কুরবানি কি নিছকই মাংস খাওয়া? একটি বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা
কোরবানি হল হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নাত, যা ইব্রাহিম ও ইসমাইল (আ.)-এর প্রাচীন পরীক্ষা থেকে প্রচলিত, কিন্তু সেটা আমার বিষয় নয়। বর্তমানে মুসলিম সম্প্রদায়ের কোরবানিকে পশুহত্যা বলা হচ্ছে কে? এটা কি ঠিক? মুসলমানরা কি কেবল মাংস খাওয়ার জন্য কোরবানি করে? যদি না হয়, তাহলে মুসলমানরা কেন কোরবানি করে? ভারত ও বাংলাদেশে মূলত কোরবানিতে গরু জবাই করা হয়, কিন্তু হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা গরুকে মা হিসেবে বিবেচনা করে, তাই তারা কোরবানি নিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি করে এবং এমনকি বলে যে কোরবানি পশুহত্যার একটি রূপ। এবং এমনও অনেকে আছেন যারা বলেন যে কোরবানিতে অনেক পশুহত্যার ফলে জীববৈচিত্র্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে। এই গুজব কি সত্য? নীচে আলোচনা করা হল।
কোন দিনে কোরবানি করা হয় এবং কীভাবে করা হয়?
হিজরি ক্যালেন্ডারের দ্বাদশ মাস হল জিলহিজ্জাহ। এই মাসের ১০ তারিখে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উল আযহা (মুসলমানদের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈদ) উদযাপন করে। এই দিনে মুসলমানরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে সমবেত হয়ে দুই রাকাত নামাজ (ফরজ) আদায় করে। নামাজের পর তারা একে অপরকে সালাম করে এবং আল্লাহর পথে তাদের পশু জবাই করে। মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়, এক ভাগ গরীব ও মিসকিনদের জন্য, এক ভাগ প্রতিবেশীদের জন্য এবং শেষ অংশ নিজেদের জন্য। এই পশু জবাই করার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর প্রতি তাদের ভক্তি প্রমাণ করা।
সাধারণ মানুষের জন্য কোরবানির উপকারিতা
কোরবানির মাংস মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়, এক ভাগ দরিদ্রদের জন্য, এক ভাগ প্রতিবেশীদের জন্য এবং শেষ ভাগ নিজেদের জন্য। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা দরিদ্র অথবা পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে, তাই অনেকেই মাংস খেতে পারেন না, কিন্তু কোরবানির কারণে তারা মাংস পান, তা ছাড়া, অনেক আদিবাসী এবং উপজাতি মানুষ সেদিন এটি পান। পশুর চামড়া বিক্রি করে সেই টাকা দরিদ্রদের দান করা হয়, যার ফলে অনেক দরিদ্র মানুষ সাহায্য পায় এবং অনেক উপকৃত হয়।
হিন্দুরা কোরবানির বিরুদ্ধে কেন?
বর্তমানে, ভারতে বিভিন্ন ধর্মের ১৩০ কোটি মানুষ বাস করে। এই দেশের সংবিধান অনুসারে, তারা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারে। কিন্তু এখন যার বিজেপি সরকার বিভিন্নভাবে নিয়ম লঙ্ঘন করছে এবং মুসলমানদের উপর অত্যাচার করছে। কখনও মসজিদ, মাদ্রাসা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়, কখনও ওয়াকফ বিল পাস করা হয়, কখনও সিএএ এবং এনআরসি পাস করা হয় যেন মুসলমানরা এই দেশের মানুষ নয়। এই অত্যাচারী মোদী সরকার অনেক জায়গায় গরু জবাই নিষিদ্ধ করেছে। যেমন ইউপি সরকার। আর দেশের অনেক হিন্দুত্ববাদী দল এই বলিদান এবং গোহত্যার জন্য মুসলিমদের বিরোধিতা করে, শুধু এই কারণে যে, গরু কি তাদের মা। তাদের হৃদয় এতটাই শিরকে রঞ্জিত যে তারা অন্ধ বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে এবং গরুকে তাদের মা হিসেবে পূজা করছে। কিন্তু যদি গরু তাদের মা হয়, তাহলে মুসলমানদের গরু জবাই করতে তাদের কোন সমস্যা কেন? ভারতে অনেক গরুর মাংস রপ্তানিকারক কোম্পানি আছে, যার মালিক একজন হিন্দু। কথাটা অবিশাস্য হলেও এটাই সত্য । ২০১৫ সালে, দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রাজিন্দর সাচার মন্তব্য করেছিলেন যে ভারতের ৯৫% গরু ব্যবসায়ী হিন্দু সম্প্রদায়ের। এই কোম্পানি কে জানে কত গরু জবাই করে, আর হিন্দু সমাজে কোনও সমস্যা নেই, অন্যদিকে, মুসলমানরা যদি কোরবানি করে, তাহলে বলা হয় যে তাদের মা জবাই করা হচ্ছে।
কিছু গোমাংস রপ্তানিকারি কোম্পানি জাদের মালিক হিন্দু
- আল-কারিব এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড
মালিকঃ শতিশ সাবরওয়াল ও আতুল সাবরওয়াল।
অবস্থানঃ হায়দ্রাবাদ ,তেলেঙ্গানা।
- আরাবিয়ান এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড
মালিকঃসুনীল কুমার।
অবস্থানঃ মুম্বাই,মহারাষ্ট্র।
- এম কে আর খান ফ্রজেন ফুড এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড
মালিকঃ মদন আবোট।
অবস্থানঃ উত্তর প্রদেশ।
এই কোম্পানিটি ভারতের বৃহত্তম গরুর মাংস রপ্তানিকারক কোম্পানি। হাজার হাজার গরু জবাই করলেও হিন্দুরা তা লক্ষ্য করে না; তারা কেবল মুসলমানদের কোরবানি লক্ষ্য করে।
পশুর সংখ্যা হ্রাস
যদি এটাই সত্য হয় যে কোরবানি করলে আমাদের পরিবেশে গরুর সংখ্যা কমে যায়, তাহলে আমাদের দেশে গরুর অভাব কেন লক্ষ্য করা যায় না? অন্যদিকে, আমরা খুব কমই কুকুর বা শূকর হত্যা করি কিন্তু তবুও আমরা তাদের প্রায় দেখতে পাই না। কেন? এটাই আল্লাহর কুদরত। এখন, ভালো খামার এবং উন্নত ব্যবস্থার কারণে, এটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুনরুদ্ধার করা হয়।
জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি রোধে কোরবানিকারীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ
১. দূষণ করবেন না: কোরবানির দিনে পশু জবাই করা থেকে শুরু করে বিতরণ করা পর্যন্ত, পরিবেশের কোনওভাবেই ক্ষতি বা দূষণ করা উচিত নয়। আমরা যদি দূষণ করি, তাহলে উপরোক্ত ক্ষতি হতে পারে। দূষণ বৃদ্ধি পেলে অনেক রোগের সম্ভাবনা রয়েছে।
২. নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করা: এখানে-সেখানে পশু জবাই করার পরিবর্তে, একটি নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করা। বিশেষ করে জনসাধারণের স্থানে নয়।
৩. অন্যদের ক্ষতি না করা: আমরা মুসলিম, ইসলাম আমাদের শান্তির শিক্ষা দেয়, তাই আমাদের জন্য অপরিহার্য যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য আমাদের কুরবানি করার ইচ্ছা নষ্ট না হয়।
৪. সচেতনতা: আপনার আশেপাশের লোকজনকে এই সমস্ত বিষয়ে অবহিত করতে সক্ষম হোন যাতে তারা এই ধরণের কিছু না করে।