চার রাকাত তারাবিহ-র নামাজ পর দোয়া মুনাজাত করা কি বেদাত?
বর্তমানে কিছু গুমরাহ ব্যক্তিরা সওয়াবের আমল গুলোকেও বেদাত বলছে। আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে হাত তুলে দোয়া মুনাজাত করা থেকে মুসলিম দের কে বিরত রাখতে চাইছে ।
তাতে কিছু সরল মনা ইমান দার মুসলিমরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
দোয়া মুনাজাত করার বিষয়ে নবী সল্লাল্লাহো আলাইহে অ সাল্লাম এর নির্দেশ কি আছে তা জেনে রাখা উচিত।
-------
ছয়টি সহি হাদিস গ্রন্থের মধ্যে, চারটি হাদিস গ্রন্থে (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাশাই ও ইবনে মাজাহ) নিম্নলিখিত হাদিস শরিফ টি বর্নিত হয়েছে।
আবু দাউদ শরিফ হতে-
باب في صَلاَةِ النَّهَارِ:
حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ مُعَاذٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنِي عَبْدُ رَبِّهِ بْنُ سَعِيدٍ عَنْ أَنَسِ بْنِ أَبِي أَنَسٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ عَنِ الْمُطَّلِبِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ((الصَّلاَةُ مَثْنَى مَثْنَى أَنْ تَشَهَّدَ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَأَنْ تَبَاءَسَ وَتَمَسْكَنَ وَتُقْنِعَ بِيَدَيْكَ وَتَقُولَ اللَّهُمَّ اللَّهُمَّ فَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهِيَ خِدَاجٌ)).
سُئِلَ أَبُو دَاوُدَ عَنْ صَلاَةِ اللَّيْلِ مَثْنَى قَالَ إِنْ شِئْتَ مَثْنَى وَإِنْ شِئْتَ أَرْبَعًا.
ইবনুল মুছান্না (রহঃ) ..... আল-মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নফল নামায দুই দুই রাকাত এবং তুমি প্রতি দুই রাকাতের পর তাশাহহুদ পড়বে, অতপর নিজের বিপদাপদ ও দারিদ্রের কথা প্রকাশ করে দুই হাত তুলে দু’আ করবেঃ আল্লাহুম্মা, আল্লাহুম্মা - ইত্যাদি। যে ব্যক্তি এরূপ করবে না তার নামায ত্রুটিপূর্ণ।
ইমাম আবু দাউদ (রহঃ)-কে রাতের নফল নামায দুই রাকাত করে আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তুমি ইচ্ছা করলে দুই বা চার রাকাত করেও আদায় করতে পার।
( আবু দাউদ শরীফ নেট এপ্স 1296,1298 বাংলা অনুবাদ 317 পৃষ্ঠা হাদিস নম্বর 1296, ইবনে মাজাহ অনুবাদ 270 পৃষ্ঠা হাদিস নম্বর 1325)
----------
তিরমিযী শরিফ হতে-
باب مَا جَاءَ فِي التَّخَشُّعِ فِي الصَّلاَةِ:
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ أَخْبَرَنَا اللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ أَخْبَرَنَا عَبْدُ رَبِّهِ بْنُ سَعِيدٍ عَنْ عِمْرَانَ بْنِ أَبِي أَنَسٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نَافِعِ ابْنِ الْعَمْيَاءِ عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ عَنِ الْفَضْلِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
((الصَّلاَةُ مَثْنَى مَثْنَى تَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَتَخَشَّعُ وَتَضَرَّعُ وَتَمَسْكَنُ وَتَذَرَّعُ وَتُقْنِعُ يَدَيْكَ يَقُولُ تَرْفَعُهُمَا إِلَى رَبِّكَ مُسْتَقْبِلاً بِبُطُونِهِمَا وَجْهَكَ وَتَقُولُ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهُوَ كَذَا وَكَذَا)).
قَالَ أَبُو عِيسَى: وَقَالَ غَيْرُ ابْنِ الْمُبَارَكِ فِي هَذَا الْحَدِيثِ: ((مَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهِيَ خِدَاجٌ)).
قَالَ أَبُو عِيسَى: سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ يَقُولُ رَوَى شُعْبَةُ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ عَبْدِ رَبِّهِ بْنِ سَعِيدٍ فَأَخْطَأَ فِي مَوَاضِعَ فَقَالَ عَنْ أَنَسِ بْنِ أَبِي أَنَسٍ وَهُوَ عِمْرَانُ بْنُ أَبِي أَنَسٍ وَقَالَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ وَإِنَّمَا هُوَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نَافِعِ ابْنِ الْعَمْيَاءِ عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ. وَقَالَ شُعْبَةُ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ عَنِ الْمُطَّلِبِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِنَّمَا هُوَ عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَنِ الْفَضْلِ بْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ مُحَمَّدٌ وَحَدِيثُ اللَّيْثِ بْنِ سَعْدٍ يَعْنِي أَصَحَّ مِنْ حَدِيثِ شُعْبَةَ.
অনুচ্ছেদঃ
নামাযে বিনয় হওয়া
ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামায দুই দুই রাক’আত; প্রতি দুই রাক’আত পর তাশাহ্হুদ পাঠ করতে হবে; নামাযী কে বিনয়ী হতে হবে, মিনতির সাথে প্রার্থনা করতে হবে; কপর্দকহীন হতে হবে। কোন কিছুকে ওয়াসীলা করে চাইতে হবে। এ অবস্থায় তোমার প্রতিপালকের দরবারে নিজের দু’হাত তুলবে, হাতের তালু তোমার চেহারার দিকে থাকবে, তারপর বলবে, হে প্রভু, হে প্রতিপালক। যে ব্যক্তি এমনটি না করবে তার নামায এরূপ এবং এরূপ হবে।
আবূ ঈসা বলেনঃ ইবনুল মুবারাক ছাড়া অন্যান্য রাবীগণ হাদীসের শেষের অংশ এরূপ বর্ণনা করেছেনঃ যে ব্যক্তি এরূপ (বিনয়-নম্রতা অবলম্বন) করল না তার নামায পূর্ণাঙ্গ হল না।
আবূ ঈসা বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল বুখারী কে বলতে শুনেছি, শুবা এ হাদীসটি আবদে রব্বিহি ইবনু সাঈদের সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি কয়েকটি জায়াগায় ভুল করেছেন। তিনি বলেছেন, আনাস ইবনু আবী আনাস হতে প্রকৃতপক্ষে তা হবে ইমরান ইবনু আবী আনাস, তিনি বলেছেন আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিস হতে প্রকৃতপক্ষে তা হবে আব্দুল্লাহ ইবনুল নাফি হতে তিনি রাবীয়া ইবনুল হারিস হতে। শুবা বলেছেন আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিস হতে তিনি মুত্তালিব হতে তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে। প্রকৃতপক্ষে তা হবে রাবীয়া ইবনুল হারিস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব হতে, তিনি ফাযল ইবনুল আব্বাস হতে তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে। মুহাম্মাদ (বুখারী) বলেছেন, শুবার বর্ণিত হাদীসের চেয়ে লাইসের বর্ণনাটি বেশি সহীহ।
(উপরের সনদ টি লাইস হতে বর্ণিত, সুতরাং ইমাম বুখারী রহ এর মন্তব্য অনুযায়ী তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হাদীস টি বেশি সহিহ্)
(মতন আবু দাউদ শরিফ 183পৃষ্ঠা,অনুবাদ আবু দাউদ শরিফ 317পৃষ্ঠা হাদিস নম্বর 1296, অনুবাদ তিরমিযী 172 পৃষ্ঠা, হাদিস নম্বর 361, এপ্স তিরমিযী হাদিস নম্বর 385 , আরবি এপ্স 386 )
এছাড়া উক্ত হাদিস টি ইবনে মাজাহ শরিফ এবং নাশাই শরিফে আছে।
---------
উপরোক্ত হাদিস শরিফ সমূহ হতে প্রমাণিত হয় নামাজ শেষে দুহাত তুলে দোয়া করার জন্য স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহো আলাইহে অ সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন।
তারাবিহ র নামাজ চার রাকাত পড়ার পর কিছু সময় বিরতি থাকবে। আর বিরতির সময় তাসবিহ তাহলিল ও দোয়া মুনাজাতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা অধিক সওয়াবের কাজ। সে কারনে তারাবিহ নামাজের প্রতি চার রাকাত পর দোয়া মুনাজাত করুন, যদি নিজে না করেন তাতে কোনো জোর জুলুম নাই , কিন্তু নেকির আমল কে বেদাত বলে নিজেকে জাহান্নামের জ্বালানি বানাবেন না।