বাগদাদ: ইসলামি বিশ্বের অষ্টম শতক থেকে একাদশ শতকের মূলকেন্দ্র

 
বাগদাদ একটি ঐতিহাসিক শহর, যা আষ্টম শতক থেকে একাদশ শতকের মধ্যে ইসলামিক বিশ্বের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। এই শহর মুসলিম সভ্যতার মহান উন্নতি এবং অবদানের কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হয়েছে। বাগদাদ ইসলামিক প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ ও কলা এমনকি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও একটি নতুন আদর্শ স্থান ছিল। 
বাগদাদের গঠন ও উন্নতি মুসলিম খলিফার  দ্বারা শুরু হয়েছিল। এই শহরের অধিকাংশ অংশ উদ্ভাবন করা হয়েছিল উদ্ভাবনশীল আরব এলিটদ্বারা। বাগদাদ একটি আদর্শ শহর ছিল, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও ভাষা থেকে সমগ্র ইসলামিক সভ্যতা ও জ্ঞানগত প্রগতির মিশ্রণ ঘটেছিল।
 
বাগদাদ ইসলামিক সাংস্কৃতিক জীবনের একটি কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত ছিল। এই শহরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, সাহিত্য, কাব্য, দর্শন, তত্ত্ব ও ফলস্বরূপ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগে অবদান রেখেছেন পলিমাথ বিদ্যাবান লোকেরা। ইসলামিক ভাষার সহিত আরবি, ফার্সি ও গ্রিক ভাষার প্রতিষ্ঠান এখানে গঠন করা হয়েছিল। এই উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে এবং বিভিন্ন দেশে থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের আহ্বান করে। 
বাগদাদ ছিল একটি বিজ্ঞান, গণিত, নকশা ও ফলিত উন্নত কেন্দ্র। বিজ্ঞান ও গণিতের ক্ষেত্রে বাগদাদ পূর্ণসংকটে ছিল। গণিতবিদগণ এবং তত্ত্ববিদগণ বাগদাদের উন্নত বিজ্ঞানিক সভ্যতা এবং প্রজ্ঞার সাম্রাজ্যিক অধিষ্ঠানগুলিতে নানা প্রযুক্তির বিকাশ করেছিলেন। বাগদাদ বিজ্ঞান ও গণিতের উচ্চ স্থানাঙ্ক প্রাপ্ত করেছিল, যা পূর্বের মধ্যপ্রাচ্যের বিজ্ঞান ও গণিতের বিদেশী অনুসরণের ফলে হয়েছিল। 
বাগদাদের সাহিত্যিক সংস্কৃতি অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল। আলমগীর সাহিত্যিক কেন্দ্র বাগদাদের সাহিত্যিক রচনার জন্য প্রশংসা পায়। এখানে রচিত গ্রন্থ, কাব্য, নাটক, ওপেরা ও গীতিকবিতা সমষ্টিগত ছিল। বাগদাদের শিল্পীদের লেখা, গান ও নাটক সুপরিচিত ছিল। 
বাগদাদ একটি সাম্রাজ্যিক শহর হিসাবে পরিচিত ছিল। এই শহরে মানুষ গোপন তথ্য এবং ধার্মিক ধারণাগুলির স্থায়ীভাবে সংগ্রহ করতো। সংগ্রহকৃত তথ্য বাগদাদের প্রকৃতিসম্পদের সাথে একত্রিত হয়েছে এবং এটি বড় বাংলায় উৎসাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বিশ্বের আলোকিত একটি কেন্দ্র গড়েছিল। 
মুসলিম আরবি ভাষার অগ্রগতি ও সাহিত্যিক প্রগতি একইসাথে বাগদাদে সংঘটিত হয়। এই শহরে আরবি ভাষায় উপন্যাস, কাব্য, গীত, নাটক এবং আরবি সাহিত্যের অন্যান্য রচনা গুলি লেখা হয়। বাগদাদে রচিত এই আরবি রচনাগুলি বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত এবং ব্যাপক প্রশংসা পায়। 
বাগদাদ ইসলামিক দরবারের কেন্দ্র হিসাবেও পরিচিত ছিল। খলিফা আল মামুন, আল মামুন, হারূন আর রাশিদুন খালিফা সহ অন্যান্য খলিফারা এখানে প্রশাসনিক কাজ করেছিলেন। তাদের দরবারে প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক ও নৈতিক স্বাধীনতা এবং তারপরের সাহিত্যিকদের উপন্যাস, কাব্য ও গান কাজে লাগানো হয়েছিল।
 
বাগদাদ একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও নিউক্লিয়ার শহর ছিল। এখানে প্রচলিত বাজার, ব্যবসায় এবং কেনাকাটা অত্যন্ত প্রফুল্লিত ছিল। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ে সংগ্রহশালাগুলি, দোকানগুলি, সেমিনার এবং উদ্যানের অন্যান্য সুযোগ গুলিই ছিল বাগদাদের সংগঠিত ও উন্নত বাজারের অংশ।
 প্রভারধারী ও সক্ষম বাগদাদের ব্যবসায়িক উন্নয়নের ফলে এই শহরে আরবি, ফার্সি, তুর্কী, ইরানী, হিন্দু, গ্রীক এবং চীনা কম্পানির প্রধান শাখা গুলি রয়েছে।
 
এইভাবে বাগদাদ আষ্টম শতক থেকে একাদশ শতকের মধ্যে ইসলামিক বিশ্বের মধ্যস্থতা ও মহান উন্নতির কেন্দ্র হিসাবে অত্যন্ত প্রশংসিত ছিল। এই শহরের মাধ্যমে ইসলামিক সভ্যতা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জ্ঞান একসঙ্গে একত্রিত হয়েছে। বাগদাদ একটি নতুন আদর্শ স্থান হিসেবে অপরিহার্য ব্যপক প্রভাব রেখেছে ইসলামিক বিশ্বে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter