অলিভার টুইস্ট বই পর্যালোচনা
লেখকঃ চার্লস ডিকেন্স
তিনি ১৮১২ সালে ইংল্যান্ডের ল্যান্দপরট শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একজন গরীব ঘরের সদস্য ছিলেন এবং তিনি যে জায়গায় বসবাস করতেন সেটি একটি বস্তি ছিল। যে জায়গায় আসামীরা বসবাস করে সেই জায়গায়। এমনকি তিনার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে তিনি খবরের কাগজ বিক্রেতারও কাজ করেছেন। কিন্তু এসব পার করে তিনি একজন বিখ্যাত লেখক হয়ে উঠেছেন। তিনার লিখিত বই গুলির মধ্যে অলিভার টুয়িস্ট হচ্ছে উল্লেখযোগ্য।
অলিভারের জন্মঃ
অনেক ভয়াবহ কালো অন্ধকার রাত্রে এক শিশুর জন্ম হল তার সঙ্গে তার মায়ের মৃত্যু। তার জন্ম হয়েছিল ওয়ার্কহাউসে যে জায়গায় এতিম ছেলেদেরকে অতিরিক্ত কাজ করানো হতো। সেই ওয়ার্কহাউসের একজন বৃদ্ধ মহিলা অলিভারের মাকে বাচ্চা প্রসব করার সময় বাড়ির ভেতরে নিয়ে এসেছিল। অলিভারের জন্ম হল এবং তার মায়ের মৃত্যু ঘটলো। তার পর থেকে অলিভার সেই ওয়ার্কহাউসেই থাকতো আরও অনেক ছেলে ছিল তারা সবাই সঠিকভাবে তাদের শরীরের দিক থেকে বৃদ্ধি পায় কিন্তু অলিভার পায় না। এবং তার উচ্চতা একটি ইঁদুরের মতো থেকে যায়। এবং সে শারীরিক দিক থেকে অনেক দুর্বলও ছিল। তাই তাকে অন্য ওয়ার্কহাউসে পাঠানোর ব্যাবস্থা নেওয়া হয়। তার পর তাকে অন্য ওয়ার্কহাউসে পাঠিয়েও দেওয়া হয়। সেখানে তার উপরে এবং বাকি ছেলেদের উপরে নির্যাতন করা হতো। সে এসব সহ্য না করতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে যায় এবং ইংল্যান্ডের কিছু যাদুকর চোরদের ফাঁদে পরে যায়। তারা তাকে বলে যে আমরা তোমাকে একটি নতুন জীবন দিতে পারি যদি তুমি আমাদের সঙ্গে চলো তাহলে। তাদের প্রস্তাবে অলিভার রাজি হয়ে যায় এবং হ্যাঁ বলে দেয়।
জাদু এবং চুরির শিক্ষাঃ
তারপর তারা অলিভারকে ফ্যাজিন নামক একজনের কাছে উপস্থিত করলো। সেই ব্যাক্তি তাদের দলের সর্দার ছিল। সে অলিভারকে জাদু দেখাতো এবং কিভাবে তা দ্বারা চুরি করবে তা সব শিক্ষা দিত। কিছু দিন পর অলিভার তার জিবনে প্রথম চুরি করার জন্য যায় কিন্তু সে ব্যার্থ হয় এবং তাকে তারা হারিয়ে ফেলে। অনেক দিন পরে ফ্যাজিনের দল অলিবভারকে খুঁজে পাই। তারপর তারা তাকে দিয়ে আবারও চুরি করানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যার্থ হয়। একদিন তাদের দলের একটি সদস্য সাইক সে বলে আমরা একজনের ঘরে ডাকাতি করবো। কিন্তু তার বাড়িতে এত চৌকিদার যে সেখানে প্রবেশ করাই অসম্ভব। কিন্তু তার বাড়ির এক সাইডে একটি ফুটো আছে যেটা দিয়ে শুধু মাত্র অলিভার কেই প্রবেশ করানো যাবে। তাকে প্রবেশ করানোর পর সে সেই ঘরওয়ালা হত্যা করবে এবং আমাদের জন্য দরজা খুলবে।তখন তাদের দলের একটি মেয়ে ন্যানসি বলে আমরা এত নিষ্ঠূর হতে পারি না যে তার দ্বারা কাউকে হত্যা করাবো। তখন সাইক বলে তুমি যখন আমাদের কাছে এসেছিলে তখন তুমি এক পয়সা চুরি করতে জানতে না। কিন্তু তুমি এখন তাতে পারদর্শী। এসব কিছুই অলিভার কান পেতে শুনে ফেলে। তার পর তারা যেমন বলেছিল তারা তাই করলো তারা কয়েকজন বাড়ির আশেপাশে পাহারা দিচ্ছিল এবং ন্যানসি অলিভারকে সেই জায়গা দ্বারা বাড়িতে প্রবেশ করাচ্ছিল কিন্তু বাড়ির চৌকিদাররা টা বুঝে নেয়। তারা তারাতারি পালিয়ে যায়। আর অলিভার সেই বাড়ির পাশেই পরে থেকে যায়। সেও কষ্ট করে পালিয়ে যায়। কিন্ত সে তার দলের কাছে যেতে পারে না একজনের ঘরের সামনে পরে থাকে। সেই মালিকরা সকালে তাকে দেখে এবং সবাই তার চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করে তোলে। এবং অলিভার সেই বাড়ির “রোজ” নামক এক মেয়ের সঙ্গে খেলা ধুলা, ঘুরতে যাওয়া এমনকি সময়ও কাটাত। অলিভার তার প্রতি দিনের দিন দুর্বল হয়ে পরছিল। সে তাকে বলতে পারছিল না। যে সে তাকে ভালবাসতে শুরু করেছে। কিন্তু তার সমস্ত চিন্তা ও ভাবনাকে দূর করে হ্যারি নামক এক ছেলে এসে রোজকে জরিয়ে ধরে। হ্যারি হচ্ছে রোজের ভালোবাসা। সে এখন বিদেশে পড়াশোনা করে।
মিস্টার ব্রোনলাঃ
তারপর অলিভার সেই খান থেকে পালিয়ে যায়। এবং ব্রোনলা নামক একজনের কাছে যায়। সে তাকে শুধরানোর চেষ্টা করে কিন্তু তার মধ্যেই ফ্যাজিনের দলবল এসে আবারও অলিভারকে নিয়ে যায়। আবারও তারা অলিভারকে দিয়ে জঘন্য কাজ করাতে চলেছিল কিন্তু অলিভার তা বুঝে যায় এবং সে আবারও পালিয়ে যায়।
মিস্টার বাম্বালঃ অলিভার পূর্বে যে অর্কহাউসে কাজ করতো। সেই অর্কহাউসের দাতা মিস্টার বাম্বাল একদিন সেই খানে আসে এবং লেডী বাম্বালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তখন একজন বৃদ্ধ মহিলা বলে আমাদের পুরনো কর্মচারী মৃত্যু বরণ করতে চলেছে তার পূর্বে সে আপনাকে কিছু বলতে চাই। তখন লেডী বাম্বাল তার কাছে যায়। কর্মচারীটি বলে একদিন ভয়াবাহ রাত্রে আমি একজন মহিলাকে আমাদের অর্কহাউসের মধ্যে নিয়ে আসি এবং তখন সে একটি ছেলের জন্ম দেয় এবং তার সঙ্গে তার দেখাশোনার জন্য কিছু ধন ও সম্পদও দেয় কিন্তু আমি সেই গুলি আমার নিজের প্রয়োজনে খরচ করে ফেলেছি। সেই ছেলেটি আর কেউ না অলিভার। তারপর সে এক জায়গার ম্যাপ লেডী গ্রিম-ওয়েজের হাতে দিয়ে মৃত্যুর কোলে ধলে পরে।
মঙ্কেদের সঙ্গে সাক্ষাৎঃ
তারপর একদিন মিস্টার বাম্বাল ও লেডী বাম্বালের মধ্যে প্রবল রাগারাগি হয়। মিস্টার বাম্বাল মাথা ঠাণ্ডা করার জন্য দোকানে মদ খেতে চলে যায়। কিন্তু সেই দোকানে একজন মঙ্ক মুখে মাস্ক পরে বসেছিল। সে হঠাৎ তাকে অলিভারের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগে। সেই মঙ্কটি বলে তুমি আমাকে তার সম্পর্কে বলো তার পরিবর্তে আমি তোমাকে টাঁকা দেব যখন সে টাঁকা দেখে তখন সে অলিভারের সম্পর্কে যা জানতো সমস্ত কিছু তাকে বলে দিল। তারপর মঙ্কটি তাকে বললো তুমি পরেরে দিন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করো। তার পরের দিন সে এবং তার স্ত্রী তার সঙ্গে দেখা করতে যায় এবং সেই বৃদ্ধ মহিলাটি যে ম্যাপটি তাকে দিয়েছিল সে সেই মঙ্ককে দিয়ে দেয়। তারপর মঙ্কটি তাদেরকে টাঁকা দেওয়ার পরিবর্তে তাদের উপোরে বন্দুক তাক করে। এবং তাদেরকে পালিয়ে যেতে বলে। মঙ্করা অলিভারের সম্পর্কে জানতে চাইছিলো কারণ তারা জানতো যে অলিভারের মা তার জন্য ধন ও সম্পদ রেখে গেছে। তাই তারা চাইছিলো যে অলিভার কে রাস্তা থেকে সরিয়ে সমস্ত ধন ও সম্পদ হাঁতিয়ে নিতে। তারপর তারা অলিভারকে আহত করারও চেষ্টা করে কিন্তু ন্যান্সি এবং মিস্টার ব্রোনলা অলিভারকে বাঁচিয়ে নেয়। তিনি ন্যান্সিকে প্রস্তাব দেয় যে তুমি আমার সঙ্গে চলো তুমি একটা নতুন জীবন শুরু করতে পারো। কিন্তু সে মানা করে দেয়।
সাইক,ন্যান্সি এবং মিস্টার ব্রোনলাঃ
তারপর ন্যান্সি আবার তার দলে চলে যায়। সাইক তাকে সন্দেহ করতে শুরু করে। তারপরের দিন সাইক তার পিছনে তাদের দলের আর একটি মেয়ে “নোআহকে” তার পিছু করার জন্য লাগিয়ে দেয়। ন্যান্সি মিস্টার ব্রোনলার সঙ্গে একটি ব্রিজের উপরে সাক্ষাত করে এবং সাইক ও তার দলের সম্পর্কে অনেক তথ্য বলে। তার পর যখন সে বাড়িতে ফিরে তখন সাইক তাকে সমস্ত কিছু বলে যা যা সে ব্রোনলাকে বলেছে। তখনি সাইক একটা চাকু বের করে এবং ন্যান্সিকে আঘাত করে যার ফলে ন্যান্সির মৃত্যু হয়। সাইক এবং তার দলবল সব ভয়ে পালিয়ে যায়।
সাইকের মৃত্যুঃ
তার পর অলিভার মিস্টার ব্রোনলাকে সমস্ত কিছু বলে। তখনি তিনি সাইককে ধরার জন্য বেরিয়ে পরে। সাইককে ধরতে গিয়ে বন্দুকের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। তার পরে যে সমস্ত মঙ্কেরা অলিভারকে হত্যা করতে চেয়ে ছিল। তাদেরকেও মিস্টার ব্রোনলা কারাগারে বন্দি করে দেয়। তিনি তাদেরকে বলে অলিভারের পিতা শুধু মাত্র অলিভারের জন্য ধন ও সম্পদ রেখে জাননি তোমাদের জন্যেও রেখে গিয়েছিল। কিন্তু তোমরা তার সমস্ত অংশটাই কেরে নিয়ে নিতে চেয়েছিলে।
ন্যান্সির প্রতি অলিভারের প্রার্থনাঃ
তারপর অলিভারকে তার প্রাপ্য অধিকার ও ধন,সম্পদ দেওয়া হয় এবং মঙ্কেদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়। এর পর অলিভার তার জীবনকে সুন্দরভাবে নতুন করে শুরু করে এবং গল্পটি এখানেই শেষ হয়ে যায়।