ইথিওপিয় মুসলিমদের বিবাহপ্রথা এবং ঐতিহ্য

ইথিওপিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের বিয়ের প্রথা ও ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে, যদিও ইথিওপিয়ার অঞ্চল এবং উপজাতির মধ্যে বিবাহের প্রথা এবং প্রচলনগুলি কিছুটা আলাদা তবুও মুসলমানরা বিবাহে অনুসরণ করে এমন সাধারণ দিকগুলির সাথে কিছু মিল রয়েছে। আর শুধু ইথিওপিয়া নয় সারা বিশ্বে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান যাতে পরিবার আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবদের সম্মেলন হয়। 

বাগদান 

বিয়ের আগে দুই পরিবারের মধ্যে একটি বাগদানের ব্যাবস্থা করা হয় যাতে তাদের মধ্যে উপহার বিনিময় করা হয় এবং কনে মোহর এবং বিয়ের শর্ত ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করা হয় কনেকে যা মোহর হিসেবে দেওয়া হয় তা অর্থ, গবাদি পশু বা অন্যান্য মূল্যবান উপহার হতে পারে। 

বিয়ের অনুষ্ঠান 

বিয়ের অনুষ্ঠানটি বেশিরভাগ বাড়িতে বা একটি বলরুমে অনুষ্ঠিত হয় এবং অনুষ্ঠানে নানা রকমের খাবারের আয়োজন করা হয়, এবং তাতে তাদের সমাজে প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী নাচগানের উৎসব অন্তর্ভুক্ত থাকে। 

সমাজপ্রচলিত ও ইসলামিক বিবাহ

বিবাহ পদ্ধতিতে ইথিওপিয়ায় প্রচলিত সামাজিক নিয়মানুসারে বিবাহ সম্পন্ন করা হয়, তারপর মসজিদে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যাতে বিয়ের ঘোষণা, কোরআন পাঠ এবং বিয়ের বিষয়ে একটি খুতবা, এর গুরুত্ব এবং স্বামী স্ত্রীর কর্তব্য এই সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। ইথিওপিয়ান সমাজে বিবাহ হল বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে জড়ো হওয়ার একটি সুযোগ এবং এখানে বিয়ের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে বেশ কয়েক দিন উদযাপন চলে। 

বিবাহের পোশাক আশাক    

বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে বর এবং কনেকে সাবধানে প্রস্তুত করা হয়। কনেকে একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ানো হয় যা উজ্জ্বল রঙের এবং সুন্দর হয় এবং সাজানো হয় ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কার দিয়ে অন্যদিকে বর সাধারণত একটি সাংস্কৃতিক পোশাক পরে এবং সেটি অনুষ্ঠানের জন্য নানাভাবে ডিজাইন করা হতে পারে। 

ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান 

বিবাহের সাথে ইসলামিক আচার অনুষ্ঠান রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে কোরআন পাঠ, প্রার্থনা এবং ধর্মীয় ভাষণ কারণ ইসলামী মূল্যবোধ এবং শিক্ষা অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইথিওপিয়ান মুসলিম সম্প্রদায়ের বিবাহের রীতিনীতি সম্পর্কে কিছু অতিরিক্ত বিবরণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে, 

আত্মীয়তার বিয়ে- পরিবারের সদস্যদের এবং আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হওয়াকে কখনও কখনও ইথিওপিয়ান সমাজে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়, যেমন “আরগোবা ইলেভি” উপজাতিতে পরিবারের মধ্যে বিয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে অবদান রাখে। 

ঐতিহ্যবাহী বিয়ের অনুষ্ঠান- ইথিওপিয়ান মুসলমানরা ঐতিহ্যবাহী বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিখ্যাত, যার মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান এবং সঙ্গীত, যাতে তাদের সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত হয়। 

বিবাহের ভোজ- ইথিওপিয়ান মুসলিম বিবাহগুলিতে বিবাহের সময়, একটি প্রধান খাবার সহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়, যেমন “ডোরো উট” (মুরগির মাংস) এবং ভাত দিয়ে ভরা গরুর মাংস। 

ইথিওপিয়ার গ্রামীণ মুসলিম বিবাহ 

ইথিওপিয়ার গ্রামীণ মুসলিম বিবাহ শহুরে এলাকার বিবাহের থেকে কিছুটা আলাদা, যেখানে সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় রীতিনীতি ইথিওপিয়ার গ্রামীণ সম্প্রদায়ের বিবাহ প্রক্রিয়ার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বিবাহের জন্য পাত্র পাত্রী গ্রামাঞ্চলে সাধারণত পিতামাতাদের দ্বারা বাছাই করা হয়, যেখানে পিতামাতারা আলোচনা করে এবং বিবাহের জন্য শর্ত এবং প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে। 

বিবাহ একটি মুসলিম ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত, এবং এটি স্থানীয় মসজিদে সংগঠিত হয়। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পবিত্র কোরআন পাঠ, বিবাহের খুতবা পাঠ এবং দুই কনে ও বরের সাক্ষীদের মধ্যে বিবাহ চুক্তি বিবিময়। বিয়ের পরে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত করা হয় যাতে দুটি পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীরা অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং তাতে বিবাহের ভোজ পরিবেশন করা হয়। 

এটা উল্লেখ করা উচিত যে এটি গ্রামীণ ইথিওপিয়ার বিবাহ প্রক্রিয়ার একটি সাধারণ বিবরণ এবং স্থানীয় সংস্কৃতির রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের উপর নির্ভর করে কিছু বিবরণ এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে আলাদা হতে পারে। উপরন্তু ইথিওপিয়ার গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলিতে বিবাহ প্রক্রিয়া কিছু অতিরিক্ত রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য দ্বারা চিহ্নিত করা যেতে পারে উদাহরণস্বরূপ প্রকৃত বিয়ের আগে একটি বাগদান পার্টির আয়োজন করা যেতে পারে, যেখানে দুই পরিবারের সদস্যরা এবং বন্ধুরা অভিনন্দন এবং উপহার বিনিময় করতে মিলিত হয়।  

ফুল এবং রঙিন সজ্জা গ্রামীণ বিবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেখানে বিবাহের স্থানটি ফুল, উজ্জ্বল কাপড় এবং ঐতিহ্যবাহী সজ্জা দিয়ে সজ্জিত করা হয় এবং বর ও কনে সুন্দর সূচিকর্ম দ্বারা সজ্জিত রঙিন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে। 

আদ্দিস আবাবায় মুসলিম বিবাহের রীতি

রাজধানী আদ্দিস আবাবায় মুসলিম বিয়ে শহরের মধ্যে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যের দ্বারা প্রাভাবিত হয়। আদ্দিস আবাবার মুসলিম সম্প্রদায়গুলি বিবাহ পরিচালনা করার সময় বজায় রাখে এমন বেশ কিছু প্রথা ও ঐতিহ্য রয়েছে। সাধারণত, বিয়ের প্রক্রিয়ার জন্য দুই পরিবারের বিশেষ করে নবদম্পতির বাবা মায়ের অনুমোদন এবং সমর্থনের প্রয়োজন হয়। বিবাহ পারিবারিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে বা বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়দের দ্বারা দেওয়া হতে পারে। কখনও কখনও একজন যুবক এবং একজন যুবতি তাদের জীবনে নিজেরাই নিজেদের জীবনসঙ্গী বেছে নেয়।

আদ্দিস আবাবায় মুসলিম বিয়ের প্রক্রিয়ায় সাধারণত প্রকৃত বিয়ের আগে বাগদান পার্টির আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে, নবদম্পতির পরিবারের মধ্যে উপহার আদান প্রদান করা হয় এবং সামজিক যোগাযোগ ও বাগদানের ঘোষণার জন্য ছোট ছোট অনুষ্ঠান রাখা হয়। 

বিবাহের অনুষ্ঠানটি একটি বড় হল বা ব্যাঙ্কোয়েট হলে আয়োজিত হয়, যেখানে অনেক পরিবার এবং বন্ধুরা উপস্থিত থাকে এবং ঐতিহ্যবাহী ইথিওপিয়ান খাবার পরিবেশন করা হয়, এবং নানা রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিবেশন করা হয় অনুষ্ঠানের উদযাপনের জন্য। 

বিবাহের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পবিত্র কোরআনের আয়াত পাঠ করা এবং বিবাহের খুতবা প্রদান। এবং নবদম্পতি ও বিবাহের সাক্ষীদের মধ্যে বিবাহ চুক্তি বিনিময়ও হতে পারে। আদ্দিস আবাবায় বিয়েতে সঙ্গীত, নৃত্য এবং আরবি গানে ভরা ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক শিল্পের সাথে উদযাপন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও ইসলামিক গান বাজানো হয় এবং অতিথিরা আনন্দের ও খুশির পরিবেশ তৈরি করতে নাচ গানে অংশ নেন। এবং এইভাবেই ইথিওপিয়ার মুসলমানদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।  

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter