নারী শিক্ষা নিয়ে দিনের পর দিন আফগান তালেবানের আপত্তিকর সিদ্ধান্ত

ইসলাম কখনও নারী শিক্ষা অধিকারে বিরোধিতা করেনা। কিন্তু আফগানী তালেবানরা
দিনের পর দিন তাদের ভুল ধারণার ফলে আফগানী নারীরা  তাদের  অত্যাচার ও
অবিচারের  শিকার হচ্ছে। বিশ্ব নবী (সাঃ) শিক্ষা অধিকারকে ব্যাখ্যা করতে
গিয়ে বলেন: "প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর ওপর শিক্ষা অর্জন করা অনিবার্য।"
এই থেকে বোঝা যাই যে ইসলাম কখনও নারী শিখায় বাধা দেয় না। বরং ইসলাম
প্রত্যেক নর ও নারীকে উৎসাহ দেয় শিক্ষার প্রতি।শিক্ষাই হলো এক জাতির
মেরুদন্ড বলেছেন বহু বিশেষজ্ঞরা। কিছু আরবি ভাষী কবিগণ লিখেছেন ''আল
উম্মু মাদ্রাসাতুন" যে মা অর্থাৎ এক জন নারী হলেন প্রথম স্কুল ' অর্থাৎ
মা প্রত্যেক মাকে আগে শিক্ষিত হতে হবে তবে তার সন্তানরাকে শিক্ষিত করার
সক্ষম হবেন।

অনেকেই মনে করেন যে তালেবানের সিদ্ধান্তে নারীদের শিক্ষা গ্রহণে নিষেধ
করা সত্যিই বিপজ্জনক। তারা বলে যে এটি কাউকে খুশি করবে না এবং তালেবান
নেতারা এবং মহিলারা উভয়েই দীর্ঘমেয়াদে ভোগান্তির শিকার হবে।

কিছু লোক মনে করেন যে তালেবানদের নারীদের শিক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত
ভুল। এটি ইসলামের শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তাই এটি সামগ্রিকভাবে
আফগানিস্তানে যেভাবে করা হয় তার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলবে।তালেবান
১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করে। তখন নারীরা পড়াশোনা বা
চাকরি করতে পারত না। 2001 সালে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী তালেবানদের
ক্ষমতাচ্যুত করে এবং মহিলাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করে।

আফগানিস্তানে প্রায় ২০ বছরের যুদ্ধের পর, মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ২০২১
সালের আগস্টে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে। এর ফলে তালেবানরা দেশটির
নিয়ন্ত্রণ নেয়। এই প্রক্রিয়ায় তুমুল বিজয়ে তালেবান পুনরায়
নির্বাচিত হয়।

তালেবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসার পর, তারা আফগানিস্তানে ইসলামী আইন (শরিয়া)
কার্যকর করা শুরু করে। তবে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা আগের
শাসনামলের মতো কঠোর হবেন না।

তালেবানরা বলে যে তারা নারীর অধিকারকে সম্মান করবে, কিন্তু কিছু দিন পর
তারা দেশের বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সমস্ত মেয়ে ছাত্রীকে বের
করে দেয়। আফগান নারী শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন যে তালেবানরা নারী শিক্ষা
নিষিদ্ধ করতে পারে যদি এটি ঘটতে থাকে।দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত বছরের (২০২২)
ডিসেম্বরে একটি নির্দেশিকা আসে। প্রায় অবিলম্বে, তালেবান আফগানিস্তানে
মহিলাদের জন্য উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে
অনেক নারীর শিক্ষা লাভ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।পরদিন হিজাব পরা আফগান নারী
শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যান। কিন্তু তালেবান
প্রহরীরা ফটকেই আটকে দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেন। হতাশ নারী শিক্ষার্থীরা
ফটকের বাইরেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন।

নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ করার কয়েকদিন পরই আফগান নারীদের দেশি-বিদেশি এনজিওতে
কাজ করার বিরুদ্ধেও নেমে আসে নিষেধাজ্ঞার খড়্গ। ২৪ ডিসেম্বর তালেবান
কর্তৃপক্ষ জানায়, নির্ধারিত ইসলামি ড্রেস কোড মেনে না চলার কারণে এখন
থেকে দেশি এবং বিদেশি এনজিওতে আফগান নারীরা আর কাজ করতে পারবেন
না।দেশটিতে সক্রিয় এনজিওগুলোকে আদেশ দেয়া হয়েছে যেন সংস্থাগুলোর নারী
কর্মীদের কাজে যোগদান বন্ধ করা হয়। এ আদেশ পালন না করলে এনজিওগুলোর
লাইসেন্স বাতিলের হুমকিও দেয়া হয়েছে।

জাতিসংঘ তালেবানের জারি করা নির্দেশকে মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন বলে নিন্দা
জানিয়েছে। পরবর্তী সময়ে কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সেভ দ্য চিলড্রেন ও
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের (এনআরসি) মতো আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো
দেশটিতে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।বিভিন্ন এনজিওগুলো এক
যৌথ বয়ানে জানিয়েছে, নারীদের ছাড়া তাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। আফগান
নারী ও পুরুষ উভয়েই যেন সমানভাবে এনজিওগুলোর জীবন রক্ষাকারী সহায়তা সেবা
চালিয়ে যেতে পারে সেই প্রত্যাশাই করছে তারা।আফগানিস্তানের বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিভিন্ন প্রদেশে সেমিস্টারের প্রথম দিনে
শুরু হয়। যাইহোক, তালেবান সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি
পাঠিয়ে বলেছে যে, এ বছর নারীদের এই পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হবে না।
শনিবার আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই চিঠি পেয়েছে।

গত মাসে, তালেবান আফগান নারীদের প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার
ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মানে হল যে আফগান মহিলারা আর এই
স্কুলগুলিতে পড়তে পারবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই নিষেধাজ্ঞার
উদ্দেশ্য তরুণদের অবাধ বিচরণ বন্ধ করা এবং আফগান নারীদের এমন
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বন্ধ করা যা ইসলামিক নয়।শিক্ষামন্ত্রী বলেন,
বিশ্ববিদ্যালয় তার পরিবেশগত চর্চা সংস্কারে কাজ করছে। শীঘ্রই, মহিলাদের
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে, এবং তারা তাদের
পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

শনিবার দেশটির উচ্চশিক্ষামন্ত্রীর মুখপাত্র জিয়াউল্লাহ হাশমি বলেন,
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নিতে না
দেওয়ার জন্য একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সরকার
আইনগত ব্যবস্থা নেবে।আফগানিস্তানের ২৪টি প্রদেশে প্রায় ১৪০টি বেসরকারী
বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রায় ২লাখ
শিক্ষার্থী রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রায় ৬০-৭০ হাজার
ছাত্রছাত্রী। বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভ করে নারীরা।
প্রায় ৫০জন নারী জড়ো হয় কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। এসময় তারা ‘শিক্ষা
আমাদের অধিকার’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।

খবর সূত্রে পাওয়া যাই যে তালেবানরা বলেছে একজন মহিলার চিকিৎসা করবেন একজন
মহিলা ডাক্তার। তাহলে শিক্ষার ওপর এই ভাবে খাঁড়া চড়িয়ে রাখলে স্বপ্ন
কেমনে হবে পূরণ?

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter