কুরবানীর কিছু ফাযায়েল ও মাসায়েল

 ঈদ উল আজহা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি। চলতি কোথায় এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ নামেও পরিচিত।  ঈদুল আযহা মূলত আরবি বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’। এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ত্যাগ করা। এই উৎসবকে মুসলমানেরা যুগ যুগ ধরে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নত হিসেবে পালন করে এসেছেন।মুসলিম উম্মাহর সার্বজনীন দুইটি উৎসবের অন্যতম একটি হচ্ছে এই কোরবানির ঈদ। ঈদুল আজহার প্রধান আকর্ষণ পশু কোরবানি করা।

নিজের অর্থে কেনা পশুটি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে জবাই করার মাধ্যমে একজন প্রকৃত মুসলমান মূলত নিজেকে আল্লাহর কাছে সমপর্ণের শিক্ষা নেয়।

 

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

 

মাসআলা উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয।

এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।

তদ্রূপ হাঁস-মুরগি বা কোনো পাখি দ্বারাও কুরবানী জায়েয নয়।

(কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)

 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

 

ولكل امة جعلنا منسكا ليذكروا اسم الله على ما رزقهم من بهيمة الأنعام

 

 (তরজমা) আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানীর নির্দেশ দিয়েছি।

আল্লাহ তাদের রুযি হিসেবে যেসব গৃহপালিত পশু দিয়েছেন তার উপর তারা যেন (জবাই করার সময়) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে।

(সূরা হজ্ব: ৩৪)

 

নর মাদা পশুর কুরবানী

 

মাসআলা : যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়।

 (কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)

 

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা

 

মাসআলা : উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে।

গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে।

আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে।

তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয।

অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

 

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না।

(কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬)

 

জাবের রা. থেকে বর্ণিত,

 

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : لا تذبحوا إلا مسنة، إلا أن يعسر عليكم فتذبحوا جذعة من الضأن.

 

তোমরা (কুরবানীর জন্য) মুসিন্নাহ ব্যতীত যবাই করো না।

(মুসিন্নাহ হল, ৫ বছর বয়সী উট, ২ বছরের গরু ও ছাগলের ক্ষেত্রে ১ বছর

[শরহুন নববী]

যদি সম্ভব না হয় তবে ছয় মাস বয়সী ভেড়া বা দুম্বা।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৬৩)

 

এক পশুতে শরীকের সংখ্যা

 

মাসআলা :একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে।

এমন একটি পশু দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না।

আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে।

সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮)

 

وعن جابر قال : أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نشترك في الإبل والبقر كل سبعة منا في بدنة.

 

জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ করেছেন যে, আমরা একটি গরু এবং একটি উটে সাতজন করে শরীক হয়ে যাই।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২১৮)

 

সাত শরীকের কুরবানী

 

মাসআলা : সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে।

কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হবে না।

যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ।

এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানী সহীহ হবে না।

(বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)

 

মাসআলা : উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)

 

কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে

 

মাসআলা :যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না।

তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না।

তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে।

 (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯)

 

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

 

মাসআলা : কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে।

এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।

ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে।

 

 শৈশবে আকীকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকীকা করা যাবে।

যার আকীকা সে নিজে এবং তার মা-বাবাও আকীকার গোশত খেতে পারবে।

(ইলাউস সুনান ১৭/১২৬)

 

কেউ কেউ কুরবানীর পশুর সাথে আকীকা দিলে আকীকা সহীহ হবে না বলে মত দেন।

কিন্তু নির্ভরযোগ্য আলেমগণ এ মতটি গ্রহণ করেননি।

কোনো হাদীসে কুরবানীর সাথে আকীকা করতে নিষেধ করা হয়নি; বরং কুরবানীর সাথে হজ্বের কুরবানী, জরিমানা দম একত্রে এক পশুতে দেওয়ারও প্রমাণ আছে।

অর্থাৎ কুরবানীর পশুতে অন্য ইবাদতের নিয়তে শরিক হওয়া জায়েয।

সুতরাং আকীকার নিয়তে শরিক হওয়াও জায়েয।

আতা ইবনে আবী রবাহ রাহ. বলেছেন, উট-গরু সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী হতে পারে। আর এতে শরিক হতে পারে কুরবানীকারী, তামাত্তু হজ্বকারী এবং হজ্বের ইহরাম গ্রহণের পর হজ্ব আদায়ে অপারগ ব্যক্তি।

(আসসুনান, সায়ীদ ইবনে মানসূর-আলকিরা লী কাসিদি উম্মিল কুরা ৫৭৩)

 

এছাড়া ফাতাওয়া শামীসহ ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কুরবানীর সাথে আকীকা সহীহ।

দেখুন : রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/১১৬

 

মাসআলা : কুরবানী করতে হবে সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে।

হারাম টাকা দ্বারা কুরবানী করা সহীহ নয় এবং এক্ষেত্রে অন্য শরীকদের কুরবানীও সহীহ হবে না।

 

মাসআলা ১০:  যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে তার জন্য এ পশুতে অন্যকে শরীক করা জায়েয।

তবে এতে কাউকে শরীক না করে একা কুরবানী করাই শ্রেয়।

শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে যেহেতু কুরবানীর নিয়তে পশুটি ক্রয় করার মাধ্যমে লোকটি তার পুরোটাই আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে তাই তার জন্য এ পশুতে অন্যকে শরীক করা জায়েয নয়।

যদি শরিক করে তবে ঐ টাকা সদকা করে দেওয়া জরুরি হবে।

কুরবানীর পশুতে কাউকে শরীক করতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিতে হবে।

(কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০)

 

ভাগে কোরবানির নিয়ম:

মুসলিম উম্মাহর সার্বজনীন দুইটি উৎসবের অন্যতম একটি কোরবানির ঈদ। ঈদুল আজহার প্রধান আকর্ষণ পশু কোরবানি করা।

নিজের অর্থে কেনা পশুটি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে জবাই করার মাধ্যমে একজন প্রকৃত মুসলমান মূলত নিজেকে আল্লাহর কাছে সমপর্ণের শিক্ষা নেয়।

কোরবানির পশুতে প্রত্যেক অংশীদারের অংশ সমান হতে হবে।

কারো অংশ অন্যের অংশ থেকে কম হতে পারবে না।যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ।

এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না।

 

  • উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগেকোরবানি করা জায়েয। (মুসলিম, হাদিস: ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৭)

 

কোনো অংশীদারের নিয়ত গলদ হলে:

  • অংশীদারদের কেউ যদি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে, শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে; তাহলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে অংশীদারদেরও কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অংশীদার নির্বাচন করা জরুরি। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮, কাজিখান: ৩/৩৪৯)

 

কোরবানির পশুতে আকিকার অংশ:

  • কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে অংশীদার হতে পারবে। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই শুদ্ধ হবে। ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে।
  • শৈশবে আকিকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকিকা করা যাবে। যার আকিকা সে নিজে এবং তার মা-বাবাও আকীকারগোশত খেতে পারবে। (ইলাউস সুনান: ১৭/১২৬)
  • ফাতাওয়া শামীসহ ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোরবানির সাথে আকীকা সহীহ। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুর: ৪/১১৬)

 

হারাম টাকার কোরবানি শুদ্ধ নয়:

  • কোরবানি করতে হবে সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে। হারাম টাকা দ্বারা কোরবানি করা শুদ্ধ নয় এবং এক্ষেত্রে অন্য অংশীদারদের কোরবানিও শুদ্ধ হবে না।
  • কেউ যদি গরু, মহিষ বা উট একা কোরবানি দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয়, তাহলে তার জন্য এপশুতে অন্যকে অংশীদার করা জায়েয। তবে এতে কাউকে শরিক না করে একা কোরবানি করাই শ্রেয়। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম।
  • আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়, তাহলে যেহেতু কোরবানির নিয়তে পশুটি ক্রয় করার মাধ্যমে লোকটি তার পুরোটাই আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে, তাই তার জন্য এপশুতে অন্যকে শরিক করা জায়েজ নয়। যদি শরিক করে তবে ওই টাকা সদকা করে দেওয়া জরুরি হবে। কোরবানির পশুতে কাউকে শরিক করতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিতে হবে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter