সূরা কাহাফের প্রথম ঘটনা
আল্লাহ তাআলা আমাদের নাবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। তার কারণ হল যাতে তিনার কওমের মানুষ অর্থাৎ আমরা আমাদের পূর্ব যুগের ভালো এবং মন্দ সমস্ত খবর গুলি জানতে পারি। অনেক ঘটনা আছে যা আমাদের জানা অত্যন্ত যরুরি। যেমন আগের নাবীদের ঘটনা ও তাঁদের কওমের বিবরণ। তাঁরা তাঁদের নাবীর সাথে কেমন আচারণ করত। এবং অন্তিমে তাঁদের কি হলো। তেমনই কুরআন শারিফের পনেরো পারাই সূরা কাহাফের প্রথম ঘটনা ‘আসহাবে কাহাফ’-দের বিবরণ। তাঁরা কিভাবে সেই গুহার ভীতরে ঘুমিয়ে ছিলেন? এবং কিভাবে তাঁদের নিদ্রা ভঙ্গ হল?
তাঁরা ছিলেন কয়েকজন যুবক সাথে একটি কুকুর যারা তাঁদের কওমকে ছেড়ে চলে এসেছিল।তাঁরা একটি গাছের নিচে একত্রিত হন। গাছের নিচে একত্রিত হওয়ার পর তাঁরা ভয় পান একে অপরের পরিচয় জানাতে। যদি একজন অপর জনের পরিচয় জেনে ফেলে আর তা রাজার কাছে খবর যায়। যে সে তাঁদের ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্মে এসেছে। তখন তো তাঁকে আবার আগের ধর্মে ফিরে যেতে বাধ্য করবে সেই রাজা। তাই তাঁরা কেউ তাঁদের পরিচয় জানাচ্ছিলনা। কিন্তু পরে আল্লাহ তাআলা তাঁদের মনের ভয় ভেঙ্গে দেন। তারপর একজন সাহস করে বলে উঠল: তোমরা তোমাদের কওমকে ছেড়ে কেন চলে এসেছো? তখন একজন যুবক বলল: আমি আমার কওমকে ছেড়ে চলে এসেছি তার কারণ হলো আনার কওমের চাল চলন, রীতি নীতি মোটেই ভালো না। আমাদের একমাত্র রব্ব আল্লাহ যে আকাশ ও জমিনের মালিক। এই কথা শুনে সবাই বলল: আমরাও এই কারণে আমাদের কওমকে ছেড়ে চলে এসেছি। সবার মুখ থেকে একই কথা শুনে তাঁরা খুব খুশি হলেন। এবং তাঁরা একটি জায়গা নির্দিষ্ঠ করে সেখানে আল্লাহর ইবাদাত করতে শুরু করেন।
কিন্তু তাঁদের এই কথা খুব বেশি দিন গুপ্ত রইল না। পরে তা জানা জানি হয়ে রাজার কানে পৌছে যায়। এবং রাজা তাঁদেরকে তাঁর দরবারে ডেকে পাঠাই। রাজার নাম ছিল দাকিয়ানুস। তাঁরা রাজার কাছে যান এবং রাজা তাঁদের বলে: তোমরা তোমাদের আগের ধর্মে ফিরে এসো। তখন তাঁদের হৃদয়কে আল্লাহ তাআলা আরও শক্ত করে দেন। তাঁরা বলেন: না আমরা আগের ধর্মে ফিরে যাব না। আমরা এক আল্লাহকে মেনে চলব যে আসমান ও জমিনের মালিক এবং তারই ইবাদাত করব। এমন কি তাঁরা সেই রাজাকে এবং পুরো দুনিয়াকে ইসলামের দাওয়াত দেন। এই সব শুনে রাজা রাগান্বিত হয়ে হুকুম দেয় যে তাঁদের পোশাক খুলে নেওয়া হোক। এবং তাঁদেরকে তাঁদের কথা ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।
রাজা ভেবে ছিল এই সব করলে তাঁরা ভয় পেয়ে আবার আগের ধর্মে ফিরে চলে আসবে। কিন্তু তাঁরা তা করেন। তাঁরা ভাবলো এখানে থেকে আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করা যাবে না। তাই তাঁরা সেই শহর ছেড়ে চলে যান। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে হুকুম দেন তাঁদের কোনো গুহাই গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার আদেশ দেন। তাঁরা তাই করেন। ওই দিকে তিনাদের গ্রামের লোকরা ও রাজা লক্ষ করল তাঁদের আর কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। লোকেরা ভাবল আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে রাজার কাছ থেকে দূরে কোথাও সরিয়ে নিয়েছেন।
তাঁরা যেই গুহাই ছিল সেই গুহার অবস্থান এমন জায়গাই ছিল যে তাঁদের ডান দিক দিয়ে সূর্য় উদয় হতো। এবং তাঁদের বাম দিকে সূর্য অস্ত যেত। এবং তাঁদের গুহার মুখ ছিল উত্তর দিকে। তাই তাঁরা সকালে তারপর আবার সন্ধ্যাতে সূর্যের আলো পেত। তাঁরা ঘুমিয়ে ছিল গুহার মাজ খানে।আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে এমন ভাবে সেই গুহার ভীতর শুইয়ে দিয়ে ছিলেন যে তাঁদের কাছে হাওয়া, সূর্যের আলো, চাদের আলোও পৌছাতো যাতে তাঁদের ঘুম না ভাঙ্গে।
আল্লাহ তাআলা কুরআন শারিফে ইরশাদ করেছেন:
وتحسبهم أيقاظا وهم رقود
তাঁদেরকে এমন ভাবে আল্লাহ তাআলা ঘুম পাড়িয়ে দেন যে লোকেরা দেখলে তাঁদের জাগ্রত মনে করত। কারণ তাঁদের চোখ খোলা অবস্থায় তাঁরা ঘুমিয়ে ছিল। এবং তাঁদের কুকুরটি ঘুমিয়ে ছিল গুহার মুখের সামনে। যেন কুকুরটি তাঁদেরকে পাহাড়া দিচ্ছিল। এভাবেই তাঁরা সেখানে ঘুমিয়ে থাকে।
অনেক বছর পর তাঁদেরকে আবার জাগ্রত করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন যে তাঁরা একাধিক তিনশ নয় বছর ধরে ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু যখন জেগে উঠল তখন ওই অবস্থাতেই ছিল যে অবস্থায় তাঁরা ঘুমিয়ে ছিল। ওঠার পর তাঁরা একে অপরকে জিজ্ঞেস করে যে তাঁরা কতদিন ঘুমিয়েছে? একজন বলে আমরা একদিন ও কিছু সময় ঘুমিয়েছি। আবার একজন বলে আমরা একদিনেরও কম ঘুমিয়েছি। কেননা তাঁরা যখন ঘুমিয়েছিল তখন সকাল হয়ে ছিল। এবং যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন সন্ধ্যা হয়ে ছিল। তাঁরা কথা না বারিয়ে বলল: এই ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
তাঁদের ক্ষিদা লেগেছিল বলে একজনকে শহর গিয়ে কিছু কিনে নিয়ে আসতে বলা হয়, কিন্তু সাবধানে কেউ যেন তাঁকে চিনতে না পারে। তারপর একজন খাবার কেনার উদ্দেগে চলে যায় শহরের দিকে। বর্ণিত আছে যে সেই শহরটির নাম ছিল ‘দাকসুস’। বাজারে গিয়ে একটি দোকোনে খাবার কেনার জন্য যখন মুদ্রাটি দেয় তখন দোকানদার অবাক হয়ে যায় এবং প্রশ্ন করে: এই মুদ্রা তুমি কোথায় পেলে?
তখন সে বলল আমরা তো কালকে ঘুমিয়ে ছিলাম এবং এই মুদ্রা আমাদের কাছেই ছিল। কিন্তু দোকানদার ভাবল নিশ্চয় সে কোন গুপ্ত ধন পেয়েছে। তারপর তাঁকে রাজার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় যে তুমি এতো পুরোনো মুদ্রা কোথায় পেলে। তখন সে সব কথা খুলে বলে দেয়। তারপর রাজাকে তাঁদের গুহার কাছে নিয়ে যায়। এবং সেখানে আসহাবে কাহাফদের ইনতেকাল হয়ে যায়। তারপর রাজা সেখানেই তাঁদের কবর দিয়ে দেয়। তাঁদের পাশে মসজিদ নির্মান করে।
আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন, তার কারণ শহরের মানুষ যেন এই জ্ঞ্যান লাভ করে যে আল্লাহ তাআলার কথা সত্য। কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারেও তাঁদের যেন কোন সন্দেহ না থাকে।