খলিফা উমার বিন আব্দুল আজিজ (রহিমাহুল্লাহ)
উমার বিন আব্দুল আজিজ (রহিমাহুল্লাহ) ছিলেন মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খলিফাদের মধ্যে একজন। যিনি ৬১ হিজরিতে আরবের মক্কা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনার মাতার নাম হল- উম্মু আসিম বিনতু আসিম বিন উমার বিন খত্তাব। তিনি খুব অল্প বয়সেই কুরআন শরিফ মুখস্ত করে ফেলেন। তিনি যখন খুব ছোট ছিলেন সেই বয়সেই তিনাকে তিনার আব্বুজান মদিনায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যাতে তিনি সেখানে গিয়ে আদব কায়েদা ও ইসলামের কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। সেখানে গিয়ে তিনি খুব খুশিই ছিলেন, কারণ যে জায়গাতে থাকতেন সেটা তিনার মায়ের বাসস্থান ছিলো এবং তিনি তিনার মাকে সবসময় একটাই কথা বলতেন যে আমি বড় হয়ে আমার নানাজানের মতো হতে চায়। উমর বিন আব্দুল আজিজ (রহিমাহুল্লাহ) ব্যবহারের দিক থেকে ছিলেন একজন ভাল ব্যাক্তি এবং একজন সুন্দর হৃদয়ের মানুষ। তিনি এত বেশি করে আতর(সুগন্ধি) লাগাতেন যে-যেখান দিয়ে তিনি চলাফেরা করতেন সেখানকার লোকজনেরা আতরের গন্ধ পেত এবং সেই গন্ধতে মুগ্ধ হয়ে যেত, এবং তারা সেই জায়গাটার নাম দিত (উমরিয়্য়া)। খলিফা উমর বিন আব্দুল আজিজ (রহিমাহুল্লাহ) তিনার পণ্ডিতদের খুব বেশি সম্মান করতেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলায়হি অসাল্লাম এর মসজিদকেও অনেক সম্মান করতেন, তিনি এসব কাজ করতেন মনে মহান আল্লাহ তা'য়ালার ভয় রেখে। যখন তিনাকে খলিফা বলে ঘোষনা করা হয় তখন তিনি সেই সময় কিছুই জানতেননা, এবং তিনি যখন তা জানতে পারেন তখন ভয়য়ে হতবম্ভ হয়ে যান এবং তিনি সেই সময় আল্লাহ তা'য়ালার কাছে দুয়া করেন। তারপর তিনার জন্য খলিফাদের খাস জিনিসপত্র যেমন- তেল, কাপড়, গাড়ী, চাদর ইত্যাদি নিয়ে আসা হয়, কিন্তু তিনি তা নিতে অস্বিকার করেন এবং সবকিছুই মুসলমানদের বায়তুল মালে পাঠিয়ে দেন। উমর বিন আব্দুল আজিজ (রহিমাহুল্লাহ) জনগণদের জন্য দুপুর তিনটের পর বসতেন, এবং তাদেরকে ইসলামি শরিয়তের উপর আমল করতে বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলায়হি অসাল্লাম এর সুন্নাতকে জারি রাখার জন্য সুন্নাতের উপর আমল করতে বলতেন। লোকজনদের ইসলামের খিদমত করতে বলতেন এবং তিনি জুলুম কারিদের ফিরিয়ে দেন এবং তিনার শহরকে শান্তিময় করে তোলেন। এক রাত্রির ঘটনা একবার উমর বিন আব্দুল আজিজ রহিমাহুল্লাহর কাছে কিছু লোকজন আসে এবং তারা তিনাকে বসতে বলে। তখন তিনি তাদেরকে জবাবে বলেন- যদি আমি দাঁড়িয়ে থাকি বা ফিরে যায়, তবুও আমি উমর বিন আব্দুল আজিজ রহমাহুল্লাহই থাকব। উমর বিন আব্দুল আজিজ (রহিমাহুল্লাহ) জুম্মার দিনে মসজিদে যখন খুতবা করতেন তখন তিনি সেলাই করা জামা-কাপড় পড়ে থাকতেন, এবং তিনি বেঁচে থাকতে যতদিন খিলাফাত করেছিলেন ততদিন সেখানকার লোকজনদের কোন রকম অসুবিধা দেখা দেয়নি, সেখানে কেউই গরীব ছিলনা, এমনকি সেখানকার কাউকে কারোর কাছ থেকে সদকাও নিতে হত না। তিনি খুব সৎ ব্যাক্তি ছিলেন, কারোর কাছ থেকে কোন জিনিসপত্র না বলে নিতেন না। তিনার জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা আছে তার মধ্যে থেকে একটি হল- একদা একবার উমর বিন আব্দুল আজিজ রহিমাহুল্লাহর খাদিম (সেবক) গরম জল ভর্তি একটি পাত্র আনে এবং একবার উমর বিন আব্দুল আজিজ রহিমাহুল্লাহ সেই গরম জল দিয়ে ওযু করেন এবং তার পরে সেই খাদিমকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কি এই গরম জল মুসলমানদের রান্নাঘরে গরম করেছো? তখন সেই খাদিমটি উত্তর দিল, হ্যাঁ। তখন উমর বিন আব্দুল আজিজ (রহিমাহুল্লাহ) বললেন: তুমি আমাকে মহামুশকিলের মধ্যে ফেলে দিয়েছো এবং তিনি সেই দিনের হিসাব করলেন এবং রান্নাঘরে হিসাব অনুযায়ি জ্বালানি দিয়ে দিলেন। এক জুম্মার দিনে তিনি তিনার পরিধান করার কাপড়কে পরিস্কার করেন এবং সেই কাপড় শুকোতে শুকোতে প্রায় জুম্মার সময় খুব কাছে চলে আসে। সেই সময় কিছু লোকজন এসে তিনাকে জুম্মার নামায পড়ার ব্যাপারে বলে, তখন উত্তরে উমর বিন আব্দুল আজিজ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: আমি যে কাপড়টি পরিস্কার করেছি সেই কাপড়টি পড়েই আমি জুম্মার নামায পরতে যাব। তাই আমি সেই কাপড়টি শুকোনো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি। এটি ছিল উমর বিন আব্দুল আজিজ রহিমাহুল্লাহর জীবনের একটি বড় ঘটনা। অবশেষে তিনি চল্লিশ বছর বয়সে একশত এক হিজরিতে পরলোক গমন করেন।