নতুন রিপোর্ট: উচ্চশিক্ষায় সব থেকে বেশি পিছিয়ে মুসলমান
স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে মুসলিম শিক্ষা ব্যবস্থা করুণ অবস্থায় পড়ে। বারবার বিভিন্ন সার্ভে এবং রিপোর্ট এই বাস্তবতা প্রকাশ করেছে। তবুও কিন্তু মুসলিম সমাজে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নতিকরণে বিশেষ কোনো রকম আলোড়ন দেখা যায় না। সরকার এবং সামাজিক দায়িত্ববান প্রতিষ্ঠান - দুইয়ের মধ্যেই প্রগতিশীল চিন্তাভাবনায় একটি বড় ফাঁক থেকে গেছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইদানিং একটা প্রতিবেদনে ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমানদের করুণ অবস্থা সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। তবুও কিন্তু এই রিপোর্টের ওপর সেরকম কোন মিডিয়া বিতর্ক বা বুদ্ধিজীবীদের আলোচনা সংঘটিত হয়নি, যেহুতু অনেকের কাছে এটি এক অনার্থক বিষয়।
সার্ভেটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে অল ইন্ডিয়া সার্ভে অন হায়ার এডুকেশন (AISHE 2020-2021) দ্বারা প্রস্তুত করা হয়। রিপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (aishe.gov.in) গেলে দেখা যায় যে বিগত কিছু বছরে সার্বিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে মুসলিম সমাজের মধ্যে সেরকম কোনো বিকাশ দেখা যায়নি। উক্ত রিপোর্টকে বিশ্লেষণ করে দ্য হিন্দি সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়: উচ্চ শিক্ষায় মুসলিমরা তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের (SC/ST) থেকে পিছিয়ে।
প্রতিবেদন পরিসংখ্যান
রিপোর্টটির মূল উপসংহার - উচ্চশিক্ষায় সার্বিকভাবে উন্নতি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথমবারের মতো ৪ কোটি ছাড়িয়ে উচ্চশিক্ষায় বর্তমান তালিকাভুক্তির সংখ্যা বেড়ে ৪.১৪ কোটি; যেখানে এস.সি এস.টি এবং ওবিসি যথাক্রমে ৪.২%, ১১.৯% এবং ৪% বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঠিক একই সময়ে উচ্চশিক্ষার জন্য মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের এনরোলমেন্ট বা তালিকাভুক্তিকরণ একেবারে ৮% হ্রাস পেয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হল এই শিক্ষার দুর্যোগে উত্তর প্রদেশের মুসলিমের অংশ ২০%. সারাদেশব্যাপী শুধুমাত্র ৪.৬% মুসলিম শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় যুক্ত হয়েছে। পূর্বের মতো এবারেও শুধুমাত্র একটি রাজ্য মুসলমানদের শিক্ষার জন্য আদর্শ মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে উচ্চশিক্ষায় তালিকাভুক্তিকরণের হার ৪৩ শতাংশ যা দেশের সব থেকে বেশি।
পূর্ব প্রতিবেদন
আয়েশের সার্ভে প্রথম নয়। আগেও অনেক প্রতিবেদনে মুসলমানদের এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু শুধু পরিসংখ্যান মূল্যায়নে সীমাবদ্ধ থেকে যায় রিপোর্টগুলি; উন্নতিকল্পে বাস্তব পদক্ষেপ কেউ গ্রহণ করে না। ২০০৫-এ সাচার কমিটি রিপোর্ট মুসলমানদের সামাজিক অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাগত অবস্থার একই চিত্র তুলে ধরে। তবে কমিটির সুপারিশ যথাযথভাবে কার্যকর করা হয়নি। ফলস্বরূপ দুর্দশার দূরীকরণ নয় বরং আরও ঘনীভূত হয়েছে যা ২০২১-২২-এর রিপোর্টে স্পষ্ট।
শিক্ষা মানব বিকাশের সর্বপ্রথম ভিত্তি। জ্ঞান বিদ্যা বাদ দিয়ে কোন সমাজই উন্নত হতে পারে না। ইসলামী সভ্যতার সৌন্দর্য অগ্রগতি শিক্ষার উপরে টিকে ছিল। প্রথম দিকের মুসলমানেরা ইমান ও ইসলামি নির্দেশনায় উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা, অন্বেষণ এবং পর্যবেক্ষণের জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। তাদের অবদান আধুনিক যুগে বিজ্ঞান ও উন্নতির প্রথম ফাউন্ডেশন স্টোন। কিন্তু এগুলি সবই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের অংশ - পূর্ব প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান।
সমস্যা ও প্রতিকার
শিক্ষার প্রতি ইসলামে ধার্মিক কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। বরং নবী মুহাম্মদের (সা.) মাধ্যমে ইসলাম বাস্তব জ্ঞানের জ্যোতি নিয়ে আরম্ভ হয়। 'ইলম' শব্দ দিয়ে প্রথম ওহীর সূচনা অফুরন্ত জ্ঞান ভান্ডার উন্মুক্ত করে দেয়। ওইসব বর্ণনায় না গিয়ে সংক্ষেপে বলা যায় ইসলামে জ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। হারিয়ে যাওয়া মুসলমানদের ঐতিহ্য জ্ঞান-বিদ্যার নামেই বেশি চিহ্নিত হয়। কিন্তু সমস্যা হল শিক্ষা নিয়ে বর্তমান মুসলিমের মধ্যে সামাজিক বিশেষ কোনো উদ্দীপনা দেখা যায় না। শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে ধার্মিক অধ্যাদেশ মুসলিম সমাজের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে।
অবশ্যই, আন্তর্জাতিক রূপে মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ শিক্ষার ইসলামিকরণ নিয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের মধ্যে জাতীয় স্তরে কেরালার মুসলিম শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় যথেষ্ট উন্নত। উক্ত অগ্রগতির কারণ সতর্ক এবং দায়িত্বশীল জাতির নেতা এবং তাদের দূরদর্শিতার নির্দেশিকা। শিক্ষার এই আলোড়ন সমগ্র মুসলিম জাতির মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উচিত। তবেই মুসলমান এই শোচনীয় অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারে। অবশ্যই শিক্ষ এবং অজ্ঞতার মধ্যে আপাদমস্তক পার্থক্য স্পস্ট।