খ্রিস্টান অধ্যাসিত দেশে মুসলিম প্রধানমন্ত্রী তরুণ হামজা ইউসুফ

হামজা ইউসুফ বললে এখন গোলমেলে যাচ্ছে। প্রসঙ্গে না দেখে এটা বলা দুষ্কর যে উক্ত ব্যক্তি শেখ হামজা ইউসুফ না তরুণ হামজা ইউসুফ। ধার্মিক জ্ঞানে বিশেষ পণ্ডিত এবং আধুনিক দাওয়া পদ্ধতির এক অশেষ বাতি শেখ হামজা ইউসুফ সবার জানা। এই প্রবন্ধে তরুণ হামজা ইউসুফকে জানা হোক। 

 ২০২৩ মার্চ মাসের দিকে খবর উঠে যে স্কটল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথমবার কোন এশীয় এবং মুসলিম ব্যক্তি দেশের প্রথম মন্ত্রী (ফার্স্ট মিনিস্টার) যথা স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) মন্ত্রী হতে যাচ্ছে। উক্ত মাসেই ২৯ তারিখ, ২৭ বছর বয়সি হামজা ইউসুফের নামে উক্ত ঘটনা বাস্তবে দৈনিক হেডলাইন হয়। আর একটি রেকর্ড, সেই পদে তিনিই হলেন সব থেকে তরুণ!  

 মুসলিম হয়ে ইউরোপের খ্রিস্ট ধর্মাম্বলি অধ্যাসিত দেশে সবথেকে বড় রাজনৈতিক প্রধান পদ কিভাবে পেলেন হামজা ইউসুফ? শীর্ষ আরোহণের এই ঘটনাক্রম খুব আকর্ষণীয়! 

পূর্ব থেকে যাত্রা 

ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক পাঞ্জাবি বংশোদ্ভূত। প্রথমে অভিবাসী, পরে দেশবাসী বর্তমানে দেশ শাসক এরকম উদাহরণ এখন অনেক দৃশ্যমান। অভিবাসন দুষ্কর হলেও - প্রতিভা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নেতৃত্ব পরিবহনের এক সুন্দর রাস্তা। 

হামজা ইউসুফের ক্ষেত্রেও অনুরূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। তিনি পাকিস্তান অভিবাসী মুজাফফর ইউসুফের ছেলে যিনি ১৯৬০-এর দশকে দেশ ত্যাগ করে স্কটল্যান্ডে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বেশ কিছু জাতিগত প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েও, তিনি আপন সন্তান হামজার জন্য অনুকূল ভবিষ্যৎ তৈরি করেন। এই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা যেন এক সার্বিক পরিনিতি নিয়ে আসে এবং পূর্ব-পশ্চিমের বিভেদ-রেখাকে মুছে ফেলে। ফলাফল এই যে শ্বেত প্রাধান্য দেশ বর্ণ ব্যবধানকে দূরে রেখে এক এশীয় বংশোদ্ভুতকে নিজের শাসক বানিয়েছে। বোঝাই - পূর্ব-পশ্চিম একই আকাশের দুই প্রান্ত। এবার বোঝায় - পূর্ব-পশ্চিম একই আকাশের দুই দিক। 

এই মহা মানবিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে হামজা ইউসুফ শপথ গ্রহনের পর দেশে বর্ণবিরোধী আচরণের প্রতিজ্ঞা করেন। উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরেন নিজ শহর গ্লাসগোর কথা - এই শহর নির্মাণে অভিবাসীদের সংখ্যালঘুদের অবদান অনেক। তারা এটিকে বহুসংস্কৃতিক করে তুলেছে। 

প্রাকৃতিক রাজনীতিবিদ

স্কটল্যান্ডের প্রথম মন্ত্রী হওয়ার পর হামজা ইউসুফের এতগুলি রেকর্ড - প্রথম সংখ্যালঘু, প্রথম মুসলিম, প্রথম এশীয় আবার সব থেকে তরুণ - সত্যি বিরাট এক সফলতা ও আশ্চর্যের বিষয়। 

প্রাক যৌবন অবস্থাতেই তিনি সমাজসেবা এবং রাজনৈতিক কর্মকলাপে যুক্ত। ১৯৮৫ সালে জন্ম, ২০০৫-এ স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিতে (এসএনপি) যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনার রাজনৈতিক জীবনে নতুন উন্নতির সূচনা হয়। শীঘ্রই তিনি স্কটিশ পার্লামেন্টের বিভিন্ন ক্রিয়া-কর্মে যুক্ত হয়ে যান। এমনকি ২০০৯ সালে, রাজনীতির ভবিষ্যত শক্তি বা ফিউচার ফোর্স অফ পলিটিক্স সম্মানে পুরষ্কৃত হন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে, ২০১১ সালে স্কটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার (এসপিএম) হিসেবে নিযুক্ত হন। তারপর থেকে নিয়মিতভাবে তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবনে বিবর্তনীয় উন্নয়ন দেখা যায়।

২০২৩-এ তিনি স্কটিশ নেশনাল পার্টির নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদ প্রথম মন্ত্রী হন। তিনার যাত্রা এখনও সমাপ্ত হয়নি - দেশ ও জাতির সেবার সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে দেশের স্বাধীনতা এখন তাঁর মূল অগ্রাধিকারের মধ্যে এক।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter