হযরত মুহাম্মাদ ﷺ এর জন্মগ্রহণ
পৃথিবীর বুকে একসময় যখন মানুষ চারিদিকে মূর্তি পূজায় লিপ্ত ছিল, কোনও দিকেই এক আল্লাহর ইবাদত হত না, নিরক্ষ মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছিল। আরবের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সংস্কার, ব্যাবহারিক সভ্যতা ও তাদের উন্নতির অবস্থা প্রচণ্ড ক্ষতির সীমানায় নেমে পড়েছিল। আরবে যুদ্ধ, ঝগড়া, বিবাদ ও কুসংস্কার করা ছিল অনেক সাধারণ ব্যাপার। নৈরাশ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও হাহাকার তখন আরবের মরুভূমিতে চলছিল। ভদ্রতা, নম্রতা, দয়া-মায়া, কায়দা ও কানুন, নারীর মর্যাদা ইত্যাদির কোনও অস্তিত্বই ছিল না, সব কিছুই যেন উধাও হয়ে গিয়েছিল। কোন ব্যক্তির বাড়িতে যদি কন্যাসন্তান জন্ম নিত তাহলে তাকে সেই বাড়ি থেকে এনে জীবিত গেঁড়ে দেওয়া হত কবরে, মহিলাদের সাথে ঘৃণা ব্যবহার, অত্যাচার এমনকি সমাজে তাদের কোনও মর্যাদায় দেওয়া হত না, মহিলাদেরকে অনেক হীন ও খারাপ নজরে দেখা হত। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের  মূর্তি পূজা ও বর্বরতার ধ্বংস করা ও তাদের নীচে নেমে যাওয়া সমাজকে উঁচু করা, মহিলাদের মর্যাদাকে  উঠিয়ে নিয়ে এসে এক অন্যতম উঁচু মর্যাদায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নবী মুহাম্মাদ ﷺ কে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ই রবিউল আওয়াল সোমবার সুবেহ সাদিকের সময় আমিনার কোল হইতে পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করেন।
আল কুরআনের আলোকপাতে রসূল ﷺ প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য: 
আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে বলেছেন “ তিনিই নিরক্ষদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের পাঠ করান তার আয়াতসমূহ, তাদের কে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতি পূর্বেই তারা ছিল পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।”এই আয়াতে মোট  তিনটি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে নবী ﷺ এর প্রেরণের মূল উদ্দেশ্যে:  ১) তিনি যে নিরক্ষরদের কাছে প্রেরিত তাদেরকে তার প্রতি নাযিল-কৃত আয়াত তিলাওয়াত করে শোনানো। এখানে আয়াত বলতে আল্লাহর বাণী আল কোরআন কে বোঝানো হয়েছে।
২) নিরক্ষদের পবিত্র করা। এই পবিত্র করার তাফসির হচ্ছে যে সেই জামানার নিরক্ষ মানুষদের কুফর ও শিরক থেকে দূরে রাখা। কেননা সেই জামানার লোকেরা এই কাজগুলিকেই পছন্দ করত।
৩) কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দেওয়া। এখানে কিতাব অর্থ আল্লাহর বাণী কুরআন ও হিকমত অর্থ রসূল কর্তৃক বর্ণিত উক্তি-গত ও কর্মরত শিক্ষাসমূহ।
নবী ﷺ এর জন্মের পরের কিছু ঘটনা:
১) কাবা ঘরের সমস্ত যাবতীয় মূর্তিগুলি চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে ভেঙে পড়ে গিয়েছিল।
২) পারস্যদের প্রাচীন অগ্নিকুন্ড নিভে গিয়েছিল, যেই অগ্নিকুন্ডটি প্রায় এক হাজার বছরের চেয়েও অধিক বছর ধরে তার পূজা করা হয়েছিল।
৩) পারস্য সম্রাট নৌশেরওয়া- এর প্রাসাদ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
তিনি এমন সময় পৃথিবীর বুকে প্রেরণ হয়েছিলেন, যখন কোন দিকেই জ্ঞানের নাম-ঠিকানাই ছিল না। সেজন্য আল্লাহ তাআলা তিনাকে একটি শিক্ষক হয়ে প্রেরণ করেছিলেন, যাতে করে তিনি তাদের কাছে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পারেন ও তাদের হৃদয়ে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করাতে পারেন। তিনি যখন মক্কাবাসীদের ইসলাম গ্রহণ করার প্রচার করতেন, তখন তিনার ভালো ও সুন্দর ব্যবহার দেখে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে ফেলতেন। কেননা তিনার চরিত্র এতই ভালো ও সুন্দর ছিল, যে যেকোন ব্যাক্তি যদি তিনার ব্যবহার দেখে নিত, তাহলে সেই ব্যক্তি নবী ও ইসলামের পেছনে পাগল হয়ে যেত এবং নবী ও ইসলামের জন্য তারা প্রাণ নিতেও পারত ও প্রাণ দিতেও পারত।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter