ভ্রমণ মানেই শুধু প্রকৃতি উপভোগ করা নয়; এটা মনন দ্বারা উপাসনার একটি কাজ: আমার গুয়াহাটি ভ্রমণ কাহিনী
আটটি রাজ্য নিয়ে গঠিত উত্তর-পূর্ব ভারত তথা আসাম, অরুনাচল প্রদেশ, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, মেঘালয়, সিকিম ও মিজোরাম। তবে সিকিম ব্যতীত বাকি সাত রাজ্যকে মূলত সেভেন সিস্টার্স বা সাত বোন বলেই অভিহিত করা হয়। প্রত্যেক রাজ্যই যে নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা, জাতি বজায় রেখেছে তা অবশ্য কখোনই অগ্রাহ্যনীয় নয়।
ভ্রমণ, বা সফর, ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রাখে, শুধুমাত্র একটি ব্যবহারিক কার্যকলাপ হিসাবে নয় বরং আধ্যাত্মিক এবং ব্যক্তিগত বৃদ্ধির কাজ হিসাবেও। ইসলামী শিক্ষায়, জ্ঞান অর্জন, প্রাকৃতিক জগতে আল্লাহর নিদর্শন অন্বেষণ, সম্প্রদায়ের বন্ধন শক্তিশালী করা এবং এমনকি বিনোদন ও ব্যক্তিগত প্রতিফলন সহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ভ্রমণকে উৎসাহিত করা হয়। ইসলামে ভ্রমণের প্রচার কোরানে, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী এবং প্রথম দিকের মুসলমানদের অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে। ইসলামের কেন্দ্রীয় নৈতিকতাগুলির মধ্যে একটি হল আল্লাহর সৃজনশীল শক্তির প্রকাশ হিসাবে প্রাকৃতিক জগতের প্রতিফলন। কোরানে, আল্লাহ বারবার মানুষকে পৃথিবীতে ভ্রমণ করার জন্য এবং তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার উপায় হিসাবে এর বিস্ময়গুলি বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন:
قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ ۚ ثُمَّ اللَّهُ يُنشِئُ النَّشْأَةَ الْآخِرَةَ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম” ।
এই আয়াতটি মুসলমানদেরকে পাহাড় থেকে সমুদ্র, আকাশ থেকে বিশাল মরুভূমি পর্যন্ত পৃথিবীর সৌন্দর্য প্রতিফলিত করার জন্য ভ্রমণ করতে উত্সাহিত করে। ইসলামে, এই ধরনের মনন নিছক দর্শনীয় স্থান নয় - এটি একটি উপাসনা। প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শনগুলিকে চিনতে পেরে, ভ্রমণকারীদের সৃষ্টিকর্তার মহিমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় এবং পৃথিবীর আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞ হতে উৎসাহিত করা হয়।
দীর্ঘদিনের আশা ছিল এই সেভেন সিস্টার্সকে স্বচক্ষে দেখে তার মনোরম পরিবেশকে উপভোগ করার। তবে বেশ কয়েকদিন পূর্বে সেই অভিপ্সা সম্পূর্ণরূপে সমাধা না হলেও দুটি রাজ্য তথা আসাম ও মেঘালয় চাক্ষুস দেখে এলাম। কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে ভ্রমনটি করেছিলাম ঠিক সেপ্টম্বরের মধ্যভাগে। তবে ভ্রমনটি আদ্যন্ত এতটাই রোমাঞ্চকর, মজার ও শিক্ষণীয় ছিল যে বেশ কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পরও অদ্য আমার মনে সেই স্মৃতিগুলি বারবার করে তাড়না দিচ্ছে। ফলে, শেষপর্যন্ত এই ভ্রমন কাহিনিটির অবতারণা করলাম।
বীরভূমের মুরারই ষ্টেশন থেকে সকাল দশটায় উঠে পড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে রিসার্ভড বগিতে। ঠিক আগামীকাল প্রত্যুষে নেমে পড়ি গুয়াহাটি ষ্টেশনে। কিছুক্ষণ সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় রতছিলাম। কিন্তু সেই সূর্যই যেন কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো শহরকে তপ্ত করে তুলল। এমতাবস্থায় কয়েকজন অসমী বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করলাম। সেখানে কোনো এক রাস্তার স্টলে কেউ পরাটা তো আবার কেই লুচি সবজি খাওয়া দাওয়া করে ঠিক দশটার দিকে হেটে হেটে রওনা দিলাম আসাম স্টেট মিউজিয়ামের দিকে যেটি ১৯৫৩ খ্রীস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আসামী ভাষায় ‘অসম রাজ্যিক সংগ্রহালয়’ নামে পরিচিত এই মিউজিয়াম। সকলেই শিক্ষার্থী হিসেবে টিকিটের দামে কিছু ছাড় পেলাম সেখানে। ঠিক যেমন ছাড় দেওয়া হয় কলকাতা মিউজিয়ামে যেটি মূলত ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম নামে প্রখ্যাত। ভেতরে গিয়ে দেখলাম যে কলা বিভাগের অন্তর্গত উত্তর-পূর্ব ভারত বস্ত্র শাখা, নানাভাষার সাহিত্য ও ঐতিহাসিক পাণ্ডূলিপি, যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র, নানাবিধ বস্ত্র পারিপাট্য, চিত্র, অভিলেখ, মুদ্রা, প্রাক ও আদি ঐতিহাসিক তথা পোরামাটির, কাঠের ও ধাতুর ভাস্কার্য, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, নৃত্য, অসমের গ্রামীণ দৈনন্দিন জীবন, ঘরবাড়ি ও চাষবাস, প্রমূখ মুক্তি যোদ্ধা, হস্তশিল্পের কারুকার্য, প্রাকৃতিক ইতিহাসের মত আরও কয়েকটি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী বীথিকাগুলি এই রাজ্য মিউজিয়ামে সংগৃহিত ও সংরক্ষিত রয়েছে। সমস্ত কিছুই নিজস্ব রাজ্যের সংস্কৃতি ও হাজারো দিনের পুরোনো ঐতিহ্যকে বহন করতে এক মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। সত্যিই গ্রামগুলিই যে ভারতীয় সংস্কৃতীর মূল উৎস তা বেশ ভালো করেই অনুভাব করলাম। বিশেষভাবে সেই পংক্তিটিও খুব স্পষ্ট ভাবেই মনে পড়ে “Uniformity is not nature’s way, diversity is.” তবে এই রাজ্য মিউজিয়ামটি যে কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের চেয়ে ছোটে তা খুব নিমিষেই বুঝতে পেরেছিলাম।
প্রায় ঘন্টাখানেক ঘোরার পর মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। তৎপর হাটতে হাটতে চলে গেলাম গুয়াহাটি তারকাগৃহে (প্লাটেনিয়াম)। রাস্তার মধ্যেই নজরে এল গুয়াহাটি উচ্চ ন্যায়ালয় বাংলায় যাকে বলি উচ্চ আদালত বা হাই কোর্ট। সেখানে হিন্দিতে একটি শো দেখলাম যেটি মূলত পূথিবী সৃষ্টির ইতিহাস ও বিশ্ব মহাকাশের নানাদিক তুলে ধরেছিল।
অতঃপর রওনা দিলাম অনতিদূরে দিঘালীপুখরী জলাশয়ের দিকে। সেখানে পায়ে প্যাডেল মারা দুটি বোট ভাড়া করে সকলেই আনন্দ ফূর্তিতে দীর্ঘক্ষণ কাটালাম। অবশেষে, নিকটবর্তী কোনো এক হোটেলে কেউ পনির ভাত তো আবার কেউ ডিম ভাত দিয়েই খুব শীঘ্রই খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম এবং কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ক্লান্তভাব দূর করিয়ে পূণরায় সজাগ হয়ে উঠলাম।
তৎপর রওনা দিলাম শ্রীমান্ত শঙ্করদেবা কলাক্ষেত্রের অভিমূখে। এর অবস্থান একটু দূর হওয়াই চড়ে গেলাম এসি(AC) বাসে। ঘন্টাখানেক পর নিজেদের গন্তব্যস্থলে পৌছালাম অর্থাৎ কলাক্ষেত্রে। টিকিট ঘর থেকে টিকিট কেটে সিংহদ্বার দিয়ে প্রবেশ করলাম কলাক্ষেত্রের অন্তরে। সেই মূহুর্তে অবশ্য রবিমামা হাবুডুবু খাচ্ছে। দেখতে দেখতেই নেমে এল প্রদোষ। মন্থরে অন্ধকারে ছেয়ে ফেলল পুরো আকাশ। এমনই এক পরিবেশে চোখে ভেসে উঠল চমৎকার এক দৃশ্য। এক পুষ্করীণির মধ্যে গানের তালে মত্ত হয়ে নেচে চলেছে নানারঙের ফোয়ারা। তার মধ্যভাগে রয়েছে ছোট একটি সেতু। সেখানে দাড়িয়ে যেন সেই দৃশ্য উপভোগ করে আরও উত্তেজিত বেরে যায়। এমনকি তাদের নৃত্য দেখে দর্শকবৃন্দও বেশ উচ্ছাসিত ও আনন্দে মতোয়ারা হয়ে নিজেরাও অনেকে নেচে উঠেছিল। সত্যিই মনে হচ্ছিল যেন আরও কিছুক্ষণ সেখানেই দাড়িয়ে অতিবাহিত করে দিই। কিন্তু এতেই যে শেষ হয়নি কলাক্ষেত্রের সমস্তটা। বরং, এটি তো ছিল কেবল তার একটি অংশ মাত্র। সুতরাং, আরও সমীপেগমন করতে থাকলাম। তৎক্ষনাৎ, ঠিক রাজ্য মিউজিয়ামের মতো আরও এক মিউজিয়াম ভ্রমন করলাম তার মধ্যেই। এই মিউজিয়ামে সেই রাজ্যের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অবশ্য আরও বিস্তারিত বৃত্তান্ত জানতে পারলাম। তন্মধ্যে কন্ফারেন্স, সেমিনারের জন্য রয়েছে এক বিশাল অডিটোরিয়মও। তৎপর, আরো সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম। রাস্তাটি সমভূমি থেকে প্রায় একটু উঁচুতে অবস্থান করেছিল। এমনই সময় রাস্তার শেষ প্রান্তে দেখলাম খোলামেলা আরও এক অডিটোরিয়াম। তবে তাকে খোলা চোখে দেখা যায় না। কেবল একটি লাইট জ্বলছিল। ফলে, নিজেদের মোবাইলের টর্চলাইট চালু করে দেখলাম, সে যেন অন্ধকারে, নির্জনে, নিশব্দে ও একাকী মনমরা হয়ে বসে ছিল কলাক্ষেত্রের এক কোণে। মনে হয় তাকে কেউ আর দেখতে যায় না, সেই অভিমানে। পরিশেষে, পূণরায় ফিরে আসতে শুরু করলাম। একদিকে অন্ধকার যেমন ঘনিয়ে আসছে অপরদিকে আকাশে চনমনে চাঁদও উঠেছে। তারারাও মিটমিট করছে। এমতাবস্থায় রাস্তায় যেতে যেতেই দূর হইতে কানে ভেসে এল ঢোল ঢোলকের তাল, গানের সুর, নৃত্যের ছন্দ। তেমনই ছুটে গেলাম সেই ছন্দের সুরকে অনুসরণ করে। পৌঁছে স্বচক্ষে দেখছি ঝুমুর নাচে মেতে ওঠেছে এক মাঠ ভর্তি মেয়েরা। নৃত্য শেষে ঢোলক ভায়ারা শ্রান্ত শরীরকে একটু বিশ্রাম দিতে কচি ঘাসের উপরেই বসে পড়ল। সেই মূহুর্তেই তাদের সাথে কথাবার্তার এক সুযোগ পেলাম। আসামী ভাষায় বললেও সর্বশেষে বুঝতে পারলাম যে তারা এক প্রতিযোগিতার জন্য এখানে অনুশীলন করছে এবং তারা সকলেই আদিবাসী গোষ্ঠীর। তারা সকলেই চায়ের চাষবাস করে থাকে। এককথায় বলা যায় এই কলাক্ষেত্রটিতে নানা প্রকার সাংস্কৃতিক উৎসবের সাথে সাথে বিভিন্ন কলা ও সাহিত্য অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়। সেই থিয়েটারে বিহুর মতো রাজ্য ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, লোক সঙ্গিত, চিত্রকলা প্রভৃতি প্রদর্শন করা হয়। অতএব, এই কলাক্ষেত্রটি যে আসাম রাজ্যের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বহন করতে কলিযুগে এক মূখ্য অবদান রাখছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
পরিশেষে বেরিয়ে পরলাম সেখান থেকে। বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে চললাম বাসে চড়ে সেই অসামী বন্ধুবর্গের গন্তব্যস্থলে। সেখানে অবশ্য একটি স্মৃতিময় অভিগ্যতা অর্জন করলাম। আসলে বন্ধুদের বাড়িতে থাকার কথা ছিল। কিন্তু গিয়ে দেখলাম তাদের বাড়ি এক উঁচু পাহাড়ের গায়ে। প্রথমে তো ভেবেছিলাম অতিসহজেই কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাব। কিন্তু চলতে শুরু করলাম তো করলাম, পৌঁছানোর কোনো কথা নেয়। বারেবারে বলতে থাকি, আর কত দূর? সহপাঠীরা প্রতুত্তরে বলে, এই তো আর একটু। পরিশেষে, কোনো ভাবে পৌঁছে হাপ ছাড়লাম। এছাড়াও সেখানে দেখলাম জলেরও খুব অসুবিধে হয়ে থাকে। তখনই বেশ ভালো করেই বুঝে ছিলাম পাহাড়বাসীদের কতই না বালা মুসিবতের সম্মূখীন হতে হয়। এমতবাস্থায় স্নান সেরে খাওয়া দাওয়া করে শ্রান্ত শরীর নিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন হলাম। সেই দিন সেই নিশীথ রাত্রিতে মুক্ত জানালা দিয়ে বয়ে আসা মৃদুময় বাতাস আমাকে এক প্রশান্তির ঘুম উপহার দেয় যা আজও আমি স্মরণ করতে থাকি বারংবার। সকালে খুব শিগ্গির ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলাম। ফলে প্রাতঃকালে সুশীতল মৃদু বায়ু ও গাছের ডালে বসে থাকা পাখিদের কলরবের মাঝে পাহাড়ের উঁচু স্থান থেকে নীচে দেখার সময় এক আলাদায় অনুভূতি অনুভাব করছিলাম। অতঃপর আসামের সুবিখ্যাত চা পান করে আবারও বেরিয়ে পড়েছিলাম দ্বিতীয় গন্তব্যস্থলে অর্থাৎ মেঘালয়ের দিকে।
তবে মেঘের দেশ মেঘালয় ভ্রমণ কাহিনীর পূর্বে এই গুয়াহাটির ভ্রমনটিই পুরোপুরি সমাপ্ত করলেই ভালো মনে করি। যেহেতু এই ভ্রমণটি কেবল একদিনের হলেও এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ যে কেবল কিছু শব্দে তার ইতি টানা যাচ্ছে না বরং সংখ্যা বাড়তেই থাকছে। ফলে এটি দুই পর্বে বিভক্ত করলাম।
যাইহোক ফিরে আসি মূল প্রেক্ষাপটে, গুয়াহাটি ভ্রমণের সময় আরও একটি লক্ষনীয় বিষয় হল এর ভাষা। হ্যাঁ, অসমী ভাষা ঠিক বাংলার মতোই। কেবল পার্থক্য কেবল দুই তিনটি অক্ষরে। বাংলায় আমরা ‘র’ বর্ণকে ব-এর নীচে এক বিন্দু দিয়ে লেখি কিন্তু আসামী ভাষায় রকে ব-এর মধ্যে পেট কাটার মতো করে লেখা হয়। তা ঠিক এমন দেখতে হয় ৰ (r)। কিন্তু এই ভাষায় বাংলার র বর্ণের মতো দেখতে অন্য কোনো বর্ণ নেই। এছাড়াও লক্ষ্য করলাম, এই ভাষার লিপিমালায় রয়েছে ৱ (v/w) যা বর্তমানের বাংলা ভাষা ও লিপিমালায় এর প্রয়োগ সম্পূর্ণরূপে মিটে গেছে বললেই চলে। এর ব্যবহারের একটি উদাহরণ হল “ৱিৰাট কোহলি” বাংলায় যেটাকে লেখা হয় বিরাট কোহলি। আর এই অক্ষরটিই আসামী লিপিমালায় অন্তর্ভুক্ত থাকায় বর্ণ সংখ্যা বাংলার চেয়ে একটি বেশি হয়ে ৫২ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও গুয়াহাটির ওলিগলি হাটবাজার ঘুরে ফিরে এটিই বুঝলাম যে, এই ভাষাতে বাংলা, আরবী বা ইংরেজির মতো অন্যান্য ভাষার কিছু বর্ণকে একেবারে আলাদা করে লেখা হয় কিন্তু উচ্চারণ প্রায় একই থাকে। যেমন ‘স’ কে ‘চ’, ‘হ’, ‘ছ’ হিসেবে লেখা উদাহরণস্বরূপ সিমেন্টকে ‘চিমেন্ট’, সরকারকে ‘চরকার’, সকলকে হকল, ইসলামকে ‘ইছলাম’ ইত্যাদি, আবার কখনো ‘ষ’ কে ‘হ’ যেমন মানুষকে ‘মানুহ’ প্রভৃতি। কেবল এটিই নয় বরং ব্যকারণগত দিক দিয়েও রয়েছে এই দুই ভাষার মধ্যে চরম মিল।
এমনকী এটিও লক্ষ্য করলাম যে বাংলার সংস্কৃতি, সাহিত্য, দৈনিন্দিন জীবন, আচার-আচরণ, কৃষ্টিকালচার প্রভৃতির মধ্যে রয়েছে দুই রাজ্যের অনেক সাদৃশ্য। যেমন, চাষী ভাইদের মাথার টুপি যাকে মূলত জাপি বলা হয় ও লাঙল এবং তাঁতী ভাইদের হাতের কারুকার্য তথা লাল রঙের গামছা। এই দুইটি বাঙালীদের পরিচয় দিলেও আসামীদের পরিচয়টিই বেশি দেই, তা পুরো সফর থেকেই বেশ বুঝতে পারলাম।
সুতরাং, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এই ভ্রমণকে এক শিক্ষণীয় ভ্রমণ হিসেবেই মনে করি। যদিও একদিনে পুরো গুয়াহাটি সম্পূর্ণভাবে ঘোরা যায়নি। অথচ কলা ও বিজ্ঞান উভয় বিভাগই বেশ সুন্দরভাবেই উপভোগ করি। এমনকি এই সফর আমাকে ভারতের আরও এক গৌরবময় ধ্রুপদী ভাষা শেখায়। ফলে আনন্দ প্রফুল্লের এই শিক্ষাণীয় সফর চিরস্মৃতি হয়ে আমার জীবনে ওৎপ্রেতভাবে জড়িয়ে থাকবে বলেই মনে করি।