ধর্ষণ ব্যভিচার এবং অন্যান্য যৌন অপরাধ: কিছু কার্যকর সমাধান অন্বেষণ

কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের একজন প্রশিক্ষণার্থী ডাক্তারের সাম্প্রতিক জঘন্য ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি সত্যিই ভয়ঙ্কর ছিল যা সমগ্র দেশবাসীকে হতবাক করে।  ভিকটিমদের ন্যায়বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ চলছে।  এটা একটা গণধর্ষণ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।  এটা সত্যিই কাঁপানো যে একজন মানুষ কিভাবে অন্য জীবনকে লালসা, বা ক্রোধ বা শত্রুতায় হত্যা করতে পারে।

তবে, দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে আরজি কর হাসপাতালের ঘটনাটি একটি একক মামলা নয়। দিন প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, ব্যভিচার এবং অন্যান্য যৌন অপরাধের খবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (NCRB) অনুসারে ভারতে ২০২১ সালে প্রতিদিন গড়ে ৮৬টি ধর্ষণ, প্রতি ঘন্টায় ৪৯টি নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ দায়ের করা হয়েছে। যদি রেকর্ড করা এত বেশি হয়, তাহলে এই জঘন্য কাজের প্রকৃত সংখ্যা কত হবে যা অলক্ষিত এবং অলিখিত যা এটা স্বাভাবিক কল্পনার বাইরে। বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে, ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতা হোক তা পুরুষ বা মহিলা সম্পর্কিত কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব দেশেই প্রধান সমস্যা।  অনেক আইনি নীতি, রাজনৈতিক সক্রিয়তা বহু সেক্যুলার প্রবিধানের এই সমস্যার মোকাবেলায় ব্যর্থ।

এই প্রেক্ষাপটে, বড় এবং চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নটি হল কীভাবে এই সামাজিক ও নৈতিক বিপর্যয় দক্ষতার সাথে সমাধান করা যায়।  এটা স্পষ্ট যে বিদ্যমান সমস্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ, ফলে ধর্ষণ ও যৌন অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এবার অন্বেষণ করা যাক - যৌন নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্নতার এই প্রশ্নে ইসলাম কি বলে? ধর্ষণ, ব্যভিচার ও  যৌন অপরাধ প্রতিরোধ এবং এই জঘন্য কর্মকাণ্ড সমাজ থেকে নির্মূল করার জন্য ইসলাম কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে?  কেন ইসলাম প্রদত্ত কাঠামো কার্যকর এবং নারী নিরাপত্তার এই অমীমাংসিত প্রশ্নের জন্য নিরাময়মূলক?

ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু এটি প্রাকৃতিক নীতির উপর ভিত্ত, স্রষ্টা কর্তৃক নির্দেশিত এবং নবী দ্বারা প্রচারিত।  ইসলাম ক্ষুদ্র ও বৃহৎ স্তরে যথাক্রমে  জীবন ও সমাজের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক দিকগুলির একটি সামগ্রিক সুরেলা পরিকাঠামোর প্রদান করে।

ভয়াবহতা 

ইসলাম খুব দৃঢ়তার সঙ্গে যৌন অপরাধের ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করেছে। এই ধরনের উদ্বেগজনক সতর্কতা একান্তই প্রয়োজন যাতে যে কোনো ব্যক্তিগত কুপ্রবৃত্তি প্রতিরোধ করা যায় এবং সামাজিক নৈতিকতার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“এবং অবৈধ যৌন সম্ভোগের নিকটে যেওনা। নিশ্চয়ই সেটা অশ্লীলতা এবং অত্যন্ত নিকৃষ্ট পথ।’ (সূরা ইসরা: ৩২)

আল্লাহ প্রদত্ত এই আদেশ যথাযথ পালনে যৌন অপরাধ ঘটা তো দূরের কথা, তার কোনো সম্ভাবনাও থাকেনা। যেহেতু, ব্যভিচার, ধর্ষণ বা অন্যান্য যৌন অপরাধ নৈকট্যের আকর্ষণে তীব্র হতে থাকে। যদি কেউ এই জঘন্য কর্মে ঝুঁকি মারে, সে পড়ে যায়, এবং যে পড়ে যায় প্রশমিত না হয়ে বের হতে পারে না। আর তখনই জমে যায় লাঞ্ছনার মার্কা।

শরম, সংযম ও পবিত্রতা

একজন ব্যক্তির - পুরুষ হোক বা মহিলা - অবৈধ যৌন প্রবৃত্তিকে দমন করার জন্য, ইসলাম ব্যক্তিগত শালীনতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে যা সামাজিক সচ্ছলতার প্রধান প্রত্যক্ষ ও কার্যকর উপকরণ। পারস্পরিক আদান-প্রদান থেকে শুরু করে পোশাক এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা সবকিছুই ইসলাম একটি নৈতিক ও স্বাভাবিক পদ্ধতিতে স্পষ্টভাবে সম্বোধন করেছে। 

আর এইসব আদেশ-নির্দেশের মূলে আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া বা খোদাভিরুতার সূত্র দিয়েছেন। প্রত্যেক মহিলা বা পুরুষ ব্যক্তিগতভাবে যদি শরম, সংযম ও পবিত্রতা বজায় রাখে তো স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ধরনের যেকোনো সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। তাহলে ব্যক্তিগত আধ্যাদেশ অবলম্বন সব থেকে প্রয়োজনীয় কর্তব্য। নচেৎ শুধুমাত্র বৃহত্তর স্তরে সামাজিক বিধি-বিধান প্রণয়ন করে কোন লাভ নেই। 

খোদাভীরতা যখন পাওয়া যায় তখন তার পরের আদেশ নির্দেশও সহজেই  পালন হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, তাকওয়া অবলম্বন পর পোশাক ও পারস্পরিক সংলাপ সম্পর্কে যদি কোন বিধি-বিধান আসে তবে অবশ্যই সে স্বেচ্ছায় পালন করবে। তাছাড়া নৈতিকতা তো তাকওয়ার মূল্য উপকরণ। হাদিসের বর্ণনা এসেছে: “... আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি বিশেষ শাখা।” (সহীহ মুসলিম)

অন্যদিকে, অনুপ্রেরণা ও সতর্কতা হিসেবে যথাক্রমে আনুগত্যের জন্য পুরস্কার এবং অবাধ্যতার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ পাক সূরা মোমিন, ৫ নম্বর আয়াতে সতীত্বতাকে সফল মোমিনদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করেছেন। অন্যদিকে, সতীত্বতা সংরক্ষণ ও হেফাজত নির্দেশনা লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রতিশ্রুতি এইরূপ আসে:

“এবং ঐসব লোক, যারা আল্লাহ এর সাথে অন্য কোন উপাস্যের পূজা করেনা এবং ঐ প্রাণকে, যার রক্তপাত আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন, অন্যায়ভাবে হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা, এবং যে এ কাজ করবে সে শাস্তি পাবে। বদ্ধিত করা হবে তার উপর শাস্তিকে ক্বিয়ামতের দিনে এবং স্থায়ীভাবে সেটার মধ্যে লাঞ্ছনার সাথে থাকবে।” (সূরা ফুরকান: ৬৮-৬৯)

যারা ওই সমস্ত কুকর্ম থেকে বিরত থাকে তাদের ‘এবাদুর রহমান’ বা করুণাময়ের অনুগত্যশীল বান্দাগণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অবশ্যই, পরের আয়াতগুলিতে ক্ষমাশীল ও দয়াবান আল্লাহ পাক তওবার মাধ্যমে মার্জনার সুসংবাদও দিয়েছেন।

অনুরূপ অনুপ্রণামূলক হাদিসের এক বর্ণনা এইরূপ: সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দু’ চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তুর এবং তার দু’ পায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর জামিন হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।” (বুখারী)

সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য 

বেক্তিগত নৈতিকতা যথা তাকওয়া, হয়, আনুগত্য, অবাধ্যতা এবং প্রতিফল সম্মান ও শাস্তি সম্পর্কে আলোচনার পর এবার সামাজিক স্তরের দিকে লক্ষ্য দেয়া হোক। যখন কোন যৌন অপরাধ ঘটে যায় তখন বিচার চেয়ে জনসাধারণের মধ্যে ধর্ষকের কঠোর শাস্তির দাবি উঠে। অনেকে বলে থাকে এই জঘন্যতম অপরাধের একমাত্র বিচার মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু কার্যকারিতার ক্ষেত্রে কোন ফলাফল দেখা যায় না। এখানেই যত সব দুর্বলতা। 

ইসলামী বিধান অনুসারে যথাযথ প্রমাণসহ ব্যভিচার অভিযুক্ত  পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে যাতে এক সার্বিক শিক্ষা ও নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। 

অধিকন্তু, ইসলাম যেকোন বিষয়ের ব্যক্তিগত বা সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক বা বস্তুগত দিকগুলিকে অত্যন্ত সামগ্রিকভাবে দেখে।  আলোচনার অধীনে এই বিষয়ে, ইসলাম শিক্ষার একটি অত্যন্ত অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো দেয় যা একজন পুরুষ বা মহিলাকে তার পরিচয়ের জন্য আদর্শ করে তোলে, এইভাবে একটি সফল জীবন ও সমাজ গঠন করে।



Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter