হাদিস ও বিজ্ঞানের আলোতে মেসওয়াক ব্যাবহারের উপকার
বর্তমানে মানুষ ইসলামের মধ্যে থাকা উপকারিত কাজ গুলি থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কারণ তারা তার গুরুত্ব ও উপকারের ব্যাপারে অবগত নয়। কখন আবার অবহেলা করে ছেড়ে দেয়। তার সাথে সুন্নত কেউ ত্যাগ করে ফেলে। তার মধ্যে এক অন্যতম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার স্বভাব হল মেসওয়াক করা। কিছু মুমিন পুরুষ মেসওয়াক করলেও কিন্তু মহীলারা এ বিষয়ে উদাসীন এক কথায় তারা খেয়াল করে না। অথচ উভয়কেই কিন্তু মেসওয়াক করা আবশ্যক। এর গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হল-
ইসলামের দৃষ্টিতে মেসওয়াক এর গুরুত্ব :–
হানফি মাযহাবের ইমাম, আবু হানিফা রঃ এর মতে এটা অজুর একটি সুন্নত। আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেছেন, “আমার উম্মতের জন্য বা লোকদের জন্য যদি কঠিন না মনে করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের সঙ্গে মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।“। (বুখারি,-৮৪৩)
মেসওয়াক ব্যাবহারে আল্লাহর হুকুম :-
আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সাঃ)কে এই মেসওয়াক এর ব্যাবহার করার নির্দেশ বা হুকুম দিয়েছেন। হাদিস থেকে প্রমানিত, আবু উমামা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেছেন- “জিব্রাইল আঃ যখনি আমার কাছে আসতেন, তখনি আমাকে মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতেন। তাতে আমার ভয় হতে লাগল যে আমি আমার মুখের সামনের দিক ক্ষয় করে ফেলব”। (মুস্নাদে আহ্মদ-২২১৭, মিশকাতুল মাসাবিহ-৩৫৬)
মেসওয়াক ব্যাবহারকারীর দুটি পুরুস্কার :-
ইসলামের প্রত্যেকটি বিধান, আদেশ, নিয়মবলীর মধ্যে রয়েছে পরিপূর্ণ ইহকাল ও পরকালের জন্য পুরুস্কার। মেসওয়াক দ্বারা দাঁতের ময়লা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। এবং অর্জিত হয় আল্লাহ পাকের সন্তষ্টি। কেননা “আল্লাহ তায়ালা তৌবাকারী ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নকারীকে পচ্ছন্দ করেন।” রাসুল সাঃ ইরশাদ করেছেন – তোমরা মেসওয়াক কর। কেননা তা মুখের পবিত্রতার উপায় এবং আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের মাধ্যম।(সুনানে নাসায়ি-৫, ইবনে মাজাহ ২৮৯, ইবনে হিব্বান-১০১৭)
ইন্তেকালের আগে রাসুল এর মেসওয়াক এর চাহিদা :-
শেষ অবস্থায় এবং ইন্তেকালের আগে রাসুল সাঃ মেসওয়াকের আগ্রহ প্রকাশ করেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রাঃ তা বুঝতে পারে এবং মেসওয়াক এর ব্যাবস্থা করেন। আয়েশা রাঃ বলেন আব্দুর রহমান ইবনে আবুবাক্কার রঃ একটি মেসওয়াক হাতে নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে প্রবেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাঃ তার দিকে তাকালেন। আমি তাকে বললাম, হে আব্দুর রহমান মেসওয়াকটি আমাকে দাও। সে আমাকে দিয়ে দিল। আমি ব্যাবহিত অংশ ভেঙে ফেললাম এবং তা চিবিয়ে রাসুল সাঃ কে দিলাম। তিনি আমার বুকে হেলান দিওয়া অবস্থায় তা দিয়ে মেসওয়াক করলেন। (বুখারি-৮৪৬)
নারীদের মেসওয়াকের হুকুম :-
নবির সুন্নত সবাইকে মেনে চলা তার কর্তব্য এবং উচিত। এর মধ্যে কোন নারী বা পুরুষের ব্যাবধান নেই। ইস্লামের বিধান উভয় এর জন্য সমান। তাই মেসওয়াক একটি নবীর সুন্নত অতএব নারিরাও মেসওয়াক করতে পারবে তা হাদিস দ্বারা প্রমানিত। আয়েশা রাঃ, নবী সঃ মেসওয়াক করার পর তার মেসওয়াক আমাকে ধৌত করে দিতেন। অতঃপর আমি উক্ত মেসওয়াক দ্বারা নিজে মেসওয়াক করতাম। পরে আমি তা ধৌত করে সংরক্ষেন জন্য তিনার কাছে দিয়ে দিতাম ( আবু দাউদ-৫২, মিস্কাতুল মাসাবিহ-৩৫৪) এই হাদিস দ্বারা দুটি জিনিস প্রমানিত হয়। এক নারিরাও মেসওয়াক ব্যাবহার করতে পারবে। এবং দুই, একজন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে কিরকম ভালোবাসা থাকা উচিত তা রাসুল সাঃ দেখিয়ে দিয়েছেন।
বিজ্ঞানের আলোতে মেসওয়াক এর ব্যাবহার :-
এর উপকার বিজ্ঞানের গবেষনার প্রমানিত। আসল কথা মানুষ মেসওয়াক এর ব্যাবহার ছেড়ে দেওয়ার কারনেই মানুষের ভোগান্তি বা অসুখ বেড়েছে। ডেন্টাল সার্জন্দের উৎপত্তি হয়েছে। নিয়মিত মেসওয়াক এর ফলে, দাঁত জীবানুমুক্ত হয়, দাঁতের গোড়া মজবুত হয়, দাঁতের ক্যালসিয়াম পুরণ হয়, পাকস্থলী রোগ মুক্ত হয়, মস্তিস্ক সজীব থাকে, স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ইবাদতে বিশেষ এক স্বাদ তৈরী হয়। (সুন্নাতে রাসুল ও আধুনিক বিজ্ঞান, পাতা-৩৫-৪০)
ব্রাশ ও মেসওয়াক এর মধ্যে পার্থক্য :-
ব্রাশ হল যা টুতপেষ্ট ছাড়া ব্যাবহার করা যায় না। এবং এই ব্রাশ ব্যাবহারের ফলে দাঁতের গোড়া ফুলে যায়। এমন কি দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ে। এক কথায় নানা রকম অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয়।
কিন্তু মেসওয়াক হল এমন এক আল্লাহর তৈরী উদ্ভিদ যা এই রকম অসুবিধা থেকে বাচাই। বরং গাছের মধ্যে থাকা প্রটিন ও পাওয়া যায় যা শরীরের পক্ষে খুবী উপকারী। তাই অসুবিধার এর গুরুত্ব ও উপকার এখনকার ব্রাশ এর থেকে অধিক বেশি।