আল্লামা মাওলানা মুহাম্মাদ জফারুদ্দিন বিহারী (রাহঃ)
আল্লামা মুলানা মুহাম্মাদ জফারুদ্দিন বিহারী (রাহঃ) আঠারোশো খ্রিঃ–এর একজন অনেক বড় আলেমে দীন ও মুহাদিসে কাবীর এবং মুফতি ছিলেন। মুহাম্মাদ জফারুদ্দিন রাহঃ সহীহুল বিহারীর লেখক এবং ইমাম আহমাদ রাজা খান ফাজেলে বেরেলভির শগরিদ। ইনি ভারতের বিহারের বাসিন্দা তাই ইনাকে মুহাম্মাদ জফারুদ্দিন বিহারী বলা হয়েছে।
নাম ও বংশ: আপনার জন্মের কয়েকদিন পর কয়েক বুজ্রুগ আপনার নাম রাখেন ‘আব্দুল হাকীম’। আপনার ঐতিহাসিক নাম হল ‘গোলাম হায়দার’। সর্ব প্রথমে আপনার পিতা আপনার নাম রাখেন জফিরুদ্দিন। এবং পরে ইমাম আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দীন ও মিল্লাত আহমাদ রেজা খান ফাযেলে বেরেলভি আপনার নাম পরিবর্তন করে ‘জফারুদ্দীন’ রাখে। আপনার পিতার নাম মালিক আব্দুর রাজ্জাক আশ্রাফি (রাহঃ)।
আপানার বংশ সাত নম্বর স্তরে গিয়ে পীরানে পীর গউসে সামদানি মাহবুবে রাব্বানি গউসে আজাম শেইখ আব্দুল কাদির জিলানি (রাহঃ) সাথে সম্পৃক্ত। ইমাম আহমাদ রাজা খান ফাযেলে বেরেলভি (রাহঃ) আপনাকে ‘মালিকুল উলামা’ এবং ‘ফাযেলে বিহার’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
জন্মগ্রহণ: আল্লামা শাহ জফারুদ্দীনের (রাহঃ)-এর জন্ম ১০ মুহাররাম ১৩০৩ হিজরি মোতাবেক ১৮ অক্টোবর ১৮৮০ খ্রিঃ-এ ভারতের পাটনা প্রদেশের মিজরা জেলার বিহার নামক এলাকায় সুবহে সাদেকের সময় হন।
জ্ঞান অর্জন: মালিকুল উলামা আল্লামা জফারুদ্দিন (রাহঃ) আপন পিতার কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করা শুরু করেন। মালিকুল উলামার আল্লামা জফারুদ্দিন (রাহঃ)-এর বয়স যখন চার বছর চার মাস চার দিন হয় তখন আপন পিতার পীর ও মুরশিদ ‘আল্লামা শাহ চান্দ বিটাভি (রাহঃ) –এর হাতে পরা শুরু করেন। এছাড়া আপনি আরও বিভিন্য উলামাগনের কাছে জ্ঞান অর্জন করেছেন যেমন হাফেজ মাখদুম আশরাফের কাছে এবং মউলানা কাবীরুদ্দীন ও মউলানা আব্দুল লাতীফের কাছে, ইত্যাদি…। এরপর ১৩১২ হিজরিতে সেখান থেকে ‘নানিহাল’ গিয়ে সেখানকার অবস্থিত মাদরাসা ‘গউসিয়া হানাফিয়া’ মাদরাসায় ভর্তি হয়ে যান। সেই মাদরাসায় জ্ঞান আহরনে ৯ বছর ব্যায় করেন। বেশির ভাগ সময় শিক্ষা আহরনে মালিকুল উলামা ইমাম আহমদ রাজা খান (রাহঃ)-র কাছে কাটান। যেমন উস্তাদ ছিলেন ইমাম আহমাদ রাজা তেমন শাগরিদ হয়েছেন মালিকুল উলামা।
উস্তাদ্গন: মালিকুল উলামা আল্লামা মউলানা জফারুদ্দীন বিহারী অনেক উস্তাদের কাছে সিক্ষা অর্জন করেছেন, তাদের মধ্যে কিছু উস্তাদগনের নাম হল হাফেজ আল্লামা মাখদুম আশরাফ (রাহঃ), আল্লামা শেইখ কাবীর উদ্দীন (রাহঃ), আলা হাজরাত ইমাম আহমাদ রাজা খান ফাজেলে বেরেলভি (রাহঃ), আল্লামা আব্দুল লাতীফ (রাহঃ), আল্লামা শেইখ মুহিউদ্দীন আশরাফ (রাহঃ), হাফেজ আল্লামা ইসমাইল বিহারী (রাহঃ), আল্লামা মুন্সি ইকরামুল হক (রাহঃ), মুহাদ্দিস আল্লামা আসি আহমাদ সুরাতী (রাহঃ), আল্লামা আহমাদ হাসান কানপুরি (রাহঃ), মউলানা মুহাম্মাদ গোলাম ইয়াসিন (রাহঃ) এবং আল্লামা উবাইদুল্লাহ পাঞ্জাবি (রাহঃ) ইত্যাদি….।
ইন্তেকাল: মৃত্যু যে সবাইকে আসবে এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেয়। মৃত্যুর উপরে ইমান রাখা ওয়াজিব, না রাখলে সে কাফির হবে। কারন আল্লাহ তাআলা কুরান শরিফের মধ্যে বলে দিয়েছেন “ মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে গ্রহণ করতে হবে”। সবারির জন্য আল্লাহ তাআলা একটি সময় নির্ধারিত করে দিয়েছে, সময় ফুরালে তাকে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে আল্লাহর ডাকে সারা দিতে হয়। মালিকুল উলামা আল্লামা জফারুদ্দীন (রাহঃ) কিছু রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯ জুমাদাল উখরা ১৩৮২ হিজরি মোতাবেক ১৮ নভেম্বর ১৯৬২ সালে সোমবার রাতে মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাতের পবিত্র জিকরে মশগুল হয়ে ৭৯ বছর বয়সে এয় পৃথিবী ছেড়ে আল্লাহর ডাকে সারা দেন। মানুসরা তখনও বুঝতে পারেন নি যে তিনি ইন্তেকাল করেছেন না ঘুমিয়ে আছেন (সুবহানাল্লাহ)। পরের দিন শাহ মুহাম্মাদ শাহেদ রাশীদি তিনার জানাজা নামাজের ইমামতি করেন এবন তিনাকে শাহগানু দারগাহ ‘আরজাহ’ কবরস্থানে দাফন করেন।