নিয়ম। তারা অনুসন্ধান করে প্রেম, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত স্বপ্ন। একদিকে সমাজের বাঁধন, অন্যদিকে মনের ক্ষুধা—এই দুইয়ের সংঘর্ষ ফুটিয়া উঠিয়াছে এ কাহিনিতে।

Sugar Street-এ মাহফুজ রচনা করেন সর্বাধিক গভীর ভাবনা। দুই ভ্রাতা—একজন গোঁড়া ধর্মনিষ্ঠ, অন্যজন প্রগতিশীল ভাবধারায় উদ্দীপ্ত। এখানে তিনি দেখাইয়াছেন—কেমন করিয়া একটি জাতি দ্বন্দ্বে পতিত হয়; আদর্শের পথ অনুসরণ করিবে, না কি বাস্তবের?

এই ত্রয়ী কেবল কাহিনি নহে—ইহা গোটা আরব বিশ্বের মনস্তত্ত্বের আয়না। প্রত্যেক চরিত্রই যেন একেকটি স্বতন্ত্র চিন্তার ধারক। পরিবার, ধর্ম, রাজনীতি, প্রেম—সব মিলিয়া গিয়াছে মাহফুজের কলমে; যেন ঘরের অন্তঃস্বর দিয়া বদলাইতেছে সমাজ, আর মাহফুজ সেই পরিবর্তনের চিত্র অঙ্কন করিতেছেন কালি ও সাহসের সমবায়ে।

ছুরির আঘাতে থেমে না যাওয়া কলম: Children of Gebelawi ও মাহফুজের সাহস

নাজীব মাহফুজ সাহসের আরেক নাম। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রচনা করেন Children of Gebelawi—যাহা কোনও সাধারণ কাহিনি নহে, বরং অগ্নিস্ফুলিঙ্গসম রচনা। এখানে আদম, মুসা, ঈসা ও মুহাম্মদ (সঃ)-এর প্রতীকি চরিত্রের মাধ্যমে তিনি ধর্ম, সমাজ ও মানব-নিয়তি সম্বন্ধে অকপট বক্তব্য প্রদান করেন। সে সময়ে এমন সাহসী কলমের দৃষ্টান্ত বিরলই ছিল।

গ্রন্থটি সাহিত্যজগতে আলোড়ন তুলিলেও ধর্মীয় গোঁড়ামির কাছে তাহা অগ্রহণযোগ্য হইল। মিশরে ইহা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়; এমনকি তাঁহার বিরুদ্ধে ফতোয়াও জারি হয়। একদিন এক উগ্রবাদী তাঁহার পেছন দিয়া ছুরি প্রয়োগ করিয়া গুরুতর আঘাত করে; ফলে ডান হাত স্থায়ীভাবে পঙ্গু হইয়া যায়।

কিন্তু মাহফুজ থামিবার মানুষ ছিলেন না। তিনি মুখে উচ্চারণ করিতেন, অন্যেরা তাহা লিপিবদ্ধ করিত। এইভাবে চলিতে থাকিল লেখার সংগ্রাম—যতক্ষণ না এক হাতে, ততক্ষণ মুখে; কিন্তু কলম থামিবার নহে।

এই অদম্য লড়াই, কলম না ছাড়িবার জেদই তাঁহাকে পরিণত করিয়াছে কিংবদন্তিতে। সাহিত্যের অঙ্গনে তিনি দেখাইয়া গিয়াছেন—কলম কিরূপে ছুরির অপেক্ষা অধিকতর ধারাল হয়, আর সত্য—যতই রক্ত ঝরুক না কেন—শেষপর্যন্ত বিজয়ী হইয়াই থাকে।

নোবেল স্বীকৃতি: বিশ্বসাহিত্যে আরবের মুখ

১৯৮৮ সালে নাজীব মাহফূজ লাভ করিলেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। কিন্তু ইহা কেবল তাঁহার ব্যক্তিগত সম্মান নহে, বরং সমগ্র আরব জগতের সাহিত্যজগতে বিজয়ের ধ্বনি। এই পুরস্কার ঘোষণা করিল যে, আরবের ভাষা, ভাবনা, বেদনা ও স্বপ্ন এখন সমগ্র বিশ্বে শোনা যাইবে।

সুইডিশ একাডেমি তখন বলিয়াছিল—

"He has formed an Arabic narrative art that applies to all mankind."

অর্থাৎ, তিনি এমন এক সাহিত্যরীতি নির্মাণ করিয়াছেন, যাহা কেবল আরবের জন্য নহে, সমগ্র মানবজাতির সঙ্গে কথা বলে। এই এক বাক্যের অন্তরালে লুকাইয়া আছে অসংখ্য জাগ্রত রজনী, নানাবিধ বঞ্চনা, অবিচল সাহস, ও এক জীবনব্যাপী সাধনার স্বীকৃতি।

নাজীব মাহফূজ যে ভাষায় লিখিতেন, তাহা ছিল গলি-ঘুপচির, পথের ধূলিধূসর মানুষের ভাষা; কিন্তু চিন্তা ছিল আকাশপ্রসারী। তিনি প্রমাণ করিয়াছেন—সাহিত্য কেবল কল্পনার খেলা নহে; ইহাই জাতির বিবেক, সমাজের আয়না।

এই নোবেল পুরস্কারই সাক্ষ্য দিল যে, আরব সমাজও পারে স্বপ্ন দেখাইতে, পারে অকপটে সত্য উচ্চারণ করিতে। মাহফূজ যেন এক অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত করিলেন, যাহা আজও নিভে যায় নাই। পুরস্কারটি তিনি লাভ করিলেন, কিন্তু আলোটি ছড়াইয়া পড়িল সমগ্র আরব হৃদয়ে।

উপসংহার

নাজীব মাহফূজ ছিলেন সেই সাহিত্যিক, যিনি কলম ধারণ করিয়াছিলেন কেবল গল্প রচনার জন্য নহে, বরং সমাজের অন্তঃস্থলে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য। তিনি দেখাইয়াছেন—লেখক কেবল গৃহকোণে নীরবে পাঠরত ব্যক্তি নহে; লেখক জাতির বিবেক, সময়ের ন্যায়বিচারক।

তাঁহার রচনায় বারংবার প্রতিধ্বনিত হয় কিছু অমোঘ প্রশ্ন—মানুষ আসলে কার জন্য? ধর্ম কার করালগ্রাসে বন্দি? রাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে কার সেবায় নিয়োজিত? এই প্রশ্নগুলি কেবল শব্দ নহে—ইহা সমাজের চোয়ালে কষা একেকটি চপেটাঘাত।

আজও যদি কোনো রক্ষণশীল রাষ্ট্র বা চোখ বুজিয়া থাকা সমাজ নিজের আসল মুখ দেখিতে চায়, তবে তাহাদের মাহফূজের সাহিত্যপৃষ্ঠায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেই চলিবে। কারণ, তাঁর গল্পে রক্ত না থাকিলেও, প্রতিটি পংক্তিতে আছে বিপ্লবের সুবাস।

মাহফূজ শিক্ষা দিয়াছেন—লেখা মানে সাহস; লেখা মানে নির্ভীকতা; লেখা মানে সত্য উচ্চারণের শক্তি। যখন সমাজ মুখে তালা লাগাইবার চেষ্টা করে, তখন লেখক যদি কলম তোলে, তাহাই প্রকৃত প্রতিবাদ।

তিনি নিজেই এক স্থানে বলিয়াছিলেন—

"You can tell whether a man is clever by his answers. You can tell whether a man is wise by his questions." এই প্রশ্ন তোলার সাহসই নাজীব মাহফূজকে গড়িয়া তুলিয়াছে কেবল এক লেখক নয়, বরং এক অবিচল বিদ্রোহে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter