হাজী কি আল্লাহর অতিথি ?

ইসলাম ধর্ম পাঁচটি আরকান বা স্তম্ভের উপরে ভিত্তি করে স্থাপিত রয়েছে। তার মধ্যে হজ একটি অন্যতম কারন হজ সবার উপরে ফরয নয় কিন্তু বাকি চারটি আরকান সমস্ত মুসলমানদের উপরে ফরজ। হজ ৯ হিজরিতে ফরজ করা হয়। হজ শুধুমাত্র তাদের উপরে ফরজ যে সব ব্যাক্তি শারীরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে সক্ষম। এটি জিবনে মাত্র একবার আদা করা ফরয ।হজ আদা করার জন্য কিছু সময় নির্ধারিত করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে হিজরি সনের ১২তম মাসের ৮-১২ তারিখ।উমরাহ হজ এই সমস্ত দিন ব্যাতিত বছরের যে কোন সময়ে আদা করা হবে। কিন্তু হজ শুধুমাত্র এই সময়েই পালন করতে হবে তবেই আসল হজের সওয়াব উপার্জন হবে। এই মাসে যে ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালার বায়তুল্লাহকে হজ করার নিয়ত বা উদ্দেশ্য করল। তাহলে সে তার স্ত্রীর সঙ্গেও নিরাভরণ করতে পাবেনা । প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেছেনঃالحج المبرور ليس له جزاء الا الجنةঅর্থাৎ মাকবুল হজের কোন ছওয়াব নেই ব্যাতিত জান্নাত। যে সমস্ত ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টো লাভ করার  উদ্দেশে হজ পালন করল এবং সেই হজটি মহান রব্বুল আলামিন কুবুল ও গ্রহন করে নিলেন তাহলে সেই ব্যাক্তির ঠিকানা শুধুমাত্র জান্নাত। হজ হচ্ছে একটি গুরুত্তপূর্ণ ইবাদাত। এটি শুধু ইবাদাতি নয়, সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদের  ঐক্যবধের মহা সম্মেলন। সারা বিশ্বের মুসলিমরা এই হজের জন্য একত্রীত হয়। এই ধরনের ঐক্যতা আর অন্য কোন ধর্মে দেখতে পাওয়া যায় না। তাই হজকে বিশ্ব মুসলিমের মহা ঐক্যের সম্মেলন বা মহা মেলনের মহা সম্মেলন কেন্দ্রও বলা হয়। 
আবু হুরারিরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেছেনঃ وفد الله ثلاثة الغازي والحاج والمعتمر   অর্থাৎ আল্লাহ রব্বুল আলামিনের অতিথি হচ্ছে তিনজন তার মধ্যে প্রথম আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় যে ব্যাক্তি যুদ্ধ করে, দ্বিতীয় হজকারি এবং তৃতীয় উমরাহ হজকারি। মহান আল্লাহ রব্বুল তায়ালা হজ কে এত মর্যাদা দিয়েছেন যে কুরআন শরিফে তার ফযিলতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বিভিন্ন সুরাতে ভিন্ন ভাবে আলাদা আলাদা আয়াত নাযিল করেছেন। যে মুসলিম ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় তিনার সন্তষ্টী লাভ করার উদ্দেশে হজ করল এবং কোন প্রকার কুকর্ম কাজ বা ঝগড়া করল না। তাহলে হজ করার পর তার সমস্ত গুনাহকে এমন ভাবে মোচন করা হবে যেন সে আজকেই জন্ম নিয়েছে। কারণ একটি শিশু যখন জন্ম গ্রহন করে তখন সে নিস্পাপ থাকে। 
ইবন উমার থেকে বর্ণিত যে মুহাম্মাদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে বর্ণনা এবং ইরশাদ করেছেনঃ رسول الله صلى الله عليه و سلم  عن ابن عمر قال,قال
فسللم عليه و صافحه و مره ان يستغفر لك قبل ان يدخل بيته فانه مغفور له اذا لقيت الحاج
অর্থ হল যদি তোমরা কোন হাজিকে হজ আদা করে ফিরে আসবার সময় সাক্ষাত কর তাহলে তাকে সালাম জানাও এবং মুসাফাহ কর ও তোমার জন্য মাগফিরাতের দুয়া করতে বল তাদেরকে তাদের গৃহে প্রবেশ করার পূর্বে। কারণ তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। মুসাফাহ করা হচ্ছে নবীজির সুন্নাত। হজ শুধুমাত্র একটি তীর্থযাত্রায় নয় বরঞ্চ এটি হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তষ্টী লাভ করার একটি উপক্রম। হজ বাকি চারটি আরকানের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা কারণ বাকি চারটি আরকান, নামায, রোজা, যাকাত, কালিমায়ে তাইয়েব সবার উপরে ফরয করা হয়েছে অন্যদিকে হজ শুধুমাত্র তাদের উপরে ফরয করা হয়েছে যারা তা আদা করতে সক্ষম। 
মহান রব্বুল আলামিন সুরা আল ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াতে ব্যাখা করেছেন যে কাদের উপরে হজ করা ফরয।
و لله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيل      

এর মানে হচ্ছে যে, “যে সমস্ত ব্যাক্তি মহান আল্লাহ তায়ালার ঘরকে ( বায়তুল্লাহকে) যিয়ারত করতে সক্ষম তাদের উপরে আল্লাহ তায়ালার ঘরকে যিয়ারাত করা ফরয”। অর্থাৎ যে সমস্ত ব্যাক্তি আর্থিক ও শারীরিক দিক থেকে মক্কা নগরিতে গিয়ে কাবা শরিফকে যিয়ারত করতে সক্ষম তাদের উপরে অপরিহার্য হজকে আদা করা। কারণ এটি হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ বা হুকুম। হজ করার জন্য যে গৃহের চারপাশে চক্কর লাগানো হয় সেই ঘরটি হচ্ছে কাবা শারিফ বা বায়তুল্লাহ। এই কাবা ঘরটি আজ থেকে প্রায় ৫০০০ হাজার বছর পূর্বে আবুল আম্বিয়া ও একত্ববাদের নবী হযরাত ইব্রাহিম (আঃ) দ্বারা নির্মাণ করা হয়। 

  عن عاءشة قالت استاذنت النبي صلى الله عليه و سلم في الجحاد فقال جحاد كن الحج
অর্থাৎ---
 “হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি নবীজির থেকে যুদ্ধ করার অনুমতি চাইলাম তখন তিনি বললেন তোমাদের জিহাদ হচ্ছে হজ” কারন মেয়েদের হজ করতে পুরুষেদের তুলনায় অনেক কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। জন্য মেয়েদের হজকেই জিহাদ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। জিহাদ হচ্ছে ইসলাম ধর্মের একটি অন্যতম ইবাদত যা হজের তুলনায় বেশি। কারন জিহাদে আল্লাহর রাস্তায় নিজের ধন দ্বারা ও প্রানের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করতে হয়। عن ابن عباس قال من كان له مال يبلغه حج بيت ربه او يجب عليه فيه الزكوة فلم يفعل سال الرجعة عند الموت
হযরত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত” যে ব্যাক্তির কাছে এত পরিমাণ ধন ও সম্পদ আছে যে তার উপর হজ আদা করা ফরজ বা এত পরিমাণ ধন, সম্পদ রয়েছে যে তাকে যাকাত দেওয়া ওয়াজিব কিন্তু সে ব্যাক্তি তার হক আদা করল না তাহলে মৃত্যুর সময় দুনিয়াতে আবার ফিরে আসার জন্য চাইবে”।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter