খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (রাহঃ) এর সাজ্জাদা নাশীন ডঃ সৈয়দ শাহ খুসরো হুসাইনি (রাহঃ) এর ইন্তেকাল
হযরত খাজা বন্দে নওয়াজ দরগাহ শরীফের সাজ্জাদা নাশীন ডঃ সৈয়দ শাহ খুসরো হুসাইনি (৭৯), ৬ নভেম্বর ইহকাল থেকে পরলোকগমন করেন। বৃহস্পতিবার মাগরিব বাদ ওনার জানাজা নামায সম্পন্ন হয়। গুলবার্গ দরগা প্রাঙ্গনে তিনাকে দাফন করা হয়। তিনার মৃত্যু সারা ভারতজুড়ে তাঁর পরিবারের সদস্য, অনুসারী ও ভক্তদের উপর শোকের ছায়া ফেলেছে। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে কে ছেড়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে বিদায় নেন।
ডঃ খুসরো সুফিবাদ, ইসলামি শিক্ষা প্রসার এবং ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত মানুষের সেবায় নিজেকে নিমজ্জিত রেখেছিলেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইসলামী শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতার একটি সম্মানিত কেন্দ্র হয়ে উঠেছে মরহুমের পরিবার। তিনিও এই উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জীবদ্দশায় ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন তিনি।
ডঃ খুসরো হুসাইনী চিশতী ও সুফি ঐতিহ্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন বিখ্যাত সুফি সাধক হযরত খাজা বান্দা নেওয়াজ (রাহঃ)-এর ২৩তম বংশধর। ডঃ খুসরো কেবল তার গভীর আধ্যাত্মিকতার জন্যই নয়, তার বুদ্ধিবৃত্তিক অবদানের জন্যও ব্যাপকভাবে সমাদৃত ছিলেন। একাডেমিক আইনজীবী হিসেবে তিনি কে-বি-এন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সর্বদা আধুনিক প্রযুক্তি এবং সুফি ঐতিহ্যের মধ্যে ব্যবধান মেটাতে কাজ করেছেন। বর্তমান প্রজন্মকে সুফি ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি জাতীয় সম্মেলন ও অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। তার মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সৈয়দ শাহ আলী হুসেইনী সাজ্জাদা নাশীন উপাধি গ্রহণ করেন। ডক্টর সৈয়দ শাহ খুসরো হুসাইনী তার বিশিষ্ট পিতা মরহুম সাজ্জাদা নাশীন হযরত সৈয়দ মুহাম্মাদ আল হুসাইনী এপ্রিল ২০০৭ সালে সফল ভাবে খ্যাতিমান লাভ করেন।
শিক্ষা
ডঃ সৈয়দ শাহ খুসরো হুসাইনী কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেন। গবেষণা কাজের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বেলফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন করেন।
অবদান
তিনার নির্দেশনায়, গুলবার্গ শরীফ একটি বিশেষ স্থানে পরিণত হয়েছিল যেখানে লোকেরা শান্তি খুঁজে পেতে এবং নতুন জিনিস অর্জন করতে পেতেন। গুলবার্গ দরগা খাজা বান্দা নওয়াজ বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি স্কুল চালু করতে সাহায্য করেছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অনন্য কারণ এটি ভারতের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যা একটি দরগাহ দ্বারা পরিচালিত হয়। আব্বাজান নামে একজন সদয় ব্যক্তি, যিনি খুসরো হুসাইনির বন্ধু ছিলেন, ৫০ বছর আগে এই স্কুলটি শুরু করেছিলেন এবং সময়ের সাথে সাথে তিনি এটিকে আরও বড় এবং উন্নত করেছিলেন।
তিনি ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে খাজা এডুকেশন সোসাইটিতে সাংগঠনিক, প্রশাসনিক এবং কার্যকরী পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছিলেন এবং বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলিকে সম্প্রসারিত করেছিলেন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে কালাবুরাগীতে খাজা বন্দনাওয়াজ ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (কে-বি-এন-আই-এম-এস) প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিখুঁত সংকল্প এবং পরিশ্রমের সাথে, তিনি আগস্ট ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে খাজা বন্দনাওয়াজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
অল-ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল-বোর্ডের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং খাজা বান্দা নওয়াজ ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি ইসলামী শিক্ষা ও সুফি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তার প্রশাসনিক দক্ষতা ছাড়াও, ডঃ সৈয়দ শাহ খুসরো হুসাইনী সুফিবাদ সম্পর্কে তার গভীর এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ বোঝার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালে কর্ণাটক সরকার কর্তৃক শিক্ষায় শ্রেষ্ঠত্বের জন্য মর্যাদাপূর্ণ কর্ণাটক রাজ্যোৎসব পুরস্কারে ভূষিত হন। উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি-কে শিবকুমার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা ডঃ সৈয়দ শাহ খুসরো হুসাইনির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।