বাংলায় সমস্তা সংগঠনের সম্ভাবনা : মুফতি মতিন সাহেব বাংলার মাটিতে কেরালা মডেল সমস্তা সংগঠনের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বললেন
বলাবাহুল্য যে শিক্ষা হল এক সমাজে মেরুদন্ড। অতএব পৃথিবীতে চলতে গেলে শিক্ষা খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু এক শিক্ষালয় চালাতে কি কি পদ্ধতি লাগে তাও জানা খুবই প্রয়োজনীয়। এক সমাজকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেমনটা সক্ষম হয়েছে কেরলের এক মুসলিম সংগঠন ‘সামাস্থা’ ও তার ছাত্র সংগঠন SKSSF তাকে মডেল বানিয়ে বাংলার মুসলিম সমাজ কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবো? তার থেকে লাভবান হওয়ার পথ গুলো কি? এই সব কিছুই এক সাক্ষাৎকারে বলছেন উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা আর অল ইন্ডিয়া সুন্নাতুল জামাত এক এনজিও তার সাধারণ সম্পাদক মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মাতিন সাহেব। আলাপে এক মালায়ালম চ্যানেল সুপ্রভাত অনলাইনের প্রতিনিধি মুফতি রফিক হদাবী কোলারী সাহেব।
মুফতি রফিক হদাবী কোলারী : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতহু, সর্ব প্রথম মাতিন সাহেব আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেন।
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মাতিন সাহেব।: আমার নাম মোহাম্মদ আব্দুল মাতিন, আমি কলকাতার উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা আর অল ইন্ডিয়া সুন্নাতুল জামাত এক এনজিও আছে তার আমি সাধারণ সম্পাদক।
মুফতি রফিক হদাবী কোলারী : কয়েক বছর ধরে দারুল হুদার অফ ক্যাম্পাস ও মাদ্রাসা সিস্টেম চলছে। তাছাড়া আমরা সর্বদা শুনতে পাই আপনার নাম যে মতিন সাহেবের তত্ত্বাবধানে নিয়মানুগ ভাবে অনেক মাদ্রাসা চলছে, তো তার সম্বন্ধে কিছুটা বলেন।
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মাতিন সাহেব।: সেখানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম কারণ আমাদের যে এনজিও রয়েছে “অল ইন্ডিয়া সুন্নাতুল জামাত” তার ১৭ হাজার রেজিস্টার সদস্য রয়েছে। তো তখন বিশেষ কোনো কাজ ছিল না আর যখন দারুল হুদার সাথে আমার সম্পর্ক হল তখন তার সিস্টেম নিয়ে যাওয়ার পর আর মানুষটাকে অনেক পছন্দ করলো। সেই ক্ষেত্রে অতি শীঘ্রই কাজ করতে সুযোগ পেলাম। আর আলহামদুলিল্লাহ, এখন তো প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় ২৫৬টি কেরালা মডেল ইসলামিক স্কুল চলছে আর প্রায় ৮০টির বেশি আবাসিক মাদ্রসা চলছে আর ১৬টি গার্লস ক্যাম্পাস মেয়েদের জন্য.. আলহামদুলিল্লাহ কাজ প্রায় খুব সুন্দর ভাবে চলছে।
মুফতি রফিক হদাবী কোলারী : “সামাস্থা” আর তার সংগঠন SKSSF এর সমন্ধে আপনার মতামত কি?
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মাতিন সাহেব।: দেখেন “সামাস্থা” এমন এক সংগঠন যাকে সর্বত্র পৃথিবীকে এটাকে গ্রহণ করতে হবে কারণ রাসূল সাঃ যখন ঈমানের প্রতি দাওয়াত দিচ্ছিলেন তখন ইসলাম যে ক্ষেত্রে পৌঁছেছে কিন্তু তার উপর আমল করে তার উপকারিতা অর্জন করতে পারিনি। আজ সামাস্থার দ্বারা এক আমলী জীবন গঠন ও সাম্প্রদায়িক উন্নতি যা রাসূল সা: সাহাবাগণ যে কাজ করেছিলেন সেই কাজ আজ সমস্থা কেরালা জামিয়াতুল উলামা করে চলেছে।
 
মুফতি রফিক হদাবী কোলারী : আর SKSSF এর সমন্ধে আপনার মতামত কি?
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মাতিন সাহেব।: SKSSF তো এক সুন্দর আপডেটেড সংগঠন। আলহামদুলিল্লাহ ছাত্রগণ যেমনটা স্বয়ং রাসূল সাঃ বলেছেন যেসব ছাত্র শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে মাদ্রাসায় যায় তাদের পদতলে ফেরেশতা নিজের ডানা বিছিয়ে দেন। তো এটা তো হাদীস বর্ণিত আছে। এই ছাত্র সংগঠন পড়ুয়াদের প্রেরণা জোগাতে আর তাদের জীবনে কিভাবে এগিয়ে যাবে? সার্ভিস কিভাবে পাবে? পড়াশুনা কেমন করে ভালো হবে? সেসব ক্ষেত্রে সাহায্য করে। 
এসব জানলাম আর প্রায় আগেও জেনেছি। যেমনটা প্রায় চার বছর আগে দিল্লিতে এক প্রোগ্রামে জানতে পারি। তো আলহামদুলিল্লাহ SKSSF আমাদের ওখানে  সর্বপ্রথম যে কাজ  CLC (Community Learning Centre) বানিয়েছে সেখানে বিশেষ উপকার পাওয়া যাচ্ছে। তো আমার ইচ্ছা যে যদি কলকাতায় অনুষ্ঠান হয় তাহলে সেখানকার স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি ও মাদ্রাসার যেসব ছাত্ররা আছে তাদেরকেও SKSSF মধ্যে নিয়ে আসা যাতে সেখানে কাজ করা যায়। ছাত্ররা যদি ঠিক হয়ে যায় অর্থাৎ তাদের মধ্যে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও স্বভাব সুশীল হয়ে যায় প্রতিটি ছাত্রের মধ্যে দ্বীন চলে আসে তাহলে ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে আমাদের জন্য খুব সুন্দর হবে।
মুফতি রফিক হদাবী কোলারী : আর যেমনটা বঙ্গে SKSSF ও সামাস্থার কর্ম বহাল আছে তো এগুলো শুধু আপনার জেলার মধ্যে সীমিত না অন্যান্য জেলাতেও এর কর্ম অবিরত।
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মাতিন সাহেব।: প্রথমত আমরা আমাদের ব্লকে শুরু করেছিলাম তারপর ক্রমাগত আমাদের জেলায় ভালোই কাজ হতে থাকে অতঃপর নিকটবর্তী অন্যান্য জেলা গুলোতে যেমন বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, কোচবিহার ও দিনাজপুর এই সব জেলায় কাজ অবিরত। আলহামদুলিল্লাহ দারুল হুদা থেকে স্নাতক মনসুর হুদাবী যে একবারে তাঁর জীবন আমাদের ওখানে কুরবানী করে দিচ্ছেন। এখন তাঁর কর্ম সব অন্য এক স্কলারকে সমর্পণ করে সে এখন কাশ্মীর ছাড়া বাকি জেলাতেও যাচ্ছেন আর আমাদের ওখানেও আসেন।আর বর্তমানে মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর ও কোচবিহার জেলা গুলোতে যেসব ট্রেনারের প্রয়োজন হয় তারা আমাদের উত্তর ২৪ পরগনা থেকে যায়।আর  আমরা যেমনটা কেরলকে মডেল হিসেবে কাজ করছি সেই রকম বাকি জেলাগুলো আমাদের উত্তর ২৪ পরগনাকে মডেল বানাচ্ছে। 
মুফতি রফিক হদাবী কোলারী : (মুচকি হাসি) অর্থাৎ বর্তমানে আপনার জেলা অন্যের জন্য এক নমুনা স্বরূপ?
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মাতিন সাহেব।: (মুচকি হাসি) ইনশাআল্লাহ্ ইনশাআল্লাহ বর্তমানে সেরকমই চলছে তো।
মুফতি রফিক হদাবী কোলারী : তো আপনার কারণে পশ্চিমবঙ্গে তো কাজ হচ্ছেই তো আপনার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি যেমন অসম সেখানে কেমন কাজ হচ্ছে?
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মাতিন সাহেব।: দেখুন অসমে তো কাজ হচ্ছেই কিন্তু আমার সুযোগটা আরো হয়েছে কারণ আমার হাতে প্রায় ১৭ হাজার সদস্য রয়েছে তার ফলে কাজ করতে সুবিধা হয়েছে। কিন্তু বাকি জেলা বা রাজ্যগুলিতে যেমন অসমে কাজ হচ্ছে কিন্তু সেখানে যারা এসব কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের হাতে সেরকম সমর্থক নেই। অর্থাৎ তাদের প্রভাব যথার্থ নেই কিন্তু আমার ইচ্ছা যে এইভাবে কাজ চালিয়ে গেলে ইনশাআল্লাহ একদিন বরকতময় হবে।
মুফতি রফিক হদাবী কোলারী : তো পশ্চিমবঙ্গে বাকি জেলাগুলিতে SKSSF ও সমাস্থা কর্ম কিভাবে ছড়াবেন? যেমন আপনি এর থেকে লাভবান হয়েছেন তো অন্যদের কিভাবে লাভবান করবেন?
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মাতিন সাহেব।: দেখুন এসব কাজ করা নিজের মন থেকে হতে হবে। যারা তাদের সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় তাদের কেরালা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সুতরাং আমার ইচ্ছা ছিল আমি করেছি। বাহাউদ্দিন উস্তাদ এই পথ দেখিয়েছেন। যদি কারো ইচ্ছা হয় যে তাদের সমাজকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে তাহলে তারা করতে পারে। যেমনটা আমি রাশীদ গাজদালি, শারাফুদ্দিন হুদবি ও জুবায়ের উস্তাদ হতে প্রশিক্ষণ নিয়েছি তা থেকে বুঝতে পারি যে যদি একটি গ্রামে ১০০ জন লোকের মধ্যে ৯৫ জন আমার বিরোধী হয় আর শুধুমাত্র ৫ জন আমার সমর্থক হন তাতেও আমি কাজ করতে পারি।তাতে কোনরকম দ্বিধা হবে না।
মুফতি রফিক হদাবী কোলারী : মাশাআল্লাহ! তো আপনার সংগঠন দ্বারা কি কি কাজ করেছেন?
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মাতিন সাহেব।: আমাদের সংগঠন দ্বারা অনেক আগে থেকেই শিক্ষার কাজ চলে আসছে। কিন্তু তাতে কোন পদ্ধতিগত শিক্ষা ছিল না। মাদ্রাসা, মক্তব সব চলছিল কিন্তু কোনো পরিকল্পনা ও হিসেব ছিল না তাই তাতে কোন বরকত হচ্ছিল না। কেরালাওয়ালারা যখন গেলেন ,মনসুর ভাই যখন ওখানে গেলেন তো প্রতিটি কাম পদ্ধতি গত হিসাবে হতে লাগে তাতে মেহনত কম ছিল কিন্তু উপকার প্রচুর। সুতরাং অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর কাজ করতে সক্ষম হয়েছি।
     
 
  
             
            
                     
            
                     
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
             
            
             
            
             
            
            