দ্য সোশ্যাল ডিলেম্মা: জেনেও অজানা

বর্তমান জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আশীর্বাদ না অভিশাপ - শিরোনামের লম্বা বিষয়বস্তু। অবশ্যই বিংশ শতাব্দীর আবিষ্কার ইন্টারনেট মানব জীবনে অভূতপূর্ব বিপ্লব নিয়ে এসেছে, কিন্তু এর বাস্তব রুপ সম্পর্কে জানা থাকলেও সকলেই অজ্ঞ। উক্ত প্রযোজ্য কিন্তু অজানা বিষয়টিকে অন্বেষণ করে নির্মিত হয় নেটফ্লিক্সের ডকুমেন্টরি দ্য সোশ্যাল ডিলেম্মা (The Social Dilemma)।

 ডকুড্রামাটি গ্রীক নাট্যকার ও দার্শনিক সফোক্লেসের এক উদ্বৃতি দিয়ে আরম্ভ হয়: "অভিশাপ ছাড়া মানুষের জীবনে বিশাল কিছু প্রবেশ করে না।" ইন্টারনেট হল এই ধারণার সব থেকে বড়ো এবং বাস্তব উদাহরণ।

 টেক বিশ্বের বিভিন্ন অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিদের বক্তব্য এবং গবেষণার উপর গঠিত ডকুমেন্টারিটি ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত অবিশ্বাস্য সামাজিক ফেনোমেনা তুলে ধরেছে। সমস্ত ইন্টারভিওয়ার এবং অভিনেতারা ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, স্নাপচাট, টিকটক ইত্যাদির মতো প্রযুক্তি প্রসিদ্ধ প্ল্যাটফর্মগুলির প্রাথমিক এবং মূল বিকাশকারী ছিলেন।

 কিসের পরিবর্তে সমগ্র ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম বিনামূল্যে বেশ পরিমাণের পরিষেবা প্রদান করে থেকে? "আপনি যদি কোনো পণ্যের জন্য অর্থ প্রদান না করেন তবে আপনি নিজেই পণ্য অর্থাৎ প্রোডাক্ট।" উত্তরে আমেরিকান প্রযুক্তি নীতিবিদ এবং সেন্টার ফর হিউম্যান টেকনোলজির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ট্রিস্তান হ্যারিস ক্লাসিক বিবৃতি থেকে উদ্ধৃত করে বলেন। তিনি নিজে গুগলে ডিজাইন এথিসিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। হ্যারিসের কথা অনুসারে টেক কোম্পানিগুলি তাদের ডিজাইনগুলি বিকাশে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যাতে তারা ব্যাবহারকারীদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। হ্যারিস নিজে খুব বিচলিত যে ক্যালিফোর্নিয়ায় শুধুমাত্র ৫০ জন টেকনোলজি ডিজাইনারের কাজ বিশ্বের দুশো কোটি মানুষকে প্রভাবিত করবে।

 "এটি এখন একটি নতুন ধরনের মার্কেটপ্লেস যা ইতিহাসে আগে কখনও দেখা যায়নি। এটি একচেটিয়াভাবে মানুষের ভবিষ্যতের ব্যবসা করে।" হার্ভার্ডের অধ্যাপক, সামাজিক মনোবিজ্ঞানী এবং দ্য এজ অফ সর্ভিল্লিয়ান্স ক্যাপিটালিজম (The Age of Surveillance Capitalism)-এর লেখিকা শোশানা জুবফ বলেন।

 অনুরূপ, আরও অনেক বিশেষজ্ঞের কথায় - আপনার (ইন্টারনেট ইউজার) নেওয়া প্রতিটি একক পদক্ষেপ সাবধানে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং রেকর্ড করা হয়।… তাদের (টেক কোম্পানি) কাছে আমাদের সম্পর্কে আমাদের থেকে বেশি আরও তথ্য থাকে… (সংগৃহীত) ডেটা দিয়ে তারা আমাদের কর্মের পূর্বাভাস দেয়… আপনার মনোবিজ্ঞান হ্যাক করে আপনারই বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলি ইউজারদের এনগেজমেন্ট কেড়ে গ্রোথ নিশ্চয়তা করে এবং এডভার্টাইজমেন্টের মাধ্যমে প্রচুর সম্পদ উপার্জন করে থাকে… মজার ব্যাপার হলো, মাদক সেবনকারীদের মতো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের গ্রাহক বলা হয় না, বরং ইউজার বলা হয়। বিরূপভাবে, ব্যবহারকারীরা নিজেই ব্যবহৃত হয়।

 জেফ অরলোস্কি দ্বারা পরিচালিত, ২০২০ সালের এই চলচ্চিত্রটি কিছু সুবিধার ছদ্মবেশে ম্যানিপুলেশন, ফেক নিউজ, অ্যাডিকশন, মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন এবং অন্যান্য ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে শুরু করে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলির অবিলম্বিত অভিশাপগুলি অন্বেষণ করেছে। এই ভাবে টেক কোম্পানিগুলি ইতিহাসের সব থেকে শক্তিশালী এবং অর্থ-সম্পূর্ণ সংস্থা হিসেবে দাড়িয়েছে। মোটামুটি দেড় ঘন্টার এই ডকুমেন্টারিটি প্রকাশ পাওয়ার পর বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে এক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম বিবৃতি দিতে শুরু করে। কিন্তু তবুও আবার জেনেও অজানা!

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter