আদিনা মসজিদ উম্মুলন করার ষড়যন্ত্র: আদিনা মসজিদ নাকী আদিনাথ মন্দির, জানুন আসল সত্য!
ভারতের ইতিহাস তার পিছনে অনেক রাজা বাদশাহের রাজত্বের সাক্ষী দেয় । যার ফলে ভারতে মুসলমানদের অনেক সৃতি সৌধ আজ ভারতে বিরাজমান । কিন্তু বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে থেকে বিতর্ক ও বিভেদ লেগেই রয়েছে । কোন ভিত্তি ছাড়ায় মিথ্যা গুজব রটিয়ে মুসমানদের প্রচীন ঐতিহ্য গুলিকে জবরদস্তি দখল করা হচ্ছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমি মুসলমানদের কিছু ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিয়ে কথা বলবো যেগুলির মধ্যে কিছু ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং কিছু ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে।
বাবরি মসজিদ;
মুসলমানদের হৃদয়ে এখনো বাবরির জন্য দুঃখের অবকাশ ঘটেনি । এই বাবরি মসজিদ দখলের পিছনে আর.এস.এস এবং বিজেপি সরকারের সব থেকে বড় অবদান ছিল। নরেন্দ্র দামদার মোদী অজোদ্ধ্যা যেখানে সুলতান বাবর আজম দারা স্থাপিত, সেখানের মসজিদকে ভেঙ্গে সেখানে রাম মন্দির বানিয়ে এই বছরেই উদ্বোধন করেন তিনি। এ ছাড়াও মুসলমানদের আরও সৃতি সৌধ গুলিকে তারা নিজের নামে লিপিবদ্ধ করতে চলেছে যা আজ মুসলিম সমাজের চোখের আড়ালে। ভারত বর্ষে এমন অনেক মসজিদ আছে যে গুলি আজ তালা বদ্ধ , আপনি যদি মুর্শিদাবাদ হাজারদুয়ারি গিয়ে থাকেন আপনি অবশ্যই সেখানে নবাবদের তৈরি অনেক মসজিদ তালা বদ্ধ অবস্তায় দেখে থাকবেন ঠিক গোটা ভারতের অবস্থাই এই রকম।
মালদা জেলার আদিনা মসজিদ;
আমি আমার বন্ধুদের সাথে আগস্ট মাসের ১ তারিখে মালদা আদিনা মসজিদ ভ্রমণ উদ্দেশ্যে রওনা দিই সেখানে গিয়ে আমরা আগের তুলনায় অনেক নিত্য নতুন জিনিস উপলব্ধি করেছি। সেখানকার মানুষদের ব্যাবহার দেখে আমদের খুব একটা সুবিধের লাগেনি। তাই মুসলিম সমাজকে বর্তমান আদিনা সম্পর্কে জানাতে এই পদক্ষেপ নিলাম।
ইতিহাস অনুযায়ী সুলতান সামসুদ্দিন ইলিয়াস সাহের পুত্র সিকেন্দার সাহ ১৩৬৯ সালে এই বৃহত্তম মসজিদটিকে নির্মাণ করেন । সিকেন্দার সাহ তিনার সাম্রাজ্য কালে আর অনেক কিছু স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন তার মধ্যা একটি উল্লেখ যোগ্য নিদর্শন এই আদিনা মসজিদ। এটি এককালে এশিয়া মাহাদেশের এক বিশিষ্ট বড় মসজিদ রুপে পরিচিত ছিল। মুলত এটির মিম্বারটি বাবরি মসজিদের অনুকরণ করে বানানো। এবং এই মাসজিদের মত ছাউনি দেওয়া মিম্বার পরবর্তী কালে কুতুব শাহী মসজিদে ব্যাবহার করা হয়েছে।
আদিনা মসজিদের বর্তমান আবস্তা ঃ
সাধারণত আদিনা মসজিদটি যেখানে অবস্থিত তার আসে পাশে হিন্দু পরিবারের বসবাস। সাধারণ মানুষজনেরা ঘাস কাটতে বা বিভিন্ন কাজে এই মসজিদে প্রবেশ করে। আমি একজন সাধারণ মানুষ কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে এটি একটি মন্দির যেটি পঞ্ছকপান্ডব দারা নির্মিত সেই মন্দির কে ভেঙে বানানো হয়েছে। এই রকম আর অনেক কাহিনি আমার এই মসজিদের সম্পর্কে শুনতে পাবো। আসলে সাধারণ মানুষদের মধ্যে কিছু মানুষ রাজনীতির চক্করে এই উসকানি দিচ্ছে। আপনি যদি সে খানে গিয়ে থাকেন তা হলে সেখানে নতুন অনেক কিছু দেখতে পাবেন। এর পূর্বে আমরা যখন এই আদিনা মসজিদ ভ্রমনে যাই তখন আমরা তাতে কোন পাহারা কোন কিছুতে বাধা দেখতে পায়নি। কিন্তু এই বার অর্থাৎ দ্বিতীয়বার ঘুরতে গিয়ে আমরা সেখানে একটি নোটিশ দেখতে পাই এখানে কোন ধরনের মোবাইল বা ক্যামেরা এর ব্যবহার বিশেষভাবে নিষিদ্ধ। এটির কারণ কি? সরকার এটিকে মিডিয়ার সামনে আনতে বাঁধা দিচ্ছে নাকী ভীতর ভীতর কিছু ষড়যন্ত্র চলছে যা সাধারণ মানুষের সামনে আনতে নাকোচ করছে এই সরকার । এই মোবাইল ফোন ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা প্রণয়ন করে তারা নতুন এক ব্যবসা শুরু করেছে। তারা ব্যাগ বা মোবাইল রাখার জন্য নিয়মিত পয়সা দাবী করছে। আমার মনে খটকা এই জন্য লেগেছে কারণ যারা ব্যাংক মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা রাখার জন্য পয়সা দাবি করছে তাদের কাছে সরকারের তরফ থেকে কোন আইডি নাই এবং যদিও পুলিশ আছে তাদের এই বিষয়ে কোন মাথা ঘামানো নেই।আমরা তাদের এই সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তারা এর উত্তরে কোন কিছু বলেন না ।
আদিনা মসজিদ নিয়ে বিতর্কঃ
২০২২ সালের মে মাসে এক হিন্দু পণ্ডিত রথিন্দ্র বসু টুইটারে এক টুইট বার্তায় বলেন যে আদিনা মসজিদের নিচে রয়েছে আদিনাথ মন্দির এই নিয়ে তুমুল চর্চা হয় ইন্টারনেটে। কিন্তু এর কিছু দিন পরে সেগুলির চর্চা বন্ধ হয়ে যায়। তারই কিছুদিন পরে সেখানে এক হিন্দু পুরহিত অর্নব গোস্বামী হিরণময় গোস্বামী ও তাদের কিছু সাঙ্গ পাঙ্গ দের নিয়ে এই আদিনা মসজিদে এক পূজা আর্চনার শুরু করেন তাতে তিনি বলেন যে আমকে স্বয়ং ভগবান এখানে ডেকেছেন।(ASI) তাদের এই কাজে বাঁধা দেয় তাতে তিনি বিরধিতা করেন। ASI আরক্ললজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্দিয়া গাজল থানায় একটি কেশ ফাইল করে সেখানে ডিএসপি অফিসার নবীন চন্দ্র পোদ্দার সেখনে হাজির হন ও তাদের সে খান থেকে তাদের যেতে বলেন।
মূল্যায়ন:
মূলত উক্ত মসজিদের মিম্বার ও ডিজাইন এই প্রমাণিত করে যে এই ঐতিহ্য স্থানটি আসলেই একটি মসজিদ। তাছাড়া মিম্বারের সামনে একটি ক্যালিগ্রাফি আঁকা রয়েছে যেটাতে আল কুরানের সুরা জুম্মা সূরাটি সুন্দর ভাবে লিখা দেখতে পাওয়া যায় তা ছাড়া নামাজ পড়ার জন্য ঠিক লম্বা লাইন একটি মেহেরাব যেটি এটা মসজিদ হওয়ার পুরিচয় দেয়। এ ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে যে গুলি এটি মসজিদ হওয়ার প্রমান দেয়। স্থানীয়দের দাবি যে তারা নাকি মসজিদের মেম্বারে একটি মূর্তি দেখেন কিন্তু সত্যিটা তবেই প্রকট হবে যখন আমরা আসল কাহিনী বুঝতে পারব। ঠিক এরকমই একটা কাহিনী দিয়ে বাবরি মসজিদকে মন্দিরে পরিণত করা হলো। বাবরি মসজিদের ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু হিন্দু আরএসএস কর্মীরা একটি হিন্দু মূর্তিকে রেখে দেয় এবং পরে দাবি করে যে এটা আসলে মন্দির ছিল। মিম্বারটি খুবই বড় তাতে চড়ার জন্য অনেক গুলি সিড়ী রয়েছে , তার মধ্যে থেকে দুইটি সিঁড়ির পাথর কে সরিয়ে সেখানে একটি মুর্তি অঙ্কন করা হয়েছে । আমার মতে এগুলির হওয়ার পিছনে মুসলমানদেরও দোষ রয়েছে। মসজিদে যদি যথাযথভাবে উপাসনা না হয় তাহলে মসজিদ অবশ্যই বন্ধ হবে। এই রকম ভাবে ভারতের অনেক মুসলমানদের মসজিদ গুলি তালা বদ্ধ যদি মুসলমানেরা এই মসজিদ্গুলির মধ্যে পুনরায় নামাজ বা ধর্মীয় কাজ কর্ম শুরু করে তাহলে এই সমস্ত ঝামেলাগুলির সম্মুখীন আমাদের হতে হবে না । তা ছাড়া এই রকম ভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমাদের কাছ থেকে বাবরির মত এই আদিনা মসজিদটিও হারাতে হবে কেবল সেটিই নয় একে একে আমরা আমাদের সমস্ত কিছু কে হারাতে থাকব এবং এই আদিনার জন্য সরকারের কোন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নচেৎ আবার আমরা সেই হিন্দু মুসলিমদের আর একটি বড়ষড় বিভেদ বিতর্ক দেখতে বাধ্য হবো, যাতে বাড়বে বিরধিতা, হবে দুই দলের ক্ষতি । তাই আমার আবদার এটির পক্ষে সরকার যেন খুবই তাড়াতাড়ি কোন পদক্ষেপ নেয়। হে মুসলিম সমাজ এগিয়ে এসো ও তোমাদের সৃতি সৌধ গুলিকে রক্ষা কর।