ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনকে আড়াল করতে আল জাজিরা নিষিদ্ধ
ইসরায়েলের চলমান ফিলিস্তিনিদের হত্যার সঙ্গেও বেশ কিছু মিডিয়া প্রতিষ্ঠান জড়িত। সংবাদ মাধ্যমের সক্রিয়তা ইসরাইলি হত্যার পরিকল্পনার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু বহু ভূল খবর, পক্ষপাতদুষ্ট উপস্থাপনা, তথ্যের হেরফের ও মিডিয়া মাফিয়াদের কাজে লাগিয়েও ঔপনিবেশিক নিশংসতা চেপে রাখা সম্ভব হয়নি, বরং সারা বিশ্ব স্বচক্ষে এর দর্শন করছে বিভিন্ন স্বাধীন মাধ্যমে।
প্যালেস্টাইন মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা পেরিয়ে
আশ্চর্যের বিষয় এই অনেক পশ্চিমা দেশের সরকারি নীতি ইসরায়েল বন্ধুস্বরুপ হলেও সে দেশগুলিতে সাধারণ জনসংখ্যার সোশ্যাল মিডিয়া ফিডস প্যালেস্টাইনি অধিকারের দাবিতে ভর্তি। বর্তমানে তো আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার শিক্ষার্থী, একাডেমিসিয়ান এবং ছাত্র-ছাত্রীরা একই দাবিতে বিক্ষবে নেমে আসল শিক্ষার পরিচয় প্রদর্শন করেছে।
দখলদার শক্তি বারবার অনুরূপ আদর্শবাদী প্রদর্শনকে রুখবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। ইসরাইলের কর্মকর্তা এই সমগ্র স্বাধীন মানুষের প্যালেস্টাইনের পক্ষে দাঁড়ানোকে অ্যান্টি-সেমিটিজম যথা ইহুদিবিদ্বেষ বলে অন্য একটি ন্যারেটিভ ও আখ্যান তৈরি করার চেষ্টা করছে যাতে বিশ্ব তাকে এখনও পৃথিবীর সব থেকে প্রতারিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
আল-জাজিরা বন্ধ
সাম্প্রতিক নেতানিয়াহু সরকার আল-জাজিরা সংবাদ মাধ্যমকে ইসরাইলে কোনরকম ক্রিয়াকলাপ থেকে নিষিদ্ধ করে। কাতার-বিভিত্ত মিডিয়া চ্যানেলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে এর উপস্থাপন উস্কানিমূলক। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার এক্স একাউন্টে (পূর্বে টুইটার) ঘোষণা করে - সরকার সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে: ইস্রায়েলে উস্কানিমূলক চ্যানেল আল জাজিরা বন্ধ করা হবে।
ইসরায়েলের আকাশ-জল-মাটি আগ্রাসনের কারণে ফিলিস্তিনিদের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সম্প্রচারকারী কয়েকটি গণমাধ্যমের মধ্যে আল জাজিরা ছিল একটি যা যুদ্ধস্থল থেকে কোন দ্বিধা ছাড়াই এই ধ্বংসমালা উপস্থাপন করে।
কিন্ত ইসরাইল তার নিজের আসল ছবি বিশ্ববাসীর সামনে ফুটে ওঠায় অপমানিত হতে থাকে। সমাধানস্বরূপ, ওইসব মাধ্যমকেই বন্ধ নিন্দা করে, মিথ্যা অভিযোগে দেয় এবং বন্ধ করতে সিদ্ধান্ত নেয়।
গত ১ এপ্রিলে ইসরায়েলের সংসদ নেসেটে একটি আইন পাশ হয় যাতে আল-জাজিরা সহ বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে জাতীয় নিরাপত্তার কারণে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তার প্রায় এক মাস পর ইসরাইলে আল জাজিরার সম্প্রসারণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়।
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের প্রতিবেদকের দ্বারা আল-জাজিরাতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে: মিডিয়া ওয়েবসাইটটি ইসরায়েলে নিষিদ্ধ... এটির টেলিভিশন চ্যানেলও সেখানে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। যে অ্যাক্সেস প্রদানকারী aljazeera.net হোস্ট করে তারা ওয়েবসাইটটি হোস্ট করলে জরিমানা হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এসব সত্বেও সবাদিকতার পরিচয় রক্ষার্থে আল-জাজিরা হাল ছাড়েনি। সংবাদমাধ্যমটি ইসরাইলের এই পদক্ষেপকে নিন্দা করেছে এবং উপলব্ধ আইনি পন্থা ব্যবহার করে সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখার কথা বলেছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিক
সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকতার উপর ইসরাইলের এটাই প্রথম আক্রমণ নয়। সিপিজে-এর (CPJ - Committee to Protect Journalists) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
৩ মে, ২০২৪ পর্যন্ত, সিপিজে-এর প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৫,০০০ জনেরও বেশি নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৯৭ জন সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মী ছিলেন — গাজা এবং পশ্চিম তীরে ৩৪,০০০ ফিলিস্তিনি এবং ইস্রায়েলে ১,২০০ জন মারা গেছে।
এই প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে আল জাজিরা বলে: মোট নথিভুক্ত ৭৭ সাংবাদিক গত বছর গাজা যুদ্ধে তাদের কাজ করার সময় নিহত হয়েছে: ৭২ ফিলিস্তিনি, তিনজন লেবানিজ এবং দুইজন ইসরায়েলি।
আল-জাজিরার নিজস্ব বেশ কয়েক সংবাদ এই যুদ্ধে নিহত হয়।
ইসরাইল প্রকাশ্যে মানবতার সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়া স্বাধীনতাকেউ বম-বারুদে গুড়িয়ে দিচ্ছে। দৃশ্যমান যে রক্তলীলা চলছে তা আরও বহিঃপ্রকাশ হওয়া উচিত যাতে ব্যক্তি থেকে সামাজিক স্তরে প্রত্যেকেই জাগ্রত হতে পারে এবং মানবিকতার পরিচয় দিয়ে এই গণহত্যা থামিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যায়। নচেৎ, কোন স্বাধীনতা ও মুক্ত সাংবাদিকতার অর্থ থাকেনা।