২০২৩ নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকায় মুসলমান
২০২৩ নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকায় দুজন মুসলমানের নাম স্থান পেয়েছে। কেমিস্ট্রি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য মুঞ্জি গেব্রিয়েল বাওয়েন্ডি এবং শান্তির নামে ইরানের নার্গেস সাফিয়ে মোহাম্মাদি।
রসায়ন ক্ষেত্রে
মুঞ্জি বাওয়েন্ডি, রুশ পদার্থবিজ্ঞানী আলেক্সেই ইয়েকিমভ ও মার্কিন রসায়নবিদ লুইস ব্রুস যৌথভাবে রসায়নে কাঙ্ক্ষিত পুরস্কারটি জিতেন। স্টকহোমে অবস্থিত রয়েল সুইস একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে তাদের ‘কোয়ান্টাম ডটস বা বিন্দুর আবিষ্কার এবং তা সংশ্লেষণের জন্য এই পুরুস্কারে ভূষিত করা হয়’।
কোয়ান্টাম ডটস এবং বাওয়েন্ডি
টেকনোলজির যাত্রায় আরও গতি নিয়ে আসবে এই ত্রয়ী বৈজ্ঞানিকের অবদান। তাদের আবিষ্কার ন্যানোটেকনোলজিকে উদ্দীপ্ত করবে যার বিকাশের জন্য বৈশ্বিক স্তরে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যস্ত। আসলে কোয়ান্টাম ডটস এমন এক অর্ধপরিবাহী যা ন্যানোটেকনোলজির কেন্দ্রীয় উপকরণ। নোবেল সংস্থার স্বীকারোক্তি অনুসারে তারা ন্যানো প্রযুক্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বীজ রোপণ করেছেন।
সহজ ভাষায় কোয়ান্টাম ডট বলতে ঐসকল ক্ষুদ্রতম কণাকে বোঝায় যা পদার্থের আদর্শ নীতিমালা উপেক্ষা করে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তার আকার এবং আকৃতির উপর নির্ভর করে। এসব ক্ষুদ্রতম কণার আবিষ্কারে অন্য দুই বৈজ্ঞানিকের অবদান থাকলেও তার রাসায়নিক বিক্রিয়ার ব্যবহারিক প্রয়োগ ক্ষেত্রে বাওয়েন্ডির আবিষ্কার প্রাথমিক। টেলিভিশন এবং এলইডি থেকে আরম্ভ করে ডাক্তারের টিউমার টিস্যু পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত মানব ঐতিহ্যে কোয়ান্টাম ডটসের ভূমিকা এবার প্রকাশ পাবে।
বাওয়েন্ডি ১৯৬১-তে ফরাসির রাজধানী প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনার পিতা মুহাম্মদ সালাহ বাওয়েন্ডি ক্যালিফর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগে অধ্যাপক ছিলেন। মুঞ্জি বাওয়েন্ডি ১৯৮৮ সালে শিকাগো ইউনিভার্সিটি থেকে পিএচডি করেন। বর্তমানে তিনি ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-এর এক বিশিষ্ট অধ্যাপক।
শান্তি ক্ষেত্রে
নোবেল শান্তি পুরস্কারের দায়িত্ববান সংস্থা রাজধানী অসলোতে অবস্থিত নরওয়েজীয় নোবেল কমিটির বিজ্ঞপ্তি অনুসারে বিশেষ করে ‘ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সার্বিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য’ নার্গেস মোহাম্মদীকে মনোনীত করা হয়। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত, বর্তমানে কারারুদ্ধ নার্গেসের নোবেল জয় ইরান সরকারের ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়া টেনে এনেছে। এক প্রতিবেদন অনুসারে, ইরান সরকার এটিকে নোবেল কমিটির ‘পক্ষপাতমূলক ও রাজনৈতিক’ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে।
অন্যদিকে, নোবেলজয়ী মানবাধিকার কর্মীর মুক্তির দাবিতে প্রচারণা বেড়েই চলেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ইরানের গাস্ত-ই এরশাদ বা নৈতিকতা পুলিশের অভিযুক্ত হেফাজোতে কুর্দিশ মহিলা মহশা আমিনীর মৃত্যু ১৯৮৯ পর সরকার বিরোধী সব থেকে বড় প্রদর্শন তৈরি করে। সেই বিক্ষোভে অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায় প্রদর্শনকারীদের স্লোগান - যন, যিন্দেগি আযাদী যথা মহিলা, জীবন এবং স্বাধীনতা। জেল থেকে নার্গেস মোহাম্মদীকে তা উচ্চারণে শোনা যায়। তাছাড়া, ছাত্রজীবন থেকেই পূর্বেও বিভিন্ন অধিকার আন্দোলনে নার্গেস অগ্রিম স্থানে থেকেছেন।
কিন্তু ইরান এতে সন্তুষ্ট নয়। যেহেতু পুরুস্কারের মাধ্যমে ইরান বিরোধী শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি যে নোবেল শান্তি কমিটি এমন একজন ব্যক্তিকে শান্তি পুরস্কার প্রদান করেছে যে বারবার আইন লঙ্ঘন এবং অপরাধমূলক কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত।” অবশ্যই প্রশ্নের বিষয় - এই ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের নার্গেস মোহাম্মদীকে প্রশংসা করা উচিত, না ইরান ও পশ্চিমা শক্তির লড়ায়ে মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা দরকার।