ঈদুল আযহা সম্পর্কিত কিছু জানার মসআ'লা মসাইল
কোন নির্দিষ্ট পশুকে নির্দিষ্ট দিনে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে জবাই করাকে কুরবানী বলে।
* কুরবানীর গুরুত্ব
কুরবানী হচ্ছে পূর্বপিতা ইব্রাহিম (আ:)-এর সুন্নত। তাছাড়া নবীপাক (স:)এর প্রতি আল্লাহ তাআ'লার আদেশ।
فصل لربك وانحر
"সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য নামাজ পড়ুন এবং কুরবানী আদায় করুন।"
ইবনে মাজা যায়েদ বিন আরকামা (র:) থেকে বর্ণিত করেছেন যে, সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: 'ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই কুরবানী কি?' নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন: 'তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:)-এর সুন্নত।' তাঁরা আবার জিজ্ঞেস করলেন: 'ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই কোরবানিতে আমাদের নেকি কি?' নবী করীম (সা:) ইরশাদ করলেন: 'প্রত্যেক লোমের পরিবর্তে নেকী আছে।'
* কিছু প্রয়োজনীয় মাস'লা মাসায়েল
* কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত হলো: ১- মুসলমান হওয়া অর্থাৎ কোন কাফেরের উপরে কোরবানি ওয়াজিব নয়। ২- মুকিম বা স্থায়ী হওয়া অর্থাৎ কোন ভ্রমণকারী মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। ৩- মালিকে নিসাব হওয়া অর্থাৎ প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা বাদে শরীয়ত নির্ধারিত পরিমাণ সম্পত্তির অধিকারী হওয়া। ৫- আজাদ হওয়া অর্থাৎ কোন দাস বা দাসীর উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। (দুররে মুখতার)
* কুরবানীর সময় হচ্ছে ১০ যিলহাজ সূর্য উদয়ের পর থেকে ১২ তারিখের সূর্যাস্ত পর্যন্ত অর্থাৎ তিন দিন দুই রাত এবং এই দিনগুলিকে আইয়ামে নাহর বলা হয়।
* কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার কারণ হচ্ছে যদি সময় চলে আসে এবং কোন ব্যাক্তির মধ্যে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত গুলি পাওয়া যায় তাহলে সেই ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে। (দূররে মুখতার)
* ছাগলের মালিক সেই ছাগলটির কুরবানীর নিয়ত করলো, বা এমন এক ব্যক্তি যে ছাগল ক্রয় করার সময় কুরবানীর নিয়ত করেনি কিন্তু পরে সে আবার নিয়ত করে; তাহলে এই দুই ক্ষেত্রেই সেই ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী)
* যে ব্যাক্তি ২০০ দিরহাম বা ২০ দিনার অর্থের অধিকারী অথবা সাংসারিক প্রয়োজনীয়তা বাদ দিয়ে ২০০ দিরহাম মূল্য সমপরিমাণ জিনিসের মালিক তাকে মালিকে নিসাব বলা হয় এবং তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী)
* যদি কোন ব্যক্তি নিজের ছেলে অথবা নিজের স্ত্রীর পরিবর্তে কোরবানি আদায় করে এবং তাদের অনুমতি ছাড়াই সে এই কাজটি করে ফেলে তাহলে তাদের বদলে ওয়াজিব আদায় সম্পন্ন হবে না। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী)
* ইমাম নামাজ পড়াল এবং কুরবানী করে নিয়ে জানতে পারল যে ইমাম বিনা অজুতেই নামাজ পড়িয়েছে। তাহলে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে কিন্তু কুরবানী আবার করার প্রয়োজন নেই। (দূররে মুখতার)
* পশুর বয়স রিককা হওয়া উচিত: উট - ৫ বছর, গরু - ২ বছর, ছাগল - ১ বছর। যদি নির্ধারিত বয়স কম হয় তাহলে কুরবানী জায়েয নয়। মোষ গরুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং দুম্বা ও ভেড়া ছাগলের মধ্যে পরিগণিত। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)
* যদি গরুর সাত ভাগের কোনো এক অংশীদারের নিয়ত শুধুমাত্র মাংস অর্জন করা হয় তাহলে কোন ব্যক্তিরই কুরবানী হবে না। (রদ্দুল মুখতার)
* এটি মুস্তাহাব যে কুরবানীর পশু সুন্দর, বড়ো এবং মোটা স্বাস্থ্যসম্পন্ন হওয়া।
* পশু জবাই করার আগে ছুড়িটি ধার করে নেওয়া উচিত। যতক্ষণ পর্যন্ত জবাইকৃত পশু ঠান্ডা না হয়ে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত তার হাত, পা এবং রগ ইত্যাদি কাটা জায়েয নয়।
* এটা উত্তম যে মালিক তার পশু নিজেই জবাই করে।
* যদি কোন ব্যক্তি মানত মেনে কুরবানী করে, তাহলে সে পশুর মাংস নিজে খেতে পাবে না। বরং সে তা সদকা করে দিবে।
* কুরবানীর চামড়া বা মাংস বা পশুর কোন অংশ জবাইকারীকে শ্রম বা মজুরি হিসেবে দেওয়া জায়েয নয়। (হিদায়া)
*তাকবীরে তাশরীক
الله أكبر، الله أكبر،لا إله إلاالله والله أكبر،الله أكبر ولله الحمد.
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ্
অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান৷ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আল্লাহ মহান৷ আল্লহ মহান এবং সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য৷