আসাম রাজ্যে আজান ফকির এবং সুফি প্রভাব

ভারতীয় ঐতিহ্য এবং ইসলামী কিছু নৈতিক আচরণ উভয়ই গভীরভাবে শান্তি ও সম্প্রীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ইসলামের সুফিশিক্ষা ও ভারতের ভক্তি আন্দোলন বিভিন্ন সামাজিক বিভাজনের মধ্যে আন্তঃসাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের সুনিপুণ বন্ধন প্রতিষ্ঠা করেছে। উত্তর-পূর্ব ভারত এই দুটি ভিন্ন সংস্কৃতির একীকরণের জন্য একটি উজ্জ্বল উদহারণ। যেরকম, আজান ফকির রচিত জিকির গীতের পর ফিরনি এবং কীর্তনের পর প্রসাদ উভয়ই একটি বিশাল সমাজ ভোজন। ঐতিহাসিকভাবে, মধ্যযুগীয় উত্তর-পূর্ব ভারত পুরোপুরি স্থিতিশীল ছিল না, যেহুতু ক্ষমতার জন্য রাজ্য-সাম্রাজ্যের মধ্যে লড়াই লেগে থাকতো। ফলস্বরূপ, আন্তঃধর্মীয় ফাটল এবং সাম্প্রদায়িক অশান্তি ঘটতেই থাকে। বর্তমানে, সুফিবাদ ও ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা সুচারুরূপে গড়ে ওঠা সমন্বয়বাদের হারানো শিক্ষা আবার ফিরে দেখার সময়। 

   বহু-সাংস্কৃতিক তরঙ্গ এবং বিভিন্ন ঐতিহ্য ভারতকে একীভূত বৈচিত্র্য এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সমুদ্রে পরিণত করে।  ইসলামের সুফিশিক্ষা সমসাময়িক সমাজের রীতিনীতির সাথে মিশে সামাজিক নৃতত্ত্বের একটি শক্তিশালী সংহতি তৈরিতে অবদান রেখেছে। উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির বিশেষ করে আসামের বর্তমান অশান্তি-বিধ্বস্ত পরিবেশের ঐতিহাসিক পাতায় সমন্বয়বাদের এই বন্ধুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। এই অঞ্চলগুলি অতি-জাতীয়তাবাদের আগুনে বা কখনও কখনও বিচ্ছিন্নতা এবং সংখ্যালঘু বৈষম্যের বিদ্বেষে জ্বলে ওঠে।  বিপরীতে, এটি ছিল আন্তঃধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মিলনের একটি ক্ষেত্র।  এটা কিভাবে ঘটেছে?  ভাষা, সাহিত্য, শিল্পকলা, সঙ্গীত এবং জীবনধারার মাধ্যমে;  সুফি ও সাধুরা তা সম্ভব করে গেছেন।  আসামে জিকর ও জারি, বাংলায় বাউল গান এবং অন্যান্য অনেক স্থানীয় ভাষায় এই প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায়।

   যাইহোক, ইসলামের অতীন্দ্রিয় শক্তি সুফি প্রদত্ত পরিসংখ্যান, আধ্যাত্মিকতা এবং বাস্তব নীতিগুলির সমন্বিত পন্থা এই অঞ্চলে যখন ছড়িয়ে পরে, তখন মর্যাদা ও ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ তাদের মৃত্যুর পরেও তাদের দোরগোড়ায় একত্রিত হয়। যখন আহোম রাজা রাজ্যের সাংস্কৃতিক রাজধানী শিবসাগরের সোরাগরি সাপোরিতে আজান ফকির শাহ মিরনের মাজার তৈরি করেন তখন সুফিবাদের রহস্যময় প্রভাবই ফুটে উঠে।  বিপরীতে, বর্তমানে এই অঞ্চলটি ধর্মীয় অবমাননার প্রবণতার সম্মুখীন।  এখনও এই ধরনের কারণগুলি এই অঞ্চলে চলমান ব্যাঘাতের প্রতিকার হিসাবে অন্বেষণ করা জরুরি।

সুফিবাদের রহস্যময় সফট-পাওয়ার

 ইসলামের আবির্ভাবের সাথে, মহান স্রষ্টা আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্য জাগতিকতা এবং বস্তুবাদের বিরুদ্ধে সুফিবাদ একটি প্রতিরোধী শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়।  ব্যস্ত জীবন, লোভ ও শত্রুতার সমসাময়িক সমাজের নিয়ম বিধি উপেক্ষা করে সুফিরা একটি আনন্দময় অস্তিত্বের জন্য প্রেম, ক্ষমা, সাম্য, আন্তঃবিশ্বাসের বোঝাপড়া এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভ্যন্তরীণ গুণাবলীকে ধারণ করেন।  প্রকৃতপক্ষে, সুফিরা হলেন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আত্তীকরণ সহ ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের মহান প্রবর্তক। অবশ্যই, তাদের হৃদয়ে সত্য আর সত্য প্রেম ছাড়া কিছু থাকেনা।

 ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতকের সময়ে, ভারতীয় ঐতিহ্যের সৌন্দর্য সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, সামাজিক কোলাহল, অজ্ঞতার আবদ্ধ, ক্ষমতার সংঘর্ষের শিকলে পড়ে ছিল।  হযরত শাহ মিরান, যিনি আজান ফকির নামে পরিচিত - উত্তর-পূর্ব ভারতীয় মুসলিম প্রতিচ্ছবি এবং ধর্মীয় সমন্বয়বাদের পথপ্রদর্শক - একজন নবজাগরণের মানুষ এবং তাদের সকলের মধ্যে কার্যকরভাবে একত্রিত করার কারণ হিসাবে সমাদৃত হন।

আন্ত:সাংস্কৃতিক সেতু

সুফিবাদ বিভিন্ন আঞ্চলিক ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সাথে ইসলামী নীতিগুলিকে আত্তীকরণ করেছে যা স্থানীয় লোকজনকে ইসলাম সম্পর্কে ঘনিষ্ঠভাবে জানতে এবং তা গ্রহণ করতে সাহায্য করে। এমনকি ইসলামের সুফি অনুশীলন ভারতীয় উপমহাদেশে ভক্তি আন্দোলনকে প্রভাবিত করে এবং সমস্ত সামাজিক স্তরের বিশেষ করে প্রত্যাখ্যাত এবং ক্রীতদাসদের কাছে ব্যাপকভাবে পৌঁছে যায়।  উদাহরণস্বরূপ, বুল্লেহ শাহ, নিজামুদ্দিন আউলিয়া এবং আমির খসরু (রঃ)-এর মত সুফিদের অনেক নমুনা।  সাংস্কৃতিক সমন্বয়বাদে তাঁদের প্রভাব একটি সংযোগ সেতু এবং শান্তির প্রকাশ হিসাবে দাঁড়িয়েছে।[1]

 ১৭ শতকের গোড়ার দিকে শাহ মিরান একজন দরবেশ হিসাবে বাগদাদ থেকে ভ্রমণ করেন এবং আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায নিজ বসতি বেছে নেন। অঞ্চলটি স্বাধীনভাবে আহোম হিন্দু রাজাদের দ্বারা শাসিত হতো।  মুঘলরা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ অর্জনের জন্য বেশ কয়েকটি অভিযানের নেতৃত্ব দেয়, কিন্তু বিফলে।  স্পষ্টতই, শিবসাগরের এই অঞ্চলের সাথে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতি মসৃণ স্তরের ছিল না।  আজান ফকির মৃদুভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রভাবিত করেন এবং তাদের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান অনুশীলন করে মানবতার এক ছাতার নীচে তাদের একত্রিত করতে সক্ষম হন।  পারস্যের এই দরবেশ আসমের বাসিন্দা হন। একই সঙ্গে তিনি ভ্রমণকারী, গায়ক, কবি, সমাজ সংস্কারক এবং আজান আহ্বানকারী মুয়াজ্জিন ছিলেন।

   আজান আসামকে তাঁর জন্মভূমি হিসেবে গ্রহণ করেন। কখনও আর নিজ জন্মস্থান বা অন্য কোথাও ফিরে যাননি।  সর্ব প্রথম তিনি এলাকার সমগ্র মানুষকে আলিঙ্গন করে নিজের আত্মীয় হিসেবে গ্রহণ করেন। ভালোবাসা আর সম্প্রীতি ছিল তাঁর প্রতীক। নিজ ফারসি ভাষা ছেড়ে, তিনি তাদের ভাষায় কথা বলতেন, তাদের খাবার খেতেন, তাদের সঙ্গীত গাইতেন এবং মানুষকে মিলন ও বহুসংস্কৃতির সৎ নীতি শিখিয়েছিলেন - ধর্মতাত্ত্বিক পরিভাষায় নয়, বাস্তবিক সারমর্মেও।  ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় তিনি শান্তি ও ভালবাসার নতুন সংস্কৃতি শুরু করেন।

 লোক কথায় আছে যে, মুঘল গুপ্তচর হওয়ার ষড়যন্ত্রে আজান ফকিরের দুটি চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল। তিনি মানবতার সেবক ছিলেন বলে বাস্তবতা যখন স্পষ্ট হয়ে উঠল, তখন প্রশাসন এতই অনুতাপ করে যে পরে রাজা তাঁর কবরের উপরে একটি মাজার নির্মাণের আদেশ দেন যাতে মানবতা শিক্ষার উদাহরণ হয়ে মানুষের জন্য এক নিদর্শন হয়। যে সংস্কৃতি-স্রোত আজও অঞ্চলজুড়ে বিদ্যমান।[2] সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য তাঁর অসামান্য সেবা বিভিন্ন শক্তিকে ভ্রাতৃত্ববোধের ঐকতা প্রদান করে।[3] 

একীকরণ এবং সমন্বয়বাদএকটি সাহিত্য সাংস্কৃতিক আন্দোলন

সাধারণত, সুফিরা এমনকি গোঁড়ামির ও প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে ঝোঁক রাখে।  অবশ্যই উল্লেখযোগ্য যে তাঁরা সত্যের প্রকৃত সারমর্ম অনুশীলন করে থাকেন। সুফি সাধকরা ইসলামের প্রকৃত অর্থ স্থানীয় মানুষের কাছে স্থানান্তর করতে সব থেকে বেশি সফল।  আঞ্চলিক সঙ্গীত, শিল্প ও ভাষার মতো ব্যবহার করে ধর্মের প্রচার করেছেন।  এইভাবে, আরব-পার্সিয়ান প্রভাবের আধিপত্যকে ভেঙ্গে দিয়ে ইসলামী বিশ্বাসের আঞ্চলিককরণ মূলত সুফিকর্মকে কেন্দ্র করে হয়ে ওঠে। মধ্যযুগীয় আসাম ইসলামিক সুফিবাদ এবং হিন্দু ধর্মের ভক্তি আন্দোলন উভকেই সমন্বয়বাদের সাক্ষী হিসেবে পায়।  তাদের মাধ্যাকর্ষণ জনসাধারণের মধ্যে একটি কার্যকর আবেদন তৈরি করে।  বহুসংস্কৃতিবাদ ছিল তাদের প্রচেষ্টার একটি দুর্দান্ত ফল যা অঞ্চলগুলি থেকে বিভিন্ন নৃশংসতা বন্ধ করে দেয়।  বহুত্ববাদের এই অঙ্গনে আজান ফকিরের অবদান অবশ্যম্ভাবীভাবে একটি যুগান্তকারী প্রভাব বহন করে আছে।[4]

   ভক্তি আন্দোলনের আদর্শ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব, যিনি আজান ফকিরের ২০০ বছর আগে আসেন, ছিলেন একজন প্রভাবশালী বৈষ্ণব সাধক।  বৈষ্ণবের ভক্তিমূলক গান বোরগীত জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল ফলে একাধিক শিষ্য মহলও গড়ে উঠে।  আজান ফকির তাঁর শিক্ষা ও গানকে সুনির্দিষ্টভাবে সম্বন্ধিত করেন।  একইভাবে, তিনি প্রচলিত আরবি বা ফারসি ভাষার পরিবর্তে স্থানীয় ভাষায় ইসলামী ভক্তিমূলক গান জিকির এবং জারি রচনা করেছিলেন। গবেষকরা মতামত দেন যে তাঁর ভক্তিমূলক গান জিকির এবং জারি অসমীয়া আঞ্চলিক সাহিত্যের একটি অপরিহার্য উপাদান যা বিরাট গণ মনোযোগ আকর্ষণ করে সামাজিক বন্ধনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

   একই সময়ে, আযান ফকির জিকির সমাবেশের পর ভালবাসা এবং একত্রিত হয়ে ফিরনি খাওয়ানোর একটি নতুন প্রথা আরম্ভ করেন।  এটি আসাম সমাজে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল যেখানে উপস্থিত ভক্তরা কীর্তনের পরে প্রসাদ ভাগ করে নিত। সামাজিক খাওয়ানো স্থানীয় মানুষের মধ্যে ভালবাসা অনুসরণ করার জন্য একটি কার্যকর দীক্ষা। সাধারণত, সুফি ও সাধুদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল সৃষ্টিকর্তার সাথে তাঁর সৃষ্টির সেবার মাধ্যমে মিলিত হওয়া। এই অতীন্দ্রিয় অভ্যাসটি ধর্মীয় সমন্বয়বাদ এবং সাংস্কৃতিক আত্তীকরণে নিরলস প্রভাব ফেলে।

বর্তমানে প্রযোগ্য নিরাময়

সুফিশিক্ষার মাধ্যাকর্ষণ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির শান্তিপূর্ণ স্থাপনা করে মধ্যযুগীয় আসামের সামাজিক বিশৃঙ্খলাকে প্রশমিত করে।  দুর্ভাগ্যবশত, ইদানিং কিছু বছরে এই অঞ্চলের বহুত্ববাদী রশ্মিকে নিভৃত করার কিছু উপাদান আবির্ভূত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, মানুষ অসহায় ও বাস্তুচ্যুত, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিঘ্নিত, এবং মানবতার ঐক্য নষ্ট স্পষ্ট এই এলাকায়।  আজান ফকির এবং শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের দেশে বিঘ্নিত পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য, তাদের শিক্ষার প্রতি আবার মনোযোগ দেওয়া দরকার।  সূফীবাদ ও ভক্তি আন্দোলনের শিক্ষা দিয়ে এর জনগণের হৃদয় ও মনকে আবার নতুন করে রন্থিত করতে হবে। একে অপরের সাথে আবার তাদের ফিরনি বা প্রসাদ ভাগ করে নেওয়াই একমাত্র সমাধান। তারপরই শীঘ্রই বা পরে আবারও আন্তঃধর্মীয় ঐক্য, বহুসংস্কৃতি, সমন্বয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রঙ দেখা দেবে।

উপসংহার

ভারতীয় ঐতিহ্য আন্তঃ-সাংস্কৃতিক উপাদানে সজ্জিত।  ইসলামের সুফি শিক্ষা বিশেষ করে আসামের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ধর্মীয় সমন্বয়বাদের বিকাশে এক অনির্বচনীয় প্রভাব ফেলেছে।  এটি বিভিন্ন ধর্মের আন্তঃবন্ধন এবং কূটনৈতিক  রাজনীতি, আক্ষরিক সমৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক একীকরণকে প্রভাবিত করেছে।  ভালবাসা, সম্প্রীতি এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার কারণে এই অঞ্চলটি একটি নিরাপদ আবাসে পরিণত হয়েছিল।  দুর্ভাগ্যবশত, গত কিছু বছর ছিল বিপরীত ঘটনার যেখানে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় মতবিরোধ এবং রাজনৈতিক বর্বরতার উদ্ভব বহুত্ববাদ এবং সমন্বয়বাদের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যকে আঘাত করে। শান্তি ও সম্প্রীতির উদ্দেশ্যে বর্তমান সমাজকে ঐতিহ্যের নৈতিক পাঠগুলি পুনরায় দেখার সময় এসেছে।

[1] Kartick, & Barman. (2012). Cultural Diversity, Religious Syncretism and People of India: An Anthropological Interpretation. ResearchGate.

[2] Liebeskind, C. (2011). [Review of The Islamic Path. Sufism, Politics and Society in India, by S. Z. H. Jafri & H. Reifeld]. Die Welt Des Islams, 51(1), 125–128. http://www.jstor.org/stable/41105376

[3] Dey, M. (2021, June 7). Azan Fakir: Steering Assam's Muslims Back To The Faith. Peepul Tree.

[4] Begum, T. (2020). Vernacularization of Islam and Sufism in Medieval Assam: A Study of the Production of Sufi Literature in Local Languages. International Journal of Research and Innovation in Social Science (IJRISS), IV(IX).

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter