হযরত ইউসুফ (عليه السلم)-এর বাল্যকাল
ইউসুফ (عليه السلم) ছিলেন ইয়াকুব (عليه السلم) এর ১২ জন পুত্র মধ্যে ১১ নং পুত্র, শেষ ভাই-এর নাম ছিল বিন ইয়ামিন। তিনার মায়ের নাম হল রাহিলা (عليها السلام)। তিনি পৃথিবীর মধ্যে সর্বসুন্দর মানুষ ছিলেন। হাদীসের মধ্যে বর্ণিত আছে-
فَإِذَا أَنَا بِيُوسُفَ عَلَيْهِ السَّلَامُ، وَإِذَا هُوَ قَدْ أُعْطِيَ شَطْرَ الْحُسْنِ قَالَ: فَرَحَّبَ بِي وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ
আর আমি ইউসুফ (আঃ)-কে দেখেছি যাকে (দুনিয়ার) অর্ধেক সৌন্দর্য দেওয়া হয়েছিল। তিনি আমাকে স্বাগত জানিয়ে আমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন (মুসলিম শরীফ)।
ইউসুফ (عليه السلم) ছিলেন অনেক দয়ালু, কৃপালু, হৃদয়বান, এবং শান্ত পরিবেশের ছেলে। তিনাকে আল্লাহ অনেক জ্ঞান এবং ধৈর্য দিয়েছিলান।
তিনি অনেক মোজেজাসম্পূর্ণ নবী ছিলেন। যখন তিনি ছোট ছিলেন স্বপ্নতে দেখতে পান কি ১১টি তারা, চাঁদ এবং সূর্য তারা একসঙ্গে তিনাকে সেজদা করছে। তখন তিনি তিনার বাবা ইয়াকুব (عليه السلم)-কে এই সব ঘটনা সম্পর্কে বলেন। তিনার আব্বা তিনাকে এই সব কিছু তিনার ভাইদের বলতে মানা করেন, যেহেতু তারা হিংসুটে প্রকৃতির মানুষ ছিল। তারা ইউসুফ (عليه السلم)-কে দেখতে পারতো না, কারণ তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান, চালাক এবং সবার কাছে প্রিয়। এই স্বপ্ন থেকে ইয়াকুব (عليه السلم) বুঝতে পারেন আল্লাহ তিনাকে নবী হিসাবে দুনিয়াতে প্রেরন করেছেন ও বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন।
এই সম্পর্কে আল্লাহ কুরআন মাজিদে বলেনঃ
যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি। (সুরা ইউসুফ,আয়াত নং 4-5)
যখন তিনার বয়স ১৮ হল, তখন তিনার ভাইরা চিন্তা করতে লাগে তিনাকে নিয়ে কি করা যাই। তখন তারা একটা ষড়যন্ত্র করে যে তাঁকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে দিবে এবং তিনার আব্বাকে বলবে যে জঙ্গলে পশু খেয়ে ফেলেছে। তারপর তারা ইয়াকুব (عليه السلم)-এর কাছে গিয়ে বলে: বাবা, তুমি ইউসুফ (عليه السلم)-কে আমাদের সাথে খেলতে কেন দাও না। আমরা তাঁকে নিয়ে খেল। তাঁকে আমদের সাথে খেলতে যেতে দাও। ইয়াকুব (عليه السلم) না চাইতেও অনুমতি দিলে...। দুস্টু ভাইরা ইউসুফ (عليه السلم)-এর কাপড় খুলে তাঁকে অবশেষে জঙ্গলের কুঁপে ফেলে দেয়।
ইয়াকুব (عليه السلم) যাতে বুঝতে না পারে তাই তারা একটা ভেঁড়া মেরে তার রক্ত তিনার জামাকাপড়ে লাগিয়া দেই। বাড়ি ফিরে, পিতা ইউসুফ (عليه السلم)-এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে, তারা বলে যে জঙ্গলের হিংস্র পশু তাকে খেয়ে নিয়েছে।
তারা ইউসুফ (عليه السلم)-এর জামাটা ইয়াকুব (عليه السلم)-এর হাতে তুলে দেন। তখন ইয়াকুব (عليه السلم) লক্ষ্য করেন জামাটা শুধু রক্ত লেগে আছে। তাই তিনার ভাই দের প্রশ্ন করে জামা না ছিঁড়ে কীভাবে কোনো পশু ইউসুফকে (عليه السلم) খেতে পারে? তখন তাদের মুখ লাল হয়ে যাই। তারা আল্লাহ-এর কসম খেয়ে বলে তারা সত্যি বলছে। তখন ইয়াকুব (عليه السلم) কাঁদতে লাগেন এবং বলেন তোমরা নিশ্চয় ইউসুফের সাথে কিছু মন্দ করেছ। তিনি বলেন আল্লাহ তাঁকে নবী করে পাঠিয়েছেন, তিনি তাঁর পুত্রকে সাহায্য করবেন।
সেই কুয়াঁতে মিশরের কিছু ব্যাবসায়ী পথিক জল পান করতে আসে। হঠাৎ তারা দেখে যে ভিতরে একজন পরে আছে। তখন তারা কুয়াঁর বালতি নিচে ফেলে তিনাকে কুয়াঁ থেকে তুলে নিয়ে আসে। তারা তিনাকে নিয়ে মিশর চলে যাই এবং গোলাম হিসাবে বিক্রি করার জন্য বাজার এ নিয়ে আসে। তিনার সুন্দর রূপ দেখে মিশর রানি তিনাকে কিনে নেয়। এবার তিনি রাজবাড়িতে জীবন যাপন করতে শুরু করে করেন।
আল্লাহর নাবী ইউসুফ (عليه السلم) নিজের বাল্য জীবনে এবং যুবক বয়সে অনেক বিপদের সম্মুখীন হন। পুত্রের বিচ্ছেদে ইয়াকুব (عليه السلم) কেঁদে কেঁদে অন্ধ হয়ে পড়েন। কিন্তু আল্লাহ যখন তাঁদের আবার মিলিয়ে দেন দেন তখন ইয়াকুব (عليه السلم)-এর দৃষ্টি শক্তি আবার ফিরে আসে।