সমাজে নারী শিক্ষার গুরুত্ব
ভূমিকা
“আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দিব” নেপোলিয়ান বোনাপোট এই উক্তিটি আমাদের সবার জানা। আধুনিক সমাজে নারী ও পুরুষ সকলেরই অধিকার সমান ও অভিন্ন। একজন শিক্ষিতই নারী একটি আদর্শ পরিবার ও সমাজ গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে । অতএব ইসলাম ধর্ম শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। হুজুর (সঃ) ইরশাদ করেছেন- “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর অপরিহার্য”। যথাযথভাবে কোরআন পাকে ইরশাদ রয়েছেঃ- “পড় তোমার প্রভুর নামে”। কারণ শিক্ষা ছাড়া আল্লাহকে জানা ও বোঝা অসম্ভব। তাই মানব জাতির সমগ্র কল্যাণের কথা রেখে নারী শিক্ষার গুরুত্ব।
নারী শিক্ষা সমাজে গুরুত্ব কেন ?
নারী শিক্ষা হলো সমাজের মূল উৎস যা মেয়ে ও মহিলাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, তৃতীয় এবং স্বাস্থ্য শিক্ষার অবস্থাকে বোঝায়। সারা বিশ্বে ৬৫ মিলিয়ন মেয়ে স্কুল থেকে অন্তর্হিত রয়েছে। বিশ্বের সব দেশকে তাদের নারী শিক্ষার অবস্থার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ নারীরা দেশের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
যদি আমরা সমাজকে বৃক্ষ হিসাবে বিবেচনা করি, তবে পুরুষরা মূল কাণ্ডের মতো বৃক্ষকে মুখামুখি হতে সহায়তা করে। এবং নারী তার শিকড়ের মতো আঁকড়ে বৃক্ষটিকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলে, শিকড় যত মজবুত হবে বৃক্ষ তত শক্তিশালী হবে। তার শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে পড়বে এবং সমাজকে অতি সৌন্দর্যময় করে তুলবে।
নারী সমাজে অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে, যেমন মা, স্ত্রী, বোন, নার্স ইত্যাদি। নারীরা সঠিকভাবে সামাজিক কাঠামোকে বুঝতে সক্ষম হয়। একজন শিক্ষিত নারী, নিশ্চয়ই তার ছেলে ও মেয়ে শিক্ষিত হবে এবং এই সমাজকে সঠিকভাবে প্রচারিত করবে। নিম্নলিখিত বিশেষ কিছু গুনকারক তথ্য দেওয়া হল-
জীবনযাত্রা উন্নতমান:-
একটি পরিবার উন্নতি হওয়ার জন্য নারীদের শিক্ষা অতি প্রয়োজন। একজন শিক্ষিত মা, পিতার মতো ভালো উপার্জন করবে। পরিবারের আর্থিক সমস্যা দূর করে উন্নতমান পরিবার গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। একই ছাদের নিচে পিতা-মাতা আয়ের জীবনযাত্রাকে উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে দিবে। এবং শিশুদের জন্য সুশিক্ষা ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে।
উন্নত স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি :-
মহিলারা পুরুষদের তুলনায় পরিবারের স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ের উপর বেশি উদ্বিগ্ণ। এমনকি কর্মজীবী নারীরা তাদের পরিবারের স্বাস্থ্যের উপর কোন রকমের অপস করে না। পুরুষরা পরিবারের উপর কোন রকমের চিন্তা না করে কাজে ব্যস্ত থাকে। কারণ তারা জানে যে মহিলারা পরিবারকে যত্ন করে গড়ে তুলতে কোন ত্রুটি রাখেনা। মহিলারা তাঁর পরিবার ও সন্তানদের উপর যথাযতভাবে পরিচর্য। তাই আমাদের উপর অপরিহার্য যে, আমরা তাদেরকে শিক্ষিত করে তুলি। যাতে জাতীয় স্বাস্থ্যর ঝুঁকি গুলি চিনতে পারে এবং সেগুলি দূর করার জন্য বিচক্ষণতার সাথে কাজ করার জন্য যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হতে পারে।
মর্যাদা এবং সম্মান:-
একজন মহিলার সম্মান তার ঘরে। এবং একটি সমাজ তাদের কাজের ও শিক্ষার উপর ভিত্তি করে সম্মানকে বিচার করে। সেইরূপ তাদের সম্মানকে রক্ষা করতে পারবে যখন সে তার পরিবারের সম্মানকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে। একজন অশিক্ষিত মহিলা নিজের মর্যাদার জন্য কথা বলার অভাব থাকতে পারে। কিন্তু একজন শিক্ষিত মহিলা নিজের মর্যাদার জন্য কথা বলার কোনো রকমের অভাব থাকেনা বরং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে।
স্বনির্ভতা:-
শিক্ষা নারীদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তাঁরা নিজে বেঁচে থাকার পাশে পাশে সন্তানদের ও বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। তাঁরা শিক্ষিত হওয়ার ফলে পুরুষদের মতো সঠিকভাবে পরিবারের প্রয়োজনও সম্পুন্ন করে । একজন শিক্ষিত নারী অন্যায়ের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসবে। সমাজে ভালো মন্দর বিচার করতে পারবে। এবং একটি উপযুক্ত সমাজ গড়ে তুলবে।
নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ রোধ করা:-
নারীদেরকে শিক্ষিত করে, অনেক সামাজিক কুফল ও নারীর প্রতি অপরাধ সহজে দূর করা যাবে। শিক্ষিত নারীর সমাজকে কাঠামো ভাবে শক্তিশালী করে তুলবে। এবং একজন শিক্ষিত নারী সমাজের বিভিন্ন রকমের ভূমিকা পালন করে। ও সদস্যদের চিন্তাভাবনা ও বিশ্বাসকে প্রভাবিত করে। পরিবারের কোন মেয়ে বা মহিলার উপর অপরাধে চুপ থাকবে না বরং তার বিরুদ্ধে এগিয়ে আসবে। আর একজন শিক্ষিত নারী কখনো তার সন্তানকে হত্য করতে পারে না যা প্রায় এই সমাজে দেখতে পাওয়া যায়। এবং সে সচেতন থাকবে যে শিশুকে হত্যা করা আইন অনুযায়ী অপরাধ ও যে কোনো ধর্ম দ্বারা নিষিদ্ধ।
মৃত্যুর হার কমেছে:-
একজন শিক্ষিত মহিলা তার সন্তানদের উপর বেশি চিন্তাভাবনা করে। তার প্রতি যত্ন, সঠিক স্বাস্থ্য খাদ্য দিয়ে থাকে। যার ফলে শিশুর মৃত্যুর হার কমতে পারে। একটি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে যে ১.৫ মিলিয়ন শিশু সুরক্ষিত শুধুমাত্র মেয়েরা মাধ্যমিক পাস করার কারণে।
নারী সামাজিক বর্জন রোধ করে
যে মেয়ে গুলো আজ স্কুলে যায় না সম্বাবিত তারা নিজের বাড়ির পাশাপাশি অন্যান্য বাড়িতে গৃহস্থলীর কাজে সামান্য টাকার জন্য গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকে । এর ফলে তারা বিভিন্ন অলজ্জিত কাজে্র সম্মখিন হয়। এবং সারা জীবন অসম্মানিত পেশায় লেগে থাকে, তারা এই সমাজ থেকে ও সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই ক্ষেত্রে একজন শিক্ষিত মহিলা এই সমস্ত কিছুর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
উপসংহার:- একটি সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য নারী শিক্ষা খুবই প্রয়োজন ও গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম অঞ্চলের মেয়েরা উচ্চশিক্ষার আশায় পারি জমায়। কিন্তু সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা ও আর্থিক দিক থেকে ছাত্রীদেরকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তাই এইসব দূর করে আমাদের নিজেদের মধ্যে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। এবং তাদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আর এজন্য নারীকেও এগিয়ে আসতে হবে।