আমি আমার ধর্মের জন্য কি করেছি ?
মুসলিম পরিবারে জন্ম হওয়া মহান আল্লাহ তায়ালার এক অপার নিয়ামত। মুসলিম ঘরে জন্মগ্রহণকারী মুসলমানদের কোন প্রকারের ত্যাগ অথবা কোনরূপ অনুসন্ধান না করেই ইসলামের সাথে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। তাদের পূর্বপুরুষরা মুসলিম হওয়ার কারনেই তারাও ইসলাম ধর্মকে প্রকৃতিগত ভাবে নিজের ধর্ম হিসেবে পায়। তথাপি, ইতিহাসের দিকে এক দ্রুত দৃষ্টিতেও দেখলে দেখা যায় যে ইসলামের স্বার্থে নিজের জীবন, সম্পদ, এমনকি নিজ সম্পর্ক বিসর্জন দিয়েছেন এমন নারী ও পুরুষের তালিকা দীর্ঘ রয়েছে। ত্যাগ ও পরোপকারের এই গল্পের অগ্রভাগে ছিলেন মহিলা সাহাবীগণ এবং পরবর্তীকালের ধার্মিক মহিলারা। এই ছোট্ট প্রবন্ধে আমরা বিশিষ্ট কিছু মুসলিম নারীগণের অবদান সমন্ধে জানবো।
সাহাবীয়া সাইয়্যিদাতুনা সুমাইয়া (রাঃ) কে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল এবং অবশেষে হত্যা করা হয়েছিল কারণ তিনি ইসলাম পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করেছিলেন। এইভাবে তিনি ইসলামের প্রথম মহিলা শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। শেষ নবীর কন্যা, সাইয়্যিদাতুনা জয়নাব (রাঃ) তার ঈমানের কারণে তাকে একটি উট থেকে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছিল, যার ফলে কয়েকদিন পর তার আঘাতে তিনি মারা যান। সাইয়্যিদাতুনা খানসা (রাঃ) কাদিসিয়ার সমতলে তার চার পুত্রকে মহান আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করেন এবং চারজনই শহীদ হয়ে যান। তবুও, তিনি মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানান যে তিনি তাকে চার শহীদের মা হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছেন।
সাইয়্যিদাতুনা উম্মে উমারা (রাঃ) উহুদ অভিযানে শুধু কঠিন আঘাতই পাননি, বরং ইয়ামামা অভিযানের সময় বর্শা ও তরবারির আঘাতে তার দেহে বারোটি গুরুতর জখম হয়েছিল। উহুদে তার পিতা, ভাই এবং স্বামী শহীদ হওয়ার পরও তিনি কোন মর্মবেদনা প্রকাশ করেননি বরং যুদ্ধের ময়দান নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চিন্তিত হওয়ার বদলে আল্লাহর রসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর অবস্থা সম্পর্কে জানতে ব্যাকুল হয়ে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। সাইয়্যিদাতুনা হুমনা (রাঃ) কে জানানো হয়েছিল যে তার চাচা, ভাই এবং স্বামী শহীদ হয়েছেন, কিন্তু তিনি এই বেদনাদায়ক খবর শুনেও অবিচলভাবে ধৈর্য ধরেছিলেন।
যখন সাইয়্যিদাতুনা সাফিয়া (রাঃ) তার ভাই সাইয়্যিদুনা হামজা (রাঃ) এর নির্মম শাহাদাতের কথা শুনলেন, তখন তিনি বললেন, "এটি মহান আল্লাহর পথে ঘটেছে এবং আমি এতে সন্তুষ্ট।" যৌবনে সাইয়্যিদাতুনা আসমা বিনতে আবী বকর (রাঃ) ধৈর্য ধরেছিলেন যখন আবু জাহল তাকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরত এর সম্পর্কে গোপন তথ্য প্রকাশ করার জন্য আঘাত করেছিল। বৃদ্ধ বয়সে তিনি তার পুত্রকে ইসলামের জন্য উৎসর্গ দেন। পরবর্তীতে তার সন্তানের শাহাদাতের কথা শুনে তিনি ধৈর্য ধারণ করেন এবং মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন ।
এই ছিল কিছু মুসলিম নারীদের মাহাত্ম্যপূর্ণ শিক্ষামূলক অতিসংক্ষিপ্ত জীবনীর ঝলক যেগুলি শুনলে আমাদের শরীর শিহরিত হয়ে উঠে।
কিভাবে নারীদের ইসলামের সেবা করা উচিত?
এই ধার্মিক নারীদের অনুপ্রেরণামূলক আত্মত্যাগ বর্তমান সমাজে আমাদের বোন, মা এবং কন্যাদের জন্য ইসলামকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করতে লজ্জা না করার জন্য একটি অতুলনীয় অনুস্মারক। আজকে আমাদেরকে আমাদের জীবন যুদ্ধ ময়দানে উৎসর্গ করতে বলা হচ্ছে না, তবে আমাদের উচিত আমাদের সময়, ধন-সম্পদ এবং দৈহিক শক্তি এবং প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর বাণী ছড়িয়ে দিই এবং মানুষকে পাপের অন্ধকার থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করি।
ইসলামের জন্য কাজ করতে এবং এর কাজ করতে ইচ্ছুক বোনদের জন্য প্রথম পদক্ষেপটি হল সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আন্তরিকতা এবং তাঁর মনোনীত ধর্মকে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে সেবা করার মনোবল ও ক্ষমতা চাওয়া। এই মহৎ কাজটি শুধু নিজে করবেন না, বরং আপনার স্বামী, সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদেরও এতে জড়িত হতে উৎসাহিত করুন। আমাদের মনে রাখা উচিত যে মা হল সন্তাদের প্রথম বিদ্যালয়। অতএব তাদের জীবন পদ্ধতিটি যেন ইসলাম অনুযায়ী হয় যার ফলে সন্তানরাও এর অনুকরণ করবে এবং ভবিষ্যতে একজন ইসলামি আলেম হয়ে বিভিন্ন ভাবে আল্লাহর নিমিত্তে কাজ করে যাবে।
বিশেষভাবে এই পথে স্থিরতা অর্জনের জন্য, ধার্মিক নারীদের জীবন অধ্যয়ন করুন। ইসলামের সেবা করার শিষ্টাচার শিখুন। কারণ যারা এটিকে অবহেলা করে তারা সাধারণত ভালোর চেয়ে বেশি ক্ষতি করে, এবং এই বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণের অভাব মানুষকে ইসলামের শীতল ছায়াতল থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইসলাম ও এর জনগণের খেদমত করার তাওফিক দান করুন। (আমীন)