উমর (রাঃ)-এর কঠিন হৃদয় জলের মতো নরম হয়ে যায়!

মুসলমানদের ভবিষ্যত খলিফা উমর বিন আল-খাত্তাব  (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি ছিল ঘোষণার ৬  সালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। তিনি ইসলামের এবং আল্লাহর রসূল মুহাম্মদ (সাঃ) এর সবচেয়ে উগ্র শত্রুদের একজন এবং মুসলমানদের একজন মহান যন্ত্রণাদায়ক ছিলেন। একজন ঐতিহাসিক বলেন যে উমর  (রাঃ) এর  ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি তার শত্রুতা শুধুমাত্র তার নিজের মামা আবু জাহলের প্রতি ঘৃণা এবং তাদের প্রতি শত্রুতার সাথে মিলে যায়।

 

কথিত আছে যে একদিন উমর (রাঃ) নিছক ক্ষোভে মুহাম্মাদ (সাঃ) কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং এইভাবে ইসলামের শিখা নিভিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি বাড়ি থেকে বারহয়েছিলেন। উমর (রাঃ) মুহাম্মাদ (সাঃ) কে হত্যার উদ্দেশ্যে আরকাম (রাঃ) এর বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন,যেখানে মুসলমানেরা একসঙ্গে জমা হতেন , এমন সময় একজন পথচারী তাকে দেখতে পাই যে তাকে তলোয়ার হাতে নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে ,তখন তাকে জিজ্ঞেস করে, কোথায় যাচ্ছ? তখন উমার (রাঃ) বললো আমি আরকাম (রাঃ) এর বাড়ির দিকে যাচ্ছি মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করতে ,তখন তিনি তাকে বললেন হে উমার তুমি কি জানো তোমার বোন এবং তার স্বামী মুসলমান হয়ে গেছে, এবং পথচারী উমার (রাঃ) কে  আরো বললো যে নিজের ঘর কে আগে সামলাও।

 

তারপর উমার (রাঃ) আরকাম (রাঃ) এর বাড়ির দিকে না গিয়ে তার বোনের বাড়ির দিকে গেল।  আর যখন বাড়ির দরজায় প্রবেশ করলো তো তিনি  ঘরের ভিতর থেকে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনতে পেলো।  তখন তিনি তারতারি ঘরে প্রবেশ করে  তার বোনকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো , তুই কি পাঠ করতেছিলি দেখা আমাকে , কিন্তু তাঁর বোন তিঁনাকে দেখায় না কারণ তাঁর বোন কোরান শরীফ পাঠ করছিলেন আর তাঁর ভাই পবিত্র অবস্থায় ছিলোনা। যখন তাঁর বোন বলতে চাইছিলনা তাই তিঁনি তাঁর বোন কে মারতে শুরু করেন , তখন তাঁর বোন বললো আগে তুমি পাক পবিত্র হয়ে এস তারপর বলছি।  তখন উমার পাক পবিত্র হয়ে এলেন।  এবং তাঁর বোন কোরান শরীফের সূরা তাহার কিছু আয়াত শুনালেন।  যেই গুলো শুনে উমারের পাথরের মতো শক্ত দিল জলের মতো নরম হয়ে গেলো। এবং ইসলাম গ্রহণ করার জন্য তাঁর মন চাইলো এবং তিনি আরকাম (রাঃ) এর বাড়ির দিকে সেই তলোয়ার নিয়েই চলতে শুরু করলেন। 

 

মুসলমানেরা সেদিন আরকাম বিন আবি আল-আরকাম (রাঃ)এর বাড়িতে  জামাতে নামাজ পড়ার জন্য জড়ো হয়েছিল। তারা যখন একসঙ্গে দাঁড়াতে শুরু করলো তখন তাদের মধ্যে একজন  জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলো যে ,উমর একটি টানা তলোয়ার নিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। যথেষ্ট সতর্ক অবস্থায়, তিনি মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যদের যা দেখেছিলেন তা বললেন । এমনকি তারাও শঙ্কিত ছিল।

 

হামজা (রাঃ), যিনি আরকাম (রাঃ) এর বাড়িতে সেই সময়েই উপস্থিত ছিলেন, তিনি তাদের আশ্বস্ত করলেন এবং বললেন যে উমর যদি ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে আসেন,তাহলে ঠিক আছে; কিন্তু যদি তা না হয়, তাহলে সে  উমরের নিজের তরবারি দিয়ে তাকে (উমরকে) হত্যা করবে। কিন্তু  এরকম কিছু হয়নি , কেননা উমার (রাঃ) ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলেন আর সেটি হলো ইসলাম গ্রহণ করা , আর  সেটা  তিনি করেছিলেন সে সময়, (যখন তিনি ইসলামে দীক্ষিত হন) তখন উমার (রাঃ)  ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী একজন পরিণত মানুষ ছিলেন।

 

অনেক ইসলামিক পণ্ডিত বলেন যে উমরের ধর্মান্তরিত হওয়ার সাথে সাথে ইসলাম নতুন শক্তি নিয়োগ করেছিল এবং মুসলমানরা এখন পৌত্তলিকদের সাহস করতে উত্সাহিত হয়েছিল। এই দাবী অনুসারে তারা এখন তাদের লুকিয়ে থাকার জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে কাবার চত্বরে খোলামেলা নামাজ আদায় করতে পারত, অথবা বরং উমর নিজেই তাদের লুকানোর জায়গা থেকে বের করে এনেছিলেন এবং তারা তখন  আবু জাহেল বা অন্য কারো কে ভয় করতোনা।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter