নজরুলের প্রতিরোধ সাহিত্যে রূপক ভাষার ব্যবহার

কাজী নজরুলের সাহিত্যিক উৎকর্ষ সকল সুস্থ মস্তিষ্ককে আকৃষ্ট করে। মুসলিম পরিচয় ধারণ করে তিনি হিন্দুদের কাছেও সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তিনার লেখায় প্রাকৃতিক বিষয়বস্তু বেশ পরিমানে প্রতক্ষ করা যায় যা কোন  গোষ্ঠীয় বা সাংস্কৃতিক বা আদর্শ অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে। কবি তাঁর শিল্পকে সাজানোর জন্য যে উপাদানগুলি ব্যবহার করেন তা সবই মানবতাবাদীর উপলব্ধি দিয়ে তৈরি। ধর্মনিরপেক্ষ ও কুসংস্কারমুক্ত দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে তিনি ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতির জীবন্ত ছবি তুলে ধরেন।[1]

  কবি সর্বদা একটি সমন্বিত ভারতের স্বপ্ন দেখেন যেখানে হিন্দু ও মুসলমান ‘এক বৃন্তে দুটি কুসুম’।[2] একইভাবে, নজরুল সাহিত্যে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতীকের নান্দনিক উপস্থাপনা সকল হৃদয়কে মোহিত করে এবং একটি সার্বজনীন উদ্দেশ্যের জন্য সর্বজনীন ঐক্যের দিকে ঠেলে দেয়। বাংলা সাহিত্যে ইন্দো-ফার্সি ভাষা থেকে নতুন শব্দভান্ডার সংযোজনে কবির অবদান পাঠকদের মধ্যে এক চিত্তাকর্ষক স্নেহ সৃষ্টি করে। লিঙ্গ ন্যায্যতা ছাড়াও, নজরুলের লেখার একটি বড় বিষয়বস্তু ছিল যা লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় তা ঐক্যকেও প্রতিফলিত করে। শৈল্পিক উপস্থাপনায় আঁকা এই সমস্ত থিম বাঙালিদের মধ্যে ঐক্য ও চেতনার স্রোত তৈরি করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

দেশপ্রেম: প্রেম এবং আগুন

নজরুল সাহিত্যের কেন্দ্রীয় উপাদানগুলির মধ্যে একটি ছিল তাঁর অত্যান্ত দেশপ্রেমিক অনুভূতি যা কবির রচনাগুলিকে বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ জাতীয় স্বার্থের ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সাথে সজীব করে তোলে। কবি ভাঙার গান (1922), বিষের বাঁশি (1924), প্রলয় শিখা (1930), চন্দ্র বিন্দু (1931) প্রভৃতি রচনায় সমস্ত নাগরিককে দেশপ্রেমিক উদ্যমের সাথে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে এবং বিদেশী শাসনকে উপড়ে ফেলার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

  প্রথমদিকে, কবি নজরুল মহাত্মা গান্ধীর প্রতি খুব আকৃষ্ট ছিলেন; তাঁর অসহযোগ আন্দোলনের একজন শক্তিশালী সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেন। এমনকি গান্ধীজি বাংলা যাত্রায় এলে কবি ‘পাগল পথিক’ (1921)-এর মতো ভাষায় তাঁর জন্য প্রশংসা গানও উৎসর্গ করেন। যাইহোক, পরে নজরুল জাতির পিতা গান্ধীজি প্রচারিত স্বরাজের সংকীর্ণ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বরং নজরুল তা আরও জোরালো ভাবে ব্যাখ্যা করে পূর্ণ স্বরাজ বা সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করেন। ধূমকেতুর এক সম্পাদকীয়তে তিনি এটাই দাবি করেছেন: ‘মোরা সবাই স্বাধীন, সবাই রাজা!’ গান্ধীজি এবং নজরুল উভয়েই স্বাধীন ভারতের আকাঙ্ক্ষী ছিলেন, কিন্তু ‘কিছু প্রশংসা এবং কিছু সমালোচনা’-এর মিশ্রণে নজরুল প্রেম এবং আগুনকে একত্রিত করতে পারদর্শী হয়ে উঠেন। তিনি অন্যায়, নিপীড়ন এবং অসমতার বিরুদ্ধে কখনও নীরব থাকেননি বরং অধিকার ও মর্যাদার জন্য আওয়াজ তুলেছিলেন। প্রেমের কবি হিসেবে নজরুল ব্রিটিশ সরকারের লোভী শোষণের বিরুদ্ধে অটল প্রতিরোধী ছিলেন। তাঁর একটি লাইন এরকম: 

এদেশ ছাড়বি কিনা বল?

নইলে কিলের চোটে হাড় করিব জল![3]

সমধিকার: পুরুষ বা মহিলাবয়স বা স্থান

প্রেম ও প্রতিরোধের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্যের আসল মুখপাত্র।  যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বেচ্ছাচারী শক্তি ভারতীয় নাগরিকদের সাথে আচরণে বৈষম্য করে ও সমকালীন প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি নারীর সক্ষমতাকে ক্ষুণ্ন করে এবং তাদের অন্যায় ও কুসংস্কারের কবলে ফেলে দেয়, বিপরীতে কাজী নজরুল ইসলাম তার প্রতিরোধী আওয়াজ তুলেন।  তিনি বিক্ষোভ করেন লিঙ্গ, ভাষা, স্থান, জাতপাত নিরপে‌ক্ষে সবাই নিজ প্রাপ্যের অধিকারী পুরুষ।  পূর্বে উল্লেখিত কুলি ‘মজুর’ কবিতায় তাঁর স্পষ্ট উদ্দেশ্যগুলি অনুধাবন করা যেতে পারে যেখানে তিনি পরম্পরাগত সামাজিক বিশৃঙ্খলাটিকে তুলে ধরেন যা শ্রমিক এবং মালিক, দরিদ্র এবং ধনী ও দুর্বল এবং শক্তিশালী মধ্যে এক ভেদাভেদের রেখা তৈরি করে।  একই যুক্তি ‘নারী’ শিরোনামের আরেকটি কবিতায় কবি প্রকাশ করেছেন:

সাম্যের গান গাই-

আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!

বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি,

অর্ধেক তার আনিয়াছে নর অর্ধেক তার নারী।

নরক কুন্ড বলিয়া তোমা’ করে নারী হেয় জ্ঞান?

তারে বল, আদি-পাপ নারী নহে, সে যে নর শয়তান।

অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর নহে নারী নহে,

ক্লীব সে, তাই নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে।

এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল

নারী দিল তাহে রূপ-রস-সূধা-গন্ধ সুনির্মল।[4]

অনন্য ভাষার শব্দভাণ্ডার

নজরুলের প্রতিরোধ সাহিত্যের আরেকটি বিস্ময়কর দিক হল যে তিনি তাঁর সাহিত্যিক উপস্থাপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত শব্দ বেছে নিয়েছিলেন।  তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি প্রচুর পরিমাণে আরবী-ফারসি শব্দ দিয়ে ভাষাটিকে আরও অন্তর্ভুক্ত ও ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলেন।  তাঁর শব্দ নির্বাচন অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল যা মননশীলভাবে সাধারণ মানুষের সামনে এগিয়ে যাওয়ার এবং ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে আবেগকে জাগিয়ে তুলে দিত। এই সাথে সাথে, তিনি সাহিত্যের রশ্মিতে আধ্যাত্মিকতা এবং প্রতিরোধের এক সঙ্গে বেঁধে ফেলেন। তুলনামূলক সাহিত্যের পণ্ডিত ড. ইশপিতা চন্দ, সংস্কৃত প্রভাবের আধিপত্য ভেঙে 'বিদেশি' ভাষার ব্যবহার নিয়ে একটি বিশদ বিতর্ক কর্ম উপস্থাপন করেছেন।  তিনার মতানুসারে কান্ডারী হুশিয়ার কবিতায় 'খুন' সংস্কৃত শব্দ 'রক্ত'-এর চেয়ে লাল।  কবি তাঁর কবিতায় সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন:

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,

বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!

ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!

উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।[5]

আত্মবিশ্বাস

এটি কবির সৃজনশীলতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দীপক উপাদান। জাতীয়তাবাদী ঐক্যের জন্যও নজরুল বারবার আহ্বান জানিয়েছেন;  আত্ম-প্রত্যয়কে অমর একটি শক্তি হিসাবে তিনি জোর দিয়েছিলেন।  সমস্ত বাধার মধ্যে, এই অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি কখনও থামেননি।  ইংরেজরা সামরিক প্রস্তুতিতে অগ্রসর হলেও কবি সাধারণ মানুষের জাতীয় স্বার্থকে উস্কে দিয়েছিলেন এবং আশাবাদের গান দিয়ে তাদের মোকাবিলা করেন।  নজরুল দৃঢ়তার সাথে বলেন যে 'অমি' হল মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান এবং সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি।

বল বীর –

বল উন্নত মম শির!

শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!

একইভাবে, তাঁর বিপ্লবী কবিতা বিদ্রোহী-এর আরও কয়েকটি লাইন দিয়ে কবির প্রবল আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করা যেতে পারে:

আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,

মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!

আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,

আমি দুর্বার,

আমি ভেঙে করি সব চুরমার!

আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,

আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!

আমি মানি না কো কোন আইন,

আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!

আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর

আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!

বল বীর –

চির-উন্নত মম শির![6]

মানবতাবাদী ঐক্য: ধর্মীয় সাংস্কৃতিক বহুত্ব

ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে, বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য ঐক্যের রশি ধরে রাখা প্রাথমিকভাবে অপরিহার্য।  রাজনীতি, সংস্কৃতি, অজ্ঞতা এবং শত্রুতার অধীনে পারস্পরিক অস্তিত্বে বিভক্ত করে অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ী হয়েও ব্রিটিশরা তাদের একীভূত কৌশলের কারণে ভারতে শক্তিশালী দখল তৈরি করতে পারে।  ব্রিটিশরা তাদের বিভাজন ও শাসন (Divide and Rule) নীতির মাধ্যমে এই অস্তিত্বের ভাঙ্গনকে আরও প্রশস্ত করেছিল।

  হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির গঠনে ব্যাপকভাবে তিনি পদক্ষেপ নেন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি যৌথ জোটের নেতৃত্ব দেন।  তিনি বাঙালি সমাজে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বহুত্বের একজন প্রধান প্রবক্তা হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন।  কবিতা হোক বা গদ্য হোক তাঁর সব লেখাই মানবতাবাদী সমন্বয় ও সাম্প্রদায়িক সংহতির স্পষ্ট বার্তা প্রত্যক্ষ করতে পারা যায়। তদুপরি, কবি নিজেই এই সমাজ সংস্কারের একটি বাস্তব উদাহরণ।  ফলশ্রুতিতে, তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধর্মবিরোধী কাজের সমালোচনা করা হয়।  গবেষক এমডি সাইফুল ইসলাম নিজ ডক্টরাল গবেষণায় উল্লেখ করেছেন যে নজরুল সমগ্র মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ করে উপলব্ধি করেন যে চূড়ান্ত সত্য হৃদয়ে বাস করে, মসজিদ বা মন্দির নয়।  কবি যেমন বিখ্যাত ‘মানুষ’ কবিতার বলেছেন:

গাহি সাম্যের গান-

মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,

নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,

সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

একই কবিতার আরও কিছু লাইন:

হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদী ঈসা,

কে জানে কাহার অন্ত ও আদি, কে পায় কাহার দিশা?

কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই, কাহারে মারিছ লাথি?

হয়ত উহারই বুকে ভগবান্‌ জাগিছেন দিবা-রাতি![7]

সর্বোপরি তাঁর হিন্দু-মুসলমানের সর্বজন-শ্রুত কবিতাটি রূপকভাবে বলে: মোরা একই বৃন্তে দুটী কুসুম হিন্দু-মুসলমান | মুসলিম  তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ[8]

সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী

সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ও মানবতাবাদী বন্ধন তৈরির পাশাপাশি নজরুল ইসলাম সমাজে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এমন সমস্ত উপাদানকে নির্মূল করার চেষ্টা করেন।  পূর্বোক্ত হিসাবে, তিনি ধূমকেতুর প্রথম সম্পাদকীয়তে এটি ব্যাখ্যা করেছেন।  কবির অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্বের এই প্রবণতা সহজেই বাংলার সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ সম্পর্ক তৈরি করতে এবং কর্তৃত্ববাদীদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিল।

  কবি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক সমিতিতে অংশ নিয়ে এবং যথেষ্ট অবদান রেখেছিলেন।  তিনি ১৯২৬ সালে বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেসের জন্য তাঁর বিপ্লবী কবিতা কান্ডারী হুশিয়ার-এ কবির অনুরুপ বিস্ফোরণ:[9]

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন 

কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন। 

হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? 

কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার 

ধর্মীয় প্রতীক

ধর্মীয় শিক্ষা কোনো কিছু করার বা তা থেকে বিরত থাকার জন্য আপসহীন উদ্দীপনা তৈরি করে।  একজন বাঙালী মুসলমান হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাহিত্যে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে উদ্দীপক উপাদানগুলি সফলভাবে তুলে দক্ষতার সাথে সেগুলোকে শৈল্পিক আকারে নিজ নিজ পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করেছেন।

  যেরকম, মুসলিম বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব ক্ষেত্রে কবীর কবিতায় ইস্রাফিল ফেরেশতার বর্ণনা ভয়ঙ্কর কিয়ামতের সংকেত প্রতিফলিত করে।  একইভাবে, তিনি চক্র, শঙ্ক প্রভৃতি হিন্দু বিশ্বাসের চিহ্নগুলিকে ব্যাপকভাবে ব্যাবহার করেছেন যা আবেগের স্পন্দিত উপচে দেয়।  এই ধর্মীয় ছবিগুলি স্পষ্টতই সংগ্রামের চেতনা জাগিয়ে তোলে।  তাছাড়া, নজরুল ইসলাম ওইসব ব্যক্তির ধর্মীয়তা নিয়ে আপত্তি করেন যারা চূড়ান্ত সত্যের পরিবর্তে অন্যান্য দমনকারী উপাদানের সামনে শির নত করে থাকে।

শুধুগুণ্ডামি, ভণ্ডামি আর গোঁড়ামি ধর্ম নয়,

এই গোঁড়াদের সর্বশাস্ত্রে শয়তানি চেলা কয়।[10]

সর্বজনীনতা

নজরুল যে মানবতাবাদী মূল্যবোধগুলি তুলে ধরেছিলেন তা সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য এবং সকল মানুষকে আকৃষ্ট করে। একারণেই তাঁর রচনাগুলি প্রতিরোধমূলক কার্যকলাপের জন্য ব্যবহারিক যন্ত্রে পরিণত হয়।  বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত নজরুল পণ্ডিত উইনস্টন ই. ল্যাংলি জোর দেন যে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা (The Universal Declaration of Human Rights, 1948) যে মানবতাবাদী মর্যাদা এবং মূল্যবোধের প্রতি সম্মত হয়েছে নজরুল তাঁর সমতার ‘মানুষ’ কবিতায় দুই দশকের আগে একই আহ্বান জানিয়েছিলেন।  তিনি ঘোষণা লেখেন:

গাহি সাম্যের গান-

মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,

নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,

সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

উপসংহার

শ্রদ্ধেয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (1899-1976) বাংলা সাহিত্য প্রতিরোধের এক অমর চেতনা।  বিদ্রোহী কবি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সৃজনশীল সাহিত্যের রশি দিয়ে প্রতিরোধের বিভিন্ন প্রক্রিয়া অধ্যবসায়ের সাথে তৈরি করেন।  যাইহোক, যেমনটি মূলধারার গবেষণায় পাওয়া এটি শুধুমাত্র তাঁর কাব্যিক অবদানই বরং তিনি গল্প, নাটক, উপন্যাস এবং সাংবাদিকতার গদ্য সহ অন্যান্য সাহিত্যকর্মেও একই অংশ রেখেছিলেন।  সুতরাং, এই গবেষণামূলক কাজটি নজরুল অধ্যয়নের এক ভিন্ন মাত্রা এনে সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় তাঁর বিদ্রোহী ও বিপ্লবী বর্ণগুলিকে তুলে ধরেছে যা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে প্রতিরোধের দিক আলোড়িত করে থাকে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter